রমজানের প্রথম জুম্মায় মসজিদ ছাপিয়ে বাইরে মুসল্লিদের ঢল
Published: 7th, March 2025 GMT
ধমীয় ভাবগাম্ভীর্য পরিবেশে রমজানের প্রথম জুমাবারে নারায়ণগঞ্জ শহরের মসজিদে মসজিদে মুসল্লিদের ঢল নেমেছিল। ইবাদত বন্দেগির বিশেষ মাস হিসেবে রমজানে প্রতিটি ওয়াক্তেই মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেশি থাকে। তবে রোজায় জুমার নামাজে দেখা মিলে মুসল্লিদের ব্যতিক্রম দৃশ্য।
শুক্রবার (৭ মার্চ, ৬ রমজান) জুম্মার আজান দেয়ার আগে থেকেই মুসল্লিরা মসজিদের দিকে ছুটতে থাকেন। নামাজ শুরুর আগেই শহরের ও আশপাশের এলাকার প্রত্যেকটি জামে মসজিদ মুসল্লিতে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। মসজিদের ভেতরে স্থান সংকুলান না হওয়ায় জুমার নামাজের জামাত রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
মসজিদের ভেতরে জায়গা না পেয়ে মুসল্লিরা মসজিদের ছাদ, খোলা জায়গা ও রাস্তায় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেছেন। রোজার প্রথম জুমায় শহরজুড়ে সব মসজিদেই এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
রমজানের প্রথম জুম্মায় শহর ও আশপাশের এলাকার বেশির ভাগ মসজিদের ভেতর ও বারান্দায় স্থান সংকুলান না হওয়ায় মুসল্লিদের ভিড় উপচে পড়ে তা বাইরে চলে আসে। শহরের ডিআইটি মসজিদের ভেতর, বারান্দা ও ছাদ ছাপিয়ে মুসল্লীদের জামাত মসজিদের পাশের রাস্তায় এসে দাঁড়ায়।
এছাড়াও শহরের বড় বড় বেশ কয়েকটি মসজিদ যেমন ডিআইটি জামে মসজিদ, চাষাঢ়া নুর মসজিদ, মাসদাইর কেন্দ্রীয় সিটি কবরস্থান জামে মসজিদ, কালীবাজার পুরান কোর্ট কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, মিন্নত আলী শাহ জামে মসজিদ, চাষাঢ়া বাগে জান্নাত জামে মসজিদ, মন্ডলপাড়া জিমখানা জামে মসজিদে মুসল্লিদের ছিল উপচেপড়া ভিড়। মসজিদের ভেতরে কোথাও ছিল না তিল ধারণের ঠাঁই। এসব মসজিদের ভেতর আবার কোনটির দ্বিতীয় তৃতীয় তলা মুসল্লিতে পরিপূর্ণ হওয়ার পর বাইরে মসজিদ আঙ্গিনা বা রাস্তায় মেট, জায়নামাজ, চাদর বিছিয়ে নামাজ আদায় করা হয়েছে।
মসজিদগুলোতে জুম্মার খুতবার আগে বয়ানে মাহে রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য তুলে ধরা হয়। ইমাম সাহেবগণ রোজার বিষয়ে হাদিস উদ্ধৃত করে এ মাসে ধৈর্য ও সহানুভূতির শিক্ষা গ্রহণ করতে মুসল্লিদের আহবান জানান। একই সঙ্গে দ্রব্যমূল্যের দাম সহনীয় রেখে সাধারণ মানুষের যাতে কেনাকাটায় নাভিশ্বাস না ওঠে এ ব্যাপারেও বয়ানে সকল ব্যবসায়িদের প্রতি আহবান জানানো হয়।
নামাজ শেষে নগরীর সব মসজিদে জুমার মুনাজাতে দেশ, জাতি ও বিশ্বের সব মানুষের শান্তি এবং সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। মুনাজাতে কায়মনোবাক্যে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা কামনা করা হয় ।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: রমজ ন ন র য়ণগঞ জ র প রথম জ ম রমজ ন র শহর র
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫