মেধাবী শিক্ষার্থী উৎস ভট্টাচার্য। প্রাথমিক, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে। স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। সেই স্বপ্ন প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই মারা গেছে সে। শুক্রবার ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতাল নামের একটি ক্লিনিকে নাকের পলিপাস অস্ত্রোপচারের সময় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনার পর উৎসর সহপাঠী ও এলাকাবাসী অস্ত্রোপচারকারী চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের শাস্তির দাবিতে হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ করেন। ঘটনার পর কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে ক্লিনিকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

মারা যাওয়া উৎস ভট্টাচার্য উপজেলার খর্দরায়গ্রামের উজ্জ্বল ভট্টাচার্যের ছেলে। সে কালীগঞ্জ সরকারি মাহতাব উদ্দীন ডিগ্রি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। স্বজনেরা হাসপাতালের অস্ত্রোপচার টেবিলে উৎসর মৃত্যুর কথা বললেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, অস্ত্রোপচারের সময় অক্সিজেনের ঘাটতি দেখা দিলে তাকে যশোরের ২৫০ শয্যা হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে নেওয়ার পথে উৎস মারা যায়।

উৎসর বাবা উজ্জ্বল ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ছেলে জীবনের সব পরীক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবে। দুই বছর আগে তার নাকে পলিপাস ধরা পড়ে। চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, ১৭ বছর না হলে অস্ত্রোপচার করা ঠিক হবে না। এত দিন ড্রপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকের পরামর্শে গত বৃহস্পতিবার রাতে কালীগঞ্জ শহরের ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আজ সকালে চিকিৎসক পলিপাস অস্ত্রোপচার করেন। কিন্তু অস্ত্রোপচার টেবিল থেকে তাঁর ছেলে ফেরেনি বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানতে চাইলে হাসপাতালের মালিক একরামুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশনের সময় নাক-কান-গলার সার্জন কাজী রাজিবুল ইসলাম, অজ্ঞান করার ডাক্তার (অবেদনবিদ) প্রবীর কুমার মণ্ডলসহ অভিজ্ঞ নার্সরা উপস্থিত ছিলেন। অপারেশনের সময় তার অবস্থার অবনতি হয়, যা আমাদের ধারণার বাইরে ছিল। পলিপাসের অপারেশনে সাধারণত রোগী মারা যাওয়ার ঘটনা শোনা যায় না। তবে অপারেশনে আমাদের কোনো ত্রুটি ছিল না।’

উৎসর শিক্ষক পলাশ ভট্টাচার্য বলেন, উৎস খুবই মেধাবী ছিল। তার স্বপ্ন ছিল চিকিৎসক হবে। তাঁর (পলাশ) এক পায়ে সমস্যা আছে। উৎস তাঁকে বলত, ‘স্যার, চিন্তা করবেন না। আমি ডাক্তার হয়ে আপনার পা ভালো করে দেব।’ কিন্তু চিকিৎসক হওয়ার আগেই সে না–ফেরার দেশে চলে গেল।

কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

শহিদুল ইসলাম হাওলাদার বলেন, তাঁরা খবর পেয়ে ওই ক্লিনিকে যান। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারাও সেখানে উপস্থিত হন। লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর এ ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওসি বলেন, কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার নির্দেশে উপজেলা স্বাস্থ্য পরিদর্শক আবদুল হামিদের নেতৃত্বে স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন ক্লিনিকের রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে ক্লিনিকটিতে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: কর মকর ত চ ক ৎসক র সময় উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

ঝিনাইদহে গাছ থেকে পড়ে শ্রমিকের মৃত্যু 

ঝিনাইদহের শৈলকূপায় গাছ থেকে পড়ে খায়রুল ইসলাম (৫৫) নামে এক কাঠ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে উপজেলার দুধসর গ্রামে দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি। খায়রুল একই উপজেলার খন্দকবাড়িয়া গ্রামের মুকাদ্দেস আলীর ছেলে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, খায়রুল আজ সকালে গাছ কাটার জন্য দুধসর গ্রামের হাজরাতলায় যান। বেলা ১১টার দিকে একটি গাছের ডাল কাটার সময় পা পিছলে তিনি নিচে পড়ে যান। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক খায়রুলকে মৃত ঘোষণা করেন।

আরো পড়ুন:

বরিশালে অপসো ফার্মার ৫০০ শ্রমিক ছাঁটাইয়ের অভিযোগ

আশুগঞ্জ সার কারখানায় গ্যাস সংযোগের দাবিতে সমাবেশ

দুধসর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, হাজরাতলায় একটি রেইনট্রি গাছ কাটার সময় খায়রুল নামে এক শ্রমিক গাছ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুত্ব আহত হন। সবাই মিলে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

শৈলকূপা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাসুম খান জানান, গাছ থেকে পড়ে এক কাঠ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। পরিবারে কোনো অভিযোগ না থাকায় মরদেহ হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/শাহরিয়ার/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ