Samakal:
2025-11-04@05:26:13 GMT

বিচার বিভাগে পিছিয়ে নারীরা

Published: 8th, March 2025 GMT

বিচার বিভাগে পিছিয়ে নারীরা

সামাজিক সূচকে অগ্রগতি হলেও উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা বাড়ছে না। উচ্চ আদালতে ৯৮ বিচারপতির মধ্যে নারী ১০ জন। তারা সবাই হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত। আপিল বিভাগে গত ছয় মাস ধরে কোনো নারী বিচারপতি নেই।

অন্যদিকে অধস্তন আদালতে কর্মরত ২ হাজার ১৮০ জন বিচারকের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬২৫। অর্থাৎ মোট বিচারকের ২৮ শতাংশ নারী। তারা সবাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ পান। আনুপাতিক হারে বিচার বিভাগে নারীরা এখনও অনেকটা পিছিয়ে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের আগে উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারপতি ছিলেন না। বর্তমানে হাইকোর্টে কর্মরত নারী বিচারপতিরা হলেন– বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি ফাতেমা নজীব, বিচারপতি কাজী জিনাত হক, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার ও বিচারপতি সাথিকা হোসেন। তারা বিভিন্ন বেঞ্চে রিট, ফৌজদারি মোশনসহ এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করছেন।

এ ছাড়া অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা ৬২৫ জন। এর মধ্যে জেলা জজ ৬১, অতিরিক্ত জেলা জজ ৮৭, যুগ্ম জেলা জজ ১১২, সিনিয়র সহকারী জজ ৯৬ এবং সহকারী জজ ২৬৯ জন। 
শুধু বিচারের দায়িত্ব নয়, বিচার বিভাগ থেকে প্রেষণে আসা অনেক নারী বিচারক প্রশাসনিক দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদন করছেন। যাদের অনেকে আছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, লিগ্যাল এইডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ১০২ জনকে সহকারী জজ পদে নিয়োগের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। তাদের পদায়ন হয়নি এখনও।

দেশের ইতিহাসে আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতির নাম নাজমুন আরা সুলতানা। হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালতেও প্রথম নারী বিচারক তিনি। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে প্রথম নারী বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই তিনি অবসরে যান। পরে তিনি বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। আপিল বিভাগে আরও তিনজন নারী বিচারপতি বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন– জিনাত আরা, কৃষ্ণা দেবনাথ ও কাশেফা হোসেন।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জিনাত আরা সমকালকে বলেন, উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারপতির নিয়োগ হওয়া দরকার। আপিল বিভাগে এখন একজন নারী বিচারকও নেই। হাইকোর্টেও সংখ্যার দিকে নারী বিচারক অনেক কম। তবে যাদেরই নিয়োগ দেওয়া হোক, তাদের সততা, নৈতিকতা ও যোগ্যতায় যেন ঘাটতি না থাকে। এর সঙ্গে স্বাধীন মানসিকতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীনভাবে বিচার করার মানসিকতা না থাকলে অন্যসব যোগ্যতা থাকলেও সেটা ফলপ্রসূ হবে না।
তিনি আরও বলেন, অধস্তন আদালতে মেয়েরা ভালো করছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ায় তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তা ছাড়া তাদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার ঘাটতিও অনেকাংশে কম। আশা করছি, বিচার বিভাগে নারী বিচারকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

নারী বিচারকদের সুবিধা-অসুবিধা, বিপদ-সংকট ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার জন্য ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন। এটি এখন অন্যান্য দেশের নারী বিচারকদের কাছেও পরিচিত সংগঠন। এই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিন সমকালকে বলেন, ‘বিচার বিভাগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। এগুলো নিরসন হওয়া দরকার। আর গত কয়েক বছর ধরে বিচার বিভাগে নারীর সংখ্যা অনেকাংশে বাড়ছে। তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে মেধার ভিত্তিতে এ পেশায় আসছেন। উৎসাহ পেলে আগামীতে নারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। আশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে বিচার বিভাগে নারী ও পুরুষ সমান হারে নিয়োগ পাবেন।’

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ রপত র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা হয়নি ঢাকা-২০ আসনে, অপেক্ষায় ৪ নেতা

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে, তালিকায় রাজধানীর প্রবেশদ্বার খ্যাত ঢাকা-২০ (ধামরাই) আসনের কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।

নেতাদের অনেকেই মনে করছেন, নাম ঘোষণা না করা আসনগুলো মিত্র দলগুলোর জন্য রাখা হতে পারে। যদিও এখনো আশা ছাড়েননি এই আসনে দলটির মনোনয়ন প্রত্যাশী চার নেতা-নেত্রী। তারা বলছেন, দল যাকেই প্রার্থী করবে, তার পক্ষেই কাজ করবেন।

আরো পড়ুন:

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অভিজ্ঞদের ওপর আস্থা রাখল বিএনপি

দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী খালেদা জিয়া, নেতাকর্মীদের আনন্দ মিছিল 

সবশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন ধামরাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি তমিজ উদ্দিন। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী।

তমিজ উদ্দিন ছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি এবং জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে তারা নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে রাজনৈতিক কর্মসূচি পরিচালনা করছেন। 

সোমবার (৩ নভেম্বর) দিনভর বৈঠকের পর সন্ধ্যায় ২৩৭টি আসনের দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে দলের পক্ষ থেকে তালিকা প্রকাশ করা হয়। ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হলেও ঢাকা-২০ সহ সাতটি আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

এ বিষয়ে তমিজ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, “এটা আমি জানি না। এটা আসলে আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় জানবেন আর কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা জানবেন। আমি জানি যে আমারটা হয়ে আছে। এখন ঘোষণার সময় শুনলাম আপাতত স্থগিত। দল করি, ফলে দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কিছু ভাবা যাবে না, করাও যাবে না। দেখি, অপেক্ষা করি। আমি এ নিয়ে চিন্তিত নই।” 

তিনি বলেন, “গুলশানে সাক্ষাৎকারে একটাই মূল কথা ছিল, যাকেই দেওয়া হোক, সবাই মিলেমিশে কাজ করবে। দল করি, দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, তাই করতে হবে। আমি এখনও আশাবাদী। মনোনয়নের কর্তৃপক্ষ আছেন, তারা হয়তো খুঁটিনাটি দেখছেন। দল যখন করি, দলের বাইরে যাওয়া যাবে না।”

তমিজ উদ্দিনের সহযোগী ও ধামরাই উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুল ইসলাম বলেন, “এটা দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। হয়তো কোনো কারণে বাদ পড়েছেন তিনি। সিদ্ধান্ত তো হবেই। আমরা আশাবাদী। মাঠ তমিজ উদ্দিনের পক্ষে। বিএনপির সবাই মূল দলের। আর আমরাই মূল দল। তারপরও নেতারা আছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আছেন, তারাই সিদ্ধান্ত নেবেন। আমরা শতভাগ আশাবাদী।”

জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও মনোনয়নপ্রত্যাশী সুলতানা আহমেদ বলেন, “আমি বর্তমানে দেশে নেই, ওমরাহ করতে এসেছি। ওখানে থাকলে হয়তো আরও ভালো বলতে পারতাম। সিদ্ধান্তটি হয়তো আরও গভীরভাবে যাবে, সেজন্যই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। আমি মনোনয়ন আশা করি, আমি আশাবাদী।”

মনোনয়নের আশায় আছেন তরুণ দুই নেতাও। তারা বলছেন, দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। ঢাকা জেলা যুবদলের সভাপতি ইয়াসিন ফেরদৌস মুরাদ বলেন, “দলের নিজস্ব চিন্তা চেতনা পরিকল্পনা রয়েছে। সেভাবেই সিদ্ধান্ত হবে। আমি শতভাগ আশাবাদী। দল যখন ঘোষণা করবে, সবাই জানবে। আমি দলের আদর্শ ও নেতৃত্বের প্রতি সবসময় শ্রদ্ধাশীল, সেটি ধরে রেখে রাজনীতি করেছি। ভবিষ্যতেও সেটি অব্যাহত থাকবে।”

ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান অভি বলেন, “দল তারুণ্যের পক্ষে। আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। সেজন্য কাজ করছি। আশা করছি, দল ঢাকা-২০ আসনে ধানের শীষকে বিজয়ী করতে আমাকে মনোনীত করবে।”

এদিকে, বিএনপির চারজন মনোনয়নপ্রত্যাশী থাকলেও অন্যান্য দলগুলো তুলনামূলকভাবে নির্ভার। ইতোমধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আব্দুর রউফ, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আসাদুল ইসলাম মুকুল, গণঅধিকার পরিষদের রুবেল এবং এবি পার্টির অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট কর্নেল হেলাল উদ্দিন আহাম্মদ প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন এবং এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন।

ইতিহাস বলছে, প্রথম থেকে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত ধামরাই উপজেলা ছিল ঢাকা-১৩ আসনের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের তাজউদ্দীন আহমদ, ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় নির্বাচনে বিএনপির দেওয়ান মোহাম্মদ ইদ্রিস, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির খান মোহাম্মদ ইসরাফিল এই আসন থেকে নির্বাচিত হন। ১৯৯১, ১৯৯৬ ও ২০০১ সালের নির্বাচনে টানা তিনবার বিজয়ী হন বিএনপির ব্যারিস্টার মো. জিয়াউর রহমান খান।

২০০৮ সালে আসন পুনর্বিন্যাসের পর ধামরাই হয় ঢাকা-২০ আসন। সেই নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগের বেনজীর আহমদ। ২০১৪ সালের নির্বাচনে জয় পান এম এ মালেক। এরপর ২০১৯ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আবারো জয়ী হন বেনজীর আহমদ।

ঢাকা/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ