Samakal:
2025-07-31@21:48:57 GMT

বিচার বিভাগে পিছিয়ে নারীরা

Published: 8th, March 2025 GMT

বিচার বিভাগে পিছিয়ে নারীরা

সামাজিক সূচকে অগ্রগতি হলেও উচ্চ আদালতে নারী বিচারপতির সংখ্যা বাড়ছে না। উচ্চ আদালতে ৯৮ বিচারপতির মধ্যে নারী ১০ জন। তারা সবাই হাইকোর্ট বিভাগে কর্মরত। আপিল বিভাগে গত ছয় মাস ধরে কোনো নারী বিচারপতি নেই।

অন্যদিকে অধস্তন আদালতে কর্মরত ২ হাজার ১৮০ জন বিচারকের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৬২৫। অর্থাৎ মোট বিচারকের ২৮ শতাংশ নারী। তারা সবাই প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেধা তালিকার ভিত্তিতে নিয়োগ পান। আনুপাতিক হারে বিচার বিভাগে নারীরা এখনও অনেকটা পিছিয়ে।

সুপ্রিম কোর্টের তথ্য অনুযায়ী, ২০০০ সালের আগে উচ্চ আদালতে কোনো নারী বিচারপতি ছিলেন না। বর্তমানে হাইকোর্টে কর্মরত নারী বিচারপতিরা হলেন– বিচারপতি ফারাহ মাহবুব, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, বিচারপতি ফাতেমা নজীব, বিচারপতি কাজী জিনাত হক, বিচারপতি ফাহমিদা কাদের, বিচারপতি মুবিনা আসাফ, বিচারপতি আইনুন নাহার সিদ্দিকা, বিচারপতি তামান্না রহমান, বিচারপতি নাসরিন আক্তার ও বিচারপতি সাথিকা হোসেন। তারা বিভিন্ন বেঞ্চে রিট, ফৌজদারি মোশনসহ এ-সংক্রান্ত মামলার শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তি করছেন।

এ ছাড়া অধস্তন আদালতে নারী বিচারকের সংখ্যা ৬২৫ জন। এর মধ্যে জেলা জজ ৬১, অতিরিক্ত জেলা জজ ৮৭, যুগ্ম জেলা জজ ১১২, সিনিয়র সহকারী জজ ৯৬ এবং সহকারী জজ ২৬৯ জন। 
শুধু বিচারের দায়িত্ব নয়, বিচার বিভাগ থেকে প্রেষণে আসা অনেক নারী বিচারক প্রশাসনিক দায়িত্ব সাফল্যের সঙ্গে সম্পাদন করছেন। যাদের অনেকে আছেন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন, আইন মন্ত্রণালয়, আইন কমিশন, লিগ্যাল এইডসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে। এদিকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ আরও ১০২ জনকে সহকারী জজ পদে নিয়োগের জন্য মনোনীত করেছে সরকার। তাদের পদায়ন হয়নি এখনও।

দেশের ইতিহাসে আপিল বিভাগে প্রথম নারী বিচারপতির নাম নাজমুন আরা সুলতানা। হাইকোর্ট বিভাগ এবং অধস্তন আদালতেও প্রথম নারী বিচারক তিনি। ১৯৭৫ সালের শেষের দিকে প্রথম নারী বিচারক হিসেবে যোগ দেন। ২০০০ সালে প্রথমবারের মতো হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি পদে নিয়োগ পান। ২০১১ সালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিযুক্ত হন। ২০১৭ সালের ৬ জুলাই তিনি অবসরে যান। পরে তিনি বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ছিলেন। আপিল বিভাগে আরও তিনজন নারী বিচারপতি বিভিন্ন সময় দায়িত্ব পালন করেছেন। তারা হলেন– জিনাত আরা, কৃষ্ণা দেবনাথ ও কাশেফা হোসেন।

আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও বর্তমানে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান জিনাত আরা সমকালকে বলেন, উচ্চ আদালতে আরও নারী বিচারপতির নিয়োগ হওয়া দরকার। আপিল বিভাগে এখন একজন নারী বিচারকও নেই। হাইকোর্টেও সংখ্যার দিকে নারী বিচারক অনেক কম। তবে যাদেরই নিয়োগ দেওয়া হোক, তাদের সততা, নৈতিকতা ও যোগ্যতায় যেন ঘাটতি না থাকে। এর সঙ্গে স্বাধীন মানসিকতাকেও গুরুত্ব দিতে হবে। স্বাধীনভাবে বিচার করার মানসিকতা না থাকলে অন্যসব যোগ্যতা থাকলেও সেটা ফলপ্রসূ হবে না।
তিনি আরও বলেন, অধস্তন আদালতে মেয়েরা ভালো করছে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ হওয়ায় তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন নেই। তা ছাড়া তাদের মধ্যে নৈতিকতা ও সততার ঘাটতিও অনেকাংশে কম। আশা করছি, বিচার বিভাগে নারী বিচারকের সংখ্যা আরও বাড়বে।

নারী বিচারকদের সুবিধা-অসুবিধা, বিপদ-সংকট ইত্যাদি কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরার জন্য ১৯৮৯ সালে গঠন করা হয় বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন। এটি এখন অন্যান্য দেশের নারী বিচারকদের কাছেও পরিচিত সংগঠন। এই অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ও ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফারজানা ইয়াসমিন সমকালকে বলেন, ‘বিচার বিভাগে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ঘাটতি রয়েছে। এগুলো নিরসন হওয়া দরকার। আর গত কয়েক বছর ধরে বিচার বিভাগে নারীর সংখ্যা অনেকাংশে বাড়ছে। তারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে মেধার ভিত্তিতে এ পেশায় আসছেন। উৎসাহ পেলে আগামীতে নারীর সংখ্যা আরও বাড়বে। আশা করছি, কয়েক বছরের মধ্যে মেধার ভিত্তিতে বিচার বিভাগে নারী ও পুরুষ সমান হারে নিয়োগ পাবেন।’

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব চ রপত র পর ক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ