হবিগঞ্জে টিলায় টিলায় লেবুর চাষ, ভালো দাম পেয়ে খুশি চাষিরা
Published: 8th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন টিলায় চাষ করা হচ্ছে লেবু। রমজান মাসে লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। ফলে, দাম বেড়েছে লেবুর। অন্যান্য সময়ে চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দাম পেয়ে খুশি লেবুচাষিরা।
বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকলেও লেবুর উৎপাদন কম। অনেক চাষি বাড়তি লাভের আশায় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বৃষ্টির অভাব পূরণে তারা সেচের মাধ্যমে লেবুগাছে পানি সরবরাহ করছেন। তাতে গাছে গাছে ফুল আসছে, লেবু ধরছে।
লেবুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন ১ হাজার লেবু কমপক্ষে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জাতভেদে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার লেবু। স্থানীয় বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা।
বৃষ্টি শুরু হলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবুর দাম কমে যেতে পারে। সেজন্য লেবুবাগানের মালিকরা সেচের মাধ্যমে এখনই উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন।
হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে টিলা। টিলাগুলো ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লেবুগাছে ছাওয়া। সমতলেও লেবু চাষ হচ্ছে।
লেবুচাষি মর্তুজ আলী জানিয়েছেন, এখানে সারা বছরই লেবু চাষ হয়। তবে, বর্ষায় লেবুর ফলন তুলনামূলক বেশি হয়। শুষ্ক মৌসুমে সেচ দিলেও লেবুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ সময় দামও পাওয়া যায় বেশি। তাই, পাহাড়ি এলাকার লোকজন জমি পতিত না রেখে এখন লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কলম চারা রোপণ করলে এক বছরেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে।
হবিগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে ৮ থেকে ১০ টন লেবু উৎপাদন হয়।
বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাগানমালিক নূরুল ইসলাম বলেন, লেবু চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। পাহাড়ি মাটিতে রোপণের পর বছর না যেতেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গাছের গোড়া পরিষ্কার করে অল্প কিছু সার দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে লেবুর দাম বেশি। এ আশায় সেচের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় পানি, সার ও গোবর দেওয়া হচ্ছে। মাসখানেক হলো লেবুর দাম বেড়েছে।
বাহুবল উপজেলার মুছাই ফল বাজারের আড়তদার তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, সানু মিয়া চৌধুরী ও মো.
খুচরা বিক্রেতা আজমান মিয়া বলেন, বেশি দামে লেবু কিনতে হচ্ছে। তাই, প্রতি হালি লেবু ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হয়।
ক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন হলো লেবুর দাম বেড়েছে। তারপরও লেবু খেতে হচ্ছে। কিছু করার নেই।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান বলেছেন, “পাহাড়ি এলাকার সম্ভাবনাময় ফসল লেবু। আমরা লেবু চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। তারা লেবুর ভালো ফলনও পাচ্ছেন। বর্তমানে সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ায় পাহাড়ে লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি।”
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নির্বাচনে জোট গঠনে সতর্ক থাকার পরামর্শ হেফাজত আমিরের
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট গঠনের ক্ষেত্রে সঙ্গে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী।
মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেছেন, আগামী নির্বাচনে এমন কোনো দলের সঙ্গে জোটবদ্ধ হওয়ার চিন্তা করা যাবে না, যাদের ভ্রান্ত বিশ্বাস সম্পর্কে বুজুর্গানে দ্বীন ও পূর্বপুরুষেরা আগেই সতর্ক করেছেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে ‘জাতীয় উলামা মাশায়েখ সম্মেলন ২০২৫’–এ লিখিত বক্তব্যে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী এ কথা বলেন। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উদ্যোগে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজত আমির শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী। অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও অসুস্থ থাকায় তিনি কথা বলেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা তোফাজ্জল হক আজিজ।
ইসলামের মূলধারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত না নিতে দলগুলোকে অনুরোধ জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে হেফাজত আমির বলেন, সহিহ আকিদার সব ইসলামি দলকে এক হওয়ার জন্য আগেও তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর আহ্বানে সাড়া দেওয়ার মতো তেমন পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
শাহ মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, একদিকে যেমন ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার ষড়যন্ত্র চলছে, অন্যদিকে তেমনি দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে বহু রকম চক্রান্ত লক্ষ করা যাচ্ছে। গণ–অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে এ রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে, তা তিনি কল্পনাও করেননি।
অন্তর্বর্তী সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে উদ্দেশ করে বাবুনগরী বলেন, ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের অফিস স্থাপনের চুক্তি দেশের স্বাধীনতার অখণ্ডতার জন্য এবং ধর্মীয় কৃষ্টির জন্য এক অশনিসংকেত। এ চুক্তির তীব্র নিন্দা জানিয়ে তা বাতিল করার দাবিও জানান তিনি।
সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হাটহাজারী মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা খলিল আহমদ কুরাইশী। দেশের সার্বিক পরিস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সামনে কালো তুফান দেখা যাচ্ছে। কালো তুফানের সঙ্গে মোলাকাত নয়, মোকাবিলা করতে হবে। জনগণকে ওলামাদের নেতৃত্ব কবুল করতে হবে। তখনই তুফানকে মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি মাওলানা জুনায়েদ আল হাবীব বলেন, যারা ফ্যাসিবাদী আমলে পাখা দিয়ে নৌকাকে বাতাস করেছে, তাদের সঙ্গে কোনো ঐক্য হবে না। জুলাই আন্দোলন ছিল ভোটের অধিকার বাস্তবায়নের জন্য। সামনে নির্বাচন। সেই নির্বাচন বানচালের পাঁয়তারা শুরু হয়েছে। সেই পাঁয়তারা রুখে দিতে হবে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী বলেন, ইসলামের বিষয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে আলেমদের মতামত উপেক্ষা করলে হাসিনার মতো পরিণতি হবে।
সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। এ সময় আরও বক্তব্য দেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আলেম এবং ওলামারা।
১৫ দফা প্রস্তাবনা
সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ১৫ দফা প্রস্তাবনা পেশ করা হয়। প্রস্তাবনা পাঠ করেন সংগঠনের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দিন জাকারিয়া।
১৫ দফার মধ্যে আছে—ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের কার্যালয় স্থাপনের চুক্তি বাতিল করা, জুলাই সনদের বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা, জাতীয় শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মশিক্ষা বাধ্যতামূলক করা এবং প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীতের শিক্ষক নিয়োগের সিদ্ধান্ত বাতিল করা, ঘোষিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা; নির্বাচনে কালোটাকা ও পেশিশক্তির মহড়া বন্ধ করে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করা; বিতর্কিত নারী কমিশনের সুপারিশ বাতিল ও শরিয়ার সীমারেখার আলোকে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।