হবিগঞ্জের পাহাড়ি এলাকায় বিভিন্ন টিলায় চাষ করা হচ্ছে লেবু। রমজান মাসে লেবুর চাহিদা বেশি থাকে। ফলে, দাম বেড়েছে লেবুর। অন্যান্য সময়ে চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দাম পেয়ে খুশি লেবুচাষিরা। 

বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকলেও লেবুর উৎপাদন কম। অনেক চাষি বাড়তি লাভের আশায় উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। বৃষ্টির অভাব পূরণে তারা সেচের মাধ্যমে লেবুগাছে পানি সরবরাহ করছেন। তাতে গাছে গাছে ফুল আসছে, লেবু ধরছে। 

লেবুচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন ১ হাজার লেবু কমপক্ষে ৭ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। জাতভেদে ১১ থেকে ১২ হাজার টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার লেবু। স্থানীয় বাজারে লেবুর হালি ৩০ থেকে ৬০ টাকা। 

বৃষ্টি শুরু হলে উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লেবুর দাম কমে যেতে পারে। সেজন্য লেবুবাগানের মালিকরা সেচের মাধ্যমে এখনই উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। 

হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, নবীগঞ্জ, বাহুবল ও মাধবপুর উপজেলার বিশাল এলাকাজুড়ে একের পর এক দাঁড়িয়ে আছে টিলা। টিলাগুলো ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত লেবুগাছে ছাওয়া। সমতলেও লেবু চাষ হচ্ছে। 

লেবুচাষি মর্তুজ আলী জানিয়েছেন, এখানে সারা বছরই লেবু চাষ হয়। তবে, বর্ষায় লেবুর ফলন তুলনামূলক বেশি হয়। শুষ্ক মৌসুমে সেচ দিলেও লেবুর ভালো ফলন পাওয়া যায়। এ সময় দামও পাওয়া যায় বেশি। তাই, পাহাড়ি এলাকার লোকজন জমি পতিত না রেখে এখন লেবু চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। কলম চারা রোপণ করলে এক বছরেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে। 

হবিগঞ্জ কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, এ জেলায় প্রায় ১০ হাজার একর জমিতে লেবু চাষ হচ্ছে। প্রতি একরে ৮ থেকে ১০ টন লেবু উৎপাদন হয়। 

বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাটিকি গ্রামের বাগানমালিক নূরুল ইসলাম বলেন, লেবু চাষে কোনো ঝুঁকি নেই। পাহাড়ি মাটিতে রোপণের পর বছর না যেতেই ফলন পাওয়া যাচ্ছে। গাছের গোড়া পরিষ্কার করে অল্প কিছু সার দিলেই ভালো ফলন পাওয়া যায়। 

তিনি আরো বলেন, বর্তমানে লেবুর দাম বেশি। এ আশায় সেচের মাধ্যমে গাছের গোড়ায় পানি, সার ও গোবর দেওয়া হচ্ছে। মাসখানেক হলো লেবুর দাম বেড়েছে। 

বাহুবল উপজেলার মুছাই ফল বাজারের আড়তদার তাজুল ইসলাম চৌধুরী, ইব্রাহিম চৌধুরী, সুমন চৌধুরী, সানু মিয়া চৌধুরী ও মো.

সাদিকুর রহমান চৌধুরী জানান, এখন ভালো দাম পেয়ে লেবুচাষিরা খুশি। বৃষ্টি না থাকায় লেবুগাছের গোড়ায় সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়া হচ্ছে। গাছে গাছে লেবু ঝুলছে। চাষিরা গাছ থেকে লেবু সংগ্রহ করে আড়তে এনে বিক্রি করছেন। পাইকাররা আড়ত থেকে লেবু কিনে দেশের নানা স্থানে নিয়ে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করেন। তারা বিক্রি করছেন ক্রেতাদের কাছে। এখন লেবুর দাম বেশি হওয়ায় সবাই লাভবান হচ্ছেন। বৃষ্টি হলে লেবুর দাম কমে যাবে।

খুচরা বিক্রেতা আজমান মিয়া বলেন, বেশি দামে লেবু কিনতে হচ্ছে। তাই, প্রতি হালি লেবু ৩০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করতে হয়। 

ক্রেতা সুমন মিয়া বলেন, বেশ কিছুদিন হলো লেবুর দাম বেড়েছে। তারপরও লেবু খেতে হচ্ছে। কিছু করার নেই।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হবিগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান বলেছেন, “পাহাড়ি এলাকার সম্ভাবনাময় ফসল লেবু। আমরা লেবু চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। তারা লেবুর ভালো ফলনও পাচ্ছেন। বর্তমানে সেচের মাধ্যমে পানি দেওয়ায় পাহাড়ে লেবুর বাম্পার ফলন হয়েছে। লেবুর দাম বেশি পাওয়ায় চাষিরা খুশি।”

ঢাকা/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর করছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ