ধর্ষণের ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন, করা হবে রিমান্ডের আবেদন
Published: 8th, March 2025 GMT
মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে ৮ বছরের কন্যা শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় এখনো মামলা হয়নি। তবে মামলা প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আয়ুব আলী।
আজ শনিবার ওসি আয়ুব আলী জানান, মামলা প্রক্রিয়াধীন। আসামিদের মধ্যে হিটু শেখকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে রিমান্ডের আবেদন করা হবে।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় পুলিশ মোট দুইজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হচ্ছেন- শিশুটির বোনজামাই সজিব শেখ (১৮) ও তার বোনের শ্বশুর হিটু মিয়া (৪৮)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে মাগুরা শহরতলীর নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় ওই শিশু। ধর্ষণের পর শিশুটিকে শুক্রবার সকালে অজ্ঞান অবস্থায় প্রথমে মাগুরা ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে আনা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে ফদিরপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মেয়েটিকে ঢাকায় পাঠানো হয়। বর্তমানে মেয়েটি সেখানে লাইভ সাপোর্টে রয়েছে।
মেয়েটির মা জানান, মেয়েটিকে ঘরের মধ্যে একা পেয়ে কেউ একজন তাকে ধর্ষণ করে ফেলে রেখে যায়। পরে অচেতন অবস্থায় তাকে ঘরের মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। যেহেতু ওই সময় বাড়িতে সে একা ছিল তার মেয়ে এখনো জ্ঞান ফিরে নাই ফলে কে তাকে ধর্ষণ করেছে; তা বিস্তারিত বলতে পারছেন না তারা। তবে ধারণা করছেন, কেউ একজন মেয়েকে ধর্ষণ করে হত্যা করতে চেয়েছিল।
মাগুরা সদর হাসপাতালে জরুরি বিভাগের ডাক্তার সুবাস রঞ্জন হালদার বলেন, তাকে প্রথমে শ্বাসকষ্ট রোগী হিসেবে নিয়ে আসা হয়। পরে মেডিসিন বিভাগে নিয়ে গেলে ধর্ষণ ও হত্যার অপচেষ্টা আলামত পাওয়া গেছে। মেয়েটির অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয়। এ কারণে তাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে তার অবস্থার অবনতি হলে বৃহস্পতিবার ফরিদপুর মেডিকেলে কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার আরও অবনতি ঘটলে তাকে উন্নত চিকিৎিসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে। এখনো তার জ্ঞান ফেরেনি। সেখানে সে তাকে লাইভ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
নামতে গেলেই চালক বাস টান দিচ্ছিলেন, পরে লাফিয়ে নামেন
‘“এ সকল নষ্ট মাইয়াদের জন্য বাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যায়। যা যা বাস থেকে নেমে যা নষ্ট মাইয়াছেলে”—বাস কন্ডাক্টরের এই মন্তব্য শোনার পর নিজের ওপর আর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারিনি।’ কথাগুলো বলছিলেন বাসে হেনস্তার শিকার ওই তরুণী। আজ প্রথম আলোর সঙ্গে মুঠোফোনে দীর্ঘ আলাপে তিনি সেদিনের ঘটনার আদ্যোপান্ত জানান। বললেন, ঘটনার সময় বাসে একজন মানুষও প্রতিবাদ না করায় কষ্ট পেয়েছেন। যিনি এ ঘটনার ভিডিও করেছিলেন, তাঁর কাছ থেকেও কটু কথা শুনতে হয়েছিল। এমনকি তিনি বাস থেকে নামতে গিয়েও পারছিলেন না। যতবার নামার চেষ্টা করেন, চালক বাস টান দিচ্ছিলেন।
তবে দৃঢ়তার সঙ্গে এই তরুণী জানিয়েছেন, এই হেনস্তার ঘটনা তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারবে না। তিনি প্রতিবাদ করে যাবেন।
জুতা হাতে বাস কন্ডাক্টরের আচরণের প্রতিবাদ জানানোর ওই ঘটনা ঘটে গত ২৭ অক্টোবর। বাসের এক ব্যক্তি ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করলে তা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। গত বৃহস্পতিবার রমজান পরিবহন নামের বাসের হেনস্তাকারী কন্ডাক্টর নিজাম উদ্দিনকে (৪৫) গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় তরুণীর এজাহারের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্র বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার মামলা করে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় (যৌন নিপীড়নের অভিযোগ) মামলাটি করা হয়েছে।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছিল, বাসের সামনের আসনে বসা এক ব্যক্তির কোনো একটি মন্তব্য নিয়ে এক তরুণী তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়লেন। তিনি তেড়ে যান লোকটির দিকে। ওই সময় লোকটি আসন ছেড়ে উঠে তরুণীকে চড় মারেন। একপর্যায়ে দুজন জুতা খুলে দুজনের দিকে তুলে ধরেন। সে সময় ওই ব্যক্তি তরুণীকে আঘাত করেন এবং ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন। ওই ব্যক্তি এরপর বারবার তরুণীর গায়ে ধাক্কা মারেন ও আঘাত করার চেষ্টা করেন। তরুণী চিৎকার করে বলছিলেন, ‘তুই আমার পোশাক তুলে কেন কথা বলবি?’ এ সময় সামনের দিকে থাকা দুই নারী ও একজন পুরুষ যাত্রী ছাড়া আর কেউ আঘাত করা ব্যক্তিটিকে থামানোর চেষ্টা করেননি, প্রতিবাদ করেননি।
ওই তরুণী প্রথম আলোকে জানান, তাঁর মা–বাবা ও ভাই–বোনরা চাঁদপুরে থাকেন। বাবার দোকান রয়েছে। ভাই–বোনদের মধ্যে তিনি সবার বড়। চাঁদপুর থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর এখন ঢাকায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে পড়ছেন। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি বাবাকে সহায়তা করতে নিজেও টুকটাক কাজ করেন। হাতের কাজ, ছবি আঁকার কাজ করেন, টেলিভিশন চ্যানেলে মাঝেমধ্যে কিছু অনুষ্ঠান উপস্থাপনাও করেন। রাজধানীর বছিলা এলাকায় কয়েকজন মিলে একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন।
‘শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি’
সেদিনের ঘটনা বলতে গিয়ে তরুণী বলেন, তিনি মুঠোফোন ঠিক করতে হাতিরপুলে মোতালিব প্লাজায় গিয়েছিলেন। বাসায় ফেরার জন্য সেখান থেকে ধানমন্ডি–১৫ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে আসেন এবং রমজান পরিবহনের ওই বাসটিতে ওঠেন। তখন বেলা দুইটা কি আড়াইটা। তিনি বাসে উঠে মাঝামাঝি জায়গায় একটি আসনে বসেন। বাস কন্ডাক্টর তাঁর কাছে এসে ভাড়া চাইলে ‘স্টুডেন্ট’ (শিক্ষার্থী) জানিয়ে তিনি অর্ধেক ভাড়া দেন। তরুণী দাবি করেন, বাস কন্ডাক্টর তখন বলে ওঠেন, ‘চেহারা আর পোশাক দেখলে তো মনে হয় না স্টুডেন্ট!’ তখন তিনি রাগ হলেও কন্ডাক্টরকে ‘আপনি’ বলে সম্বোধন করে বলেন, ‘স্টুডেন্টের সঙ্গে পোশাকের কী সম্পর্ক? আপনি এসব কী ধরনের কথা বলছেন? ওই সময় কিছুটা কথা-কাটাকাটি হয়। শুরুতে আমি উত্তেজিত হইনি।’
রাজধানীর বছিলায় বাসের মধ্যে পোশাক নিয়ে কটূক্তির সাহসী প্রতিবাদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া তরুণীর প্রশংসা করে এমন চিত্র ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছে