হাওর-বাঁওড়, খাল-বিল ও নদীর জেলা মৌলভীবাজারের বহু জলাশয় অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। এর মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে, কুশিয়ারা থেকে জন্ম নেওয়া সদর উপজেলার গা ঘেঁষে বয়ে যাওয়া বরাক নদী।
কালের গর্ভে বিলীন হওয়ার পথে এক সময়ের খরস্রোতা এই নদী। ৭ বছর আগের অপরিকল্পিত খনন কার্যক্রমে টাকার অপচয় হলেও প্রাণ ফেরেনি নদীতে। উল্টো এমন পরিস্থিতি হয়েছে যে, শুষ্ক মৌসুমে ধু ধু বালুচর, বর্ষায় জলাবদ্ধতায় নিম্নাঞ্চলের মানুষের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। এতে কৃষকরা পড়েছেন বিপাকে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মৌলভীবাজার সদর উপজেলার খলিলপুর ও মনুমুখ ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষে প্রবাহিত বরাক নদী। কুশিয়ারা তীরের বাহাদুরপুর নামক স্থানে বরাক নদী নাম ধারণ করে। নদীর একটি শাখা হবিগঞ্জের ফুটারচর নামক স্থানে ফের দুটি শাখায় বিভক্ত হয়েছে। একটি শাখা বিজনা নদীতে পতিত হয়েছে। অপরটি শাখা বরাক নাম ধারণ করে নবীগঞ্জের বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে ফের কুশিয়ারা নদীতে পতিত হয়েছে।
কালের পরিক্রমায় বরাক নদীর স্রোতধারা সচল রাখার লক্ষ্যে মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ড সদর উপজেলা অংশের ৮ কিলোমিটার অংশ খননের উদ্যোগ নেয়। ২০১৮ সালে নদীর দুই তীরের বৃহৎ অংশ ছেড়ে প্রায় এক কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে চাঁনপুর পর্যন্ত বরাক নদী খনন করা হয়। বাহাদুরপুরের উৎপত্তিস্থল পলিস্তর জমে অনেক উঁচু থাকায় কুশিয়ারা থেকে বর্ষা মৌসুমেই স্বাভাবিকভাবে পানি প্রবেশ করতে পারে না। শুষ্ক মৌসুমে সংযোগস্থল খা খা মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে।
অন্যদিকে প্রয়োজনীয় অনেকটা অংশ ছেড়ে দিয়ে নদীর ৩০-৪০ ফুট করে খননের আওতায় নেওয়া হয়েছে। ফলে ছেড়ে দেওয়া অংশে স্থানীয়দের অনেকে দখল করে ঘরবাড়ি গড়ে তুলেছেন। এমনটাই জানিয়েছেন বরাক তীরের নসিরপুর গ্রামের নূরুল ইসলাম।
তিনি আরও জানান, ২০-২৫ বছর আগেও এ নদী দিয়ে তীব্র বেগে পানি প্রবাহিত হতো। প্রচুর মাছ পাওয়া যেত হাওর আর বিলে। নদীর বেহাল দশায় জমিতে পলিবাহিত পানি ওঠে না এখন, আগের মতো ফসল উৎপাদনও হয় না।
খলিলপুর ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের মুজাহিদ আলী জানান, পুরো বরাক নদী খনন না করায় বর্ষায় সামান্য বৃষ্টি হলেই চাঁনপুর, কাটারাই, আলাপুর, মুকিমপুরসহ বিভিন্ন গ্রামের মানুষ প্রতি বছর জলাবদ্ধতার কবলে পড়েন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট। একসঙ্গে ২০০ থেকে ৩০০ একর জমিতে একেক মৌসুমে কয়েকবার করে চারা লাগাতে হয়। তিনি আরও জানান, এ নদীর নিম্নাঞ্চল খনন প্রকল্পের আওতায় নেওয়া হলে এই অঞ্চলের মানুষ জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্ত হতো।
স্থানীয় খলিলপুর ইউপি চেয়ারম্যান আবু মিয়া চৌধুরী জানান, সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ নিরসনের লক্ষ্যে বরাকের নিম্নাঞ্চল খননের জন্য প্রকল্প গ্রহণে শিগগিরই পানি উন্নয়ন বোর্ডে একটি আবেদন করা হবে। তিনি জানান, এরই মধ্যে সদর উপজেলা ও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করে হয়েছে। এর আগে পানি নিষ্কাশনে ওই এলাকার ফুটারচর গ্রামে নির্মিত বাঁধ কেটে দেওয়ার সুপারিশ করলেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি।
মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খালেদ ইবনে ওয়ালিদ সমকালকে জানান, নদী ভরাট করে অনেক স্থানে রাস্তা, কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করায় নিয়ন্ত্রণাধীন কিছু জায়গা খনন করা যায়নি। হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলাধীন এলাকার বরাক নদীর অংশ খনন করা হলে পানি স্বাভাবিক গতিতে প্রবাহিত হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সদর উপজ ল বর ক ন ত হয় ছ খনন ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য বাস সার্ভিস চালু

৪৭তম বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালুর উদ্যোগ নিয়েছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (মাভাবিপ্রবি) শাখা ছাত্রদল। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ঢাকা ও ময়মনসিংহের পরীক্ষা কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের নির্বিঘ্নে পৌঁছানোর লক্ষ্যে এ বিশেষ যাতায়াত সুবিধার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাতে শাখা ছাত্রদলের কর্মী নাফিস ইকবাল পিয়াল বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ফেসবুক গ্রুপে এ তথ্য জানিয়ে পোস্ট দেন। একইসঙ্গে শাখা সভাপতি সাগর নাইম ও সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপুও তাদের ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে পোস্ট দিয়ে পরীক্ষার্থীদের এ সুবিধা গ্রহণের আহ্বান জানান।

আরো পড়ুন:

ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচনী রোডম্যাপের দাবিতে মানববন্ধন

বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান অর্জন ও বিতরণের জায়গা: ইউজিসি চেয়ারম্যান

ছাত্রদল জানিয়েছে, ক্যাম্পাস থেকে দুটি বাস ছাড়বে। একটি ঢাকা রুটে এবং অপরটি ময়মনসিংহ রুটে যাবে। প্রতিটি বাসে ৫০ জন করে মোট ১০০ জন শিক্ষার্থী এই ফ্রি সার্ভিসের আওতায় যাতায়াত করতে পারবেন। এজন্য শিক্ষার্থীদের অবশ্যই আগাম রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত গুগল ফর্মের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ এই সার্ভিসের সুবিধা নিতে পারবেন না।

শিক্ষার্থীদের জন্য এ উদ্যোগ ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে প্রশংসা কুড়িয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক শিক্ষার্থী পোস্ট দিয়ে ছাত্রদলের এ পদক্ষেপকে ‘শিক্ষার্থীবান্ধব ও সময়োপযোগী উদ্যোগ’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

শাখা সভাপতি সাগর নাইম তার পোস্টে বলেন, “প্রতি বছর বিসিএসে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সাফল্যের আলো ছড়িয়ে দেন। আমরা চাই এ সুনাম আরো দূরে ছড়িয়ে পড়ুক, আরো উজ্জ্বল হোক। এ ধারাবাহিক সাফল্যের পথে আপনাদের পাশে থাকতে, ভালোবাসা ও সম্মান জানাতে মাভাবিপ্রবি ছাত্রদল ৪৭তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বিশেষ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছে।”

এ বিষয়ে শাখা সাধারণ সম্পাদক সাজিদ ইসলাম দীপু বলেন, “জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল সবসময়ই শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করে থাকে। গত বিসিএসে আমাদের বড় ভাই বিসিএস প্রশাসনে প্রথম হয়েছেন। এটি শুধু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, সারা দেশের জন্যই গর্বের বিষয়। সেই সাফল্যের ধারা অব্যাহত রাখতে এবং শিক্ষার্থীদের কল্যাণে আমরা এবার পরীক্ষার্থীদের জন্য ফ্রি বাস সার্ভিস চালু করেছি।”

তিনি বলেন, “বিশেষ করে অনেক নারী শিক্ষার্থী আছেন, যারা ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র অনেক দূরে হওয়ায় অংশ নিতে পারেন না। আবার অনেকে যানবাহন না পেয়ে দেরিতে কেন্দ্রে পৌঁছান। আমরা চাইনি কেউ যেন যাতায়াত সমস্যার কারণে বিসিএস পরীক্ষায় পিছিয়ে পড়েন। তাই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ভাইয়ের সহায়তায় আমরা এ বাস সার্ভিসের ব্যবস্থা করেছি।”

ঢাকা/আবিদ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ