হরমোনের অসামঞ্জস্যতায় হতে পারে শিশুর খিঁচুনি, এক্ষেত্রে কী করবেন
Published: 9th, March 2025 GMT
খিঁচুনি নিঃসন্দেহে একটি জটিল সমস্যা। শিশুর খিঁচুনি অভিভাবক ও চিকিৎসক দুই পক্ষকেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। শিশুর বেশির ভাগ খিঁচুনির কারণ, স্নায়বিক অর্থাৎ মস্তিষ্ককেন্দ্রিক। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন হরমোনের প্রভাবে ও কীভাবে শিশুর খিঁচুনিতে এগুলো ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে:
হরমোন রক্তের অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান—সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর তারতম্য ঘটলে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে।
হরমোনের কারণে অতিমাত্রায় রক্তচাপ বেড়েও খিঁচুনি হতে পারে। এমন খিঁচুনির জন্য মূলত অ্যাড্রেনাল, প্যানক্রিয়াস, পিটুইটারি ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনসমূহ দায়ী।
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিসল ও অ্যালডোস্টেরন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শরীরে সোডিয়াম ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এ গ্রন্থির কোনো রোগ, বিশেষ করে হরমোনের অপর্যাপ্ত নিঃসরণ দেখা দিলে খিঁচুনি হতে পারে। আবার অতিমাত্রায় অ্যালডোস্টেরন শরীরে সোডিয়াম বাড়িয়ে দেয় ও খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার থেকে নিঃসৃত ক্যাটাকোলামাইনস হরমোন রক্তচাপ বাড়িয়েও খিঁচুনি তৈরি করতে পারে।
পিটুইটারির হরমোন ভ্যাসোপ্রেসিন কমে গেলে সোডিয়াম বাড়তে পারে, ডিহাইড্রেশন হতে পারে—দুটিই চরম পর্যায়ে খিঁচুনি তৈরি করতে পারে। আবার ভ্যাসোপ্রেসিন সংবলিত ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে সোডিয়াম কমে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।
আরও পড়ুনশিশুর খাবারে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বাদ পড়ছে কি ২২ ডিসেম্বর ২০২৪গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে মূলত ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামক দুটি হরমোন; যা প্যানক্রিয়াস নামক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। রক্তে গ্লুকোজ অতিমাত্রায় কম বা বেশি হলে খিঁচুনি হতে পারে। ইনসুলিনের অভাব গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হয়ে রোগীর খিঁচুনি হতে পারে।
রক্তে ক্যালসিয়াম কম-বেশি হলেও হতে
পারে খিঁচুনি। রক্তের এই ক্যালসিয়াম
নিয়ন্ত্রিত হয় প্যারাথর্মন ও ভিটামিন-ডি দিয়ে। এ দুটিও হরমোন।
এ ছাড়া কিছু রোগ, যেমন মস্তিষ্কের টিউমার (হাইপোথ্যালামিক হ্যামার্টমা), থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য বা গ্রোথ হরমোনের
ঘাটতি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে।
কোনো কোনো ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা একদিকে এপিলেপসি (খিঁচুনিরোগ) নামক রোগকে উসকে দিতে পারে; অন্যদিকে এপিলেপসির চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল এক্সিস ও হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-থাইরয়েড এক্সিস ক্ষতিগ্রস্ত করে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা ঘটিয়ে খিঁচুনি তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুনশিশুর বৃদ্ধি কি ঠিকঠাক হচ্ছে ১২ জানুয়ারি ২০২৫সতর্কতা
খিঁচুনি হলেই আমরা বিভিন্ন সংক্রমণ ও মস্তিষ্কের রোগ বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই হরমোনজনিত সমস্যার কথা মনে রাখি না। অথচ হরমোনের অসামঞ্জস্যতায় অনেক শিশু খিঁচুনিতে ভুগতে পারে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত নিরাময়যোগ্য।
আশা করা যায়, আজকের আলোচনার পর আমরা শিশুদের খিঁচুনি হলে হরমোনজনিত সমস্যার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব এবং সঠিক কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসার পথ প্রশস্ত করতে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখব।
ডা.
রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোনরোগবিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, আগারগাঁও, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প ট ইট র হরম ন র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’