খিঁচুনি নিঃসন্দেহে একটি জটিল সমস্যা। শিশুর খিঁচুনি অভিভাবক ও চিকিৎসক দুই পক্ষকেই দুশ্চিন্তায় ফেলে দেয়। শিশুর বেশির ভাগ খিঁচুনির কারণ, স্নায়বিক অর্থাৎ মস্তিষ্ককেন্দ্রিক। আসুন জেনে নেওয়া যাক, কোন কোন হরমোনের প্রভাবে ও কীভাবে শিশুর খিঁচুনিতে এগুলো ভূমিকা রাখে সে সম্পর্কে:

হরমোন রক্তের অতিগুরুত্বপূর্ণ উপাদান—সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম ও গ্লুকোজের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এর তারতম্য ঘটলে শিশুর খিঁচুনি হতে পারে।

হরমোনের কারণে অতিমাত্রায় রক্তচাপ বেড়েও খিঁচুনি হতে পারে। এমন খিঁচুনির জন্য মূলত অ্যাড্রেনাল, প্যানক্রিয়াস, পিটুইটারি ও প্যারাথাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনসমূহ দায়ী।

অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে কর্টিসল ও অ্যালডোস্টেরন নামক হরমোন নিঃসৃত হয়, যা শরীরে সোডিয়াম ও গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। তাই এ গ্রন্থির কোনো রোগ, বিশেষ করে হরমোনের অপর্যাপ্ত নিঃসরণ দেখা দিলে খিঁচুনি হতে পারে। আবার অতিমাত্রায় অ্যালডোস্টেরন শরীরে সোডিয়াম বাড়িয়ে দেয় ও খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে। অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার থেকে নিঃসৃত ক্যাটাকোলামাইনস হরমোন রক্তচাপ বাড়িয়েও খিঁচুনি তৈরি করতে পারে।

পিটুইটারির হরমোন ভ্যাসোপ্রেসিন কমে গেলে সোডিয়াম বাড়তে পারে, ডিহাইড্রেশন হতে পারে—দুটিই চরম পর্যায়ে খিঁচুনি তৈরি করতে পারে। আবার ভ্যাসোপ্রেসিন সংবলিত ওষুধ দিয়ে ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাস রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে রক্তে সোডিয়াম কমে খিঁচুনির উদ্রেক করতে পারে।

আরও পড়ুনশিশুর খাবারে গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান বাদ পড়ছে কি ২২ ডিসেম্বর ২০২৪

গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে মূলত ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামক দুটি হরমোন; যা প্যানক্রিয়াস নামক গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। রক্তে গ্লুকোজ অতিমাত্রায় কম বা বেশি হলে খিঁচুনি হতে পারে। ইনসুলিনের অভাব গুরুতর পর্যায়ে পৌঁছালে ডায়াবেটিক কিটোঅ্যাসিডোসিস হয়ে রোগীর খিঁচুনি হতে পারে।

রক্তে ক্যালসিয়াম কম-বেশি হলেও হতে

পারে খিঁচুনি। রক্তের এই ক্যালসিয়াম

নিয়ন্ত্রিত হয় প্যারাথর্মন ও ভিটামিন-ডি দিয়ে। এ দুটিও হরমোন।

এ ছাড়া কিছু রোগ, যেমন মস্তিষ্কের টিউমার (হাইপোথ্যালামিক হ্যামার্টমা), থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য বা গ্রোথ হরমোনের

ঘাটতি হলেও কোনো কোনো ক্ষেত্রে খিঁচুনি হতে পারে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে হরমোনের সমস্যা একদিকে এপিলেপসি (খিঁচুনিরোগ) নামক রোগকে উসকে দিতে পারে; অন্যদিকে এপিলেপসির চিকিৎসায় ব্যবহৃত কিছু ওষুধ হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-অ্যাড্রেনাল এক্সিস ও হাইপোথ্যালামো-পিটুইটারি-থাইরয়েড এক্সিস ক্ষতিগ্রস্ত করে ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা ঘটিয়ে খিঁচুনি তৈরি করতে পারে।

আরও পড়ুনশিশুর বৃদ্ধি কি ঠিকঠাক হচ্ছে ১২ জানুয়ারি ২০২৫

সতর্কতা

খিঁচুনি হলেই আমরা বিভিন্ন সংক্রমণ ও মস্তিষ্কের রোগ বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসা করি। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই হরমোনজনিত সমস্যার কথা মনে রাখি না। অথচ হরমোনের অসামঞ্জস্যতায় অনেক শিশু খিঁচুনিতে ভুগতে পারে, যা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দ্রুত নিরাময়যোগ্য।

আশা করা যায়, আজকের আলোচনার পর আমরা শিশুদের খিঁচুনি হলে হরমোনজনিত সমস্যার কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করব এবং সঠিক কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসার পথ প্রশস্ত করতে যার যার অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখব।

ডা.

রবি বিশ্বাস, শিশু হরমোনরোগবিশেষজ্ঞ, অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউট, আগারগাঁও, ঢাকা

আরও পড়ুনশিশুর সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক গড়ার জন্য দিনের যে চারটি সময় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ১৬ জানুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ট ইট র হরম ন র সমস য

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ