ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ার নয়ারহাট বাজারে দোকান বন্ধের সময় স্ত্রীর সামনে এক স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় ডাকাত দলের সদস্যরা ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে ওই ব্যবসায়ীর স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে গেছে।

রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ডাকাতদের হামলায় আহত ওই ব্যবসায়ীকে সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

নিহত দিলীপ দাস (৪৮) সাভারের পাথালিয়া ইউনিয়নের গোপীনাথপুর দাসপাড়া গ্রামের দুলাল দাসের ছেলে। তিনি নয়ারহাট বাজারে দিলীপ স্বর্ণালয় নামের একটি সোনার দোকানের মালিক।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে আশুলিয়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো.

কামাল হোসেন বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে, দিলীপ যখন তালাবদ্ধ করে দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন তখন চারজন লোক এসে তাঁকে পেছন থেকে আঘাত করে। পরে তিনি সামনে ঘুরলে আবারও তাঁকে আঘাত করা হয়। তাঁর হাতে একটি ব্যাগ ছিল। সেই ব্যাগ হামলাকারীরা ছিনিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ব্যাগে কী ছিল, সেটি এখনো জানা সম্ভব হয়নি। ফুটেজে ধোঁয়া দেখা গেছে, সম্ভবত তারা ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছিল। অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার চেষ্টা চলছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাত সাড়ে আটটার দিকে দোকান বন্ধ করে বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন দিলীপ দাস। এ সময় তাঁর স্ত্রী সেখানে উপস্থিত ছিলেন। দোকানে তালা দেওয়ার সময় দৌড়ে এসে সেখানে তিন-চারজন উপস্থিত হয়। তারা একটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দিলীপের কাছে থাকা ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। বাধা দিতে গেলে দিলীপকে কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা আরও কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সেখান থেকে দ্রুত চলে যায়।

দিলীপ দাসের ফুফাতো ভাই খোকন সরকার বলেন, ‘সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে দোকান বন্ধ করে দিলীপ বাসায় চলে গিয়েছিলেন। পরে ওষুধ কেনার জন্য স্ত্রীকে নিয়ে আবার বাজারে আসেন। এ সময় পরিচিত একজনের কাছে দোকান থেকে স্বর্ণের চেইন বিক্রি করেন। পরে দোকান বন্ধ করে শাটার নামানোর সময় তিন-চারজন দিলীপকে কুপিয়ে ব্যাগ ছিনিয়ে নেয়। ব্যাগে ১৫-২০ ভরি স্বর্ণালংকার ছিল।’

দিলীপের স্ত্রী সরস্বতী দাস বলেন, ‘বাসায় যাওয়ার জন্য দোকান বন্ধ করে টাকা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে রওনা হয়। আমিও সাথে ছিলাম। তাকে কুপাইয়া সব নিয়ে গেছে।’

বেসরকারি এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মেরাজুর রেহান বলেন, রাত ১০টার দিকে মারাত্মক আহত অবস্থায় দিলীপ দাসকে হাসপাতালে আনা হয়। তাঁর বুকে বড় ক্ষত ছিল। গালের ডান পাশে ও পিঠে ক্ষত ছিল। চিকিৎসা শুরুর পরপরই তিনি মারা যান। ধারণা করা হচ্ছে, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা গেছেন। তাঁকে স্যালাইন দেওয়া হয়, লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়, অপারেশন থিয়েটারেও নেওয়া হয়। তবে তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স বর ণ ল ক র ব যবস য় ককট ল

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ