নারীর প্রতি সহিংসতা-নির্যাতন বরাবরই চলে আসছে বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কেউ কেউ বলছেন বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কেউ বলছেন আগে থেকেই এসব বিষয় চলে আসছে। একটা অপরাধ আগে থেকে চলে আসছে বলে তা পাশ কাটিয়ে যাব, এটা কোন ধরনের মানসিকতা?

বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার কারণ, নারীরা এর শিকার বলে? কিন্তু এটা মানবাধিকার লঙ্ঘন। এ কথা নারী আন্দোলনের কর্মীরা বলে আসছেন, গণমাধ্যমও একই কথা বলে আসছে। তবু কেন জানি এটা হালে পানি পায় না।

অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রত্যাশা, তারা মানুষের পক্ষে অবস্থান নেবে। সরকার অবশ্য নড়েচড়ে বসছে। কিন্তু উচ্চপর্যায় থেকে কঠোর বার্তা দেওয়ার কথা বলা হলেও প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মাঠপর্যায়ে সেভাবে তৎপরতা দেখা যায় না।

মাগুরায় শিশু ধর্ষণের মতো ঘটনাতেও পুলিশ সুনির্দিষ্ট অভিযোগের আশায় থাকে। এটা হতভম্ব হওয়ার মতো ঘটনা। পরিবার কি সেই অবস্থার মধ্যে থাকে? রাষ্ট্রই তো ব্যবস্থা নেবে। জনগণের করের টাকায় এই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চলে। নারীর প্রতি সহিংসতা, নিপীড়নের সব ঘটনা গণমাধ্যমে বা প্রকাশ্যে আসে না। আড়ালে থেকে যায়।

অজুহাত তিন রকমের আসছে—বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আগে থেকেই ঘটছে এবং আমরা করছি। আরও একটা গুরুতর অজুহাত আছে—ফ্যাসিবাদী গোষ্ঠীর দোসররা করছে, টাকা ঢালছে। এসব বললে হবে না। জনগণ তো সরকারের কাছে প্রত্যাশা করে। সরকারকে তার দায়িত্ব কঠোরভাবে পালন করতে হবে। দায়িত্ব এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই রাষ্ট্রের। তা ভুক্তভোগী নারী, শিশু বা পুরুষ হোক। নির্যাতনের বিরুদ্ধে সরকার অবস্থান না নিলে মানুষ অবস্থান নিতে শুরু করবে। শনিবার মধ্যরাতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, নতুন প্রজন্ম তা দেখিয়েছে। তারা দাঁড়ানোর পর সরকারের টনক নড়ল, এটা ঠিক নয়। যেকোনো মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় আমরা প্রত্যাশা করি, জনগণকে সুরক্ষা দিতে সরকার দাঁড়াবে।

তবে সমাজে-রাজনীতিতে একটা ইতিবাচক চিত্রও দেখা যাচ্ছে। নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে কেউ অবস্থান নিলে, কথা বললে, বক্তব্য দিলে সে ব্যাপারে কোনো রাজনৈতিক দল আপত্তি করেনি।

নারীর প্রতি সব ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার সদিচ্ছা সরকারের আছে বলে আমরা বিশ্বাস করি। সেই সদিচ্ছার বহিঃপ্রকাশ যথাসময়ে যথাস্থানে দেখাতে হবে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

সহিংসতার বিরুদ্ধে গণমাধ্যম, নারী অধিকারকর্মী—সবাই মিলে চিৎকার করছি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত এই নতুন প্রজন্ম বা শিক্ষার্থীরা টনক নড়িয়েছে, তাদের ধন্যবাদ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অবস থ ন ন সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ