‘সংস্কার’ নির্বাচনের আগে নাকি পরে, ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত চায় কমিশন
Published: 10th, March 2025 GMT
‘‘স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’’- এমনটাই জানিয়েছেন কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘‘ছয়টি সংস্কার কমিশন থেকে প্রাপ্ত ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।’’
ড. আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘চিঠিতে দলগুলোকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে নিজেদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। মূলত তাদের সেই মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। এরপর একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।’’
সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যগুলো জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড.
তিনি বলেন, ‘‘যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। আশা করছি, ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।’’
সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’’
ড. আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’
এ ছাড়া প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়ের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গাও রাখা হয়েছে।’’
এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত জানার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান ড. আলী রীয়াজ।
আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রায় ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে ৫ আগস্ট; শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়ন করতে বাধ্য হন।’’
এ প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয়টি কমিশন তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই ছয়টি কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং পদক্ষেপ সুপারিশের উদ্দেশ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের সভাপতি।’’
এ কমিশনে সহসভাপতির দায়িত্ব আমার (আলী রীয়াজ) ওপরে অর্পণ করা হয়। এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক এবং ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস। কমিশনের কাজে সহযোগিতা করার উদ্দেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে সাংবাদিক মনির হায়দারকে নিয়োগ করা হয়। তিনি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশনের উদ্বোধন উপলক্ষে ওই দিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ইউনুসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা হয়। এই সভায় ৩৪টি দলের মোট ১০৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।’’
সুপারিশের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে সময় লাগলে, সেটি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ফলে নির্বাচনের যে সময়সূচি তৈরির চেষ্টা চলছে, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে। ফলে সংস্কার কমিশনের কাজ বা ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ আমি দেখি না।’’
এ সময় ড. বদিউল আলম মজুমদার, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঐকমত য মত মত জ ন সরক র র র মত মত ব যবস থ ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
সনদ বাস্তবায়নে দ্রুত সিদ্ধান্ত, আরপিওতে পরিবর্তন আসছে
জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে সরকার। আর যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, সে বিষয়ে সরকার অনড় থাকবে। এদিকে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) অধ্যাদেশের খসড়ায় আবার পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
গতকাল শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কয়েকজন উপদেষ্টার সঙ্গে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে এসব নিয়ে আলোচনা করেন। বৈঠকে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হয়।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, সদ্য অনুমোদন দেওয়া নির্বাচন-সংক্রান্ত আইন আরপিওর (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া আবারও সংশোধন করতে যাচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জোটগতভাবে নির্বাচন করলে নিজের দলের প্রতীকে নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো প্রার্থী চাইলে নিজ দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন, অথবা জোটের কোনো দলের প্রতীকেও নির্বাচন করতে পারবেন।
এর আগে গত ২৩ অক্টোবর গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া অনুমোদন করেছিল অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। তখন সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কোনো দল জোটগতভাবে নির্বাচন করলেও নিজেদের প্রতীকে অংশ নিতে হবে।
এরপর ওই বিধান নিয়ে আপত্তি জানায় বিএনপি ও ছোট দলগুলো। ছোট দলগুলো এ নিয়ে নিজেদের আপত্তি ও উৎকণ্ঠার কথা কয়েকজন উপদেষ্টাকে জানায়। একপর্যায়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের আপত্তি জানায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, প্রধান উপদেষ্টার আগ্রহ এবং নির্দেশনায় আরপিওতে সর্বশেষ পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়।
আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে। এ লক্ষ্যে আগামী ডিসেম্বরের প্রথমার্ধে তফসিল ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন।
গত মঙ্গলবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে সুপারিশ জমা দিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। সেখানে বলা হয়েছে, সনদের সংবিধান-সম্পর্কিত সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়নে বিশেষ আদেশ জারি করে তার ভিত্তিতে গণভোট হবে। গণভোটে প্রস্তাব পাস হলে আগামী সংসদ সংবিধান সংস্কার পরিষদ হিসেবে ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার করবে। তবে গণভোট কবে হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার সরকারের ওপর ছেড়ে দিয়েছে ঐকমত্য কমিশন। সরকার সিদ্ধান্ত নেবে গণভোট কি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিন একই সঙ্গে হবে, নাকি আগে হবে।
সুপারিশ জমা দেওয়ার পর রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারির এখতিয়ার সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। আর জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট অনুষ্ঠান অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক ও অবিবেচনাপ্রসূত বলেও মনে করে দলটি। জামায়াতে ইসলামীসহ আটটি দল নভেম্বরের মধ্যে গণভোটসহ পাঁচ দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের পদক্ষেপ দেখার পরই এনসিপি সনদে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য ছিল। সংস্কার বাস্তবায়ন নিয়ে ঐকমত্য কমিশন সুপারিশ জমা দেওয়ার পর তা নতুন করে তীব্রভাবে সামনে এল।