‘‘স্বল্প সময়ের মধ্যে ‘জাতীয় সনদ’ তৈরি করতে চায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন’’- এমনটাই জানিয়েছেন কমিশনের সহ সভাপতি ড. আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘‘ছয়টি সংস্কার কমিশন থেকে প্রাপ্ত ১৬৬টি সুপারিশ ও পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনসহ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।’’

ড. আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘চিঠিতে দলগুলোকে আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে নিজেদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে। মূলত তাদের সেই মতামতের ভিত্তিতে সংস্কার বিষয়ে আলোচনা শুরু হবে। এরপর একটি জাতীয় সনদ তৈরি করা হবে।’’

সোমবার (১০ মার্চ) জাতীয় সংসদ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তথ্যগুলো জানিয়েছেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহ সভাপতি ড.

আলী রীয়াজ।

তিনি বলেন, ‘‘যখন যে দলের মতামত পাওয়া যাবে, সে সময় থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে। আশা করছি, ১৩ মার্চের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের মতামত জানাবে। এ ক্ষেত্রে কোনো প্রশ্ন থাকলে তারা কমিশনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারে। কমিশন এ বিষয়ে সবসময় প্রস্তুত রয়েছে।’’

সংস্কার কমিশনের ১৬৬টি সুপারিশ রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠানোর কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘সুপারিশগুলোর মধ্যে সংবিধান সংস্কার সংক্রান্ত ৭০টি, নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার সংক্রান্ত ২৭টি, বিচার বিভাগ সংক্রান্ত ২৩টি, জনপ্রশাসন সংক্রান্ত ২৬টি ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংক্রান্ত ২০টি সুপারিশ ৩৪টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তবে পুলিশ সংস্কার কমিশন মনে করে, তাদের সুপারিশগুলো প্রশাসনিক ব্যবস্থার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা সম্ভব।’’

ড. আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘প্রতিটি সুপারিশের ক্ষেত্রে দুটি বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। প্রথমটি হলো সংশ্লিষ্ট সুপারিশের বিষয়ে একমত কি না। এতে তিনটি বিকল্প রাখা হয়েছে। সেগুলো হলো ‘একমত’, ‘একমত নই’ এবং ‘আংশিকভাবে একমত’। এ তিনটি বিকল্পের যেকোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।’’

এ ছাড়া প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে সংস্কারের সময়কাল ও বাস্তবায়নের উপায়ের বিষয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে ছয়টি বিকল্প আছে। সেগুলো হলো ‘নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের সময় গণভোটের মাধ্যমে’, ‘গণপরিষদের মাধ্যমে’, ‘নির্বাচনের পরে সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে’ এবং ‘গণপরিষদ ও আইনসভা হিসেবে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে’। এসব ঘরের যে কোনো একটিতে টিক চিহ্ন দিয়ে মতামত দিতে বলা হয়েছে। এর বাইরে প্রতিটি সুপারিশের পাশে দলগুলোর ‘মন্তব্য’ দেওয়ার একটি জায়গাও রাখা হয়েছে।’’

এ সময় রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ব্যাপারে নাগরিকদের মতামত জানার ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান ড. আলী রীয়াজ।

আলী রীয়াজ বলেন, ‘‘২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে প্রায় ষোল বছরের ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসান ঘটে ৫ আগস্ট; শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে পলায়ন করতে বাধ্য হন।’’

এ প্রেক্ষাপটে অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করেন। এর মধ্যে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি দমন কমিশন এবং পুলিশ সংস্কারের জন্যে গঠিত ছয়টি কমিশন তাদের সুপারিশ সম্বলিত প্রতিবেদনগুলো সরকারের কাছে জমা দেয়।

তিনি আরো বলেন, ‘‘আগামী নির্বাচন সামনে রেখে এই ছয়টি কমিশনের সুপারিশ বিবেচনা ও গ্রহণের লক্ষ্যে জাতীয় ঐকমত্য গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল ও শক্তিগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং পদক্ষেপ সুপারিশের উদ্দেশ্যে গত ১২ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এই কমিশনের সভাপতি।’’  

এ কমিশনে সহসভাপতির দায়িত্ব আমার (আলী রীয়াজ) ওপরে অর্পণ করা হয়। এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন ড. বদিউল আলম মজুমদার, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক এবং ড. ইফতেখারুজ্জামান। এ কমিশনের মেয়াদ ছয় মাস। কমিশনের কাজে সহযোগিতা করার উদ্দেশে গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে সাংবাদিক মনির হায়দারকে নিয়োগ করা হয়। তিনি ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে যুক্ত আছেন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ এবং সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন।

সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করা আলী রীয়াজ আরো বলেন, ‘‘গত ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে এই কমিশন কাজ শুরু করে। কমিশনের উদ্বোধন উপলক্ষে ওই দিন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশনের সভাপতি অধ্যাপক ইউনুসের সভাপতিত্বে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সৌজন্য সভা হয়। এই সভায় ৩৪টি দলের মোট ১০৪ জন প্রতিনিধি অংশ নেন।’’  

সুপারিশের বিষয়ে ঐক্যমত্যে পৌঁছাতে সময় লাগলে, সেটি নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘নির্বাচন এবং সংস্কার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। ফলে নির্বাচনের যে সময়সূচি তৈরির চেষ্টা চলছে, ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন করার ব্যাপারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুস বলেছেন, সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়েছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে আশা করি খুব শিগগিরই এ ব্যাপারে আরো সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ আসবে। ফলে সংস্কার কমিশনের কাজ বা ঐকমত্য কমিশনের কাজের কারণে নির্বাচনী প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণ আমি দেখি না।’’

এ সময় ড. বদিউল আলম মজুমদার, আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী, সফররাজ হোসেন, বিচারপতি এমদাদুল হক ও ড. ইফতেখারুজ্জামান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/হাসান/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঐকমত য মত মত জ ন সরক র র র মত মত ব যবস থ ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে সরকার অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। 
গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। 

এর আগে গত রোববার বিকেলে মানবিক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো, তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মানবিক করিডোরের ব্যাপারে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই ইস্যুতে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে সরকার কী করছে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এর পর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা জাতির সামনে তুলে ধরবে। 
বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যেখানে মিয়ানমারে একটি যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে; দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে; আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে– এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। এ অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনও বিষয়টি (রাখাইনে মানবিক করিডোর) পুরোপুরি জানি না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সরকার একতরফাভাবে দেশের জনগণ তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা শুনেছি, মানবিক কারণে তারা এই করিডোর দেবে। কিন্তু সেটা কীভাবে দেবে, তা জানি না। এটাও শুনেছি– কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো কী, জানি না। সরকারের উচিত বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো। আমরাও এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। এর পর আমরা দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে অবস্থান জানাব।

গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। তারা (সরকার) একক সিদ্ধান্তে মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ করে দিচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। 
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত, এটাই বাংলাদেশের অবস্থান: প্রেস সচিব
প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত– এটাই বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি বলেন, সংকটকালে অন্য দেশকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বরাবরই ভূমিকা রয়েছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের সহায়তা। আমাদের আশঙ্কা, রাখাইন থেকে আরও মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমারা সামাল দিতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল রাখতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হয়ে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মতি সরকার। যদিও রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যথাসময়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ
করিডোর দেওয়ার খবরে প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায়  সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে– দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। 

জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পরামর্শ চরমোনাইয়ের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কুমিল্লা মহানগরের শূরা সম্মেলনে বলেছেন, বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে: সিপিবি
মানবিক করিডোরের খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিবি। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লঙ্ঘন করে এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে।

এটি জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল: বাসদ
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল।

জাতীয় ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি: গণসংহতি আন্দোলন
মানবিক করিডোর বিষয়ে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলেছে, আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের বরাত দিয়ে দলটি বিবৃতিতে জানায়, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে বিশদ আলাপ আলোচনা ও ঐকমত্য প্রয়োজন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ‘আশু বাস্তবায়নযোগ্য’ সব সুপারিশে একমত নয় ইসি
  • তিন বিষয়ে একমত এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন
  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
  • অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের