শর্ত না মানাই বেসরকারি মেডিকেলের অভ্যাস
Published: 11th, March 2025 GMT
বেসরকারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যাপারে ছয় মাসের ব্যবধানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অবস্থান পাল্টিয়েছে। গত জুনে বলেছিল, কলেজে শিক্ষক ও পরিসর (স্পেস) ঘাটতি এবং হাসপাতাল রোগী কম আসাসহ কয়েকটি কারণে কলেজের আসন কমানোর পাশাপাশি শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ রাখতে হবে। নভেম্বরে কিছু শর্ত জুড়ে দিয়ে বলছে, আসন ঠিক থাকবে, নতুন ভর্তিতে বাধা নেই।
শুধু এই একটি মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে এমন ঘটছে তা নয়, বছর বছর এমন লুকোচুরি চলছে। প্রায় সব বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে এটা দেখা যাচ্ছে। কেউই শর্ত পুরোপুরি মানছে না। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কলেজের (বিএমডিসি) প্রতিনিধিরা কলেজ পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে কলেজগুলোর নানা ধরনের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়। এগুলো দূর করে শর্ত সাপেক্ষে কলেজ চালুর অনুমতিও দেওয়া হয়। যদিও শর্ত পূরণ না করেই কলেজ চলতে থাকে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, শর্ত না মানাই বেসরকারি মেডিকেলের অভ্যাস।
দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আছে ৭১টি। গত তিন বছরে দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে। এগুলো হলো সাভারের আশুলিয়ায় নাইটিঙ্গেল মেডিকেল কলেজ ও মোহাম্মদপুরের কেয়ার মেডিকেল কলেজ। রাজশাহীর শাহ মখদুম, রাজধানীর আইচি ও নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ এবং রংপুর নর্দার্ন—চারটি মেডিকেল কলেজকে অবকাঠামো উন্নতিসহ নানা শর্ত দিয়ে ভর্তি স্থগিত রেখেছে সরকার। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক নাজমুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি বা বেসরকারি মেডিকেল কলেজ খুব কম আছে, যারা আদর্শ অবস্থায় চলছে। কিছু মেডিকেল কলেজের দুর্বলতা সামান্য, কিছু কলেজের মারাত্মক। আমাদের কাজ মেডিকেল শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়া, মান উন্নত করা, মান বজায় রাখা, মেডিকেল কলেজ বন্ধ করা নয়।’
প্রতিবেদনে কলেজগুলোর নানা ধরনের ত্রুটি ও সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করা হয়। এগুলো দূর করে শর্ত সাপেক্ষে কলেজ চালুর অনুমতিও দেওয়া হয়। যদিও শর্ত পূরণ না করেই কলেজ চলতে থাকে।বাইরে ফিটফাটগাজীপুরের গুশুলিয়া এলাকায় ২০০০ সালে ৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ যাত্রা শুরু করে। এখন কলেজটি বছরে ১৩০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
২৮ জানুয়ারি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে গিয়ে কিছু অবকাঠামো উন্নয়নকাজ চোখে পড়ে। একটি বড় লাইব্রেরি ও একাধিক লেকচার থিয়েটার তৈরির কাজ চোখে পড়ল।
কলেজ চত্বরে একটি বড় পুকুর আছে। কলেজ ভবন, হাসপাতাল ভবন, মিলনায়তন, ছাত্র ও ছাত্রীদের পৃথক আবাসন (হোস্টেল), ইন্টার্ন চিকিৎসকদের জন্য পৃথক হোস্টেল চোখে পড়ল। রয়েছে ছোট একটি খেলার মাঠও।
দুই বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর এই কলেজের অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়েছেন অধ্যাপক এ এস এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, কলেজ ঠিকঠাকমতো চলছে। প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক আছে, দিন দিন কলেজের উন্নতির চেষ্টাও চলছে।
তাহলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কেন ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি বন্ধ এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০ থেকে কমিয়ে ৫০ করতে বলেছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে এ এস এম ইকবাল হোসেন চৌধুরী বলেন, এখন সব ঠিক হয়ে গেছে।
যাঁরা আইন তৈরি করেছেন, আর যাঁরা কলেজের মালিক, তাঁদের কাছে শিক্ষাটা গৌণ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক ও আলোচনা হওয়া দরকার। তবে এভাবে আর চলতে দেওয়া ঠিক না। এতে ক্ষতি হয়েই চলেছে। রশীদ-ই-মাহবুব, সাবেক সভাপতি, বিএমএকী ঠিক হলোঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা অনুষদ, বিএমডিসি, স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তর, মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগ, সরকারি মেডিকেল কলেজের মোট সাতজন প্রতিনিধি ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ পরিদর্শন শেষে গত বছর ৯ জুন মন্ত্রণালয়ে আট দফা সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন জমা দেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, হাসপাতালে রোগী কম থাকে, কলেজ ও হাসপাতালে পরিসর (স্পেস) ঘাটতি আছে, ৩টি লেকচার থিয়েটার ও ৩০টি টিউটোরিয়াল রুমের কমতি আছে, ৬টি বিভাগে ৩৭ জন শিক্ষকের ঘাটতি আছে। সুপারিশে বলা হয়, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষ এমবিবিএস ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত ও আসনসংখ্যা ১৩০ থেকে ৫০ নির্ধারণ করা যেতে পারে। আরও বলা হয়, কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হলে ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
১৫ অক্টোবর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কলেজের অধ্যক্ষকে চিঠি দিয়ে পরিদর্শক দলের সুপারিশের ব্যাপারে ব্যাখ্যা জানতে চায়। এরপর কলেজ কর্তৃপক্ষ স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগমের সঙ্গে দেখা করে নতুনভাবে কলেজ পরিদর্শনের দাবি জানান।
ওই সময় ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং বেসরকারি মেডিকেল কলেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মবিন খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের প্রতি অন্যায় করা হয়েছে। আমরা পুনঃ তদন্ত চাই।’
১৯ নভেম্বরে ছয় সদস্যের নতুন একটি দল কলেজটি পরিদর্শনে যায়। দলটি ওই মাসের ২৪ তারিখ নতুন প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে বলা আছে, ৯টি বিভাগে ৪৬ জন শিক্ষকের ঘাটতি আছে, চলমান নির্মাণকাজ শেষ হলেও একাডেমিক ভবনের পরিসরের (স্পেস) ঘাটতি থাকবে প্রায় ১১ হাজার বর্গফুট, হাসপাতালে শয্যার সংখ্যা কম এবং যে শয্যা আছে তার ৪০ শতাংশ ফাঁকা।
প্রতিবেদনের মতামত অংশে বলা হয়েছে, কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে অনুমোদন দেওয়া যেতে পারে। আরও বলা হয়েছে, ‘এক বছরের মধ্যে ঘাটতিসমূহ পূরণ করা না হলে পরবর্তীতে মেডিকেল কলেজটির অনুমোদন স্থগিত করা হবে।’
গত তিন বছরে দুটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার।এমন ঘটেছে বারবারশর্ত পূরণ না করার ঘটনা ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে আগেও ঘটেছে। বিভিন্ন সময়ে কলেজ পরিদর্শন প্রতিবেদন এবং কলেজ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে দেখা যায়, কলেজটি নিয়মিতভাবে শর্ত ভঙ্গ করে চলেছে। আবার শর্ত পুরোপুরি পূরণ না করলেও কলেজটি চালিয়ে যাওয়ার বা শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ানোর অনুমতি দিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
২০০৬ সালের একটি পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে, কলেজটিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক নেই, হাসপাতালে পর্যাপ্ত রোগী থাকে না, রোগীর তথ্য ঠিকভাবে রাখা হয় না। চারজনের পরিদর্শক দল দুটি শর্ত পূরণ সাপেক্ষে শিক্ষার্থীদের আসনসংখ্যা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৭০ করার অনুমতি দেয়।
কিন্তু পরের বছর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিদর্শক দল কলেজে গিয়ে জানতে পারে কর্তৃপক্ষ শর্ত পূরণ করেনি। তখন নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি স্থগিত রাখার সুপারিশ করে পরিদর্শক দল। কিন্তু আট মাসের মাথায় সেই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে মন্ত্রণালয়। ৭৫ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর অনুমতি দেয়।
এভাবে এক–দুই বছর পরপর কলেজটিতে আসনসংখ্যা বাড়তে থাকে। ২০১১ সালে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রুহুল হকের সময় কলেজটির আসনসংখ্যা ১০০ এবং ২০১৩ সালে ১২০ করা হয়। এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কলেজটির আসনসংখ্যা বাড়িয়ে ১৩০ করেন।
রাজশাহীর শাহ মখদুম, রাজধানীর আইচি ও নর্দার্ন মেডিকেল কলেজ এবং রংপুর নর্দার্নে ভর্তি স্থগিত।প্রায় সব কলেজ চলছে এভাবেই১৯৮৬ সালে রাজধানীর ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ৩৯ বছরেও কলেজটি সরকারের দেওয়া সব শর্ত মানছে না। কলেজটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কলেজটির নামে কোনো জমি নেই, পর্যাপ্ত টিউটোরিয়াল রুম নেই।
বেসরকারি মেডিকেল কলেজ আইনে বলা আছে, কলেজ ও হাসপাতাল হতে হবে নিজস্ব জমিতে, ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কলেজে নির্দিষ্ট পরিমাণ পরিসর (স্পেস) থাকতে হবে, শিক্ষক–শিক্ষার্থীর নির্দিষ্ট অনুপাত হবে, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য পৃথক হোস্টেল থাকতে হবে।
কলেজ বা হাসপাতালের নিজস্ব জায়গা না থাকা, ভবন থাকলেও পরিসর কম, শিক্ষক স্বল্পতা, ছাত্রছাত্রীদের হোস্টেল না থাকা—এগুলো বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর সাধারণ সমস্যা। এই সমস্যাগুলো পুরোনো। এসব জানার পরও ২০১১ সালে একটি সভায় তখনকার স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোড এলাকায় ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজের অনুমোদন দেন। শুরু থেকে এ পর্যন্ত কলেজটি অনেক শর্ত পূরণ না করেই বছর পার করছে।
২ ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, একটি গলির মধ্যে বেশ কয়েকটি বাড়িতে কলেজটির শিক্ষা কার্যক্রম চলে। মূল রাস্তায় একটি ভবনের কয়েকটি তলা নিয়ে চলছে হাসপাতাল। দেশি ছাত্রদের জন্য কোনো হোস্টেল নেই। দেশি ছাত্রী এবং বিদেশি ছাত্রীদের হোস্টেল ভাড়া বাড়িতে। কলেজ, হাসপাতাল ও হোস্টেল নিজের জমিতে হবে—এমন শর্তে কলেজের অনুমোদন দেওয়া হয়। কলেজের নামে কয়েক শ কোটি টাকা ঋণও নেওয়া আছে।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ৬৭টি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে।কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল মতিন কলেজের বিষয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তিনি কলেজের চেয়ারম্যান আব্দুল হাই চৌধুরীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। ১০ ফেব্রুয়ারি মুঠোফোনে কলেজের চেয়ারম্যান প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাসপাতাল ও কলেজ কিছু নিজস্ব ভবনে, কিছু ভাড়া ভবনে চলছে। সবার কমবেশি সীমাবদ্ধতা আছে, আমাদেরও আছে। আর ঋণের ব্যাপারটি আমরা সমন্বয়ের চেষ্টা করছি।’
যাঁরা আইন তৈরি করেছেন, আর যাঁরা কলেজের মালিক, তাঁদের কাছে শিক্ষাটা গৌণ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক ও আলোচনা হওয়া দরকার। তবে এভাবে আর চলতে দেওয়া ঠিক না। এতে ক্ষতি হয়েই চলেছে।প্রবীণ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুবমেডিকেল কলেজগুলো সীমাবদ্ধতার মধ্যে চললে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষক–স্বল্পতার কারণে তাঁরা মানসম্পন্ন শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। আবার সুসজ্জিত ল্যাবরেটরি অভাব ও হাসপাতালে রোগী দেখার সুযোগ না থাকার কারণে শিক্ষার্থীরা হাতে–কলমে শেখার সুযোগ পান না। ফলে পূর্ণাঙ্গ জ্ঞান ও প্রশিক্ষণ ছাড়াই এমবিবিএস ডিগ্রি নিয়ে প্রতিবছর বহু চিকিৎসক বেসরকারি মেডিকেল থেকে বের হচ্ছেন। অনেকে মনে করেন, চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে যে অসন্তোষ ও অভিযোগ, তার একটি কারণ বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোর অপূর্ণতা, অব্যবস্থাপনা।
প্রবীণ চিকিৎসক ও বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক রশীদ-ই-মাহবুব প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাঁরা আইন তৈরি করেছেন, আর যাঁরা কলেজের মালিক, তাঁদের কাছে শিক্ষাটা গৌণ হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে উন্মুক্ত বিতর্ক ও আলোচনা হওয়া দরকার। তবে এভাবে আর চলতে দেওয়া ঠিক না। এতে ক্ষতি হয়েই চলেছে।’
১৯৮৬ সালে রাজধানীর ধানমন্ডির বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে দেশে বেসরকারি মেডিকেল কলেজের যাত্রা শুরু হয়। ৩৯ বছরেও কলেজটি সরকারের দেওয়া সব শর্ত মানছে না। কলেজটির বিরুদ্ধে অভিযোগ, কলেজটির নামে কোনো জমি নেই, পর্যাপ্ত টিউটোরিয়াল রুম নেই।.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক কল জ র ম জন শ ক ষ ব সরক র চ ক ৎসক কল জ চ কল জ প র অন ম কল জ ব ইন ট র ও কল জ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা
ইরানের পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের বাণিজ্যে সংশ্লিষ্ট থাকার অভিযোগে অন্তত ছয়টি ভারতীয় কোম্পানির বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। একই পদক্ষেপের আওতায় বিশ্বজুড়ে মোট ২০টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
গতকাল বুধবার এক বিবৃতিতে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা ভারতীয় প্রতিষ্ঠানগুলো ইরানের পেট্রোলিয়াম পণ্য কেনাবেচা ও বিপণনের জন্য ‘গুরুত্বপূর্ণ লেনদেনে’ ইচ্ছাকৃতভাবে অংশ নিয়েছে। ফলে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ইরানবিষয়ক নিষেধাজ্ঞা ভেঙেছে।
নিষেধাজ্ঞার শিকার কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস, গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস, জুপিটার ডাই কেম, রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি, পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম ও কাঞ্চন পলিমার্স।
নিষিদ্ধ কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারতের কিছু বড় পেট্রোকেমিক্যাল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারেরও বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযোগ উঠেছে অ্যালকেমিক্যাল সলিউশনস প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধে। প্রতিষ্ঠানটি ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ৮ কোটি ৪০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য আমদানির সঙ্গে জড়িত ছিল বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যালস লিমিটেডের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা ২০২৪ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জানুয়ারির মধ্যে ৫ কোটি ১০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল, বিশেষ করে মিথানল কিনেছে।
জুপিটার ডাই কেম প্রাইভেট লিমিটেডের বিরুদ্ধেও এ সময়ে টলুইনসহ ৪ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পণ্য আমদানির অভিযোগ রয়েছে।
রমনিকলাল এস গোসালিয়া অ্যান্ড কোম্পানি মিথানল ও টলুইনসহ ২ কোটি ২০ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য কেনার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান—যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।পার্সিসটেন্ট পেট্রোকেম প্রাইভেট লিমিটেড ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ ডলারের ইরানি পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য, বিশেষ করে মিথানল আমদানি করেছে বলে জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া কাঞ্চন পলিমার্স নামে একটি কোম্পানি ১৩ লাখ ডলারের বেশি মূল্যের ইরানি পলিথিন পণ্য কিনেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন এসব প্রতিষ্ঠানের যুক্তরাষ্ট্রে থাকা সম্পদ কিংবা যেসব সম্পদ যুক্তরাষ্ট্রের ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে আছে, তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক ও কোম্পানিগুলোর বাণিজ্যিক কার্যক্রমে যুক্ত হওয়া নিষিদ্ধ হবে। নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর যেকোনো সহযোগী প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর অন্তত ৫০ শতাংশ মালিকানা তাদের হাতে, তা–ও একইভাবে নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে।
এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগ’ নীতির অংশ। এর মাধ্যমে ইরানের কথিত ‘ছায়া নৌবহর’ ও মধ্যস্বত্বভোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, যারা বিশ্বব্যাপী ইরানি তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য পরিবহনে সহায়তা করে।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৫ ঘণ্টা আগেমার্কিন কর্মকর্তাদের দাবি, এসব পণ্য রপ্তানি থেকে ইরান যে রাজস্ব পায়, তা মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতা ছড়ানো ও বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে সহায়তায় ব্যয় করা হয়।
ইরানের সঙ্গে ঐতিহাসিকভাবে ঘনিষ্ঠ বাণিজ্যিক সম্পর্ক থাকলেও ২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের আগের নিষেধাজ্ঞা চালু হওয়ার পর ভারত ইরানি তেল আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে দেয়।
নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসা প্রতিষ্ঠানগুলো চাইলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পেশালি ডেজিগনেটেড ন্যাশনালস (এসডিএন) তালিকা থেকে নিজেদের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আবেদন করতে পারে। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, এ নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য শাস্তি দেওয়া নয়; বরং আচরণে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
ভারতের পাশাপাশি তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত, চীন ও ইন্দোনেশিয়ার কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। যুক্তরাষ্ট্র বলছে, এ বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক ইরানের তেল ও পেট্রোকেমিক্যাল–বাণিজ্যে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।
উল্লেখ্য, ভারতের কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বাইরেও দেশটি থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। গতকাল তিনি এ ঘোষণা দেন।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিলেন ট্রাম্প২২ ঘণ্টা আগেআগামীকাল ১ আগস্ট থেকে ভারতের পণ্যে নতুন এ পাল্টা শুল্কনীতি কার্যকর হবে। পাশাপাশি রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও জ্বালানি কেনার জন্য ভারতকে ‘দণ্ড’ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ট্রাম্প। তবে কী ধরনের দণ্ড দেওয়া হবে, সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি।