যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবে বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেন
Published: 11th, March 2025 GMT
যুদ্ধ বন্ধে সৌদি আরবের জেদ্দায় বৈঠকে বসেছেন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। জেদ্দার এ বৈঠকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওলাল্টজের সঙ্গে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিগা এবং প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের চিফ অব স্টাফ আন্দ্রে ইয়েরমাক অংশ নিচ্ছেন। তবে বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত থাকছেন না।
এ বৈঠকে ইউক্রেনের পক্ষ থেকে আংশিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা তোলা হতে পারে। এ প্রস্তাবে আকাশ ও নৌপথে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির বিষয়টি থাকছে বলে ইউক্রেনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এ বৈঠকের আগে গত সোমবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি সৌদি আরব সফর করেন এবং যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে বৈঠক করেন। গতকাল মঙ্গলবার তাঁর প্রতিনিধিদের সঙ্গে মার্কিন কর্মকর্তাদের বৈঠক ফলপ্রসূ হবে বলে আশা করছেন তিনি।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউক্রেনকে যুদ্ধ বন্ধে চাপ দিচ্ছেন। সম্প্রতি হোয়াইট হাউসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে তাঁর বাগ্বিতণ্ডার পর কিয়েভকে সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসে জেলেনস্কির ওই বৈঠকের পর প্রথমবার ইউক্রেনের কর্মকর্তারা যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসছেন।
এর আগে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সৌদি আরবের রিয়াদে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্র বৈঠক করেছিল। ওই বৈঠক সফল বলে দুই পক্ষই দাবি করে।
আজকের বৈঠকের পর ইউক্রেন কর্তৃপক্ষ সামরিক ও গোয়েন্দা সহায়তা আবার চালুর আশা করছে।
আলোচনা শুরুর আগে ইয়েরমাক সাংবাদিকদের বলেন, ‘শান্তি অর্জনের জন্য আমরা সবকিছু করতে প্রস্তুত।
হোয়াইট হাউসের বৈঠকের পর ট্রাম্পের চাপে খনিজ চুক্তিতে স্বাক্ষর না করেই হোয়াইট হাউস ত্যাগ করেন জেলেনস্কি। তবে তিনি এখন বলছেন, ওই চুক্তিতে তিনি সই করতে ইচ্ছুক। তবে মার্কিন পররাষ্ট৶মন্ত্রী রুবিও বলেন, জেদ্দার আলোচনায় খনিজ চুক্তির বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ নয়। রাশিয়া–ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের পথ খুঁজে বের করতেই এ আলোচনা।
এদিকে, এ বৈঠকের আগে রাশিয়ার রাজধানী মস্কোয় বড় ধরনের ড্রোন হামলা চালিয়েছে ইউক্রেন। দেশটির কর্মকর্তা বলছেন, যুদ্ধবিরতির জন্য রুশ প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে চাপ দিতেই এ হামলা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র কর মকর ত য দ ধ বন ধ র ইউক র ন
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।