৮০তম জন্মদিনের ঠিক ১৬ দিন আগে আজ মঙ্গলবার গ্রেপ্তার হলেন ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতার্তে। মাদকবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন—এমন অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) পরোয়ানার আওতায় ম্যানিলা থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগেও ফিলিপাইনের সাবেক নেতারা গ্রেপ্তার হয়েছেন। যেমন দুর্নীতির দায়ে ২০০১ সালে জোসেফ এস্রাদা এবং ২০১১ সালে গ্লোরিয়া অ্যারিও গ্রেপ্তার হন। তবে দুতার্তে প্রথম, যিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি হতে পারেন।
আইসিসি মামলায় কাউন্সিলের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন ফিলিপাইনের আইনজীবী ক্রিস্টিনা কন্টি। তিনি বলেন, দুতার্তেকে নেদারল্যান্ডসের হেগে আইসিসির ‘কাছাকাছি’ কোনো আটককেন্দ্রে নেওয়া হবে। এ জন্য তাঁকে যে ফ্লাইট পাওয়া যাবে, তাতেই তোলা হতে পারে। এই আইনজীবী আরও বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে, যাঁদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরাই অভিযুক্তকে হেগে আদালতে হাজির করবেন।
ফিলিপাইনের প্রেসিডেনশিয়াল প্যালেসের তথ্যমতে, আজ ভোরের দিকে ইন্টারপোল ম্যানিলা আইসিসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানার একটি কপি পায়। এরপর ফিলিপাইনের প্রসিকিউটর জেনারেল পদক্ষেপ নেন। হংকং থেকে ফিরে ম্যানিলার মাটিতে পা রাখতেই বিমানবন্দরে দুতার্তেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানায় মাদকের বিরুদ্ধে দুতার্তের অভিযানকে সহিংস বলে উল্লেখ করা হয় এবং সুস্পষ্টভাবে বলা হয়, ‘মানবতাবিরোধী হত্যাকাণ্ড’ ছিল এ অভিযান।
২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর দুতার্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক তদন্ত শুরু করে আইসিসি। বলা হয়, মাদকবিরোধী সেই যুদ্ধের নামে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, যার বেশির ভাগই দরিদ্র। দুই মাস পর ম্যানিলা জানায়, মাদকবিরোধী অভিযান চলাকালে পুলিশ, ভাড়াটে খুনি ও সশস্ত্র ব্যক্তিদের হাতে সংঘটিত বেশ কিছু মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তদন্ত করছে তারা। এরপর আইসিসি তাদের তদন্ত স্থগিত করেন।
আদালতের এখতিয়ারের অভাব রয়েছে উল্লেখ করে ফিলিপাইনের করা আপত্তিটি পাঁচ বিচারকের প্যানেলে খারিজ হয়ে যাওয়ার পর ২০২৩ সালের জুলাই মাসে আইসিসি পুনরায় তদন্ত শুরু করেন।
নিহত ব্যক্তিদের সংখ্যা নিয়ে ভিন্নতা থাকলেও হেগের প্রসিকিউটররা বলছেন, ‘তথাকথিত মাদকবিরোধী যুদ্ধের নামে যত বেসামরিক ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে’, সে সংখ্যা ১২ হাজার থেকে ৩০ হাজার হবে।
দুতার্তে ২০১৬ সালের জুন থেকে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিলেন।
আইসিসিকে তদন্তে সহযোগিতা না করার দীর্ঘস্থায়ী নীতি ছিল ফিলিপাইনের। দেশটির ভাষ্য ছিল, এসব বিষয় ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ারবহির্ভূত এবং এর মধ্য দিয়ে তাদের সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করা হচ্ছে।
ট্রাইব্যুনাল দুতার্তের সময়কার নির্বিচার বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্ত শুরু করলে দুতার্তে তাঁর সরকারকে আইসিসির প্রতিষ্ঠাতা চুক্তি রোম স্ট্যাচু (সংবিধি) থেকে বেরিয়ে আসতে নির্দেশ দেন। তবে ট্রাইব্যুনাল তখন বলেছিলেন, আইসিসি থেকে বের হয়ে আসার আগপর্যন্ত ঘটা হত্যাকাণ্ড নিয়ে তাঁদের বিচার করার এখতিয়ার আছে।
এদিকে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস ২০২২ সালে নির্বাচিত হয়ে আসার পরও আইসিসির সদস্যপদ পুনরুদ্ধারে আগ্রহী হননি। ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে দুতার্তের মেয়ে সারা ছিলেন তাঁর রানিং মেট। এমনকি ফার্দিনান্দ আইসিসির তদন্তে সহযোগিতা করা থেকে বিরত রয়েছেন।
তবে দুটি প্রভাবশালী পরিবারের মধ্যকার সম্পর্কে ভাটা পড়লে মার্কোসের অবস্থানে সূক্ষ্ম পরিবর্তন আসে। তিনি বলেন, দুতার্তেকে গ্রেপ্তারে আইসিসি ইন্টারপোলের সহযোগিতা চাইলে, সেখানে ইন্টারপোলের সদস্য হিসেবে তাদের সহযোগিতা করতে ম্যানিলার বাধ্যবাধকতা আছে।
গত রোববার হংকংয়ে দুতার্তে এক সমাবেশে তাঁর শত শত সমর্থকের উদ্দেশে বলেন, ফিলিপাইনের মানুষের জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল একই মাদকবিরোধী যুদ্ধের কারণ। আর এসব করেছেন দেশের স্বার্থে। তিনি আরও বলেছেন, তাঁকে গ্রেপ্তার করা হলে তিনি এটা ‘মেনে নেবেন’। তবে আজ গ্রেপ্তার হওয়ার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি তাঁকে আটকের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করেন। সেখানে তিনি বলেন, ‘এখানে কোন আইনে (গ্রেপ্তার করা হয়েছে) আর অপরাধটা কী, যেটা আমি করেছি? আমাকে এখানে রাখার আইনি ভিত্তি কী, তা এখন প্রমাণ করুক।’
আরও পড়ুনআইসিসির পরোয়ানা: ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট দুতার্তে গ্রেপ্তার১১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর ফ ল প ইন র সহয গ ত আইস স র পর য় ন অপর ধ তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারির পাশাপাশি বেসরকারি প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরাও বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে: হাইকোর্ট
শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নেওয়া সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি রেজাউল করিমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ সোমবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ২০২৫ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বৃত্তি পরীক্ষা আগামী ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।
আইনজীবীদের তথ্যমতে, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর গত ১৭ জুলাই এক স্মারকে জানায়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে কেরানীগঞ্জ পাবলিক ল্যাবরেটরি স্কুলের পরিচালক মো. ফারুক হোসেন, শিক্ষক ও অভিভাবক প্রতিনিধিসহ ৪২ জন চলতি বছর রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দিয়ে ওই স্মারকের কার্যক্রম অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য স্থগিত করেন। শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের অনুমতিসংক্রান্ত ১৭ জুলাইয়ের ওই স্মারক (ম্যামো) কেন আইনগত কর্তৃত্ব–বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়। সেই সঙ্গে ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালার আলোকে বৃত্তি পরীক্ষার আয়োজন করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয়। চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করে রায় দেওয়া হয়।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের পক্ষে আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ শুনানিতে ছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সৈয়দ ইজাজ কবির।
পরে আইনজীবী নিয়াজ মোর্শেদ প্রথম আলোকে বলেন, শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ দিতে পারবে বলে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গত ১৭ জুলাইয়ে স্মারক অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ২০০৮ সালের প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা নীতিমালা অনুসারে সব বেসরকারি অর্থাৎ বেসরকারি নিম্নমাধ্যমিক, রেজিস্ট্রার্ড কিন্ডারগার্টেন, কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং রেজিস্টার্ড/অস্থায়ী রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত/স্থাপনা ও প্রাথমিক অনুমতিপ্রাপ্ত চালু বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে। এ জন্য ১৫ দিনের মধ্যে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের ফলে শুধু সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাই নয়, এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ২১ থেকে ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিতব্য প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে।
প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা ১৯৮১ সালে প্রবর্তন করা হয় বলে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী মুনতাসির উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ২০০৫ সালে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পায়। ২০০৮ সাল পর্যন্ত এটি চলে। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত নতুন নীতিমালার আলোকে পিএসসি পরীক্ষা হয়। এতে যারা ভালো করত, তাদের বৃত্তি দেওয়া হতো। তবে করোনার সময় ২০২০ ও ২০২১ সালে তা বন্ধ ছিল। ২০২২ সালে আবার বৃত্তি পরীক্ষা শুরু হয়, তবে তা প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার নীতিমালার (সংশোধিত–২০১৬) আলোকে। বিভিন্ন কারণে ২০২৩ ও ২০২৪ সালে এটি বন্ধ ছিল। পরিস্থিতি বিবেচনায় ২০২৫ সালে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেবে। বেসরকারি শিক্ষার্থীরাও প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে—এমন নির্দেশনা দিয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। তারা যাতে পরীক্ষা দিতে পারে সে জন্য ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করা হবে।