বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির নতুন চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম। একইসঙ্গে ১১ সদস্যের এ্যাডহক ম্যানেজিং বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়েছে। 

সম্প্রতি (৫ মার্চ) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বেসরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা-১ শাখার উপসচিব ডা.

মো. মোস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলামকে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি হয়। 

রাষ্ট্রপতি ও বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট কর্তৃক বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি আদেশ, ১৯৭৩ (রাষ্ট্রপতির আদেশ ১৯৭৩ সনের ২৬ নং)-এর ৯ (১) বিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে আগামী ৬ মাস পর্যন্ত সংগঠনটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। 

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আজিজুল ইসলাম প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সেস এ কনসালট্যান্ট ফিজিশিয়ান জেনারেল হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ১৯৮৫ সালে তিনি স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এমবিবিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এবং সেখানেই তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৮৬ সালে তিনি মেডিকেল কোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। ১৯৯৯ সালে ডা. মো. আজিজুল ইসলাম মেডিসিনে এফসিপিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ২০০৮ সালে পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডির আর্মড ফোর্সেস পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল ইনিস্টিটিউট এবং ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ক্যান্সার সেন্টার থেকে মেডিকেল অনকোলজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। তিনি ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের মেডিকেল অনকোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে তিনি আর্মড ফোর্সেস মেডিকেল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন।

মেজর জেনারেল (অব.) ডা. মো. আজিজুল ইসলাম ১৯৬২ সালের ১ জুন গাজীপুরের শ্রীপুরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি শ্রীপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ১৯৭৯ সালে নটরডেম কলেজ থেকে কৃতিত্বের সঙ্গে এইচএসসি পাশ করেন। সমাজসেবায় নিয়োজিত ডা. মো. আজিজুল ইসলাম আছিয়া মেমোরিয়াল ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান।

এদিকে, একই প্রজ্ঞাপনে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ এর সহযোগী অধ্যাপক ড. তাসনিম আজিমকে ভাইস চেয়ারম্যান, ঢাকা ট্যাক্সবার এসোসিয়েশানের কর আইনজীবী ও রেড ক্রিসেন্টের সাবেক যুব প্রধান মুহাম্মদ আমিনুল ইসলামকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিয়ে মোট ১১ সদস্যের এ্যাডহক ম্যানেজিং বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। ম্যানেজিং বোর্ডের বাকি সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. ইমরান বিন ইউনুস, কার্ডিওলজিস্ট ও সমাজসেবক ডা. শেখ আবু জাফর, সিআরপি’র ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত এয়ার কমোডর শাহে আলম, ব্যারিস্টার তানিম হোসেন শাওন, ছাত্র প্রতিনিধি মুহাম্মদ তুহিন ফারাবী, ডা. মাহমুদা আলম মিতু এবং ডিজি ঢাকা কমিউনিকেশনস লিমিটেড এর পরিচালক মো. মাহবুব আলম।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ল দ শ র ড ক র স ন ট স স ইট আজ জ ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে প্রপাগান্ডার সয়লাব

১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস। ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন তৎকালিন বাকশাল সরকার চারটি পত্রিকা সরকারি ব্যবস্থাপনায় রেখে সকল সংবাদপত্র বন্ধ করে দেয়। এতে হাজারো সাংবাদিক রাতারাতি বেকার হয়ে দুঃসহ জীবনে পতিত হন। জনগন সঠিক তথ্য ও বস্তুনিষ্ঠ খবর জানা থেকে বঞ্চিত হয়। গোটা দেশে যেন অন্ধকার নেমে আসে। জবরদস্তিমূলকভাবে তখন সাংবাদিক ও অন্যান্য পেশাজীবীদেরকে  বাকশালে যোগদানে বাধ্য করা হয়। 
অনেক সাংবাদিক সেদিন জীবন-জীবিকার ভয়ে বাকশালের ফরম পূরণ করেন। তাই সংবাদমাধ্যম ও বাক-স্বাধীনতা হরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন হিসেবে চিহ্নিত। আজ দিবস আর কালো নেই। তথ্য প্রবাহের যুগে এখন মন খূলে লেখা যায়, প্রচার করা যায়। বিশেষ করে গেলো বছরের ৫ আগষ্টে ফ্যাসিবাদের পতনের পর গনমাধ্যমে অনেকটা স্বাধীনতা বেড়েছে। গণভবনের তেল তেলা তোষামদি প্রশ্ন এখন আর চলে না। বলা চলে গণমাধ্যম বিগত ১৬ বছরের চাইতে এখন বেশি স্বাধীনতা ভোগ করছে। তবে একটা প্রশ্ন রয়েই গেছে তা হলো পেশাদার কিছু সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের হয়েছে । এসব মামলা বেশির ভাগই আক্রোশের কারনে হয়েছে। বাদীকে না জানিয়ে একটা মহল মামলায় সাংবাদিকের নাম ঢুকিয়ে দিয়েছে। এটা নিন্দনীয়। একজন সাংবাদিক মানুষ খুনের মামলার আসামী এটা মেনে নেয়া  দুস্কর । 
৫ আগষ্টে আগে যারা তোষামদি করতো , সঠিক সংবাদ লিখতে কিংবা প্রচার করতো পারতো না। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের দোহাই দিয়ে যারা গনমাধ্যমের কন্ঠ রোধ করে রেখেছিল তাদের ভয়ে আতংকে থাকতো। তাদের অনেকে এখন গনমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে মিথ্যা প্রপ্রাগান্ডা চড়াচ্ছে। গনহত্যাার অভিযোগে বিচারের মুখোমুখি একটা দলের প্রতি বিশেষ দরদ দেখিয়ে মিথ্যা তথ্য চড়াচ্ছে। অনেকে তাদের ফেসবুকে মিথ্যা তথ্য ছড়াচ্ছে। যাচাই বাছাই ছাড়া  মিথ্যা তথ্য শেয়ার করছে। তাদের এখনই থামা দরকার। সত্য প্রকাশ করা একজন সাংবাদিকের পেশাগত দায়িত্ব । এ পেশাগত দায়িত্বের কেউ অপব্যবহার করলে মুলত তিনিই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। একসময় তার মিথ্যা সংবাদ পরিবেশের কারনে কেউ তার পাশে আর থাকবেন না। তাকে পেশাদার সাংবাদিক নয়, একজন দালাল হিসেবে চিহ্নিত  হয়ে  আস্তুাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন। 
পেছনের কথায় ফিরে  আসি, ১৯৭৫ সালের ১৬ জুন সংবাদ পত্রের কালো দিবস পেরিয়ে  ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি জনতার অভাবনীয় বিপ্লবের মধ্য দিয়ে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর সাংবাদিকদের লেখার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত করেন।
জিয়াউর রহমান দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রথমে সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক সব কালাকানুন শিথিল করে দেশের সব জায়গা থেকে সংবাদপত্র প্রকাশে উৎসাহ প্রদান করেন। শুধু তাই নয়, প্রকাশিত সংবাদপত্র টিকিয়ে রাখা সরকারেরই দায়িত্ব বলেই তিনি মনে করতেন। তিনি রাজশাহী থেকে ‘দৈনিক বার্তা’ নামে একটি প্রথম শ্রেণীর পত্রিকা প্রকাশের ব্যবস্থা করেন। এ পত্রিকা ঘিরে সমগ্র উত্তরাঞ্চলে তথ্যপ্রবাহের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটে। বহু সাংবাদিকের কর্মসংস্থান হয়।ডিক্লারেশনের শর্ত শিথিল করার কারণে সে সময় ঢাকা থেকে শুরু করে বিভাগীয়, জেলা এমনকি থানা পর্যায় থেকে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশ হতে থাকে। এসব পত্রিকা টিকিয়ে রাখতে জিয়াউর রহমান সরকারি বিজ্ঞাপন বণ্টননীতিও শিথিল করেন। বিভিন্ন সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন বণ্টন ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণমুক্ত করেন। একই সঙ্গে সরকারি বিজ্ঞাপনের ৬০ ভাগ ঢাকা থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় এবং বাকি ৪০ ভাগ মফস্বল থেকে প্রকাশিত পত্রিকায় বণ্টনের ব্যবস্থা করেন। এর ফলে সারা দেশে সংবাদপত্র প্রকাশনায় নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। 
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই  প্রথম টার্গেট করে সংবাদমাধ্যমকে। সর্বশেষ ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেও একই পথে হাঁটে দলটি। গত প্রায় ১৫ বছরে আমার দেশ, দিনকাল, চ্যানেল ওয়ান, দিগন্ত টিভি, ইসলামিক টিভি, সিএসবিসহ জনপ্রিয় সংবাদপত্র, বেসরকারি টেলিভিশন, অনলাইন নিউজ পোর্টাল বন্ধ করে কয়েক হাজার সাংবাদিককে বেকারত্বের মুখে ঠেলে দিয়েছিল । ৬০ জন সাংবাদিক খুন হয়েছে। একের পর এক কালাকানুন করে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে। কথায় সাংবাদিক গ্রেফতার তখন নিত্যকার ঘটনায় পরিণত হয়েছে। সাংবাদিক পরিচয়ে একদল চাটুকার আওয়ামীলীগের দু:শাসনের মদদ দিয়ে জাতির উপর জুলুমের মাত্রা আরো বাড়িয়েছিল। ছাত্রজনতার বিপ্লবে ফ্যাসিবাদের ভয়াবহ পতনে মানুষ যেমন স্বস্তি ফিরে পেয়েছে তেমনি গণমাধ্যম ফিরেছে অবাধ স্বাধীনতায়। 

লেখক : সাবেক প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ)

সম্পর্কিত নিবন্ধ