মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাৎ
Published: 11th, March 2025 GMT
মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর নামে ১ হাজার ১২৮ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ওরফে লোটাস কামাল ও তাঁর পরিবার, সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, বেনজীর আহমেদের প্রতিষ্ঠানসহ ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সংস্থাটির প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুদক মহাপরিচালক মো.
দুদক মহাপরিচালক বলেন, আসামির তালিকায় রয়েছেন ১২ রিক্রুটিং এজেন্সির ৩২ মালিক-কর্মকর্তা। তাঁদের বিরুদ্ধে সরকার নির্ধারিত ৭৮ হাজার ৯৯০ টাকার স্থলে অতিরিক্ত পাঁচ গুণ অর্থ গ্রহণ করে ৬৭ হাজার ৩৮০ প্রবাসীর কাছ থেকে ওই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আক্তার হোসেন বলেন, ১২টি রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে মেসার্স ওরবিটাল এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে ৬ হাজার ২৯ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১০০ কোটি ৯৮ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের স্ত্রী কাশমিরি কামাল। মামলায় কাশমিরির পাশাপাশি তাঁর স্বামী মুস্তফা কামালকেও আসামি করা হয়েছে। মেসার্স ওরবিটাল ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ২ হাজার ৯৯৫ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ কোটি ১৬ লাখ ৬২ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুস্তফা কামালের মেয়ে নাফিসা কামাল। এ মামলায় বাবা ও মেয়ে দুজনই আসামি।
দুদক সূত্র জানায়, স্নিগ্ধা ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৬ হাজার ৬৫৭ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১১ কোটি ৫০ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী, তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ ছাড়া মামলায় আসামি করা হয়েছে তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করা শেখ আবদুল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলম, এম আমিরুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন ও জিয়াউর রহমান ভূঁইয়াকে। রিক্রুটিং এজেন্সি বিনিময় ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৫ হাজার ৪৫৮ জনের কাছ থেকে অতিরিক্ত ৯১ কোটি ৪২ লাখ ১৫ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক চৌদ্দগ্রামের সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুস সোবহান ভূঁইয়া ও তাঁর স্ত্রী তাসলিমা আক্তারকে আসামি করা হয়েছে।
দুদক জানায়, ফাইভএম ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৭ হাজার ১২৪ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ১১৯ কোটি ৩২ লাখ ৭০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ফেনীর সাবেক সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলায় নূর মোহাম্মদ আবদুল মুকিত, মেহবুবা আফতাব সাথি, মাসুদ উদ্দিনের মেয়ে তাসনিয়া মাসুদকে আসামি করা হয়েছে। তাঁরা তাঁর প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। মেসার্স ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেডের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৮৮ জনের কাছ থেকে ৬৩ কোটি ৪৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহা. নূর আলী, তাঁর স্ত্রী সেলিনা আলী, মেয়ে নাবিলা আলী, সাবেক সচিব খোন্দকার শওকত হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
দুদক আরও জানায়, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের মাধ্যমে ৭ হাজার ৭৮৭ জনের কাছ থেকে ১৩০ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মোহাম্মদ রুহুল আমিন ও তাঁর স্ত্রী লুৎফুর নেছা শেলীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। মেসার্স আহমদ ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৮ হাজার ৫৯২ প্রবাসীর কাছ থেকে ১৪৩ কোটি ৯১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বেনজীর আহমদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। বিএম ট্রাভেলস লিমিটেডের মাধ্যমে ৮ হাজার ৯৩ প্রবাসীর কাছ থেকে ১৩৫ কোটি ৫৫ লাখ ৭৭ হাজার ৫০০ টাকা অতিরিক্ত গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সাবেক কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ও তাঁর স্ত্রী মৌসুমি আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।
বিএনএস ওভারসিজ লিমিটেডের মাধ্যমে ৪ হাজার ২১৫ জনের কাছ থেকে ৭০ কোটি ৬০ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক যুবলীগের নেতা ইশতিয়াক আহমেদ সৈকত ও তাঁর স্ত্রী নসরুন নেছার বিরুদ্ধ মামলা হয়েছে। এ ছাড়া রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে ২ হাজার ৮৪৫ জনের কাছ থেকে ৪৭ কোটি ৬৫ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মুহাম্মদ মজিবুল হক রুবেল ও তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার হীরামনির বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। দি ইফতী ওভারসিজের মাধ্যমে ৩ হাজার ৭৯৭ প্রবাসীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৬৩ কোটি ৫৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ টাকা গ্রহণের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. রুবেল ও বোরহান উদ্দিন পান্নার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব স র ক ছ থ ক হ জ র ৫০০ ট ক জন র ক ছ থ ক
এছাড়াও পড়ুন:
২ বছরের ভেতরে জুলাই সনদ বাস্তবায়নে আপত্তি নেই বিএনপির
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জুলাই সনদের খসড়া পাঠানো হয়েছে। সেই খসড়ায় বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে ঐকমত্য হওয়া বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে বিএনপির কোনো আপত্তি নেই বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় ধাপের ২১তম দিনের আলোচনার বিরতিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা যেটা পেয়েছি, এটা জুলাই জাতীয় সনদ নামে একটা খসড়া পেয়েছি। সেটা ভূমিকা, বিস্তারিত বিষয়গুলো নেই। এই খসড়ার সঙ্গে আমরা মোটামুটি একমত। কিন্তু খসড়ার কিছু বাক্য, শব্দ ও গঠনপ্রণালি নিয়ে কারও কোনো মতামত আছে কি না, তা জানতে রাজনৈতিক দলগুলোকে খসড়াটি দিয়েছে কমিশন। আমাদের যে সংশোধনী থাকবে, আমরা তা কাল জমা দেব।’
খসড়ায় যে অঙ্গীকারের কথা বলা হয়েছে, সে বিষয়ে বিএনপি একমত বলে জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, ‘খসড়ায় দুই বছরের ভেতরে প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে যে অঙ্গীকার চাওয়া হয়েছে, সে বিষয়ে আমরা একমত।’
সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়োগ আইনের মাধ্যমে করতে চাই। এতে আইনি ত্রুটি থাকলে সংশোধন সহজ হবে।’ তিনি বলেন, ‘কার্যকর রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য একটি সক্রিয় নির্বাহী বিভাগ প্রয়োজন। তবে সেই নির্বাহী বিভাগকে চেক অ্যান্ড ব্যালান্সের মধ্যে রাখতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘সংবিধানে যত বেশি যুক্ত করা হবে, সংশোধন তত বেশি জটিল হয়ে পড়বে। তাই আমরা চাই, আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করা হোক এবং সেই আইনে প্রয়োজন অনুযায়ী সংশোধন আনা সহজ হবে।’
নারী প্রতিনিধিত্ব বিষয়ে বিএনপির অবস্থান প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, ‘আমরা প্রথম ধাপে প্রস্তাব করেছি, আগামী নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ৫ শতাংশ অর্থাৎ ১৫টি আসনে নারীদের মনোনয়ন দেওয়া হবে। পরবর্তী নির্বাচনে তা ১০ শতাংশ অর্থাৎ ৩০টি হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই, নারীরা সরাসরি নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হোক। কিন্তু সমাজের বাস্তবতা বিবেচনায় আমরা ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে চাই।’
সংস্কার কমিশনের ৭০০–এর বেশি সুপারিশ সম্পর্কে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৬৫০টির মতো প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। বাকিগুলোর বিষয়ে পরামর্শ বা সংশোধিত প্রস্তাব দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘সব প্রস্তাব সনদে আসবে না। তবে যেগুলো মৌলিক, যেমন সংবিধান সংশোধনসংক্রান্ত, সেগুলো অবশ্যই গুরুত্ব পাবে।’