শিশুছাত্রকে ধর্ষণের দায়ে মাদ্রাসাশিক্ষকের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড
Published: 12th, March 2025 GMT
নাটোরে শিশুছাত্রকে (১১) ধর্ষণের দায়ে আবদুর রহিম ওরফে কালু (২৭) নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ডের টাকা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ দণ্ডাদেশ দেন নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আবদুর রহিম। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
দণ্ডিত শিক্ষক আবদুর রহিম নাটোর শহরের কাঁঠালবাগান এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে ও বড়াইগ্রাম উপজেলার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিচারক আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই শিশু ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিচার চলাকালে তিনি জামিনে থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার আদালত তাঁকে কারাগারে নেন।
রায় ঘোষণার সময় আদালত জানান, মামলাটি তদন্তকালে আসামি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচার চলাকালে বাদীপক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় আসামির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ডের ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ভুক্তভোগী শিশুকে প্রদান করা হবে। রায় ঘোষণার পর কর্তব্যরত পুলিশ আসামিকে কারাগারে নিয়ে যায়।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৮ মে সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আসামি বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জলসার কথা বলে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি ওই শিক্ষার্থীকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যান। পরে শিশুটি তার মা–বাবার কাছে তাকে ধর্ষণের কথা জানায়। শিশুটির বাবা ২১ মে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।