নাটোরে শিশুছাত্রকে (১১) ধর্ষণের দায়ে আবদুর রহিম ওরফে কালু (২৭) নামের এক মাদ্রাসাশিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। অর্থদণ্ডের টাকা ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় এ দণ্ডাদেশ দেন নাটোরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মুহাম্মদ আবদুর রহিম। আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল কাদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

দণ্ডিত শিক্ষক আবদুর রহিম নাটোর শহরের কাঁঠালবাগান এলাকার আবদুল জব্বারের ছেলে ও বড়াইগ্রাম উপজেলার একটি হাফেজিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক।

আদালত সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকাল সাড়ে ১১টায় বিচারক আদালতের কার্যক্রমের শুরুতেই শিশু ধর্ষণ মামলার রায় ঘোষণা করেন। এ সময় আসামি আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। বিচার চলাকালে তিনি জামিনে থাকলেও গতকাল মঙ্গলবার আদালত তাঁকে কারাগারে নেন।

রায় ঘোষণার সময় আদালত জানান, মামলাটি তদন্তকালে আসামি ১৬৪ ধারায় দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। বিচার চলাকালে বাদীপক্ষ থেকে তাঁর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেওয়া হয়েছে। সবকিছু বিবেচনায় আসামির বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। অর্থদণ্ডের ৫০ হাজার টাকা আদায় করে ভুক্তভোগী শিশুকে প্রদান করা হবে। রায় ঘোষণার পর কর্তব্যরত পুলিশ আসামিকে কারাগারে নিয়ে যায়।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ২০২১ সালের ১৮ মে সন্ধ্যায় অভিযুক্ত আসামি বাড়ি থেকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে জলসার কথা বলে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে যান। রাত সাড়ে আটটার দিকে তিনি ওই শিক্ষার্থীকে বাড়িতে নামিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে যান। পরে শিশুটি তার মা–বাবার কাছে তাকে ধর্ষণের কথা জানায়। শিশুটির বাবা ২১ মে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বড়াইগ্রাম থানায় মামলা করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে চট্টগ্রাম মহানগরীর চান্দগাঁওয়ে শহিদুল ইসলাম শহিদকে হত্যার মামলায় অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলসহ ২৩১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। 

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চান্দগাঁও থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নুরুল হক গত বুধবার (৩০ জুলাই) আদালতের প্রসিকিউশন শাখায় অভিযোগপত্র জমা দিয়েছেন। 

শনিবার (২ আগস্ট) চান্দগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফতাব আহমেদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়ার তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

আরো পড়ুন:

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

চবি ছাত্রীর ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার

পুলিশ জানিয়েছে, গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলার সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দায়ের করা কোনো মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল করা হলো।

২০২৪ সালের ৩ আগস্ট সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম মহানগরীর বহদ্দারহাটে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ (বর্তমানে কার্যক্রম নিষিদ্ধ) ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় একাধিক পিস্তল, শটগানসহ ভারী অস্ত্র দিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিলেন আওয়ামী লীগের কর্মীরা।

এর আগে নিউ মার্কেট মোড়ে সমাবেশ করে ছাত্র-জনতা মিছিল নিয়ে যাওয়ার পথে ষোলশহর মেয়র গলিতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের বাসভবনে হামলা চালায়। এর পর বহদ্দারহাট মোড়-সংলগ্ন সাবেক সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর বাসভবনে হামলা হয়। ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন অটোরিকশাচালক শহিদ। তাকে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর শহিদের ভাই শফিকুল ইসলাম চান্দগাঁও থানায় মামলা করেন।

আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি আইনের ৩০২ ধারায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে। উল্লেখযোগ্য অপর আসামিরা হলেন— চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ও আ জ ম নাছির উদ্দীন, সাবেক সংসদ সদস্য এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী, এম এ লতিফ, আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভী, মহিউদ্দিন বাচ্চু, আবদুচ ছালাম, দিদারুল আলম দিদার, এস এম আল মামুন ও নোমান আল মাহমুদ, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী, চসিকের সাবেক কাউন্সিলর এসরারুল হক, নুর মোস্তফা টিনু, সলিমুল্লাহ বাচ্চু, জিয়াউল হক সুমন ও নুরুল আজিম রনিসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।

আগামী ২৫ আগস্ট বাদীর উপস্থিতিতে অভিযোগপত্রের ওপর শুনানি হবে বলে আদালত সূত্রে জানা গেছে। অভিযোগপত্রে ১২৮ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ২৮ জন সাধারণ মানুষ, ৯৯ জন পুলিশ ও ১ জন চিকিৎসক।

ঢাকা/রেজাউল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ