শুল্ক আরোপ করে কী অর্জন করতে চাইছেন ট্রাম্প
Published: 12th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি বিশ্বাস করেন শুল্ক সর্বরোগের মহৌষধ। অর্থনীতির এই হাতিয়ার ব্যবহার করে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন সক্ষমতা আবার শক্তিশালী করতে পারবেন, গুরুত্বপূর্ণ বিরোধ নিয়ে আলোচনার সময় বিদেশি রাষ্ট্রকে পায়ের কাছে এনে ফেলতে পারবেন, বাণিজ্য ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে এবং প্রচুর অর্থ আয় করতে পারবেন। ওই অর্থ যুক্তরাষ্ট্রের ঘাটতি পূরণে সহায়তা করবে এবং মার্কিন করদাতাদের ওপর থেকে করের বোঝা হ্রাস করবে।
এটা ঠিক যে শুল্ক এসব লক্ষ্যের অনেকগুলো অর্জনেই সহায়তা করে। কিন্তু ট্রাম্প যতটা আশা করছেন, শুল্ক ততটা প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারবে কি?
কার্যকরভাবে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের ক্রয়মূল্য বাড়িয়ে দেশে উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি অনেক বিস্তৃত ও বৈচিত্র্যপূর্ণ। তাই, দেশটির অন্যান্য প্রতিবেশীর অর্থনীতি ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর যতটা নির্ভরশীল, মার্কিন অর্থনীতি ঠিক ততটা নির্ভরশীল নয়। যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতিকে মন্দার ঝুঁকিতে না ফেলেই অন্যান্য দেশের অর্থনীতির গুরুতর ক্ষতি করতে সক্ষম।
এ ছাড়া শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যে রাজস্ব আয় হবে, তা দেশটির অর্থনৈতিক ঘাটতি পূরণে সহায়তা করতে পারবে।
কিন্তু, প্রবাদে আছে, বেশি ভালো নয় ভালো।
ট্রাম্পের পরিকল্পনায় সমস্যা হচ্ছে, একই সঙ্গে, একই সময়ে এত সব লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নয়। কারণ, ট্রাম্পের উদ্দেশ্যের মধ্যে পরস্পরবিরোধিতা রয়েছে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যদি অন্য দেশের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে শুল্ক আরোপ করা হয়, তবে দেশগুলো শর্ত পালন করতে রাজি হলে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাণিজ্য ভারসাম্য পুনরুদ্ধার করতে এ শুল্ক আরোপ নয়।
আবার যদি যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে শুল্ক আরোপ করা হয় তবে এতে রাজস্ব আয় বাড়বে না, যা দিয়ে ঘাটতি পূরণের পরিকল্পনা করা হয়েছে। কারণ, যদি মার্কিনরা দেশি পণ্য কেনার দিকে ঝুঁকে যান, তবে বিদেশি পণ্যের জন্য কে শুল্ক দিতে যাবে?
বরং ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির সহায়ক হওয়ার চাইতে ক্ষতি করবে বেশি। ট্রাম্প নিজেও সম্প্রতি স্বীকার করেছেন, শুল্ক ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির’ কারণ হতে পারে।
ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতিমালার কারণে মার্কিন অর্থনীতি মন্দায় পড়তে পারে কি না, ট্রাম্প এ নিয়ে আগাম কথা বলতে রাজি না হলেও গত সোমবার দেশটির শেয়ারবাজার বড় পতন দেখেছে।
ট্রাম্প শুল্ক আরোপের কারণ ব্যাখ্যায় মূল যেসব যুক্তি দেখিয়েছেন, সেগুলো হলো
ফেনটানিল এবং অভিবাসনট্রাম্প বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানিল (একধরনের মাদক) এবং অবৈধ অভিবাসী প্রবেশ বন্ধে উদ্যোগ নিতে চাপ দিতে মেক্সিকো (২৫ শতাংশ), কানাডা (২৫ শতাংশ) এবং চীনের (২০ শতাংশ) ওপর শুল্ক আরোপ করেছেন তিনি। অবশ্য, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর শুল্ক কার্যকর হওয়া ২ এপ্রিল পর্যন্ত পিছিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প।
বিষয়টি নিয়ে ট্রাম্পের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, ‘ফেন্টানিল আসা বন্ধ হয়ে গেলে আমি মনে করি, এটাকে সফল বলা যাবে। কিন্তু ফেন্টানিল আসা বন্ধ না হলে অথবা তিনি এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারলে শুল্ক বজায় থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তিনি নিশ্চিত হতে পারছেন। এটা খুব স্পষ্ট। আপনাকে আগে মার্কিনদের জীবন বাঁচাতেই হবে।’
তাই মেক্সিকো ও কানাডার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের শুল্ক ‘আদতে বাণিজ্য যুদ্ধ নয়, মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’—এমনটাই বলেছেন মার্কিন ন্যাশনাল ইকোনমিক কাউন্সিলের পরিচালক কেভিন হ্যাসেট।
রাজস্ব আয় বৃদ্ধিট্রাম্প শুল্ক আরোপ থেকে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কাল্পনিক এক হিসাব দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে মার্কিন কংগ্রেসের উভয় কক্ষে দেওয়া ভাষণে ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমরা কোটি কোটি ডলার আয় করতে পারব এবং এত বেশি কাজের সুযোগ তৈরি হবে, যা অতীতে কখনো দেখা যায়নি। আমেরিকাকে আবার ধনী এবং আমেরিকাকে আবার মহান করতেই এই শুল্ক।’
গত রোববার ট্রাম্প তাঁর এয়ারফোর্স ওয়ানে বসে বলেন, ‘আমরা এতটা ধনী হতে চলেছি যে আপনি বুঝে উঠতে পারবেন না, কোথায় এত অর্থ খরচ করবেন।’
রেসপনসিবল ফেডারেল বাজেটের একটি কমিটি তাদের পরিসংখ্যানে বলেছে, ট্রাম্প চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর যে শুল্ক আরোপ করতে চলেছেন, তাতে বছরে ১২ হাজার কোটি মার্কিন ডলার আয় হবে। ১০ বছরে ওই আয় গিয়ে দাঁড়াবে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারে।
কিন্তু সমস্যা হলো, এত দীর্ঘ সময়ের জন্য এই শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা সাজানো হয়নি। ট্রাম্প প্রশাসন বলেছে, ফেন্টানিল আসা বন্ধ হলে তারা ‘সফল’। তাই যদি হয় তবে বলাই যায়, এক দশক ধরে এই শুল্ক থাকবে না।
হ্যাসেট বলেছেন, ফেন্টানিল নিয়ে কাজ শুরুর কারণেই ট্রাম্প কানাডা ও মেক্সিকোর ওপর শুল্ক কার্যকর হওয়া দুই দফা পিছিয়েছেন।
উৎপাদন ক্ষেত্রে কাজের সুযোগএয়ার ফোর্স ওয়ানে বসে রোববার ট্রাম্প আরও বলেছেন, ‘আমি আপনাকে বলছি, আপনি শুধু দেখে যান। আমাদের নতুন কর্মক্ষেত্র সৃষ্টি হতে চলেছে, আমরা কারখানা খুলতে চলেছি। এটা দারুণ কিছু হতে চলেছে।’
ট্রাম্প মাঝেমধ্যেই দেশে তৈরি পণ্যের ওপর কম কর এবং বিদেশে উৎপাদিত পণ্যের ওপর কর বাড়ানোর পক্ষে কথা বলেন।
কংগ্রেসের উভয় কক্ষে যৌথ ভাষণের সময় ট্রাম্প শুল্কের পক্ষে তাঁর মূল যুক্তিগুলোর একটির কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা দেশজ উৎপাদন ও সব উৎপাদন প্রক্রিয়ার ওপর কর কমাতে চাই। যদি আপনি আপনার পণ্য আমেরিকায় উৎপাদন না করেন, তবে আপনাকে শুল্ক দিতে হবে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে তার চেয়ে বেশি পরিমাণে।’
এটা অনেকটা লাঠিতে মুলা ঝোলানোর মতো বাণিজ্যনীতি। যেখানে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাত পুনরুদ্ধার করার কথা বলছেন। যদি কোম্পানিগুলো ট্রাম্পের পরামর্শ মেনে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন শুরু করে, তবে ট্রাম্পের কথা অনুযায়ী তাদের আর শুল্ক দিতে হবে না। সে ক্ষেত্রে শুল্ক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের আয়ও বাড়বে না।
ঋণ পরিশোধ এবং কর হ্রাসদ্বিতীয়বার যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর ট্রাম্প শুরুতেই যেসব ব্যবস্থা নিয়েছেন, তার মধ্যে একটি হলো দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়কে দেশের বাইরে থেকে রাজস্ব আয়ের (এক্সটার্নাল রেভিনিউ সার্ভিস) উপায় খুঁজে বের করার নির্দেশ দেওয়া। ট্রাম্প বলেছেন, তিনি এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ পরিশোধ ও কর হ্রাস করতে চান।
সমস্যা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের করদাতারা প্রতিবছর তিন ট্রিলিয়ন ডলার আয়কর দেন এবং প্রতিবছর প্রায় তিন ট্রিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র। এর অর্থ আয়কর থেকে যুক্তরাষ্ট্র যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে, ট্রাম্প যদি সেটা শুল্ক থেকে আয় করতে চান, তাহলে তাঁকে অন্তত ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে হবে। এই পরিমাণ শুল্ক আরোপ প্রায় অসম্ভব। কারণ, তাতে আমেরিকার বাজারে পণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাবে।
এমনটা যে হবে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায়। তার ওপর, পণ্যের দাম বেড়ে গেলে ভোক্তারা তাদের ব্যয় কমিয়ে দেবেন, এতে অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্র কি মন্দার পথে যাচ্ছে, কী বলছেন ট্রাম্প১১ মার্চ ২০২৫ন্যায্যতা পুনরুদ্ধারকংগ্রেসের উভয় কক্ষে ভাষণের সময় ট্রাম্প বলেছিলেন, ‘দশকের পর দশক ধরে বিশ্বের প্রায় সব দেশ আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করে গেছে এবং আমরা আর এটা হতে দেব না। অন্যান্য দেশ দশকের পর দশক ধরে আমাদের বিরুদ্ধে শুল্ককে ব্যবহার করে গেছে। এবং এখন অন্য দেশের বিরুদ্ধে আমাদের সেগুলো ব্যবহারের পালা।’
বাণিজ্যে ন্যায্যতা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে ট্রাম্প বিভিন্ন দেশের বহু পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা বলেছেন। আগামী ২ এপ্রিল থেকে ওই শুল্ক কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে।
অন্যান্য দেশের তুলনায় যুক্তরাষ্ট্রকে যখন বেশি শুল্ক দিতে হয় এবং বাণিজ্য ভারসাম্যহীন হয়, ট্রাম্প প্রায়ই এ ধরনের পরিস্থিতিকে ভুলভাবে ‘ভর্তুকি’ বা ‘লোকসান’ বলে বর্ণনা করেন।
অধিকাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করেন, বাণিজ্য ঘাটতি মানে লোকসান বা ভর্তুকি নয়। বরং এমনকি ঘাটতি শক্তিশালী অর্থনীতির একটি প্রতিফলক।
অর্থনীদিবিদেরা মনে করেন, অন্যান্য দেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি অর্থপূর্ণভাবে কমাতে শুল্কারোপ সম্ভাব্য উপায় নয়।
এটা করা হলে বরং সেটা মার্কিন ভোক্তাদের ব্যয় করার ক্ষমতা কমে যাওয়ার ইঙ্গিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির প্রধান স্তম্ভ, দেশটির ভোক্তাদের ব্যয় করার সক্ষমতা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ট র ম প বল ছ ন শ ল ক আর প র অন য ন য দ শ ব যবহ র য র ওপর আম র ক আম দ র প রব ন উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।