‘বাবাকে বলেছিলাম মামলা করে বিচার পাব না, এখন বাবাকেই হারালাম’
Published: 12th, March 2025 GMT
চলছে বাবা মন্টু দাসের শেষকৃত্য, হঠাৎ হঠাৎ চিৎকার ও কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে কালিবাড়ী এলাকা।
‘‘বাবাকে বলেছিলাম মামলা করেও বিচার পাবো না, মামলার দরকার নাই। এখন বাবাকেই হারালাম, মান সম্মান গেলো।’’
রাইজিংবিডির প্রতিবেদকের সাথে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার কালিবাড়ী এলাকায় অপহরণের পর ধর্ষণের শিকার সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী (১৩)।
মঙ্গলবার (১১ মার্চ) রাতে নিজ বাড়ির পিছন থেকে ধর্ষণের শিকার ওই শিক্ষার্থীর বাবা মন্টু দাসের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থী রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমার শুরু থেকেই ভয় হচ্ছিল। মনে হয়েছিল বিচার পাবো না, উল্টো মানুষ জানবে। তাই বাবাকে নিষেধ করেছিলাম মামলা করতে।”
এদিকে দেড় মাসের শিশু কোলে নিয়ে অসহায় দৃষ্টিতে স্বামী মন্টু দাসের শেষকৃত্য দেখছেন তার স্ত্রী। তার পাশে চার বছরের অবুঝ আরেক কন্যা শিশু। মন্টু দাসের স্ত্রী কখনো চিৎকার দিয়ে কান্না করছেন আবার কখনো জ্ঞান হারাচ্ছেন।
স্বজন ও প্রতিবেশিরা জানান, মন্টু দাস একটি মুরগির দোকানে কর্মচারী ছিলেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। তারা এখন কীভাবে দিনযাপন করবে? তাদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করা উচিৎ সরকারের। এই পরিবার পুরোপুরি শেষ হয়ে গেছে। তিনটি কন্যা সন্তান নিয়ে দুবেলা খাবার সামর্থ তাদের নেই।
উপকূলীয় দরিদ্র পরিবার উন্নয়ন সংগঠনের নিবার্হী পরিচালক নুসরাত সিনথিয়া বলেন, “সরকারি-বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলোর এই পরিবারটিকে আইনের সহায়তার পাশাপাশি তাদের স্থায়ীভাবে খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করা উচিত।”
তিনি আরো বলেন, “এই ঘটনার পর থেকে এই পরিবারটি ভীত হয়ে আছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিও প্রশাসনের বিবেচনা করা উচিত।”
বরগুনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আবদুল হালিম রাইজিংবিডিকে বলেন, “অপহরণ ও ধর্ষণ মামলার পরে পরিবার যে হুমকিতে রয়েছে এটি পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে জানানো হয়নি। তারপরেও যা হলো এটি খুবই কষ্টকর। এই ঘটনাটি সুক্ষ্মভাবে নজরদারি করছেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। আমরা সবদিক বিবেচনা করে পরিবারটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছি।”
এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
ঢাকা/ইমরান/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
গাইবান্ধায় বাবা-মাকে মারধর করে এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণ, অভিযুক্ত আটক
বাড়ির ভেতর ঢুকে বাবা-মাকে মারধরের পর এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে অপহরণের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) দুপুর ২টার দিকে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কামারদহ ইউনিয়নের বেপারীপাড়ায় ঘটনাটি ঘটে। বিকেল ৫টার দিকে ভুক্তভোগীকে উদ্ধার ও মূল অভিযুক্ত আটক করে পুলিশ।
অভিযুক্ত সঞ্চয় (২০) উপজেলার ফাঁসিতলা এলাকার মোঘলটুলী গ্রামের রাফিউল ইসলাম রাফির ছেলে।
ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, মঙ্গলবার দুপুরে গোবিন্দগঞ্জ বালিকা বিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। কিছুক্ষণ পর সঞ্চয়সহ ১৫-২০ জন লাঠি নিয়ে বাড়িতে হামলা চালায়। তারা ঘরের দরজা-জানালাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে এবং মালামাল লুট করে। এসময় বাধা দিতে গেলে হামলাকারীরা ওই শিক্ষার্থীর বাবা-মাকে মারধর ও কুপিয়ে আহত করে। পরে তারা শিক্ষার্থীকে টেনেহিঁচড়ে মোটরসাইকেলে তুলে নিয়ে যায়।
আরো পড়ুন:
ধামরাইয়ে চালক-হেলপারকে মারধর করে তেলবাহী ট্রাক ছিনতাই
সিরাজগঞ্জে সহপাঠীদের মারধরে আহত এসএসসি পরীক্ষার্থীর মৃত্যু
পুলিশ বিকেল ৫টার দিকে পার্শ্ববর্তী কামারদহ ফেলুপাড়া গ্রামে অভিযান চালিয়ে চাঁন মিয়ার বাড়ি থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে। এসময় অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক ও তার কাছে থাকা মোটরসাইকেল জব্দ করে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর ভাষ্য, দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে যাওয়া আসার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করাসহ বিভিন্ন হুমকি দিচ্ছিলেন সঞ্চয়। এ ঘটনায় অভিযুক্ত সঞ্চয়ের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন তিনি।
ঘটনাটি নিশ্চিত করে গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি বুলবুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে পুলিশ উদ্ধার অভিযান চালায়। একটি বাড়ি থেকে শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করা হয়। অভিযুক্ত সঞ্চয়কে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।”
ঢাকা/মাসুম/মাসুদ