খুলনায় হাসপাতালের প্রিজন সেলে আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে অন্য নেতাদের সাক্ষাতের অভিযোগ
Published: 12th, March 2025 GMT
আটকের পর খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন আওয়ামী লীগ নেতা খালিদ আহমেদের সঙ্গে অন্য নেতারা সাক্ষাৎ করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আজ বুধবার দুপুরে প্রিজন সেলে সাক্ষাতের বিষয়টি জানাজানি হলে দ্রুত শটকে পড়েন নেতারা।
খালিদ আহমেদ খুলনার খালিশপুর থানা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়াবিষয়ক সম্পাদক। তিনি সিটি করপোরেশনের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের দিকে নগরের খালিশপুর থানার পদ্মা অয়েল রোডের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে খালিদ আহমেদকে আটক করা হয়। অভিযানের সময় পালাতে গিয়ে বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে তিনি আহত হন। পরবর্তী সময়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। ওই প্রিজন সেলের মধ্যেই আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে খালিদ আহমেদের বৈঠক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে জানতে চাইলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রিজন সেলের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপপরিদর্শক (এসআই) শামিম রেজা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আপনারা যা শুনেছেন তা সত্য। আমি আসলে কিছু বলার জন্য রেডি না।’ এ কথা বলেই তিনি ফোন কেটে দেন। পরে ফোন দিলেও তিনি আর ধরেননি।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নেতাদের সাক্ষাতের সময় প্রিজন সেলের গেটে তালা মারা ছিল। গেটে একজন পুলিশ সদস্যও দায়িত্বরত ছিলেন। আর ভেতরে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ওই বৈঠকে যাঁরা উপস্থিত ছিলেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও নাশকতাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরের দিকে প্রিজন সেলের মধ্যে ও বাইরে ২০-২৫ জন আওয়ামী লীগ নেতাকে দেখা গেছে। ভেতরে পুলিশি পাহারায় আসামির সঙ্গে বসে গল্প করেন ট্যাংকলরি শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনাম মুন্সী। প্রিজন সেলের ভেতরেই খালিদ হোসেনের কক্ষে ছিলেন আত্মীয়স্বজন ছাড়াও বেশ কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা। ব্যাপারটি জানাজানি হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতারা সেখান থেকে শটকে পড়েন।
খালিশপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালটি পড়েছে নগরের সোনাডাঙ্গা থানার মধ্যে। সেই হিসেবে সেখানকার নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করে সোনাডাঙ্গা থানা–পুলিশ। সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন মাধ্যমে ঘটনাটি শুনেছি। প্রিজন সেলে যিনি দায়িত্ব ছিলেন তিনি এসেছিলেন পুলিশ লাইন থেকে। এ কারণে ওই সময় কি ঘটেছিল তা বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে ঘটনার পর সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর করা হয়েছে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প র জন স ল র খ ল দ আহম দ আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।