জ্বর হচ্ছে রোগের বহিঃপ্রকাশ। গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে বেশিমাত্রায় সতর্ক থাকতে হবে। কারণ এখানে শুধু মা নন, অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যেরও বিষয় থাকে। গর্ভাবস্থায় উচ্চমাত্রার জ্বর মা ও সন্তান দু’জনকেই ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। গর্ভাবস্থায় জ্বর হলে মায়ের শরীর দ্রুতই খারাপ হয়। জ্বরের প্রভাব অনাগত সন্তানের ওপর পড়তে পারে।
গর্ভাবস্থায় জ্বর নানা কারণে হতে পারে। অন্তঃসত্ত্বারা মূত্রাশয়ে প্রদাহ, মৌসুমি ফ্লুর কারণে কিংবা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হতে পারেন।
সাধারণত ১০০ থেকে ১০২ ফারেনহাইট
জ্বর থাকলে সেটিকে সাধারণ জ্বর বলা হয়। কিন্তু জ্বর যদি ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট হয়, তবে সেটি উচ্চমাত্রার জ্বর। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে যদি পাতলা পায়খানা, মাথা ঘোরা, গায়ে ব্যথা, পায়ে ব্যথা হয়, তাহলে সাবধান হতে হবে। কারও নাক বা দাঁত দিয়ে রক্ত পড়া, কারও আবার গায়ে র্যাশ ওঠার সমস্যাও হয়।
জ্বর হলেই গর্ভাবস্থায় সব ওষুধ খাওয়া যাবে না। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের ব্যথানাশক ওষুধ খেলে তা মারাত্মক হতে পারে। অ্যান্টিবায়োটিক তো অবশ্যই নয়।
তবে রোগীকে পরীক্ষা করে ডাক্তার যদি মনে করেন, রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে, তাহলে তিনি তা পারেন। তবে ডেঙ্গু বা যে কোনো জ্বরই হোক, অন্তঃসত্ত্বাকে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। ডেঙ্গু পরীক্ষায় এনএস ১ যদি নেগেটিভও হয়, তাহলেও অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের লক্ষণ খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় ডেঙ্গু নেগেটিভ আসে, তারপরও সতর্ক থাকতে হবে। জ্বর আক্রান্ত হওয়ার চার থেকে সাত দিন সবচেয়ে বিপজ্জনক সময়। এর পরই প্লাটিলেট কমতে থাকে, রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণ দেখা দেয়।
প্লাটিলেট কমে গেলে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের ইন্টারনাল হেমারেজ হতে পারে, অনাগত সন্তান পেটে মারা যেতে পারে। অনেক সময় প্রি-ম্যাচিউর ডেলিভারি হতে পারে। এ সময় ডেলিভারি হলে বাচ্চারও ডেঙ্গু হতে পারে।
তাই জ্বর হলে ঘরে বসে থাকা যাবে না। রোগীর জ্বর, উচ্চ রক্তচাপ মাপতে হবে। প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার, যেমন– স্যুপ, ডাবের পানি, ফলের রস, স্যালাইন খেতে হবে। পাশাপাশি প্রোটিনজাতীয় খাবার, সবুজ শাকসবজি, মাছ, মুরগি খেতে হবে। ইমিউনিটি ঠিক থাকলে রোগী খুব বেশি জ্বরে কাবু হবে না। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
ডেঙ্গু জ্বর থেকে সাবধান থাকতে অন্তঃসত্ত্বাদের দিনের বেলায়ও মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে, ফুল স্লিপ জামা পরতে হবে, মশার রিপেলমেন্ট ব্যবহার করতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক (গাইনি ও অবস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জ বর
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’