Samakal:
2025-08-01@23:48:05 GMT

সীমান্তে ‘কাট আউট’ চোরাচালান

Published: 14th, March 2025 GMT

সীমান্তে ‘কাট আউট’ চোরাচালান

ঈদ সামনে রেখে জয়পুরহাট সীমান্তে মাদক চোরাচালান নতুন মাত্রা পেয়েছে। এ চোরাচালান নেটওয়ার্ক পরিচালনা করছে স্থানীয় বিএনপি নেতা মিঠু-শাহীন চক্র। এদের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সীমান্তপথে অবৈধ কার্যক্রম চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ দুই নেতার হয়ে সীমান্তের একাধিক পয়েন্টে সক্রিয় রয়েছে দুই শতাধিক চোরাকারবারি। প্রতি রাতে এদের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার মাদক দেশে ঢুকছে।
এই কাজে সম্পৃক্ত একাধিক সূত্রে জানা যায়, জয়পুরহাটের উচনা সীমান্তের সাড়ে তিন কিলোমিটার এলাকায় তারকাঁটা নেই। এ কারণে এলাকাটি মাদক কারবারির জন্য হটস্পট। প্রতি রাতে এই সীমান্ত দিয়ে হাজার হাজার বোতল ফেনসিডিল, প্যান্টাডল, গাঁজা ও নেশাজাতীয় ইনজেকশন বাংলাদেশে ঢুকছে। এ ছাড়া তারঘেরা কল্যাণপুর, লকমা, গলাকাটা ব্রীগ, হাটখোলা, শালুয়া, চকবরকত এলাকায় ভিন্ন উপায়ে চলছে চোরাচালান। এসব মাদক বাংলাদেশে ঢুকেই ‘কাট-আউট’ পদ্ধতিতে তিন ধাপে বিভক্ত হয়ে দেশের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে পড়ছে। 

বস্তায় ভরে মাদক প্রস্তুত করে ভারতীয় ডিলাররা বাংলাদেশের ডিলারের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে। কোন পয়েন্ট দিয়ে মাদক ঢুকবে, সেটি জানানোর পর নির্দিষ্ট সময়ে বস্তাগুলো তারকাঁটার ওপর দিয়ে ছুড়ে বাংলাদেশ অংশে ফেলা হয়। এর পর বাংলাদেশি ডিলার বাহকের মাধ্যমে সেগুলো গ্রামের একাধিক বাড়িতে রেখে দেয়। প্রতিটি দলে একজন পাইলট টর্চলাইট ও বাটন মোবাইল ফোন নিয়ে তাদের পথ দেখায়। তার পরও নিরাপত্তার স্বার্থে এসব মাদক মূল ডিলারের আরও একটি দল (হ্যান্ডলার) সেগুলো ভিন্ন জায়গায় রাতেই স্থানান্তর করে ফেলে। পরে সর্বশেষ টিম এসে মাদক চাহিদামতো দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়। এখানে একাধিক টিম কাজ করলেও কেউ কাউকে চেনে না। নির্দিষ্ট কমিশনের ভিত্তিতে তারা এই কাজটি করে।

এ ছাড়া আরেকটি কৌশল রয়েছে তাদের। মাঝরাতে বহনের সংকেত পাওয়া না গেলে সীমান্তের ধানক্ষেত বা অন্যান্য কৃষিজমির মাঝে গর্ত করে মাদক লুকিয়ে রাখা হয়। পরে সুবিধাজনক সময়ে বাহকরা তা সংগ্রহ করে। এ ছাড়া চোরাকারবারিরা খালে বাঁশের ভেলা তৈরি করে তার নিচে ফেনসিডিলের বোতল বেঁধে ভাসিয়ে দেয়, যা পরে নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে তুলে নেওয়া হয়। গৃহবধূ ও কিশোরীকেও এই কাজে ব্যবহার করা হয়। এরা বিশেষ পোশাকের ভেতরে ছোট ছোট প্যাকেট লুকিয়ে সীমান্ত থেকে মাদক আনে।

চক্র যাদের নিয়ন্ত্রণে 
মাদকের সবচেয়ে বড় রুট লকমা গ্রামের দুই প্রান্তে দুই গডফাদারের বাড়ি। সীমান্তঘেঁষা বাড়িতে থাকেন মিঠু চৌধুরী। তিনি আইমা ইউনিয়ন বিএনপির ১ নম্বর ওয়ার্ড কমিটির সদস্য। 
তার সহকারী একই ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি গোলজার হোসেন। এই দু’জনের চক্রে একশর বেশি চোরাকারবারি মাদক কারবারে জড়িত। এই এলাকার আরেক বড় কারবারি হলেন বিএনপি নেতা শাহীন চৌধুরী। তার প্রধান সহযোগী একই এলাকার ইস্তামুল হোসেন। এই গ্রুপটিও শতাধিক চোরাকারবারির দল নিয়ন্ত্রণ করে। এদের সঙ্গে এপারের বিজিবি ও ওপারের বিএসএফ সদস্যের সঙ্গে রয়েছে ‘বিশেষ বন্ধুত্ব’। কোন এলাকায় অভিযান চলবে, কোন রুট নিরাপদ হবে– তারা আগেভাগেই তা জানিয়ে দেন।
দেশের ইলিশ মাছ, মিষ্টি-মিঠাই খাওয়ানো থেকে শুরু করে তারা পাচার করা মাদকের নির্দিষ্ট একটি অংশের টাকা সীমান্তরক্ষীদের দিয়ে থাকে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর বিপরীতে প্রতিদিন রাত ৮টা থেকে ৯টা এবং রাত ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত তারা মাদক পাচারের সুযোগ পায়। এ ছাড়া প্রতিদিন রাত ১২টায় সীমান্তে রক্ষী সেন্ট্রিদের ডিউটি বদল হয়। এই সময়টাতে মাদকের বস্তা তারকাঁটার ওপর ছুড়ে দিয়ে দেদার পাচার হয়। 

অভিযুক্তদের বক্তব্য জানার চেষ্টা করেও কথা বলতে পারেনি সমকাল। কারণ, বেশির ভাগ সময়ই তারা ভারতীয় সিমকার্ডে হোয়াটসআপ কিংবা ইমোতে কথাবার্তা বলে। এ জন্য বাংলাদেশের কোন ফোন নেটওয়ার্কে তাদের পাওয়া যায়নি। তবে আইমা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য সামসুল হুদা বলেন, এরা চিহ্নিত মাদক কারবারি। যখন যে সরকার ক্ষমতায় থাকে, তারা ‘সরকারি দল’ বনে যায়। মিঠু আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করত। তার বাবা মোখলেছুর রহমান এখনও আওয়ামী লীগ করেন। শাহীনও আগে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।  পট পরিবর্তনের পর তারা এখন বিএনপি বনে গেছে। তবে দু’জনই প্রভাবশালী হওয়ায় হাতেনাতে ধরা না পড়লে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া কিছুটা জটিল। 

রাতের আঁধারে মাদকের রাজত্ব 
সন্ধ্যার পর ভারত সীমান্তঘেঁষা জয়পুরহাটের আইমা ইউনিয়নের লকমা ও ধলাহার ইউনিয়নের কল্যাণপুর গ্রামের চিত্র বদলে যেতে শুরু করে। গত শনিবার সরেজমিন দেখা যায়, সীমান্তঘেঁষা নির্দিষ্ট কিছু জায়গায় সন্ধ্যার পরপরই অচেনা মানুষের আনাগোনা। এদের অনেকে কৃষক বা দিনমজুর বেশে আসছে। কেউ কেউ সাধারণ পথচারীর মতো চলাফেরা করছে। স্থানীয় এক তরুণ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘এরাই ভারী (মাদক বহনকারী)। রাতে দেশি অস্ত্র নিয়ে এরা সীমান্তে ছড়িয়ে পড়ে। সিগন্যাল মিললে মাদকের বস্তা ঘাড়ে নিয়ে আশপাশের গ্রামে রাখে। প্রতিটি বস্তায় ৫০ থেকে ১০০ বোতল পর্যন্ত ফেনসিডিল থাকে। এ জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের কমিশন পায় তারা। বোতলগুলো প্লাস্টিকের হওয়ায় বহনে সুবিধা হয়। সঙ্গে অস্ত্র রাখার উদ্দেশ্য হলো ছোটখাটো যে কোনো বাধা তারাই নিজেরাই মোকাবিলা করবে।’
রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সদর থানার শেষ সীমানা ধলাহারের কল্যাণপুর এবং পাঁচবিবি থানার লকমা গ্রামের নির্দিষ্ট রুটে কিছু মোটরসাইকেল এবং পায়ে চলা দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। জানা যায়, এই মোটরসাইকেল আরোহীদের কাজ মূলত পণ্য (মাদক) বহন করা, যা ভারতীয় অংশ থেকে চোরাচালান হয়ে আসে। একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আমরা জানি কখন কী হচ্ছে। কিন্তু কিছু বলার উপায় নেই। এখানে যারা কাজ করে, তারা সবাই প্রভাবশালী লোকজনের সঙ্গে জড়িত।

সীমান্ত এলাকা পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, লকমার শেষ প্রান্ত থেকে সীমান্তের বেড়া মাত্র ১ মিনিটের হাঁটাপথ। মাঝে প্রতিবন্ধক ছোট একটি খাল। রাতের অন্ধকারে এই খালপথে কিছু ব্যক্তিকে গোপনে কিছু একটা আনতে দেখা যায়। তারা বাঁশের ভেলা ব্যবহার করছিল। রাত পৌনে ৩টার সময় বিজিবির টহল কিছু কিছু জায়গায় থাকলেও তারা চোরাকারবারিদের খোঁজার চেষ্টা করছে বলে মনে হয়নি। জঙ্গলে ঘেরা বিকল্প রুট ব্যবহার করে সেই ভারী বাহিনীর কাঁধে চেপে পার হয়ে যায় শত শত বস্তা মাদক। স্থানীয় এক দোকানি বলেন, বিজিবি টহল দিলেও সেই জায়গার তথ্য চোরাকারবারিরা আগেভাগেই পেয়ে যায়। তাই কিছুই ধরা পড়ে না।

ঈদের বিশেষ মিশনে ২০০ চোরাকারবারি মাঠে 
সিন্ডিকেটের পরিকল্পনায় রয়েছে, ঈদের আগে মাদকের বিশাল চালান দেশে ঢোকানোর। এ জন্য তারা বিশেষ ‘মিশন’ পরিচালনা করছে, যেখানে দুই শতাধিক চোরাকারবারিকে জড়ো করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, ঈদের সময়টা আমাদের জন্য বড় ব্যবসার সুযোগ। এবার অন্তত ২০০ জন নিযুক্ত হয়েছে। সীমান্তের বেশ কিছু জায়গায় নতুন রুট তৈরি করা হয়েছে, যাতে ধরা পড়ার ঝুঁকি কম থাকে।

এ ব্যাপারে জয়পুরহাট ২০ বিজিবি কমান্ডার লে.

কর্নেল নাহিদ নেওয়াজ বলেন, আমরা সব সময়ই মাদকের বিরুদ্ধে সোচ্চার। নিয়মিত অভিযান হচ্ছে, সীমান্তে কড়া পাহারা চলছে। বিভিন্ন সময় বিজিবি বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করেছে। এই অভিযান ঈদের আগে আরও জোরদার হবে।
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি থানার ওসি মইনুল হাসান বলেন, চিহ্নিত মাদক কারবারিসহ তাদের সহযোগীর তালিকা তৈরি করছি। শিগগিরই তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করা হবে। যাতে কোনো মাদক পাচার না হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছি।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চ র ক রব র ক রব র র ক ক রব র ন ব এনপ এক ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

ভোগবাদী যুগে ইসলামে সুখের খোঁজ

আপনার বাড়িতে কি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের স্তূপ জমে আছে? জানেন কি, এর থেকে মুক্তির পথ আছে ইসলামের সরল জীবনধারায়? আধুনিক বিশ্বে ভোগবাদের তীব্র ঝড়ে আমরা প্রায়ই নিজেদের দেখি অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রে ঠাসা ঘরে।

নতুন ফ্যাশনের পোশাক, সর্বশেষ প্রযুক্তির গ্যাজেট বা মধ্যরাতে এক ক্লিকে কেনা অপ্রয়োজনীয় পণ্য—এসব আমাদের জীবনের অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু ইসলাম আমাদের ন্যূনতম একটি সরল জীবনধারার পথ দেখায়, যা পার্থিব লোভ থেকে মুক্ত করে আমাদের আল্লাহর পথে নিবেদিত হতে উৎসাহিত করে।

আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো।সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০সংযম কেন জরুরি

মিনিমালিজম বা ন্যূনতাবাদ এমন একটি জীবনধারা, যেখানে আমরা শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর নির্ভর করব এবং অতিরিক্ত ভোগবিলাস থেকে দূরে থাকব। ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ না হয়ে শুধু যেটুকু না হলেই জীবন চলে না, সেটুকু নিজের কাছে রাখব।

আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘হে আদম সন্তান, প্রত্যেক নামাজের সময় বেশভূষা সৌন্দর্য গ্রহণ করো, খাও এবং পান করো, কিন্তু অপচয় কোরো না। নিশ্চয়ই তিনি অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আ’রাফ, আয়াত: ৩১)।

এই আয়াত আমাদের জীবনে সংযম ও সরলতার গুরুত্ব মনে করিয়ে দেয়।

আরও পড়ুনদুনিয়ার ভোগ–বিলাস নিয়ে সুরা তাকাসুরের সতর্কতা১০ এপ্রিল ২০২৩

বিজ্ঞাপনের প্রলোভন আজকাল আমাদের অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটার দিকে ঠেলে দেয়। প্রায়ই এমন জিনিস কিনে ফেলি, যেমন একটি ইউএসবি মগ হিটার বা জামাকাপড়, যা তারপর বছরের পর বছর অব্যবহৃত পড়ে থাকে।

বাড়িতে জমে থাকে প্যাকেট না খোলা গ্লাস–বক্স, অপঠিত বইয়ের স্তূপ। প্রশ্ন করে দেখি তো, আমাদের আসলেই কি এগুলো প্রয়োজন ছিল?

মহানবী (সা.)-এর সাদাসিধা জীবন

মহানবীজি (সা.) এবং তাঁর সাহাবারা সরল জীবনযাপনের উজ্জ্বল উদাহরণ। হজরত আয়েশা (রা.)-কে নবীজি বলেছিলেন, ‘হে আয়েশা, তুমি যদি আমার সঙ্গে মিলিত হতে চাও, তবে এই দুনিয়া থেকে একজন পথিকের প্রয়োজনীয় জিনিসের মতো সামান্য গ্রহণ করো। ধনীদের সঙ্গে মেলামেশা থেকে সাবধান থাকো এবং কোনো পোশাককে তখনই জীর্ণ হয়ে গেছে মনে করো, যখন তুমি তাতে প্যাঁচ লাগিয়েছ (মানে যখন পুরোনো হয়ে যাওয়ার কারণে পেঁচিয়ে যায়)।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ১৭,৮০০)।

এই হাদিসে নবীজি (সা.) স্পষ্টভাবে সরল জীবনযাপন এবং অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

ইসলাম আমাদের শেখায় যে পার্থিব সম্পদ ক্ষণস্থায়ী এবং এটি আমাদের চিরস্থায়ী জীবনের জন্য প্রস্তুতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নবীজি (সা.) কখনো অপ্রয়োজনীয় সম্পদ সঞ্চয় করেননি এবং সব সময় দানশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করেছেন।

দানের সংস্কৃতি

আজকের বিশ্বে ভোগবাদী সংস্কৃতি আমাদের জীবনকে জটিল করে তুলেছে। ক্রেডিট কার্ড, সহজলভ্য ঋণ এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো আমাদের ক্রমাগত কেনাকাটার দিকে প্রলুব্ধ করে। আমাদের পূর্ববর্তী প্রজন্ম, যেমন আমাদের দাদা-দাদিরা, সীমিত সম্পদের মধ্যে সরল জীবন যাপন করতেন। কিন্তু গত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান এবং সহজে ঋণ পাওয়ার সুযোগ আমাদের ভোগবাদী প্রবৃত্তিকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আরও পড়ুনখাদ্যনিরাপত্তা নিয়ে ইসলামের নির্দেশনা০৯ জুন ২০২৫

কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায়, প্রয়োজনের বাইরে অতিরিক্ত সম্পদ সঞ্চয় করা লোভ ও কৃপণতার দিকে নিয়ে যায়, যা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়।

ইসলাম আমাদের জীবনকে সরল করার পাশাপাশি আল্লাহর পথে ব্যয় করতে উৎসাহিত করে। আমরা চাইলে মাসিক বাজেটের একটি অংশ দানের জন্য বরাদ্দ করতে পারি।

যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪

বিয়ের মতো উৎসবে আমরা বিলাসবহুল আয়োজনের পরিবর্তে সরলতা বেছে নিতে পারি। উপহারের পরিবর্তে আমরা দাতব্য সংস্থায় দানের জন্য অনুরোধ করতে পারি। এমনকি আমাদের একটি অনলাইন সাবস্ক্রিপশন বাতিল করে সেই অর্থ স্থানীয় মসজিদে দান করতে পারি।

নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের সম্পদে সংযমী হয় এবং আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে যায়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৯৯৪)।

আমাদের ভালো কাজ এবং দানশীলতা পরকালে যেমন উপকারে আসবে, তেমনি সমাজের জন্যও হবে কল্যাণকর। অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে দানশীলতার দিকে মনোযোগ দিলে সমাজের দরিদ্র ও অভাবী মানুষের জীবন উন্নত হবে।

ভোগবাদী জীবন মানুষকে অস্থির করে তোলে এবং ন্যূনতম খরচের জীবনধারা মানুষকে তৃপ্তির জীবন উপহার দেয়। এটি একই সঙ্গে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনেরও একটি পথ।

আমরা যদি আমাদের অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে আল্লাহর পথে ব্যয় করি, তবে তা আমাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনকে সমৃদ্ধ করবে। ন্যূনতমবাদ আমাদের মনে করিয়ে দেয়, আমাদের প্রকৃত সুখ পার্থিব সম্পদে নয়, বরং আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পরকালের প্রস্তুতিতে নিহিত।

আরও পড়ুনআধুনিক এই প্রবণতার শিকড় ইসলামে২০ মে ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ