৪৪১ কোটি টাকা লভ্যাংশ দেবে লাফার্জহোলসিম
Published: 14th, March 2025 GMT
গত বছরের জন্য শেয়ারধারীদের ৪৪১ কোটি টাকা নগদ লভ্যাংশ দেবে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত সিমেন্ট খাতের বহুজাতিক কোম্পানি লাফার্জহোলসিম সিমেন্ট। এর মধ্যে ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। বাকি ২২০ কোটি ৬৬ লাখ টাকা আগামী বার্ষিক সাধারণ সভা বা এজিএম শেষে বিতরণ করা হবে।
লাফার্জহোলসিম গত বছরের জন্য মোট ৩৮ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ১৯ শতাংশ ছিল অন্তর্বর্তী লভ্যাংশ। বাকি ১৯ শতাংশ চূড়ান্ত লভ্যাংশ। গত বুধবার অনুষ্ঠিত কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের সভা থেকে চূড়ান্ত এই লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মাধ্যমে কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের এই তথ্য জানিয়েছে।
লভ্যাংশের পাশাপাশি লাফার্জহোলসিম গত বছরের আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যও প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যায়, ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির মুনাফা ২১২ কোটি টাকা বা ৩৬ শতাংশ কমেছে। মুনাফা কমে যাওয়ায় ২০২৩ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে কোম্পানিটির লভ্যাংশও কমেছে। ২০২৩ সালে লাফার্জহোলসিম শেয়ারধারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে মোট ৫৮১ কোটি টাকা বিতরণ করেছিল। ওই বছর অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত মিলিয়ে মোট ৫০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে কোম্পানিটি। গত বছর লভ্যাংশের হার কমে ৩৮ শতাংশে নেমেছে। আর লভ্যাংশ বাবদ বিতরণ করা অর্থের পরিমাণ কমেছে ১৪০ কোটি টাকা।
কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটির লভ্যাংশ কমেছে মূলত মুনাফা কমে যাওয়ায়। আর মুনাফা কমেছে বিক্রি কম হওয়ায়। গত বছর কোম্পানিটি ২ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি করেছে। আগের বছর কোম্পানিটি বিক্রি করেছিল ২ হাজার ৮৩৯ কোটি টাকার। সেই হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে লাফার্জহোলসিমের বিক্রি ৮৫ কোটি টাকা বা ৩ শতাংশ কমেছে।
ব্যবসা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে কোম্পানিটি দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে দায়ী করেছেন। কোম্পানিটি বলছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যেও কোম্পানিটির ব্যবসায় বড় ধরনের প্রভাব পড়েনি। তার বড় কারণ ছিল সিমেন্টের বাইরে চুনাপাথরসহ কোম্পানির অন্যান্য ব্যবসা থেকে ভালো আয়। কোম্পানিটি বলছে, গত বছর তাদের চুনাপাথরের ব্যবসায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। এ কারণে বছর শেষে সার্বিকভাবে ব্যবসায় বড় ধরনের কোনো ধাক্কা লাগেনি।
এদিকে গত বছরের জন্য অন্তর্বর্তী ও চূড়ান্ত লভ্যাংশ মিলিয়ে কোম্পানিটি ৪৪১ কোটি টাকার যে লভ্যাংশ বিতরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তার বড় অংশই পাবেন কোম্পানিটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা। কারণ, কোম্পানিটির শেয়ারের বড় অংশই তাঁদের হাতে। ডিএসইর তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে এটির দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তাদের হাতে ছিল ৬৪ দশমিক ১৫ শতাংশ শেয়ার। সেই হিসাবে ঘোষিত মোট লভ্যাংশের মধ্যে ২৮৩ কোটি টাকা পাবেন এসব উদ্যোক্তা। যার মধ্যে অর্ধেক তাঁরা পেয়েও গেছেন। বাকি লভ্যাংশের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৮৭ কোটি টাকা, ব্যক্তিশ্রেণির সাধারণ বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৬৮ কোটি টাকা আর বিদেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা পাবেন ৩ কোটি টাকা। যার অর্ধেক অর্থ এরই মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন লভ্যাংশ হিসেবে পেয়েও গেছেন শেয়ারধারীরা।
গত বছর শেষে লভ্যাংশ ও মুনাফা উভয়ই কমে যাওয়ায় শেয়ারবাজারে গতকাল লাফার্জহোলসিমের শেয়ারেরও দরপতন হয়েছে। ঢাকার বাজারে এদিন কোম্পানিটির শেয়ারের দাম ১ শতাংশ বা ৫০ পয়সা কমে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪৮ টাকায়। দিন শেষে কোম্পানিটির প্রায় দুই কোটি টাকার সমমূল্যের শেয়ারের হাতবদল হয়।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গত বছর র র র জন ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
মুক্তিপণ দিয়েও পাঁচ মাস ধরে ১৪ তরুণের খোঁজ পাচ্ছেন না স্বজনেরা
অবৈধ পথে ইতালির উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১৪ তরুণ। কিন্তু দুবাই হয়ে লিবিয়ায় পৌঁছানোর পর পাঁচ মাস ধরে তাঁদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। স্বজনদের দাবি, দালালের প্রলোভনে পড়ে জনপ্রতি ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণও দিয়েছেন তাঁরা। কিন্তু সন্ধান না পাওয়ায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা।
ইউরোপের কোনো দেশে গেলে সচ্ছলতা আসবে, এমন ধারণা নিয়ে প্রতিবছর মাদারীপুর থেকে শত শত তরুণ সেখানে পাড়ি জমানোর চেষ্টা করছেন। তবে অবৈধ পথে ইউরোপ যেতে গিয়ে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। কেউবা দালালের খপ্পরে পড়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে কাটাচ্ছেন বন্দিজীবন। জেলা প্রশাসন ও পুলিশের তথ্য বলছে, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত জেলার ৪৫ জন লিবিয়া হয়ে ইতালি যাওয়ার পথে মারা গেছেন। ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে নির্যাতনের শিকার হয়ে লিবিয়া থেকে বাংলাদেশে ফিরে আসতে পেরেছেন অন্তত ৩৫০ তরুণ। নিখোঁজ আছেন তিন শতাধিক।
সবশেষ নিখোঁজ তরুণদের সবার বাড়ি রাজৈরের বাজিতপুর ইউনিয়নে। তাঁরা হলেন পাখুল্লা গ্রামের জাহাঙ্গীর ব্যাপারীর ছেলে সালমান ব্যাপারী, চৌরাশী গ্রামের মোসলেম শিকদারের ছেলে বাবুল শিকদার, একই গ্রামের মজিবর বয়াতীর ছেলে সাজ্জাদ বয়াতী, জাকির মাতুব্বরের ছেলে বাদল মাতুব্বর, কানাই রায়ের ছেলে লিটন রায়, নিরঞ্জন বাড়ৈর ছেলে বাঁধন বাড়ৈ, কিসমদ্দি বাজিতপুর গ্রামের আলম চৌকিদারের ছেলে ইমন চৌকিদার, অহিদুল মাতুব্বরের ছেলে নয়ন মাতুব্বর, আজিজ খালাসির ছেলে খলিল খালাসি, সোনা মিয়া চৌকিদারের ছেলে সোহেল চৌকিদার, নয়াকান্দি বাজিতপুর গ্রামের গৌরাঙ্গ বাড়ৈর ছেলে গৌতম বাড়ৈ, একই গ্রামের সামচু সরদারের ছেলে ইমরান সরদার, শ্রীনাথদী বাজিতপুরের জলিল বয়াতীর ছেলে আল আমিন বয়াতি ও শ্রীনদী গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ঘরামির ছেলে আলী ঘরামি। তাঁদের সবার বয়স ১৮ থেকে ২৮ বছরের মধ্যে।
স্বজনদের অভিযোগ, মানব পাচার চক্রের সক্রিয় সদস্য বাজিতপুর এলাকার বাবুল হাওলাদার ইতালি নেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রত্যেক পরিবারের কাছ থেকে প্রথমে ১৬ লাখ টাকা করে নেন। পরে লিবিয়ায় বন্দী করে আদায় করেন আরও ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা। এর পর থেকে ঘরে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্ত বাবুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা।
মাদারীপুরের ১৪ তরুণ ইতালি যেতে গত ফেব্রুয়ারি মাসে দালালের হাত ধরে ঘর ছাড়েন। নিখোঁজ তরুণদের সন্ধানে তাদের ছবি হাতে স্বজনেরা