নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ১৫তম ব্যাচের ছাত্রীকে (২০) সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চোখে রাসায়নিক দ্রব্য লাগিয়ে হেনস্তা ও শ্লীলতাহানি করে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ২ তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১১।

এ সময় আসামিদের কাছ থেকে একটি মোটরসাইকেরল জব্দ করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন উপজেলার নাজিরপুর এলাকার মো.

রাজুর ছেলে মো. রবিন (২০) ও আলাইয়াপুর ইউনিয়নের শহীদুল ইসলামের ছেলে আরাফাত হোসেন অন্তর (২২)।

শুক্রবার (১৪ মার্চ) বিকেলের দিকে র‍্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার মিঠুন কুমার কুণ্ডু স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়।

আরো পড়ুন:

হবিগঞ্জে আছিয়ার গায়েবানা জানাজা ও কফিন মিছিল

নারায়ণগঞ্জে পৃথক স্থানে দুই শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২

এর আগে, একই দিন দুপুরের দিকে উপজেলার চৌমুহনী পৌরসভার নাজিরপুর এলাকার নূর হোসেনের বাড়ি থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১২ মার্চ নোয়াখালী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইফতার মাহফিল শেষে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশে একটি যাত্রীবাহী সিএনজিতে ওঠে কলেজের ১৫তম ব্যাচের ওই ছাত্রী। কিছু পথ যাওয়ার পর সিএনজির ভেতরে থাকা ৫ জন পুরুষের মধ্যে একজন তার মুখ চেপে ধরে বাকি ৪ জন ভিকটিমের কোলে বসে পড়ে। কিছুক্ষণ পর আরো ১ জন সিএনজিতে ওঠলে সবাই মিলে ছাত্রীকে শারীরিকভাবে হেনস্তা ও শ্লীলতাহানি করে তার চোখে রাসায়নিক দ্রব্য লাগিয়ে দেয়। এ সময় তারা ছাত্রীর ব্যাগ থেকে টাকা, একটি এটিএম কার্ড ও একটি মোবাইল নিয়ে যায়। মোবাইলের পাসওয়ার্ড ও বিকাশের পাসওয়ার্ড দিতে বাধ্য করে ছাত্রীকে।

প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়েছে, অভিযুক্ত ভিকটিমকে সিএনজি করে কলেজ গেট থেকে একলাশপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় আধা ঘণ্টা ইউটার্ন নিয়ে একাধিবার ঘুরাতে থাকে এবং অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য নির্জন স্থান খুঁজতে থাকে। একপর্যায়ে তারা ভিকটিমকে একলাশপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বে সিএনজি থেকে নামিয়ে নির্জন স্থানে নেওয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম শোর চিৎকার দেয়। পরে লোকজন এগিয়ে আসতে দেখে ভিকটিমকে রাস্তায় ফেলে দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়।

র‍্যাব-১১, সিপিসি-৩ নোয়াখালী ক্যাম্পের ভারপ্রাপ্ত কোম্পানি কমান্ডার মিঠুন কুমার কুণ্ডু আরো জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে বেগমগঞ্জ মডেল থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলার সূত্র ধরে দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের বেগমগঞ্জ মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।

নোয়াখালী/সুজন/এসবি

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স এনজ

এছাড়াও পড়ুন:

জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত

লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। 

রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা। 

জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা। 

মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন। 

আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন। 

বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো। 

আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।

ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক। 

আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’  

উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।

ঢাকা/লিটন/টিপু 

সম্পর্কিত নিবন্ধ