বাংলাদেশে এমন একজন ডিসি পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ, যিনি তাঁর কর্মজেলার সব নদীর নাম বলতে পারবেন। একজন ডিসি তাঁর মেয়াদকালে সব কটি নদীর পাড়ে অন্তত একবার করে গেছেন, এমনটি শোনা যায়নি। ডিসিদের মধ্যে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না, যিনি নিজ কর্মজেলার সব নদীর সুনির্দিষ্ট সংকটের কথা বলতে পারবেন। তাঁরা প্রশাসনিক নিজ জেলার নদীগুলোর উৎসস্থল কিংবা পতিতস্থলও বলতে পারবেন না।

জেলার অভ্যন্তরে নদীর মোট কত অংশ কবুলিয়াত দেওয়া হয়েছে কিংবা বদ্ধ জলাশয় ঘোষণা করা হয়েছে কিংবা ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হয়েছে, সেই তথ্যও কোনো ডিসি জানেন না। এমন কোনো জেলা নেই, যে জেলায় নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হয়নি, প্রবহমান নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখানো হয়নি। নদীর সর্বনাশের সঙ্গে জড়িত কোনো কর্মকর্তা নেই, এমন জেলা পাওয়া অসম্ভব। মোটের ওপর বলা যায়, যাঁদের ওপর নদীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁরা নদীর কোনো খবরই রাখেন না।

আমাদের দেশের নদীগুলো রক্ষায় নতুন ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আইনগতভাবে নদীর অভিভাবক ঘোষণা করা হলেও তার আইনি কাঠামো দুর্বল হওয়ার কারণে এখন এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিদ্যমান অবস্থায় নদীর সুরক্ষা সম্ভব নয়। সে জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আইন সংশোধন করতে হবে। আপাতত প্রতি বিভাগে এ কমিশনের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনতা থেকে এ কমিশনকে স্বাধীনতা দিতে হবে। দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষায় এ কমিশনের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি প্রয়োগের ক্ষমতা থাকতে হবে।

জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন বছর দুয়েক আগে একবার নদীর সংখ্যা নিরূপণ করেছে। তখন ডিসি-ইউএনওদের মাধ্যমে নদীর তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছিল। ডিসিরা তখন সব তথ্য দিতে পারেননি। যেটুকু দিয়েছেন, তা–ও ভুলে ভরা। ভাবতে অবাক লাগে, নদীর প্রকৃত দেখভালের দায়িত্ব যাঁদের ওপর ন্যস্ত, তাঁরা নদীর জন্য একটি ফাইল প্রস্তুত করেননি, যে ফাইল দেখে জেলার সব নদীর তথ্য দেওয়া যাবে। একটি প্রধান ফাইল প্রস্তুত করে নদীভিত্তিক আলাদা তথ্য সংগ্রহ করতে একটি জেলায় সাত দিনের বেশি লাগার কারণ নেই। সহজ এ কাজ কখনোই করা হয়নি। এর প্রধানতম কারণ নদীকে গুরুত্ব না দেওয়া।

রংপুর অঞ্চলের খটখটিয়া, শালমারা, ঘাঘট, কুমলাই, স্বরমঙ্গলা, বুড়াইলসহ অনেক নদীর অনেকাংশ ব্যক্তির নামে লিখিত হয়েছে। তিস্তা নদীর মূল প্রবাহ ব্যক্তির নামে সম্প্রতি লিখে দেওয়া হয়েছে। এসব লিখে দেওয়ার সঙ্গে ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ডরা জড়িত। এঁদের হাতেই নদী রক্ষার দায়িত্ব হওয়া সত্ত্বেও এঁরাই কখনো প্রত্যক্ষ, কখনো পরোক্ষভাবে নদীর ক্ষতিসাধনে জড়িত থাকেন। বর্তমানে যাঁরা এসব পদে আছেন, তাঁরা হয়তো জড়িত নন। জড়িত আগেকার কোনো কোনো কর্মকর্তা। কিন্তু বর্তমানে যাঁরা ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ড আছেন; তাঁরা এগুলো মুক্ত করবেন না বলেই ধরে নেওয়া যায়। এটাই অভিজ্ঞতা। এরকমটাই এতকাল ধরে দেখে আসছি।

আরও পড়ুননদী রক্ষায় অন্তর্বর্তী সরকারের যা করা প্রয়োজন০২ জানুয়ারি ২০২৫

দেশের অসংখ্য নদী আছে, যেগুলো ব্যক্তির নামে কবুলিয়াত দেওয়া হয়েছে। নদী কবুলিয়াত দেওয়া বেআইনি। পূর্বেকার কোনো কর্মকর্তা কবুলিয়াত দিলেও পরবর্তী কোনো কর্মকর্তা এসে তা আর বাতিল করেন না। আমাদের অনেক নদীকে বদ্ধ জলাশয় দেখিয়ে অনেক ইউএনও, ডিসি লিজ দেন। একবার কেউ লিজ দিতে শুরু করলেও পরবর্তী আর কোনো কর্মকর্তা এসে তা ফেরানোর চেষ্টা করেন না।

ডিসিরা জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি এবং ইউএনওরা উপজেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি। মাঠপর্যায়ে নদীর আন্দোলন করতে গিয়ে ডিসি এবং ইউএনওদের মাধ্যমে নদী উদ্ধারের চেষ্টা করেছি। তাঁরা তেমন সচেষ্ট থাকেন না। এসব কর্মকর্তার কাছে নদী একটি গৌণ বিষয়। নদী দখল  হোক, নদী থেকে বালু উত্তোলন হোক, নদী কবুলিয়াত হোক, নদীকে বদ্ধ জলাশয় ঘোষণা করা হোক কিংবা নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া হোক, এতে তাঁদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। নদী ছাড়াও তাঁদের আরও অনেক কাজ আছে। সেসব নিয়ে তাঁরা ব্যস্ত থাকেন। অধিকাংশ সময়ে তাঁরা নদী ব্যক্তির নামে লিখে দেওয়া কিংবা লিজ দেওয়ার কাজে যতটা সক্রিয় থাকেন, উদ্ধারের কাজে ততটা নয়।

আমি প্রায় অর্ধযুগ থেকে রংপুর জেলা নদী রক্ষা কমিটির সদস্য। প্রতি মাসে একটি করে সভা হয়। এসব সভার প্রায় প্রতিটিতেই ইউএনওদের প্রতি নদী রক্ষার নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো সভায় পূর্ববর্তী সভার নির্দেশনা অনুযায়ী কী কাজ হলো, তা আর দেখা হয় না। ছয় বছর আগে নদী সুরক্ষায় যে দাবি উত্থাপন করেছি, এখনো বাস্তবায়িত হয়নি, এমনটাও আছে। একজন নদীসংগঠক হিসেবে লেগে থেকেও নদী রক্ষায় ডিসিদের দিয়ে নদী মুক্ত করার কাজ সম্পূর্ণরূপে করা সম্ভব হয়নি। তাহলে যেসব জেলায় নদীর সংকট আলাদাভাবে তুলে ধরার কেউ নেই ,সেসব জেলার অবস্থা আরও খারাপ হওয়ার কথা।

জেলা নদী রক্ষা কমিটিতে থেকে যে একবারেই কিছু হয়নি তা নয়, সভাগুলোতে বারবার বলার কারণে বুড়াইল নদীর ২৮টি বাঁধ অপসারণ করা হয়েছে, শালমারা এবং খটখটিয়া নদীর অবৈধ মালিকানা বাতিল করা হয়েছে। আরও ছোট ছোট অনেক কাজ করা সম্ভব হয়েছে। নতুন দখল রোধ করা গেছে। কখনো কখনো বালু উত্তোলন বন্ধ করা গেছে।

ডিসিদের যত কাজই থাকুক না কেন, নদী রক্ষা তাঁর অন্যতম কাজ। ১৯৫০ সালের প্রজাস্বত্ব আইন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যত ভূমি আইন আছে, সব কটিতেই নদী দেখভাল করার দায়িত্ব এসব কর্মকর্তার। অথচ ডিসি, ইউএনও, এসি ল্যান্ড দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে আমাদের নদীগুলো ধ্বংস করার প্রধানতম কর্মকর্তা বলা যায়।

গণহারে নদীর দায়িত্বপ্রাপ্ত সব কর্মকর্তার কাঁধে দোষ দেওয়া সমীচীন হবে না। যদি এমন কোনো কর্মকর্তা থেকে থাকেন, যিনি নদী সুরক্ষায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করেছেন, তাহলে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা। তবে এ রকম দুর্লভ দৃষ্টান্ত দিয়ে আমাদের নদীগুলো রক্ষা করা সম্ভব হবে না। ডিসিদের ব্যক্তিবিশেষে ব্যর্থতা নয়; সামষ্টিক বিবেচনায় ডিসি, ইউএনও কিংবা এসি ল্যান্ডরা ব্যর্থ।

আমাদের দেশের নদীগুলো রক্ষায় নতুন ব্যবস্থাপনার কথা ভাবতে হবে। জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে আইনগতভাবে নদীর অভিভাবক ঘোষণা করা হলেও তার আইনি কাঠামো দুর্বল হওয়ার কারণে এখন এ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বিদ্যমান অবস্থায় নদীর সুরক্ষা সম্ভব নয়। সে জন্য জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের আইন সংশোধন করতে হবে। আপাতত প্রতি বিভাগে এ কমিশনের কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে হবে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীনতা থেকে এ কমিশনকে স্বাধীনতা দিতে হবে। দখল-দূষণ থেকে নদী রক্ষায় এ কমিশনের নিজস্ব ম্যাজিস্ট্রেসি প্রয়োগের ক্ষমতা থাকতে হবে।

আর যদি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ডিসি, ইউএনও এবং এসি ল্যান্ডের ওপরই থাকে, তাহলে নদী যেভাবে ধ্বংস হচ্ছে, তা আরও ত্বরান্বিত হবে। যত দিন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনকে শক্তিশালী করা হবে না, তত দিন এসব কর্মকর্তাদের জবাবদিহি এবং নদীর ক্ষতি করলে তাঁদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

তুহিন ওয়াদুদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক এবং নদীরক্ষাবিষয়ক সংগঠন রিভারাইন পিপলের পরিচালক
[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র নদ গ ল জ ত য় নদ নদ র স আম দ র হওয় র একব র র আইন

এছাড়াও পড়ুন:

নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি

ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’

২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।

মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।

অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’

জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখ

মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।

আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’

রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’

রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়

রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।

জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।

গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’

২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ

আরও পড়ুননিউইয়র্কের এত ইহুদি কেন জোহরান মামদানির পক্ষে প্রচার চালাচ্ছেন০১ নভেম্বর ২০২৫

তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী।  স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।

কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।

আরও পড়ুননিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে রেকর্ডসংখ্যক আগাম ভোট, তরুণেরা কেন আগাম ভোট দিচ্ছেন১১ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুননিউইয়র্কে মেয়র নির্বাচন: সর্বশেষ চার জরিপেও এগিয়ে জোহরান মামদানি৯ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ