এবার নাবিলার সঙ্গী ইমন, প্রস্তাব পেয়েছেন নিরবও
Published: 15th, March 2025 GMT
ঈদে প্রতি বছর বর্ণিল অনুষ্ঠান আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ টেলিভিশন [বিটিভি]। এসব অনুষ্ঠানমালার মধ্যে ‘আনন্দমেলা’ থাকে দর্শক আগ্রহের কেন্দ্রে। প্রতি বছর অনুষ্ঠানটির উপস্থাপনায় আনা হয় নতুনত্ব। সাধারণত দু’জনকে দেখা যায় আনন্দমেলা উপস্থাপনায়। তবে এবার দু’জন নয়।
অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করবেন তিন তারকাশিল্পী। উপস্থাপনায় মাসুমা রহমান নাবিলার সঙ্গী হচ্ছেন মামনুন ইমন। থাকতে পারেন নিরবও। বিটিভি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
উপস্থাপনা প্রসঙ্গে নাবিলা বলেন, ‘এর আগেও আমি আনন্দ মেলার উপস্থাপনা করেছি। আবার দ্বিতীয় বারের মতো উপস্থাপনা করতে যাচ্ছি। বিটিভি থেকে যখন অনুষ্ঠানটির প্রস্তাব এলো তখন দোটানায় ছিলাম। করব কি করব না এই ভেবে। দীর্ঘ সময় ধরে এর দৃশ্যধারণ হয়। পরিবারকে এখন বেশি সময় দেওয়া লাগে। এ কারণে অনেক অনুষ্ঠান চাইলেও উপস্থাপনা করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। আনন্দমেলা প্রযোজকরা খুব করে চাইছিলেন এটি যেন আমি উপস্থাপনা করি। এটি একটি লিজেন্ডারি শো। ছোটবেলা থেকে এটি দেখে দেখেই বড় হয়েছি। আনন্দমেলার মাধ্যমে দেশের মানুষকে একটু আনন্দ দেওয়ার চেষ্টা থাকে বিটিভির। সবকিছু ভেবেই অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করতে রাজি হয়েছি। চেষ্টা করব নতুন আঙ্গিকে নিজেকে উপস্থাপন করতে। বৈচিত্র্যময় আয়োজন দিয়ে সাজানো হবে অনুষ্ঠানটি। সব মিলিয়ে ভালো একটি অনুষ্ঠান উপহার পেতে যাচ্ছেন দর্শক।’
ইমন বলেন, ‘বিটিভির আনন্দমেলা মানেই অন্যরকম আয়োজন। নানা কিছু সমাহার ঘটে এতে। অনেকবার আনন্দমেলায় পারফরম্যান্স করলেও প্রথমবারের মতো আনন্দমেলা উপস্থাপনা করতে যাচ্ছি। ছোটবেলায় আনন্দমেলার ফ্যান ছিলাম। অনুষ্ঠানটির জন্য অপেক্ষায় থাকতাম কবে আনন্দমেলা হবে। দেখে আসছি কোনো না কোনো তারকাশিল্পী এটি উপস্থাপনা করেন। এ রকম অনুষ্ঠানের প্রস্তাব পেয়ে আর না করতে পারিনি। তিনজন মিলে এটি উপস্থাপনা করব। এতে আমার ভূমিকা কেমন হবে তা জানতে হলে ঈদে বিটিভির পর্দায় চোখ রাখতে হবে।’ রামপুরার বিটিভির অডিটোরিয়ামে ঈদ আনন্দমেলার শুটিংয়ে শিগগিরই অংশ নেবেন তারকাশিল্পীরা।
নিরব বলেন, ‘আনন্দমেলা উপস্থাপনার প্রস্তাব পেয়েছি। কিন্তু এখনও চূড়ান্ত করিনি।’ দেড় যুগের বেশি শোবিজে কাজ করছেন ইমন-নিরব। সেই সুবাদে তাদের চমৎকার বন্ধুত্ব। একসঙ্গে তারা বিজ্ঞাপন ও সিনেমাতেও কাজ করেছেন। নিরব যদি আনন্দমেলা উপস্থাপনার ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ বলেন তাহলে ঈদ আনন্দমেলায় বড় চমক থাকছে তাদের উপস্থাপনা।
আয়োজন নিয়ে অনুষ্ঠান প্রযোজক মাহবুবা ফেরদৌস বলেন, ‘বেশ বড় আয়োজন নিয়ে ‘আনন্দমেলা’ সাজিয়েছি। অনেক বড় তারকারা হাজির হবেন অনুষ্ঠানে। নাচের আয়োজনও থাকছে। উপস্থাপনায়ও নতুনত্ব থাকবে। এ মূহূর্তে বিস্তারিত বলতে চাই না। চমক হিসেবেই থাকুক।’
মাহবুবা ফেরদৌস ছাড়াও ৫০ মিনিটের অনুষ্ঠানটি প্রযোজনা করেছেন হাসান রিয়াদ ও মনিরুল হাসান। ‘আনন্দমেলা’ প্রচার হবে ঈদের দিন রাত ১০টার ইংরেজি সংবাদের পর।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন রব অন ষ ঠ ন আনন দ
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।