আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে নভোচারীসহ একটি মিশন পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ সংস্থা নাসা ও ধনকুবের ইলন মাস্কের মহাকাশ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স। গত শুক্রবার পাঠানো এই মিশন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে ৯ মাসের বেশি সময় আটকে পড়া নভোচারী সুনিতা উইলিয়ামস ও বুচ উইলমোরের পৃথিবীতে ফেরার পথ সুগম করল। সুনিতা ও বুচের পাশাপাশি নাসার মহাকাশচারী নিক হেগ এবং রাশিয়ান মহাকাশচারী আলেকজান্ডার গরবুনভও ড্রাগন ক্যাপসুলে করে ফিরতে পারেন।

ক্রু–১০ মিশনটিতে ফ্যালকন ৯ রকেটে ড্রাগন নামের মহাকাশযান পাঠানো হয়েছে। নাসার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে ওই রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়েছে। এ মিশনে রয়েছেন চার নভোচারী। তাঁরা হলেন অ্যান ম্যাকক্লেইন, নিকোল আয়ার্স, জাপানের মহাকাশ সংস্থার নভোচারী তাকুয়া অনিশি ও রুশ নভোচারী কিরিল পেসকভ।

নাসার নভোচারী সুনিতা ও বুচার গত বছরের জুন মাস থেকে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে রয়েছেন। তাঁরা মাত্র আট দিনের এক মহাকাশ মিশনে সেখানে যান; কিন্তু বোয়িংয়ের স্টারলাইনার মহাকাশযানে ত্রুটির কারণে তাঁরা মহাকাশ স্টেশনে আটকা পড়েন। গত ফেব্রুয়ারি মাসে তাঁদের পৃথিবীতে ফেরার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে যায়।
নাসার তথ্য অনুযায়ী, ক্রু–১০ মিশন শুরুর পর আটকে পড়া দুই নভোচারী কয়েক দিনের মধ্যেই পৃথিবীতে ফিরে আসতে পারেন।

কারিগরি ব্যর্থতার বিষয়টি পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক অভিযোগের দিকেও মোড় নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তাঁর ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা ইলন মাস্ক অভিযোগ করেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইচ্ছাকৃতভাবে দুই নভোচারীকে পরিত্যাগ করেন। তঁদের দ্রুত ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন তিনি। এ বিষয়ে মাস্ক সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ না করলেও তাঁর অভিযোগ আলোড়ন তুলেছে।

ইউক্রেন সংঘাত সত্ত্বেও মহাকাশে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার একটি ক্ষেত্র হিসেবে রয়ে গেছে, মহাকাশচারীরা স্পেসএক্স ক্রু ড্রাগনসের পাশাপাশি কাজাখস্তান থেকে উৎক্ষেপিত সয়ুজ ক্যাপসুলের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে যাতায়াত করেন।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে বইমেলায় বিক্রি কম, এখনো আশায় আছেন প্রকাশকেরা

রাজশাহী বিভাগীয় বইমেলার প্রথম তিন দিনে লোকজনের ভিড় থাকলেও বেচাকেনা তেমন হয়নি। এতে অনেক প্রকাশকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। তবে আগামী কয়েক দিনে বেচাকেনা বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা ও আয়োজক কর্তৃপক্ষ।

গত শুক্রবার রাজশাহী জেলা কালেক্টরেট মাঠে ৯ দিনব্যাপী এই বইমেলার উদ্বোধন করা হয়। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে এবং রাজশাহী বিভাগীয় প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় আয়োজিত এ মেলা চলবে ৮ নভেম্বর পর্যন্ত। মেলায় ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তের ৭০টি বেসরকারি প্রকাশনাসহ মোট ৮১টি প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন বাদে মেলা চলছে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। আর ছুটির দিনে মেলা শুরু হয় বেলা ১১টায়।

উদ্বোধনের আগের দিন বৃষ্টিতে মেলার মাঠ কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। সেই কর্দমাক্ত পরিবেশেই মেলার উদ্বোধন হয়। দর্শনার্থীদের ভোগান্তি কমাতে পরে প্রতিটি স্টলের সামনে ইট বিছিয়ে দেওয়া হয়। এতে কিছুটা স্বস্তি ফিরলেও বিক্রির খরা কাটেনি বলে জানালেন বিক্রেতারা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় মেলা প্রাঙ্গণে গিয়ে দেখা যায়, মাঠের বিভিন্ন অংশে তখনো পানি জমে আছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত মঞ্চের সামনের প্যান্ডেলেও কাদা। সেখানেই কাজী নজরুল ইসলামের জীবন ও সাহিত্য নিয়ে আলোচনা চলছিল, তবে দর্শক-শ্রোতার উপস্থিতি ছিল নগণ্য। স্টলের সামনে ইটের সলিংয়ের তৈরি রাস্তা দিয়ে হাঁটছেন অনেকে। অনেকে বই দেখছেন।

সূর্যোদয় প্রকাশনীর বিক্রেতা রিপন আলী বলেন, প্রথম দিন তো কাদাপানির মধ্যেই দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখনো মানুষ ছিলেন। এখন ইট বিছানোর পর আরও বেশি মানুষ আসছেন, ভিড়ও করছেন, কিন্তু বই কিনছেন খুব কম।

ঐতিহ্য প্রকাশনীর স্টলে কাদার ওপর চেয়ার পেতে বসে থাকতে দেখা গেল বিক্রয়কর্মী ও চিত্রশিল্পী অর্ণব পাল সন্তুকে। তিনি বলেন, মানুষ আসছেন, ঘুরে দেখছেন, কিন্তু বিক্রি নেই বললেই চলে। মেলার ব্যবস্থাপনা আরও ভালো হতে পারত। আরেক বিক্রেতা আবদুল্লাহ হীল বাকি জানালেন, এমনও স্টল আছে, যেখানে সারা দিনে ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বইও বিক্রি হচ্ছে না।

তবে হতাশার ভিড়ে আশার কথাও শোনালেন কেউ কেউ। চট্টগ্রাম থেকে আসা নন্দন বইঘর প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী সুব্রত কান্তি চৌধুরী বলেন, বেচাবিক্রি আজ না হোক কাল হবে। মানুষ যে মেলায় এসে বই হাতে নিয়ে দেখছেন, এটাই বড় পাওয়া। এতে তাঁদের মধ্যে বই কেনার আগ্রহ তৈরি হবে।

মেলায় আসা পাঠকদের মধ্যে অবশ্য ভিন্ন চিত্র। দুই সন্তানের জন্য শিশুতোষ বই কিনে এক অভিভাবক বলেন, বাচ্চাদের হাতে বই তুলে দেওয়ার আনন্দটাই অন্য রকম।
মেলা থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম ও তারাশঙ্কর বন্দ্যোপ্যাধ্যায়ের বই কিনেছেন মনির হোসেন। তিনি বলেন, মেলায় একসঙ্গে অনেক বই পাওয়া যায়, যা বই কেনার জন্য দারুণ সুযোগ।

রাজশাহী কালেক্টরেট মাঠে বইমেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা। গতকাল রোববার সন্ধ্যায়

সম্পর্কিত নিবন্ধ