নানান ব্যস্ততায় বেড়ে যাচ্ছে ভুলে যাওয়ার প্রবণতা। এই অ্যাবসেন্ট মাইন্ড বা ভুলে যাওয়ার প্রবণতা কাটানোর ধরাবাঁধা কোনো নিয়ম বা কৌশল নেই। এ ক্ষেত্রে চাইলে আপনি নিজের জন্য আলাদা কোনো কৌশল খুঁজে বের করতে পারেন। চলুন, একজন অ্যাবসেন্ট মাইন্ডেড মানুষের মুখোমুখি হই–
আপনি কি সেই লোক: অস্বাভাবিক কিছু না। আপনিও হতে পারেন সেই লোক। যিনি নিজেই আপনাকে বলে যাচ্ছেন, তিনি একসঙ্গে অনেক ব্যাপারে মাথা ঘামাতে অপছন্দ করেন। এ ছাড়া তিনি খুবই অন্যমনস্ক। রিমাইন্ডার ছাড়া কোনো কাজই করতে পারেন না। এ ছাড়া তার যে কোনো কাজে দেরি করার অভ্যাস।
যে কোনো কাজে দেরি: সময়ের ভুল হিসাব করি অনেকেই। যেমন– আমার অনলাইন ক্লাস সকাল ৯টায়। তাহলে বসলেই শুরু হবে ক্লাস– এই ভেবে আমি মোবাইলে বা ল্যাপটপে নেট অন করি ৮টা ৫৫ মিনিটে। তখনই মনে হয় আমার প্রয়োজনীয় বই গোছানো হয়নি অথবা আমার হেড ফোনটা খুঁজে পাচ্ছি না। ফলে ক্লাসে দেরি হয়ে যায়। 
ভুলে গেলেন: ঘুরতে গিয়ে বা শপিংয়ে যাওয়ার পর বুঝতে পারলেন, পর্যাপ্ত টাকা নেই সঙ্গে। বা হুট করেই সেলফোনের ব্যাটারির চার্জ ফুরিয়ে গেল। এমনও হতে পারে যে, ভালো প্রস্তুতির পরও ক্যালকুলেটর অথবা ঘড়ি সঙ্গে নিতে ভুলে গেলেন। 
কাজের পুনরাবৃত্তি: যে কোনো ধরনের কাজ পুনরাবৃত্তি অপছন্দ করেন। যদিও আপনি ওই কাজে পারদর্শী নন। ধরুন, আপনি রেস্টুরেন্টের কিচেনে কাজ করতেন। তখন আপনি খুব বাজে সময় কাটাতেন। কারণ, সেখানে একত্রে নানান কাজ করতে হতো আপনাকে। 
খেয়াল রাখতে পারেন: ওপরের প্রতিটি ঘটনার জন্য আলাদা সমাধান দেওয়া যেতে পারে। অনেকেই বলতে পারেন, এসব ব্যাপার এড়ানো খুব সহজ। বাস্তবে এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে ওঠা খুব কঠিন। তবে সঠিক কৌশল অবলম্বন করে আপনি এ ধরনের সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারেন। এ ক্ষেত্রে আপনি খেয়াল রাখতে পারেন– 
দিনের শেষে এবং সকালে: রুটিন ও চেকলিস্ট ভুলে যাওয়ার অভ্যাস রোধে এ ব্যাপারটি অনুসরণ করতে পারেন। নিয়মিত দিনের শেষদিকে আপনার মোবাইল ফোনে চার্জ দিন ও সকালের দিকে মোবাইলটি চার্জার থেকে ডিসকানেক্ট করুন। 
টাইমার: মোবাইল ফোন কিংবা হাতঘড়ির টাইমারটা ওপেন করে কাজ শুরু করুন। 
নির্ধারিত জায়গা: এটি একটি নির্ধারিত জায়গা, যেখানে আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রাখা থাকবে। যেন বাসা থেকে বের হওয়ার পথ সহজেই খুঁজে পান।
হাত বাড়িয়ে দিন: যে কাজে আপনার কম দক্ষতা, তার সমাধানে অভিজ্ঞ কাউকে খুঁজুন। তবে সব কাজে এটি সম্ভব নাও হতে পারে। এ ক্ষেত্রে আপনিও অন্য কাউকে সাহায্য করতে পারেন। 
নেভার বি লেট এগেইন: ‘নেভার বি লেট এগেইন’– এ বইটি পড়তে পারেন। বইটি থেকে আপনার প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে পারেন। এ ছাড়াও ভুলে যাওয়ার অভ্যাস রোধে সবচেয়ে কার্যকর উপায় হতে পারে– গুরুত্বপূর্ণ কাজ নির্দিষ্ট সাইটে সংরক্ষণ করে রাখা। সামনের জরুরি কাজ ক্যালেন্ডারে দাগ দিয়ে রাখা। u

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থির, ভারত এখন কী করবে

দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে অস্থিতিশীলতা নতুন কিছু নয়। তবে এখন যে অস্থিরতা এ অঞ্চলে চলছে তা ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর পাশাপাশি ভারতকে আগের চেয়ে বেশি ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

সাম্প্রতিক নেপালের সহিংস অস্থিরতা তারই উদাহরণ। শুধু নেপালের ঘটনা নয়। ভারতের পূর্বদিকে বাংলাদেশে ২০২৪ সালে যে টানাপোড়েন শুরু হয়েছিল এবং তার জের ধরে সেখানে সরকার পতন হয়েছিল; সেই সংকটের মীমাংসা এখনও হয়নি।

অন্যদিকে ভারতের দক্ষিণ-পূর্বে থাইল্যান্ড নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। কারণ সেখানে আদালতের রায়ে প্রধানমন্ত্রীকে পদচ্যুত করা হয়েছে ও সম্প্রতি কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্তে তাদের একাধিক সংঘর্ষ হয়েছে।

আর্মড কনফ্লিক্ট লোকেশন অ্যান্ড ইভেন্ট ডেটা প্রকল্পের হিসাব অনুযায়ী, ২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে মিয়ানমারের গৃহযুদ্ধে অন্তত ৮০ হাজার মানুষ নিহত হয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ নাগরিকের পাশাপাশি যোদ্ধারাও আছেন।

আরও পড়ুনভারত ও চীনের টানাটানিতে পড়েছে নেপাল৩১ জুলাই ২০২০

ভারতের পশ্চিমে পাকিস্তান এখনও অতীতের ‘ভূতদের’ সঙ্গে লড়াই করছে। উগ্র ইসলামপন্থী গোষ্ঠী, দুর্বল অর্থনীতি আর অকার্যকর শাসনব্যবস্থা পাকিস্তানকে অস্থির করে রেখেছে। ভারতের দক্ষিণে শ্রীলঙ্কা তিন বছর আগে প্রেসিডেন্টকে সরানোর পর আপাত শান্ত হয়েছে। কিন্তু দেশটির অর্থনীতি এখনো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। আর উত্তরে চীনের আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রচেষ্টাও এই অস্থিরতার বড় কারণ হয়ে আছে।

ভারতের জন্য এসব সংকট মোটেও দূরের কোনো ব্যাপার নয়। বাংলাদেশের ঘটনাপ্রবাহ ইতিমধ্যেই পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোতে অস্বস্তি তৈরি করছে। পাকিস্তানের সীমান্তপারের সন্ত্রাসের হুমকি এ গ্রীষ্মে কাশ্মীরে প্রায় যুদ্ধ বাঁধিয়ে ফেলেছিল। আর এখন নেপালের অস্থির রাজনীতি চীনের জন্য নতুন করে হস্তক্ষেপের সুযোগ করে দিয়েছে। এত বড় এক অস্থিরতার বলয়কে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই।

এখন কীভাবে এই ধাক্কাগুলো সামলানো যায় এবং কীভাবে গোটা অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আনা যায়, সেটিই ভারতের নেতৃত্বের সামনে মূল প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে।

সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।

নেপাল দিয়েই শুরু করা যাক। দেশটি দুই দশক আগে দীর্ঘ মাওবাদী বিদ্রোহের অবসান ঘটাতে যে উচ্চাভিলাষী সংবিধান প্রণয়ন করেছিল, তা টিকিয়ে রাখতেই তারা হিমশিম খাচ্ছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল, বিতর্কিত ও ভঙ্গুর অবস্থায় আছে। পক্ষপাত, দুর্নীতি আর রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যর্থতার কারণে স্থিতিশীলতার আশা বারবার ভেঙে পড়েছে। সম্প্রতি যেসব ভয়াবহ সহিংসতা ঘটেছে, তা আসলে এই গভীর অস্থিরতার লক্ষণ।

বাংলাদেশে শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আছে, তারা আইনশৃঙ্খলা ঠিক রাখতে বা মানবাধিকারের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। যে অর্থনীতি কয়েক দশক ধরে বাংলাদেশের সাফল্যের গল্প ছিল, দেশের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কড়া শুল্কনীতির কারণে সেটিও এখন টালমাটাল।

আরও পড়ুনভারত ‘তুমি রিয়েলিটি মাইন্যে ন্যাও’০৪ ডিসেম্বর ২০২৪

সাদা চোখে থাইল্যান্ডের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর কম্বোডিয়ার সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষকে ততটা গুরুতর মনে নাও হতে পারে। কিন্তু ভারত তার ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির অধীনে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ানভুক্ত ১০ দেশ ও তাদের ৬০ কোটিরও বেশি মানুষের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক গড়ছে।

এই অঞ্চলের যে কোনো অশান্তি সেই প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলবে। তাছাড়া থাইল্যান্ড বহুদিন ধরে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে সেতুবন্ধনের কাজ করেছে। যদি এর প্রতিষ্ঠানগুলো দুর্বল হয় কিংবা বা মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের শান্তি-প্রচেষ্টা সত্ত্বেও কম্বোডিয়ার সঙ্গে থাইল্যান্ডের বিরোধ আরও বেড়ে যায়, তাহলে ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক করিডরের স্বপ্নই ভেঙে পড়তে পারে।

পাকিস্তানকে ‘চিরকালীন সংকটে থাকা দেশ’ বলা হয়তো কঠিন শোনায়, কিন্তু দুঃখজনকভাবে এটিই বাস্তবতা। সেখানে বারবার বেসামরিক সরকারকে দুর্বল করা হয়েছে। যেমন, ২০২২ সালে ইমরান খানের নির্বাচিত সরকার সেনাবাহিনীর ইশারায় ক্ষমতাচ্যুত হয়েছে। রাজনীতি রক্তক্ষয়ী খেলায় পরিণত হলে চরমপন্থীরা মাথা তোলে, আর নাজুক অর্থনীতি সেই প্রবণতাকে আরও বাড়িয়ে দেয়। পাকিস্তানে সেটিই দেখা গেছে।

আরও পড়ুননেপালের গণ–অভ্যুত্থান ভারতের মাথাব্যথা বাড়াল১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের দৃষ্টিতে পাকিস্তানের এই সংকট শুধু অভ্যন্তরীণ নয়। এগুলো প্রায়ই কাশ্মীর সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ায়, আঞ্চলিক শান্তির সম্ভাবনা নষ্ট করে, এমনকি পারমাণবিক সংঘাতের শঙ্কাও তৈরি করে। ভারত যখন বাইরের দিকে তাকাতে চায়, এই স্থায়ী অস্থিতিশীলতা তখন ভারতকে উপমহাদেশের দাবার ছকে আটকে রাখে। এর সঙ্গে পাকিস্তান-চীন জোট মিলে পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এটি নিকট ভবিষ্যতে বদলানোর সম্ভাবনা কম।

এসব ঘটনা মিলিয়ে যে বড় প্রবণতা স্পষ্ট হচ্ছে, তা হলো: ভারতের চারপাশে গণতন্ত্র পিছিয়ে পড়েছে। প্রতিবেশি দেশগুলোতে সংবিধান বারবার বদলানো হচ্ছে এবং রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে আদালতকে ব্যবহার হচ্ছে। দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনেক সেনাপ্রধান রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করছেন। রাজনৈতিক নেতাদের কখনো কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, কখনো নির্বাসনে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র হিসেবে ভারতের জন্য এ প্রবণতা মোকাবিলা করা জরুরি। আর এখন আরও দৃঢ় আঞ্চলিক কৌশল ছাড়া উপায় নেই। বাস্তবে পাকিস্তান ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার বেশিরভাগ দেশে সংকট দেখা দিলে ভারতই প্রথম ভরসা। তবে যখন কোনো দেশ মনে করে তাদের ভারতের সাহায্য দরকার নেই, তখন তারা ভারতের নিরাপত্তা উদ্বেগকেও গুরুত্ব দেয় না।

আরও পড়ুননেপালের অভ্যুত্থান নিয়ে ভারতীয় মিডিয়া যেভাবে মিথ্যা বয়ান হাজির করছে১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভারতের চারপাশের অশান্ত পরিস্থিতিই যথেষ্ট কঠিন। তার ওপর বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট আরও অনিশ্চয়তা যোগ করছে। ট্রাম্পের দক্ষিণ এশিয়া নীতি এতটাই খামখেয়ালি যে, ছোট দেশগুলো এখন নিরাপদ থাকতে বিকল্প পথ খুঁজছে। জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় পর্যন্ত প্রশ্ন উঠছে—চীন যখন শক্তি প্রদর্শন করছে আর মার্কিন নিরাপত্তার ছাতার বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়ছে, তখন কি তাদের পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে হাঁটা উচিত না?

ভারত যদিও এ ঝড়ের মুখে দৃঢ় থেকেছে, তবুও আঞ্চলিক টানাপোড়েন আর ট্রাম্পসৃষ্ট অস্থিরতা ভারতের বহুদিনের কৌশলগত স্বায়ত্তশাসন ধরে রাখাকে কঠিন করে তুলছে। এখন ভারতের কাজ শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করা নয়, বরং সম্পর্কের কৌশলগত, প্রযুক্তিগত ও অর্থনৈতিক মূল ভিত্তি ধরে রাখা। পাশাপাশি আচমকা মার্কিন নীতি পরিবর্তনের ধাক্কা সামলানোর প্রস্তুতি নেওয়াও দরকার।

ভারত দক্ষিণ এশিয়ায় আধিপত্য চায় না। তার লক্ষ্য হলো এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নীতিনির্ভর ও সংযুক্ত অঞ্চল গড়ে তোলা যেখানে অতীতের বারবারের সংকট সরে যাবে এবং সে জায়গায় ভবিষ্যতের দীর্ঘস্থায়ী স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠিত হবে।

নিরুপমা রাও ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব এবং চীন ও যুক্তরাষ্ট্রে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত

সত্ত্ব: প্রজেক্ট সিন্ডিকেট। ইংরেজি থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • প্রতিবেশী দেশগুলো অস্থির, ভারত এখন কী করবে
  • স্বামী–স্ত্রীর ঝগড়া ঠেকাতে কী পরামর্শ দিলেন এই বিশেষজ্ঞ