৭ মার্চ ইরানের তেহরানে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দুই দশক পর এশিয়ান কাবাডিতে পদকজয়ী বাংলাদেশ দলে রেইডার হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন অধিনায়ক শ্রাবণী মল্লিক। নানান চড়াই–উতরাই পেরোনো এই স্বপ্নবাজকে নিয়ে লিখেছেন ইমাম হোসেন মানিক
এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে সর্বশেষ ২০০৫ সালে ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ নারী কাবাডি দল। দীর্ঘ দুই দশক পর ৭ মার্চ তেহরানে ষষ্ঠ এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। ওইদিন গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ জেতে ৪২-২৭ পয়েন্টে। তবে সেমিফাইনালে স্বাগতিক ইরানের কাছে হেরে যায় ৪১-১৮ পয়েন্টে। টুর্নামেন্ট শেষ হয় ৮ মার্চ। এতে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় ভারত।
ইতিহাসে চোখ
বাংলাদেশের জাতীয় খেলা কাবাডি। এই খেলাকে ঘিরে দেশে কিংবা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তেমন কোনো জৌলুস নেই বললেই চলে! এশিয়ান কাবাডিতে ছেলেরা সর্বশেষ পদক জিতেছিলেন ১৯৮৮ সালে আর এশিয়ান গেমসে ২০০৬ সালে। সেই তুলনায় এশিয়ান পর্যায়ে মেয়েদের এই সাফল্য ভবিষ্যতে আরও বড় কিছুর আশা জাগানোর মতোই। ২০০৫ সালে মেয়েদের প্রথম আসরেই ব্রোঞ্জ জিতেছিল বাংলাদেশ। সেই দলের অধিনায়ক শাহনাজ পারভীন বর্তমান নারী কাবাডি দলের কোচ। কোচের দায়িত্বে ছিলেন জাতীয় দলের সাবেক কোচ আবদুল জলিল। পুরোনো নথি ঘেঁটে দেখা যায়, ওই আসরের সেমিফাইনালে ভারত ৫৭-২৪ পয়েন্টে শ্রীলঙ্কাকে এবং জাপান ৩৮-১৪ পয়েন্টে হারিয়েছিল বাংলাদেশকে। পরে সেমিফাইনালে হেরে গেলেও শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ দু’দলকেই ব্রোঞ্জজয়ী দেখানো হয়। ১৯৮০ সাল থেকে হচ্ছে এশিয়ান কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপ। যদিও নারীদের অংশগ্রহণ ২০০৫ থেকে। আগের পাঁচবারের চারবারই সোনা জেতে ভারত। একবার চ্যাম্পিয়ন হয় দক্ষিণ কোরিয়া। প্রথম আসরে অংশ নিয়ে বাংলাদেশের মেয়েরা ব্রোঞ্জ নিয়ে দেশে ফেরেন। সেবার ভারতের হায়দরাবাদে টুর্নামেন্টের
সেমিফাইনালে জাপানের কাছে ৩৮-১৪ পয়েন্টে হেরেছিলেন তারা। এরপর ২০০৭, ২০১৬ ও ২০১৭ সালে আর অংশ নেয়নি বাংলাদেশ।
থাইল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে
এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে থাইল্যান্ডকে হারিয়ে সেমিফাইনালের জায়গা করে নেয় বাংলাদেশ। যদিও ইরানে এশিয়ান নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের শুরুটা হয়েছিল ভারতের বিপক্ষে হার দিয়ে। তবে গ্রুপের বাকি দুই ম্যাচে
মালয়েশিয়াকে ৫২-১২ ব্যবধানে ও থাইল্যান্ডকে ৪২-২৭ ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনাল ও ব্রোঞ্জ নিশ্চিত করেন লাল-সবুজের মেয়েরা। সেমিতে অবশ্য স্বাগতিক ইরানের কাছে হেরে যায় ৪১-১৮ ব্যবধানে। তবে কোচ শাহনাজ পারভীন মালেকা এতেই সন্তুষ্ট। তাঁর মতে, ‘নারী কাবাডি চ্যাম্পিয়নশিপে আমাদের এই অর্জন অনেক গর্বের। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আমরা পদক হারিয়েছিলাম। আবার ফিরিয়ে আনতে শুরু করেছি। আমাদের জন্য কিছু করলে আমরা দেশকে আরও কিছু দিতে পারব।’ অধিনায়ক শ্রাবণী মল্লিক বলেন, ‘আমাদের চেয়ে শক্তিশালী দলগুলোর সঙ্গে আমরা খেলেছি। এসব দলের সঙ্গে আমাদের ম্যাচ ছিল অনেক চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমাদের মনোবল ছিল। আমরা মালয়েশিয়া এবং থাইল্যান্ডকে হারাতে পারবো। সবাই খুব ভালো খেলছে। তাই তাদের হারাতে পেরেছি। আসলে অনেকদিন আমাদের কোনো সাফল্য ছিল না। কাবাডিতে সাফল্য খরা ছিল। এটা আমাদের জন্য অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল। আমরা তার অনেকটাই উৎরে যেতে পেরেছি।’
শ্রাবণী যেভাবে এলেন কাবাডিতে
শ্রাবণী মল্লিকের জন্ম ও বেড়ে ওঠা নড়াইলে। বাবা রতন মল্লিক জড়িত কৃষিকাজের সঙ্গে। মা গৃহিণী। বড় দুই ভাইয়ের একজন টাইলস মিস্ত্রির কাজ করেন। অন্যজন থাকেন দেশের বাইরে। বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে শ্রাবণী ছোটবেলা থেকেই খেলোয়াড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। স্থানীয় কেবিএম গার্লস হাইস্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়কালীন ফুফাতো বোন একদিন তাঁকে নিয়ে যান ক্রিকেট খেলতে। ক্রিকেট মনে ধরে না শ্রাবণীর। কিছুদিন পর স্থানীয় কোচ রবি রজিবুলের মাধ্যমে নাম লেখান কাবাডিতে। তরিকুল ইসলাম নামের স্থানীয় আরেক কোচের কাছেও নেন কাবাডির পাঠ। এরপর এই স্কুল বালিকাই যোগ দেন বিজেএমসির ক্রীড়া দলে। দীর্ঘ দিন সেখানেই খেলেন তিনি। কাবাডির পাশাপাশি শটপুটও খেলতেন। বিজেএমসির হয়ে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতায় শটপুটে সোনাও জেতেন শ্রাবণী। শটপুটে জাতীয় পর্যায়ে ২০১৭ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত সোনা জিতে তাক লাগিয়ে দেন এই স্বপ্নবাজ!
প্রতিভা ও আক্ষেপ
বিজেএমসিতে স্থায়ী কোনো চাকরি ছিল না। খেলে মাসিক ভাতা পেতেন ছয় হাজার টাকা। একটা সময় বিজেএমসির ক্রীড়া দল বন্ধ হয়ে যায়। বাংলাদেশ আনসার দলে যোগ দেন শ্রাবণী। আনসারের জার্সিতে লড়েন শটপুট, কুস্তি এবং কাবাডিতে। ২০১৪ সালে রোলবলের জাতীয় দলেও খেলেছেন শ্রাবণী। জাতীয় কুস্তিতে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে সোনা জেতেন তিনি। ২০১৮ সালে জাকার্তায় এশিয়ান গেমসে প্রথমবার জাতীয় নারী কাবাডি দলে নাম লেখান শ্রাবণী। ২০১৯ সালে কাঠমান্ডুতে এসএ গেমসের নারী কাবাডি দলের হয়ে দেশকে ব্রোঞ্জ জেতান তিনি। জীবনের নানা বাঁক পেরিয়ে জাতীয় দলের পাশাপাশি বাংলাদেশ পুলিশের হয়ে খেলছেন শ্রাবণী। তবে একটি সরকারি চাকরির আক্ষেপ এই সাহসী তরুণীর।
তবু ঘুরে দাঁড়িয়েছেন যেভাবে
দুঃসহ জীবন পাড়ি দিয়েছেন এবং এখনও দিচ্ছেন এই দুঃসাহসী তরুণী। ২০২১ সালে প্যানিক অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। নেন কড়া ডোজের ওষুধ। তারই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় বেড়ে যায় ওজন। তবু দমে যাননি তিনি। দেশের হয়ে খেলেন নবম বাংলাদেশ গেমস। ২০২৪ সালও তাঁর জন্য ছিল ভয়াবহ। অসুস্থতার ছোবলে ঘুরে আসেন মৃত্যুর দুয়ার থেকে। দীর্ঘদিন ছিলেন হাসপাতালে। সেই দুর্বিষহ দিনে বাঁচার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। ডাক্তার তো বলেই দিয়েছিলেন, মাস তিনেক বাঁচতে পারেন। একা বসে কাঁদতেন। সেই কষ্টের দিন কাটিয়ে উঠেছেন নিজের মানসিক শক্তিতে ভর করে। দেশের জন্য, পরিবারের জন্য এবং নিজের স্বপ্ন ধরার জন্য তিনি ফের খেলায় ফিরেছেন। দেশের জন্য সাফল্য নিয়ে এসেছেন।
আগামীর স্বপ্ন
আগামীর স্বপ্নের কথা জানতে চাইলে শ্রাবণী মল্লিক বলেন, ‘আমি পাঁচ বছর কাবাডি খেলিনি। তাই আমার কাছে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ ছিল এই আসর। তাছাড়া কাবাডি ফেডারেশনকে রেজাল্ট দিতে পেরেছি, এটি অনেক বড় কিছু আমাদের জন্য। আগামীর স্বপ্নের কথা বলতে হলে বলব, আমাদের সামনে কাবাডি বিশ্বকাপ আছে। সেই বিশ্বকাপে খেলে ভালো ফলাফল নিয়ে আসতে চাই দেশের জন্য। এর জন্য চাই দীর্ঘমেয়াদি ক্যাম্প। উন্নত প্রশিক্ষণের জন্য বাংলাদেশ কাবাডি
ফেডারেশনকে ২৫ লাখ টাকা অনুদান দিয়েছে যুব ও ক্রীড়া
মন্ত্রণালয়। আশা করি, এর ফলে আমাদের নারী কাবাডি দল ভালো প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সামনের বিশ্বকাপে ভালো অর্জন এনে দিতে পারবে দেশকে।’এমন বিশ্বাস আমাদেরও; এগিয়ে যাবে লাল-সবুজের সাহসী মেয়েরা!
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নিউইয়র্ক ছাড়িয়ে জাতীয় মুখ মামদানি
ডেমোক্র্যাট ভোটার লিয়া অ্যাশ বহু বছর ধরে কোনো রাজনীতিককে নিয়ে আশাবাদী অনুভব করেননি। তবে সম্প্রতি সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এ বছর আমার জন্য তিনিই একমাত্র আলোর দিশা। তিনি সত্যিই মানুষের কথা শুনতে চান—যাঁদের তিনি মেয়র হতে যাচ্ছেন।’
২৬ বছর বয়সী অ্যাশ যে ব্যক্তির কথা বলছেন, তিনি হলেন জোহরান মামদানি, যিনি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী।
মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর বিষয়টি প্রাধান্য দিচ্ছেন। এ কারণেই অ্যাশ নিঃসংকোচে মামদানিকে ভোট দিতে চান। তবে তিনি মামদানিকে ভোট দিতে পারছেন না। কারণ, তিনি থাকেন নিউইয়র্ক থেকে প্রায় ১ হাজার ২০০ মাইল দূরে, মিসিসিপির গালফপোর্ট শহরে।
অ্যাশ বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করতে চাই, কোনো একদিন গালফপোর্ট, মিসিসিপিতেও এক জোহরান মামদানি আসবেন।’
জাতীয় পর্যায়ে আলোচিত মুখমাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ৩৪ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাটিক সোশ্যালিস্ট মামদানি এক প্রান্তিক প্রার্থী থেকে জাতীয় পর্যায়ের আলোচিত মুখে পরিণত হয়েছেন। গত জুন মাসের দলীয় নির্বাচনে তিনি অপ্রত্যাশিতভাবে বিজয়ী হন। ওই নির্বাচনে ১৮ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের ভোটার উপস্থিতি ছিল সবচেয়ে বেশি।
আগামীকাল মঙ্গলবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে মেয়র নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের সব জরিপেই দেখা গেছে, নিউইয়র্ক শহরের সাবেক মেয়র অ্যান্ড্রু কুমোর চেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মামদানি এগিয়ে রয়েছেন। মামদানি আশা করছেন, আগেরবারের মতো এবারও তরুণ ভোটাররা তাঁর পাশে থাকবেন। তবে শুধু নিউইয়র্কের মধ্যেই নয়, জীবনযাত্রার ক্রমবর্ধমান ব্যয় মোকাবিলার তাঁর অঙ্গীকার পুরো দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও সাড়া ফেলেছে। অনেক জেন–জি ও মিলেনিয়ালস প্রজন্মের মানুষ বলছেন, তাঁদের সবচেয়ে বড় উদ্বেগের জায়গায় হাত রেখেছেন মামদানি। তরুণ প্রজন্ম যখন রাজনীতিকদের প্রতি আশা হারিয়ে ফেলেছেন এবং প্রচলিত নিয়ম ভেঙে নতুন কণ্ঠস্বরের অপেক্ষায় আছেন, তখনই মামদানির উত্থান।
যুক্তরাষ্ট্রের গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সার্কেলে তরুণ ভোটারদের নিয়ে গবেষণা করেন রুবি বেল বুথ। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো প্রার্থী জনগণের উদ্বেগ নিয়ে কথা বলেন এবং সেই উদ্বেগকে স্বীকৃতি দেন, তখন সেটি বিশাল প্রভাব ফেলে, বিশেষ করে তরুণ ভোটারদের ক্ষেত্রে।’
রুবি বেল বুথ আরও বলেন, ‘তরুণেরা যখন সত্যিই অনুভব করেন যে তাঁদের কথা শোনা হচ্ছে, তাঁদের প্রতি সম্মান দেখানো হচ্ছে, তখন যেকোনো প্রার্থী সফল হতে পারেন। তবে এখন সেটি করছেন মামদানি। আর এর আগে হয়তো সেটা করেছিলেন ট্রাম্প।’
রক্ষণশীলদের মধ্যেও জনপ্রিয়রক্ষণশীল রাজ্য মিসিসিপিতে বসবাস করলেও লিয়া অ্যাশ সব সময়ই ডেমোক্র্যাট প্রার্থীদের ভোট দিয়ে আসছেন। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তিনি রাজনৈতিক নেতাদের ওপর হতাশ ও উপেক্ষিত বোধ করছেন। এই অনুভূতি আরও তীব্র হয়েছে তাঁর অর্থনৈতিক বাস্তবতা থেকে। অন্যদিকে অ্যান্ড্রু টেইট ভার্জিনিয়ার এক গ্রামীণ এলাকায় একটি ছোট খামারে তাঁর সঙ্গী ও সন্তানদের নিয়ে থাকেন এবং স্থানীয় একটি কারখানায় কাজ করেন। তিনিও মূল্যস্ফীতি ও পরিবারের আর্থিক ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন।
অ্যাশ বলেন, ‘দেশের অন্যতম দরিদ্র রাজ্য হয়েও মিসিসিপিতে বাড়ির দাম বেড়েই চলেছে। এটা সত্যিই মন খারাপ করে দেয়।’ তবু অ্যাশ আশা করছেন, যদি মামদানি নির্বাচনে জয়ী হন, তাহলে সেটি দেশের অন্যান্য শহরের ডেমোক্র্যাট নেতাদের জন্য একটি বার্তা হয়ে যাবে।
জোহরান মামদানি তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় একাধিক অঙ্গীকার করেছেন, বিশেষ করে বাসস্থান নিয়ে। তাঁর লক্ষ্য শহরের খরচ কমানো। তবে সমালোচকেরা বলছেন, এসব পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত নয়। আর রক্ষণশীলদের, বিশেষ করে ট্রাম্পের সমর্থকদের কাছে মামদানির দৃষ্টিভঙ্গি বিপজ্জনক। তবু এসব সতর্কতা তরুণ মার্কিন ভোটারদের খুব একটা বিচলিত করছে না। তাঁরা রাজনৈতিক দলের লেবেলের পরিবর্তে মামদানির বাস্তব জীবনের সমস্যা ও সমাধানমুখী বার্তাতেই বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন।
গবেষক বেলি বুথ বলেন, ‘মামদানিই এমন একজন প্রার্থী, যিনি প্রচলিত ব্যবস্থাকে নানা দিক থেকে চ্যালেঞ্জ করছেন।’
২৬ বছর বয়সী ডেমোক্র্যাট এমিলি উইলসনের মতে, জীবনযাত্রার ব্যয়ের সংকট দলীয় বিভাজনের ঊর্ধ্বে থাকা উচিত। ফ্লোরিডার সেন্ট পিটার্সবার্গে বসবাসরত এমিলি দূর থেকেই মামদানিকে সমর্থন করছেন। মিশিগানের অ্যান আরবারের কাছে এক ছোট শহরে বসবাসরত ২৫ বছর বয়সী ডেইজি লুপাও একইভাবে ভাবেন। তাঁর মতে, মামদানির প্রচারাভিযানটা নতুন এক দৃষ্টিভঙ্গি এনে দিয়েছে। তাঁর অনেক প্রস্তাব গ্রামীণ আমেরিকাসহ নিজ সম্প্রদায়ের জন্যও কার্যকর হতে পারে। লুপা বলেন, ‘নিউইয়র্কে তিনি যেসব পরিবর্তন আনতে চাচ্ছেন, সেগুলোর অনেকটাই আমরা গ্রামীণ এলাকায় আরও বেশি করে চাই। কারণ, এখানে তো সেগুলোর অস্তিত্বই নেই।’
সতর্ক আশাবাদ
তবে যাঁরা নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন, তাঁদের কাছে মূল প্রশ্ন—মামদানি কি সত্যিই জীবনযাত্রার ব্যয়ের এই সংকট কাটাতে পারবেন? ৩২ বছর বয়সী ডিলন রবার্টসনের জন্য অর্থনৈতিক উদ্বেগ যেন জীবনের স্থায়ী সঙ্গী। স্নাতক শেষে তাঁর শিক্ষাঋণ দাঁড়াবে প্রায় আড়াই লাখ ডলার। মামদানিকে সমর্থন করছেন রবার্টসন।
কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত ব্যয় সাশ্রয়ী পরিকল্পনাগুলো জীবনকে কিছুটা সহজ করতে পারে। তবে একই সঙ্গে তিনি সংশয়ও প্রকাশ করেন। ডিলন বলেন, ‘মামদানি যা বলছেন, সবই শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমি ভাবি, তিনি কি সত্যিই পারবেন? বাস্তবে কি তা সম্ভব? নাকি এটা যেন ফুটো জাহাজে শুধু ব্যান্ডেজ লাগানোর মতো?’
তবু ডিলন স্বীকার করেন. যদি বিকল্প হয়, আগের মতোই টেনে নেওয়া অথবা কিছু নতুন চেষ্টা করা, তাহলে তিনি নতুনটাকেই সুযোগ দিতে প্রস্তুত।