দালালের জালে তরুণরা, স্বপ্ন দেখিয়ে সর্বনাশ
Published: 16th, March 2025 GMT
দেশের অন্যতম মানব পাচারপ্রবণ এলাকা মাদারীপুর। অবৈধ পথে ইউরোপ যাওয়ার ঝোঁক রয়েছে এ জেলার যুবকদের। এ ক্ষেত্রে প্রধান রুট মধ্যপ্রাচ্যের দেশ লিবিয়া থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ। তবে ছোট নৌকায় ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে গিয়ে অনেকেরই হয় সলিল সমাধি। সেই সঙ্গে ডোবে পরিবারে সুদিন ফেরানোর স্বপ্ন। গত ফেব্রুয়ারিতে লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় ভূমধ্যসাগরের ব্রেগা উপকূলে ২০ অভিবাসনপ্রত্যাশীর মরদেহ পাওয়া যায়। এর ছয়জনই মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার। ১০ জন এখনও নিখোঁজ।
মানব পাচারের জালের ব্যাপ্তি, কীভাবে দালালরা কাজ করে তা জানতে মাদারীপুরে মানব পাচারের শিকার, প্রাণ হারানোদের স্বজন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, বিচার-সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছে সমকাল। তারা জানিয়েছেন, দেশের মানুষই মানব পাচার চক্রের হোতা।
তাদের বড় অংশ দেশে থেকেই তৎপরতা চালায়। মূল দালালরা বিদেশ থেকে সিন্ডিকেট পরিচালনা করলেও কয়েক বছরে একবার হলেও দেশে আসে। তবে পাচারকারীরা গ্রেপ্তার হয় না বললেই চলে। মাঝেমধ্যে স্থানীয় কিছু দালাল গ্রেপ্তার হলেও ‘প্রমাণের অভাবে’ হয় না সাজা। বিচারহীনতার এ চক্রে থামে না মানব পাচার, দীর্ঘ হতে থাকে লাশের মিছিল।
দালালের তিন স্তর
মানব পাচার চক্রের মূল চালিকাশক্তি স্থানীয় দালাল। গ্রাম ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা এ ধরনের দালালের সংখ্যা কয়েকশ। এরাই প্রত্যন্ত এলাকার যুবকদের অবৈধ পথে বিদেশ যেতে উৎসাহী করে। এ জন্য পশ্চিমা দেশের উন্নত জীবনের গল্প শোনায়। নিজের ও পরিবারের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখায়। ‘টোপ’ গিললে ইউরোপ পাঠাতে ১৫-১৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে।
এর পর তারা ওই ব্যক্তিদের সঙ্গে লিবিয়ায় থাকা মূল দালালের সহযোগীদের পরিচয় করিয়ে দেয়। এদের একটি অংশ দেশে থাকলেও মাঠ পর্যায়ে কাজ করে না। এরা মূলত ভিসা, বিমানের টিকিটের মতো বিষয় দেখে।
এর পর বিভিন্ন রুটে লিবিয়ায় নেয়। এই পর্যায়ের দালালদের অনেকেই লিবিয়াতে থাকে। মাঝেমধ্যে টাকা ও পাসপোর্ট নিতে দেশে আসে তারা।
চক্রের সবার ওপরে রয়েছে লিবিয়ায় থাকা মূল দালাল। এদের বেশির ভাগই বাংলাদেশি। এর বাইরে আছে কিছু মিসরীয় ও লিবিয়ান। এরা ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকার ব্যবস্থা করা, মাঝখানে লিবিয়াতে আটকে নির্যাতনের মাধ্যমে অর্থ আদায় থেকে শুরু করে পাচারের শিকার ব্যক্তির ভবিষ্যৎ পুরোটাই নির্ধারণ করে।
ফাঁদের পর ফাঁদ
মূলত দুটি পথে বাংলাদেশিদের লিবিয়া পর্যন্ত নেওয়া হয়। এর মধ্যে একটি ভারতের চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা, দুবাই; তার পর মিসর থেকে আলজেরিয়া হয়ে লিবিয়া। আরেকটি সরাসরি দুবাই বা কাতার হয়ে লিবিয়া; সেখান থেকে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ।
তবে এই পথের পদে পদে রয়েছে ফাঁদ। সরাসরি ইউরোপ পাঠানোর কথা বলে প্রথম ধাপেই জনপ্রতি ১৫-১৭ লাখ টাকা নেওয়া হলেও লিবিয়া পৌঁছানোর পর ভোল পাল্টায় দালালরা। বেশি টাকা আদায়ে দেশটির বিভিন্ন স্থানে আটকে রেখে চালানো হয় নির্যাতন। এর পর সেই নির্যাতনের ভিডিও বাংলাদেশে স্বজনের কাছে পাঠিয়ে আদায় করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। এভাবে প্রাথমিক চুক্তির দুই থেকে তিন গুণ টাকা আদায় করা হয়। অনেককে আবার লিবিয়া নেওয়ার পর মাফিয়া চক্রের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তারাও নির্যাতনের মাধ্যমে যত পারে অর্থ আদায় করে। নির্মম নির্যাতনে অনেকে প্রাণও হারান।
এমনই ফাঁদের শিকার হন মাদারীপুর শহরের কাজল ঘরামীর ছেলে শাকিলুর রহমান ঘরামী, ভাগনে হাবিবুল্লাহ ও শ্যালক আজাদ হোসেন। তাদের স্পেন পৌঁছে দিতে জনপ্রতি ১৭ লাখ টাকায় চুক্তি করে সদরের দত্ত কেন্দুয়া গ্রামের লালু ফকিরের ছেলে আব্বাস ফকির। তিনি আবার দ্বিতীয় স্তরের দালাল রিপন সরদারের বোনজামাই। এই রিপন পাচারের শিকারদের ভারতের মুম্বাই হয়ে লিবিয়া পাঠান বলে নামই হয়ে গেছে ‘মুম্বাই রিপন’।
হাবিবুল্লাহ সমকালকে বলেন, কথা ছিল মরক্কো দিয়ে স্পেন নেওয়ার। তবে তাদের ভারতের চেন্নাই হয়ে শ্রীলঙ্কা, দুবাই; তার পর মিসর থেকে আলজেরিয়া হয়ে লিবিয়া পাঠায়। গত বছরের ২৪ অক্টোবর লিবিয়া পৌঁছানোর পর মোবাইল, মানিব্যাগ ও পাসপোর্ট নিয়ে কিছুক্ষণ পর পুলিশে ধরিয়ে দেয়। চার দিন জেলে থাকার পর সেখান থেকে চারজনকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায় একটি দল। পরে বুঝতে পারি, যারা ছাড়িয়ে নিয়েছে, তারা মাফিয়া। চারজনের কাছ থেকে ২৫ লাখ করে মোট এক কোটি টাকা দাবি করে ওরা। পরে ৯৬ লাখ টাকা দিয়ে ছাড়া পাইছি।
আরও তিন ভুক্তভোগী রাজৈর উপজেলার রাজীব, আরিফ ও হাবিব জানান, উপজেলার বদরপাশা গ্রামের দালাল মিলন মাতুব্বরের প্রলোভনে তারা ইতালি যেতে চেয়েছিলেন। পরে লিবিয়ায় একটি ঘরে আটকে রেখে অতিরিক্ত টাকার জন্য দিন-রাত চালানো হয় নির্যাতন। এক-দুই দিন পরপর একটি করে রুটি ও সামান্য ডাল দেওয়া হতো তাদের। টাকা আসতে দেরি হলে সেটিও জুটত না। প্রতিদিন পা ওপরে বেঁধে পেটানো হতো। সেই নির্যাতনের ভিডিও পাঠানো হতো পরিবারকে। এভাবে তিন পরিবারের কাছ থেকে ৪৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হলেও তাদের ইতালি পাঠানো হয়নি। টাকা আদায় শেষে পুলিশের কাছে ধরিয়ে দেয়। পরে দেশে ফিরে আসেন তারা।
বিপুল পরিমাণ অর্থ দেওয়ার পরও যে ইউরোপে পৌঁছানো যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। স্থানীয়, সহযোগী ও মূল দালালকে সন্তুষ্ট করার পরই পাচারের শিকারদের ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিতে নৌকায় তোলা হয়। এটি পরিচিত ‘গেম দেওয়া’ হিসেবে। তবে ছোট নৌকায় ধারণক্ষমতার কয়েক গুণ মানুষ তোলা হয়। এই নৌকাগুলোয় দালাল চক্রের কেউ থাকেও না। সমুদ্রে দিকনির্দেশনা থেকে শুরু করে নৌকা চালানো সবকিছুই করেন হালকা প্রশিক্ষণ পাওয়া পাচারের শিকার ব্যক্তিরা। এতে প্রায়ই নৌকা ডুবে বা পথ হারিয়ে সলিল সমাধি হয় আরোহীদের।
জীবনের হুমকি জেনেও ছুটছে
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনের (ইউএনএইচসিআর) তথ্যানুযায়ী, ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ২৯ দেশের ৫৫ হাজার ৪১৩ জন ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে ঢুকেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ১১ হাজার ২৩১ জনই ছিলেন বাংলাদেশি (২০ দশমিক ৩ শতাংশ)। ২০২৩ সালেও সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৩০৩ বাংলাদেশি এভাবে ইতালিতে গেছেন। আর ২০২১ ও ২০২২ সালে নাগরিকত্বের ভিত্তিতে বাংলাদেশিরা ছিলেন তৃতীয়।
মানব পাচার বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউরোপে ঢোকার চেষ্টা করতে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে ডুবে গত এক দশকে ২৫ হাজারের বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে বছরে অন্তত ৫০০ বাংলাদেশি মারা গেছেন।
মাদারীপুরে এভাবে মারা যাওয়া ব্যক্তির সংখ্যা কম নয়। প্রতি ঘরে না হলেও গ্রামে এমন পরিবার আছে একাধিক। সবকিছু জেনেও এভাবে মৃত্যুমুখে নিজেকে সঁপে দেওয়া নিয়ে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করা হয়। তারা জানান, এর প্রধান কারণ প্রতারণামূলক তথ্য। বাকপটু স্থানীয় দালালরা টার্গেট ব্যক্তিকে জানান, একবার ইউরোপ যেতে পারলেই রাতারাতি কোটিপতি হওয়া যাবে। এর পাশাপাশি কাকে কাকে ইউরোপ পাঠিয়েছেন, তারা কেমন ভালো আছেন, সেই গল্পও শোনানো হয়। এতেই ফাঁদে পড়েন গ্রামের সহজ-সরল মানুষ। নিজের পরিবারের সম্পদ-জমি দালালের হাতে দিয়ে পাড়ি দিতে চান স্বপ্নের রাজ্যে। দালালের পরামর্শে অনেক সময় তারা পরিবারকেও জানান না। একেবারে শেষ মুহূর্তে যখন জানান, তখন আর কারও কিছু করার থাকে না।
এমনই একজন গত ফেব্রুয়ারিতে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবির পর নিখোঁজ রাজৈরের কুদ্দুস বেপারি। ইতালি যেতে দালালকে প্রায় ‘৬০ লাখ টাকার’ দুই বিঘা জমি লিখে দেন তিনি। তবে পরিবারকে জানান একদম শেষ মুহূর্তে। কুদ্দুসের মা শান্তি বেগম বলেন, ‘হঠাৎ দুপুরে ভাত না খাইয়া পোলা আমারে বলছে, মা আমি যাই। জিগাইলাম কোথায় যাস? মা, লিবিয়া যাই। জিগাইলাম কেডা নেয়? বলে মনির দালাল নিতেছে। তার পরই চলে গেছে।’ স্ত্রী দিনা আক্তারকেও জানান ওই সময়ই। দিনা বলেন, ‘হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সে আমারে বলল, মনির দালালের মাধ্যমে লিবিয়া যাচ্ছে।’
কয়েক বছরেই আঙুল ফুলে কলাগাছ
দেশের মানুষ ভূমধ্যসাগরে ডোবে, মুক্তিপণের টাকা না দিতে পেরে নির্যাতনে মরে। তবে দালালদের কিছুই হয় না। উল্টো মাত্র কয়েক বছরের দালালিতেই কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়ে তোলে তারা।
ফেব্রুয়ারিতে নৌকাডুবির শিকার ১৬ জনকে লিবিয়া পাঠিয়েছিল স্থানীয় দালাল হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুবর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার বাবলাতলার রফিক শিকদার। তাদের মধ্যে মনির শুধু নিখোঁজ কুদ্দুস বেপারির কাছ থেকেই প্রায় ৬০ লাখ টাকার দুই বিঘা জমি লিখে নেন।
কুদ্দুসের মা শান্তি বেগম বলেন, ‘পোলার কাছ থেকে দুই বিঘা ভুঁই (জমি) লেইখা নিছে মনির দালাল। দুই বিঘার দাম হবে আনুমানিক ৬০ লাখ টাকা। আমরা এর কিছুই জানি না। মনির কইছিল, বড় শিপে (জাহাজ) নেবে। কিন্তু সে প্লাস্টিকের একটা বোট দিয়া আমার ছেলেরে মাইরা ফেলছে মনে হয়। দুই বিঘা জমিও নিল, ছেলের প্রাণটাও নিল দালাল।’
এলাকাবাসী জানান, মনির দুই বছর আগেও করতেন দর্জির কাজ। ওই সময় পাশের এলাকার লিটন মাতুবরকে পিটিয়ে হত্যার অন্যতম আসামি ছিলেন। মামলাটি মীমাংসার জন্য নিহত লিটনের ভাতিজা আকাশ মাতুবরকে ভূমধ্যসাগর হয়ে ইতালি পাঠান মনির। এর পর থেকেই তিনি ইতালিতে মানব পাচারের বড় দালাল হয়ে ওঠেন। গত দুই বছরে এই কারবার করে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন তিনি।
এই মনির আবার কাজ করেন উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের কাইয়ুম শেখের হয়ে। কাইয়ুম লিবিয়ায় থেকে পাসপোর্টসহ অন্য বিষয় দেখেন। এর পর দেশে এসে মনিরের ‘ম্যানেজ করা’ ব্যক্তিদের লিবিয়া নিয়ে যান। তারও দেশে আছে বিপুল পরিমাণ সম্পদ।
মাদারীপুর ও শরীয়তপুরের আরেক বড় দালাল মুম্বাই রিপন। দেশের বিভিন্ন এলাকায় তাঁর নেটওয়ার্ক রয়েছে। লিবিয়ায় জিম্মি করে মাদারীপুর শহরের শাকিলুর রহমান ঘরামী, হাবিবুল্লাহ ও আজাদের পরিবারের কাছ থেকে যে ৭২ লাখ টাকা নেওয়া হয়, তা দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে তোলা হয়। তাদের কাছ থেকে গত বছরের ১১ অক্টোবর প্রথম সাড়ে চার লাখ টাকা নেন মুম্বাই রিপন। এর পর ইসলামী ব্যাংকের বিভিন্ন শাখা থেকে তাদের কাছ থেকে ধাপে ধাপে নেওয়া হয় বাকি টাকা।
বিচার ও সমঝোতার রাজনৈতিক-অর্থনীতি
দেশীয় দালাল। মানব পাচারের জাল বিছানোও দেশে। তবুও এই জাল ছিঁড়তে না পারার পেছনে কাজ করে বিচারহীনতা ও সমঝোতার নামে অদ্ভুত এক রাজনৈতিক-অর্থনীতি।
জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় এবং ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মৃত্যুর পর মামলা যে হয় না, তা নয়। তবে গ্রেপ্তার হয় না অধিকাংশ আসামি। দেশের বাইরে থাকায় মূল অভিযুক্তরা বেশির ভাগ সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার দেশে এলেও অর্থ ছিটিয়ে ঠিকই পুলিশের হাত ফাঁকি দেয়। গ্রেপ্তার হলেও কয়েক দিন পরই বেরিয়ে যায় জামিনে। আর বিচার শেষে সাজা হয়েছে এমন নজির খুবই কম।
মাদারীপুর পুলিশ সূত্র জানায়, জেলায় ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মানব পাচারের মামলা হয়েছে প্রায় দেড়শ। এতে ৭৯৮ আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছে অর্ধশতের মতো। ২০২৪ সালে মানব পাচারের ১৮টি মামলায় অভিযোগপত্র এবং ২৮টিতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। এখনও তদন্তাধীন ৫৯ মামলা। আর চলতি বছর কোনো মামলারই অভিযোগপত্র অথবা চূড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা পড়েনি।
আদালত থেকে জানা যায়, গত কয়েক বছরে কোনো মামলারই বিচার শেষ হয়নি। সব মামলাই বিচার শেষের আগে মীমাংসা হয়ে গেছে।
এই মীমাংসার নামেই হয় মূল সর্বনাশটা। স্থানীয়রা জানান, দালালদের নামে মামলা হলেই স্থানীয় মাতবরদের একটি দল সক্রিয় হয়ে ওঠে। ভুক্তভোগী পরিবারকে নানাভাবে তারা বোঝাতে থাকে। অনেক সময় হুমকি-ধমকিও দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত মাত্র কয়েক লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েই মামলা তুলে নেওয়া হয়। এই টাকার পরিমাণও নির্ধারণ হয় ভুক্তভোগীর আর্থসামাজিক অবস্থার ভিত্তিতে। যে যত ক্ষমতাবান, তার ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বেশি। এতে আইনের বাইরেই থাকে দালালরা।
যা বলছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো.
কারা মানব পাচারে জড়িত, তা ‘ওপেন সিক্রেট’ হওয়ার পরও কেন পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে না– জানতে চাইলে তিনি বলেন, মূলত মামলার বেশির ভাগ আসামিই বিদেশে থাকায় তাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয় না। আর মাঝেমধ্যে এরা দেশে এলেও লুকিয়ে আসায় পুলিশ সব সময় তথ্য পায় না। এর পরও এদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালায় পুলিশ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: পর ব র র উপজ ল র পর ম ণ র পর ম ত র হয় মন র দ ক জ কর র একট বছর র ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ