মাগুরায় আট বছরের শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি হিটু শেখ সব দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। গতকাল শনিবার মাগুরা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সব্যসাচী রায়ের আদালতে জবানবন্দির পর তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। 

আছিয়ার ওপর বর্বর পাশবিক নির্যাতনের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হিটু সাত দিনের রিমান্ডে ছিল। রিমান্ডে নেওয়ার তিন দিনের মাথায় সব দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেয় সে। এখনও এই মামলায় তিনজন হেফাজতে রয়েছে। তারা হলো– আছিয়ার বড় বোন হামিদার স্বামী সজীব হোসেন ও তার মা এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক এক ভাই। 

মামলার অগ্রগতি বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা সদর থানার ওসি আইয়ুব আলী সমকালকে বলেন, হিটু শেখ পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে সব দায় স্বীকার করেছে। তার ভাষ্য ছিল– শিশুটিকে দেখে সে মানসিক ভারসাম্য ও হিতাহিত জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়ে। 

এর আগেও হিটু শেখের বিরুদ্ধে নারী নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে– এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আরও কিছু অভিযোগের ব্যাপারে শুনেছি। তবে তার বিরুদ্ধে এর আগে কেউ কোনো মামলা দেয়নি। এখন তাই নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে হত্যা-সংক্রান্ত যে বিধান আছে, সেভাবেই চার্জশিট দেওয়া হবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দেওয়া হবে। 
নিহত শিশুটির মামা ইউসুফ বিশ্বাস বলেন, আমরা ধর্ষকসহ সব অপরাধীর ফাঁসি চাই। আর বোনের পরিবার যেন ঘুরে দাঁড়াতে পারে আশা করি সরকার সেটা করবে। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি আছিয়ার বাবা অসুস্থ হওয়ার পর তিনি এখন কর্মক্ষম নন। এখন অনেকেই এ পরিবারটিকে আর্থিক সহযোগিতা করছে।

পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্বে মন্ত্রণালয়
আছিয়ার পরিবারকে আইনি সহায়তা ও পুনর্বাসনের দায়িত্ব নিয়েছে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। গতকাল মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, মাগুরায় ধর্ষণ ও নির্যাতনে মারা যাওয়া শিশুটির বিষয়ে সব ধরনের আইনি সহায়তা মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। এ ছাড়া তার পরিবার ও বড় বোনের মানসিক স্বাস্থ্যসহ অন্যান্য পুনর্বাসন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে দেওয়া হবে। মহিলা ও শিশুবিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন শারমিন এস মুরশিদ। তিনি এ বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

আছিয়ার বাড়িতে জামায়াত আমির  
জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা.

শফিকুর রহমান বলেছেন, আমরা এসেছি আছিয়ার মা-বাবাকে সহানুভূতি জানাতে এবং কীভাবে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো যায় তা বুঝতে। আমরা এ ঘটনার বিচারকাজ এবং রায় দ্রুত দেখতে চাই। 

গতকাল সকালে আছিয়ার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হেলিকপ্টারে করে মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সব্দালপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে নামেন তিনি। সেখান থেকে সোনাইকুন্ডী গোরস্তানে গিয়ে আছিয়ার কবর জিয়ারত করেন। এর পর সোনাইকুন্ডী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জামায়াতে ইসলামীর মাগুরা জেলা শাখার আয়োজনে শিশু আছিয়ার রুহের মাগফেরাত কামনায় দোয়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে জামায়াত আমির সংক্ষিপ্ত বক্তব্য দেন।

তিনি বলেন, আছিয়ার ঘটনায় মামলার বিচারে যে ৯০ দিন সময় দেওয়া হয়েছে, সেটা আমরা মেনে নিয়েছি। কিন্তু সতর্ক করে দিতে চাই, এটা ৯১ দিন হলেও আমরা মানব না। ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত না করলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ধর্ষণের বিচার একমাত্র ফাঁসি।

এর পর জামায়াতের আমির জারিয়া গ্রামে আছিয়ার বাড়িতে যান। তখন তার মা বাড়িতে ছিলেন না। এ সময় আছিয়ার খালা বেগম রোকেয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং পরিবারটি যেন ভালোভাবে চলতে পারে সে রকম একটা ব্যবস্থা করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেন।

৫ মার্চ মাগুরার নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে আছিয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের শিকার হয়। পরদিন অচেতন অবস্থায় তাকে মাগুরা আড়াইশ শয্যা হাসপাতালে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে মাগুরা হাসপাতালের চিকিৎসকদের পরামর্শে শিশুটিকে নেওয়া হয় ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে থেকে সেদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য শিশুটিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দুই দিন পর ৮ মার্চ তাকে সেখান থেকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। এর পর ১৩ মার্চ সবাইকে কাঁদিয়ে না ফেরার দেশে চলে যায় আছিয়া।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ য় স ব ক র কর ও শ শ ব ষয়ক র পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

ট্রাম্পের যুদ্ধক্ষমতা সীমিত করতে চান মার্কিন সিনেটর

এক মার্কিন ডেমোক্র্যাট সিনেটর আজ সোমবার একটি আইন প্রস্তাব করেছেন, যাতে কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে না পারেন। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সংঘাত বৃহত্তর যুদ্ধের আশঙ্কা বাড়িয়েছে।

ভার্জিনিয়ার সিনেটর টিম কেইন দীর্ঘদিন ধরেই হোয়াইট হাউসের কাছ থেকে যুদ্ধ ঘোষণার ক্ষমতা আবার কংগ্রেসের হাতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে আসছেন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, ২০২০ সালে, সিনেটর কেইন ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনায় ট্রাম্পের ক্ষমতা সীমিত করার জন্য একই ধরনের একটি প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। সেই প্রস্তাব সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদ—উভয় কক্ষেই পাস হয় এবং কিছু রিপাবলিকান সদস্যের সমর্থনও পেয়েছিল।

তবে রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ভেটো ঠেকানোর মতো প্রয়োজনীয় ভোট পাওয়া যায়নি বলে সেটি কার্যকর হয়নি।

আরও পড়ুনআরও ৩৬টি দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার কথা বিবেচনা করছে ট্রাম্প প্রশাসন১৯ ঘণ্টা আগে

কেইন বলেছেন, তাঁর সর্বশেষ যুদ্ধক্ষমতাসম্পর্কিত প্রস্তাবটি এ বিষয় স্পষ্টভাবে তুলে ধরে যে যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী যুদ্ধ ঘোষণা করার একমাত্র ক্ষমতা কংগ্রেসের হাতে, প্রেসিডেন্টের হাতে নয়। তিনি বলেন, ইরানের সঙ্গে যেকোনো ধরনের শত্রুতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য অবশ্যই যুদ্ধ ঘোষণা বা সামরিক শক্তি ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট অনুমোদন থাকতে হবে।

এক বিবৃতিতে সিনেটর কেইন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ করা উপযুক্ত নয়, যদি না সেই যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রকে রক্ষা করার জন্য একেবারেই অপরিহার্য হয়ে ওঠে। আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন যে ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক উত্তেজনা দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্রকে আরেকটি অনন্তকাল চলা সংঘাতে জড়িয়ে ফেলতে পারে।’

মার্কিন আইনে যুদ্ধক্ষমতাসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো ‘প্রিভিলেজড’ হিসেবে বিবেচিত হয়, অর্থাৎ সিনেট বাধ্য থাকবে বিষয়টি দ্রুত আলোচনায় আনতে এবং ভোটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে।

গত শুক্রবার ইসরায়েলের সেনাবাহিনী ইরানে হামলা চালায়, যার উদ্দেশ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করে দেওয়া। অপর দিকে, ইরান, যাদের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে, তারা ইসরায়েলের ওপর ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে এর জবাব দেয়।

উভয় দেশই তাদের হামলা অব্যাহত রেখেছে। ফলে বেসামরিক নাগরিকেরা নিহত ও আহত হচ্ছেন। এতে কানাডায় চলমান বিশ্বনেতাদের বৈঠকে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে যে এই দুই পুরোনো শত্রুর মধ্যে চলমান সবচেয়ে বড় লড়াই বিস্তৃত আঞ্চলিক সংঘাতে রূপ নিতে পারে।

ট্রাম্প একদিকে ইসরায়েলের হামলাকে প্রশংসা করেছেন, অন্যদিকে ইরানের সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যে যুক্তরাষ্ট্র এ হামলায় অংশ নিয়েছে। তবে তিনি তেহরানকে সতর্ক করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্যবস্তুতে প্রতিশোধের পরিধি বাড়ানো উচিত হবে না।

গতকাল রোববার কানাডায় সম্মেলনের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়ার আগে ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে তিনি পরিস্থিতি শান্ত করতে কী করছেন? তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি আশা করি একটা সমঝোতা হবে। আমার মনে হয় এখন সমঝোতার সময় এসেছে। তবে কখনো কখনো ওদের নিজের মধ্যে লড়ে নিতে হয়।’

আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রে ‘নো কিংস’ ব্যানারে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ব্যাপক বিক্ষোভ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ