সাবধান! ক্যাপচার মাধ্যমে ছড়াচ্ছে ম্যালওয়্যার
Published: 16th, March 2025 GMT
নিজেদের ওয়েবসাইট ব্যবহারে আগ্রহী ব্যক্তিরা রোবট না মানুষ, তা জানার জন্য ‘ক্যাপচা’(বিশেষ ফন্টে লেখা শব্দ বা ছবির ধাঁধা) সমাধান করতে বাধ্য করে থাকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট। ওয়েবসাইটে থাকা ক্যাপচার তথ্য সঠিকভাবে লিখতে না পারলে সেই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করা যায় না। কিন্তু এবার ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে ভুয়া ক্যাপচার মাধ্যমে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার প্রবেশ করিয়ে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করছে একদল সাইবার অপরাধী।
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান ম্যালওয়্যারবাইটস জানিয়েছে, নতুন ধরনের এই সাইবার হামলার ক্ষেত্রে সাধারণত অনলাইনে সিনেমা, গান, ছবি বা সংবাদের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ভুয়া ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করা হয়। এরপর কিছু নির্দিষ্ট ধাপ অনুসরণ করে ক্যাপচা সমাধান করতে বলা হয়, যা আসলে একটি প্রতারণার ফাঁদ। যদি কেউ ক্যাপচায় নির্দেশিত ধাপ অনুসরণ করেন, তাহলে ওয়েবসাইটগুলো গোপনে উইন্ডোজ ক্লিপবোর্ডে একটি টেক্সট স্ট্রিং কপি করে। এরফলে ক্যাপচার ‘আই অ্যাম নট রোবট’ চেক বক্সে টিক দেওয়ার পরপরই ব্যবহারকারীদের অজান্তে তাঁদের যন্ত্রে এমএসএইচটিএডটএক্সই কমান্ড চালু হয়ে যায়, যা কাজে লাগিয়ে সাইবার অপরাধীরা দূর থেকে ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ইনস্টল করে থাকে।
আরও পড়ুনক্যাপচা সমাধানে মানুষের মতোই দক্ষ হয়ে উঠেছে চ্যাটজিপিটি২৭ জানুয়ারি ২০২৫এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বেশ কিছু সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছে ম্যালওয়্যারবাইটস। প্রতিষ্ঠানটির তথ্যমতে, যেকোনো ওয়েবসাইটের নির্দেশনা অনুসরণ করার আগে তা যাচাই করা উচিত। এ ছাড়া ক্ষতিকর ওয়েবসাইট ও স্ক্রিপ্ট ব্লক করার জন্য সব সময় জনপ্রিয় প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা সফটওয়্যার ও ব্রাউজার এক্সটেনশন ব্যবহার করতে হবে। প্রয়োজনে অপরিচিত বা সন্দেহজনক ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার সময় জাভাস্ক্রিপ্ট নিষ্ক্রিয় রাখতে হবে।
আরও পড়ুনচাকরির সাক্ষাৎকারের প্রলোভনে ম্যালওয়্যার ছড়াচ্ছে হ্যাকাররা২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের তথ্যমতে, ক্যাপচার মাধ্যমে আগে লুমা স্টিলার নামের ম্যালওয়্যার ছড়ানো হলেও সম্প্রতি সেকটপআরএটি নামের আরও উন্নত ম্যালওয়্যার ছড়ানো হচ্ছে। ম্যালওয়্যারটি শুধু তথ্য চুরিই নয়, আক্রান্ত স্মার্টফোন বা কম্পিউটার দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগও দিয়ে থাকে। আর তাই অনলাইনে বিভিন্ন সুবিধা পেতে তাড়াহুড়ো করলে বা অসাবধান থাকলে ব্যবহারকারীরা এ ধরনের প্রতারণার শিকার হতে পারেন। ক্যাপচার মাধ্যমে ম্যালওয়্যার প্রবেশ ঠেকাতে সন্দেহজনক ওয়েবসাইট দ্রুত বন্ধের পরামর্শও দিয়েছেন তাঁরা।
সূত্র: জেডডিনেট
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ফেস্টুন অপসারণ করায় ইউএনওকে শাসালেন বিএনপি নেতা
ফেস্টুন অপসারণ করায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল আহমেদকে শাসিয়েছেন এক বিএনপি নেতা। তিনি ইউএনওকে আগের স্থানেই ফেস্টুন লাগিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, “তা না হলে যেটা করা দরকার, সেটাই করব।”
এই বিএনপি নেতার নাম কে এম জুয়েল। তিনি রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক। গোদাগাড়ী উপজেলার রিশিকুলে তার বাড়ি।
গত মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) গোদাগাড়ী উপজেলা সদরের সড়ক বিভাজকে থাকা বিভিন্ন দলের ফেস্টুন অপসারণ করেন ইউএনও ফয়সাল আহমেদ। বিষয়টি জানতে পেরে ইউএনওকে ফোন করে ধমকান জুয়েল।
কে এম জুয়েলের ফোনকল রেকর্ড পাওয়া গেছে। এতে শোনা গেছে, কে এম জুয়েল বলেছেন- “আজকে একটা ঘটনা ঘটেছে, আমি শুনেছি। আমি ইঞ্জিনিয়ার কে এম জুয়েল বলছি, সম্ভাব্য ক্যান্ডিডেট। আপনার গোদাগাড়ী থানার প্রোপারে যে পোস্টার সরিয়েছেন, এই বিষয়ে কিছুক্ষণ আগে আমাকে ইনফর্ম করা হয়েছে। সেখানে আমার পোস্টার ছিল। জামায়াত-বিএনপির পোস্টার ছিল। আপনি যে হটাইছেন, এর কারণ কী? কোনো পরিপত্র আছে, না ইচ্ছে করেই?”
ইউএনও তখন বলেন, “জনগণ অভিযোগ দিয়েছে।” জুয়েল বলেন, “জনগণ তো অনেক অভিযোগ দিয়েছে। সমগ্র গোদাগাড়ী থানাতে ভর্তি হয়ে আছে পোস্টার। তোলেন, সব তোলেন।”
এ সময় ইউএনও কিছু বলতে চাইলে তাকে থামিয়ে দিয়ে জুয়েল বলেন, “শোনেন, আমি যেটা বলছি লিগ্যাল রাইট নিয়ে বলছি, সেটার সঠিক অ্যানসার করবেন। আপনি কেন ওই জায়গার পোস্টার তুলেছেন, আর অন্য জায়গার তুলছেন না কেন? আমি ঢাকাতে আছি, আমি আসতেছি।”
ইউএনও বলেন, “আচ্ছা ঠিক আছে।” জুয়েল বলেন, “না, আপনি যেখান থেকে পোস্টার তুলেছেন, সেখানে আপনি সাবমিট করবেন পোস্টার।” কথা না বাড়িয়ে ইউএনও বলেন, “ঠিক আছে।”
এ সময় আরো ক্ষুব্ধ হয়ে বিএনপি নেতা জুয়েল বলেন, “কালকে যেন আমরা ওখানে দেখতে পাই, পোস্টার যেখানে ছিল। ঠিক আছে মানে কী? অবশ্যই করবেন। না হলে যেটা করা দরকার সেটাই করব। আপনার এগেইনেস্টে যেরকম স্টেপ নেওয়া দরকার, সেটাই আমি করব। বিশেষ করে আমরা করব। আমার নেতার ছবি তুলেছেন আপনি ওখান থেকে। জাস্ট রিমেম্বার ইট।”
জুয়েল বলতে থাকেন, “নরসিংদী বাড়ি দেখান আপনি, না? কোন দল থেকে আসছেন আপনি? কোন দল থেকে এসেছেন? কার এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতেছেন আপনি? কালকে পোস্টার ভদ্রলোকের মতো লাগাবেন। ফাইজলামি! এহ, বিশাল ব্যাপার। উনি টিএনও হয়ে গোদাগাড়ীতে আসছেন।”
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ইউএনও ফয়সাল আহমেদ বলেন, “ডাইংপাড়া মোড়ে ব্যানার-ফেস্টুন এরকম পর্যায়ে ছিল যে, যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি পৌরসভার সৌন্দর্য নষ্ট হচ্ছিল বলে অভিযোগ ছিল। স্থানীয় জনগণ এ ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পৌরসভা থেকে নোটিশ দেওয়া হয়েছে সরানোর জন্য। দুই-তিনবার মৌখিকভাবে ও লিখিত আকারে জানানো হয়েছিল। না সরানোর কারণে ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে পৌরসভায় রাখা হয়েছে।”
তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একাধিক সভাতেও আলোচনা হয়েছিল। সেখান থেকে সকল রাজনৈতিক দলের পোস্টারই পৌরসভার পক্ষ থেকে সরানো হয়েছে। তবে, বিএনপি নেতা কে এম জুয়েলের ফোনে শাসানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কে এম জুয়েল বলেন, “ইউএনওর কাছে জনগণ অভিযোগ করেছে, আর আমরা কি মানুষ না? আমরা জানোয়ার? আমার ছবি তুলে ফেলুক আপত্তি নাই। আমার নেতার ছবিতে হাত দিয়েছে কেন? তার কাছে কি নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পোস্টার তুলে ফেলতে? তিন মাসের মধ্যে কি নির্বাচন? উনি জাস্টিস করতেন, আমার কোনো আপত্তি ছিল না। কিন্তু গরু-ছাগলের মতো আচরণ করবেন, তা তো হয় না।”
বিষয়টি নিয়ে কোথাও আলোচনা হয়নি, ইউএনও কোনো চিঠিও দেননি, দাবি করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “গতকাল আমার এক লোককে ডেকে ইউএনও বলেছেন, যেখানে পোস্টার ছিল, দয়া করে আপনারা লাগিয়ে নেন। কিন্তু, আমরা তো লাগাব না। ইউএনওকেই লাগাতে হবে।”
উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির একজন সদস্য জানান, প্রায় দুই মাস আগে উপজেলা সদরের এসব ব্যানার-ফেস্টুন ও পোস্টারের বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় উত্থাপন করেন এক ব্যক্তি। এক মাসেও সেগুলো অপসারণ না হওয়ায় পরবর্তী মাসের সভাতেও বিষয়টি আলোচনায় ওঠে। ওই সভায় ট্রাফিক পুলিশ আপত্তি করেছিল যে, ফেস্টুনের কারণে রাস্তার একপাশ থেকে অন্যপাশ দেখা যায় না। এতে দুর্ঘটনা ঘটছে। এ দুটি সভার মধ্যে প্রথম সভায় উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল ছিলেন না। দুই সভার মাঝে উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটি পুনর্গঠন করা হলে তিনি পরবর্তী সভায় উপস্থিত ছিলেন।
তবে, কোনো আলোচনা হয়নি দাবি করে উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম শাওয়াল বলেন, “আমি আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য। পোস্টার নিয়ে কোনো আলোচনা সভায় হয়নি। ইউএনও আমাদের না জানিয়ে এভাবে ফেস্টুন অপসারণ করে ঠিক করেননি। সেখানে আমাদের নেতার ছবি ছিল।”
ঢাকা/কেয়া/রফিক