আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায় ইইউ: সিইসি
Published: 16th, March 2025 GMT
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আগামীতে একটি আন্তর্জাতিক মানের নির্বাচন দেখতে চায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এতে তাদের কোনো দ্বিমত নেই। পাশাপাশি তারা নির্বাচনে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিতে চায়।
আজ রোববার রাজধানীর আগারগাও নির্বাচন ভবনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৫ সদস্যের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন সিইসি। বৈঠকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার ও ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) মূলত জানতে চেয়েছিলেন যে, আগামী নির্বাচনে আমাদের প্রস্তুতি কী, বাজেট কত। নির্বাচন সুষ্ঠ করতে হলে আর কী কী প্রয়োজন। আমরা বলেছি, বাজেটে কোনো সমস্যা নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে সব প্রস্তুতির তথ্য আমরা জানিয়েছি।
সিইসি বলেন, ওনারা আমাদের শুধুমাত্র নির্বাচনে নয়, দেশের সার্বিক উন্নয়নে যে কোনো ধরনের সাহায্য করতে চান। আমাদের কী প্রয়োজন, সেটা জানতে চান। আমরা বলেছি, ইউএনডিপি ইতিমধ্যে একটা প্রয়োজনীয় অ্যাসেসমেন্ট করেছে। একটা টিম পাঠিয়েছিল। তারা আগামী মাসে একটা কর্মশালা করতে চান। সেখানে সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা থাকবেন। ভোটের আগে পোলিং এজেন্ট, ভোটার এডুকেশন ও স্থানীয় পর্যবেক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে চেয়েছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা ইসিতে কোনো কাজ লুকিয়ে ছাপিয়ে করছি না। যা করছি, একেবারে স্বচ্ছতার সঙ্গে করছি। এমন কোনো দিন নেই যে, আমাদের কেউ কথা বলছে না মিডিয়ার সঙ্গে৷ আশা করছি, সবার সহযোগিতা নিয়ে কাজ করতে পারব।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘অতীতে যা হয়েছে, ভুলে যান। এটা বর্তমান। দয়া করে ‘কনফাইন টু দি কারেন্ট সিচুয়েশন’। সবাই যাতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সে পরিবেশ আমরা তৈরি করে দেব।’
এর আগে ইইউ রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, বাংলাদেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা পরিবর্তনে গণতান্ত্রিক নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন কী ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, আমরা তা জানতে এসেছি। নির্বাচন কমিশন কী কাজ করছে, তা সংক্ষিপ্তভাবে জেনেছি।
মিলার বলেন, আমি নির্বাচন কমিশনকে মূলত তিনটি বার্তা দিয়েছি। প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এই দেশের জন্য একটি অন্যতম অংশীদার এবং আমরা এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের সময়ে আপনার পাশে আছি। দ্বিতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের সঙ্গে তার অংশীদারিত্বকে সব দিক থেকে আরও শক্তিশালী করতে চায়। এবং আমরা এখানে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রয়াসকে সমর্থন করতে এসেছি, যাতে তারা জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে। তৃতীয়ত, ইউরোপীয় ইউনিয়ন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী নির্বাচন পরিচালনায় সহায়তা করবে। আমরা একটি সুনির্দিষ্ট আর্থিক প্যাকেজের পাশাপাশি আমাদের অভিজ্ঞতা এবং দক্ষতা প্রদানের মাধ্যমে সহায়তা করব। এছাড়া বাংলাদেশের কর্তৃপক্ষ চাইলে আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাবো।
ওআইসি মিশন প্রধানদের আগামীকাল বৈঠক: বাংলাদেশে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থাভুক্ত (ওআইসি) দেশগুলোর মিশন প্রধানদের কাছে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি তুলে ধরবে নির্বাচন কমিশন। আগামী সোমবার সকাল ১০টায় আগারগাও নির্বাচন ভবনে এ বৈঠকে উপস্থিত হওয়ার জন্য আফগানিস্তান, আলজেরিয়া, ব্রুনেই দারুসসালাম, মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইরাক, কুয়েত, লিবিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মরক্কো, ওমান, পাকিস্তান, ফিলিস্তিন, কাতার, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিশন প্রধানদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পঞ্চগড়ে সীমান্ত এলাকা থেকে যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
পঞ্চগড়ে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা বাড়ি থেকে রাজু ইসলাম (৩৫) নামের এক যুবকের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তিনি ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে মারা গেছেন বলে ধারণা করছেন স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিরা। তবে ওই সীমান্তে বিএসএফের গুলির কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
রোববার দুপুর পৌনে ১২টায় লাশের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায় সদর থানা-পুলিশ। নিহত রাজু ইসলামের বাড়ি সদর উপজেলার হাড়িভাসা ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা ঝুলিপাড়া এলাকায়। তিনি বিবাহিত এবং তাঁর তিন ছেলেমেয়ে আছে।
নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসীর বরাত দিয়ে হাড়িভাসা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, রাজু গতকাল শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত বাড়িতেই ছিলেন। এরপর তিনি কখন বাইরে গেছেন, স্বজনদের কেউ জানেন না। রাত তিনটার দিকে তাঁকে কে বা কারা বাড়ির বাইরে আহত অবস্থায় ফেলে যায়। এ সময় তাঁর চিৎকারে স্বজনেরা ঘুম থেকে উঠে আহত অবস্থায় তাঁকে দেখে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছিলেন। পথে দেবীগঞ্জ উপজেলার কাছাকাছি গেলে তিনি মারা যান। পরে লাশ বাড়িতে আনা হয়।
ইউপি চেয়ারম্যান সাইয়েদ নূর-ই-আলম বলেন, প্রথম দিকে পরিবারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, রাজু স্ট্রোক (মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ) করে মারা গেছেন। পরে তিনি গিয়ে দেখেন, তাঁর দুটি পায়ের হাঁটু ও আশপাশে গুলির চিহ্ন। ভারত সীমান্তে গিয়ে বিএসএফের গুলিতে তিনি মারা গেছেন বলে তাঁরা ধারণা করছেন। কারণ, তাঁর পায়ে স্পষ্ট গুলির চিহ্ন দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সকালে বিষয়টি জানাজানির পর বাড়িতে মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নিয়ে গেছে।
নীলফামারী ৫৬ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শেখ মো. বদরুদ্দোজা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল দিবাগত রাতে ওই এলাকায় বিজিবির দুটি টহল দল দায়িত্বরত ছিল। তখন সীমান্তে গুলির কোনো ঘটনা ঘটেনি। বিএসএফও গুলি করেনি বলে জানিয়েছে। এমনকি পরিবার থেকে প্রথম দিকে তাঁদের জানানো হয়, তিনি হৃদ্রোগে মারা গেছেন। তবে তিনি যে আহত হয়েছেন, সেটা সীমান্ত এলাকায় হয়েছেন নাকি বাংলাদেশের ভেতরে হয়েছেন, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. শইমী ইমতিয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, নিহত ব্যক্তির লাশ বাড়ি থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। লাশের দুই পায়ে গুলির চিহ্ন আছে, সেটি তাঁরা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হয়েছেন। তবে গুলি কারা করেছে বা কী ধরনের অস্ত্র ব্যবহৃত হয়েছে, সেটা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে জানা যাবে। এ ঘটনায় থানায় একটি হত্যা মামলার প্রক্রিয়া চলছে।