বৃহস্পতিবার থেকে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ
Published: 18th, March 2025 GMT
রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হচ্ছে। আগামী বৃহস্পতিবার (২০ মার্চ) লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে প্রথম পর্যায়ে বৈঠক শুরু করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) ঐকমত্য কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এম ফজলুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদের এলডি হলে এ বৈঠক শুরু হবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য দলের সঙ্গে আলোচনার সময়সূচি ঘোষণা করা হবে।
ঈদের আগে ২৪ মার্চ পর্যন্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
এদিকে মঙ্গলবার পর্যন্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে ১৫টি রাজনৈতিক দল মতামত জমা দিয়েছে। মঙ্গলবার জাতীয় গণফ্রন্ট ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি) মতামত জমা দেয়। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ১৪টি রাজনৈতিক দল তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত কয়েক দিনের মধ্যে জমা দেবে বলে জানিয়েছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের কাছে মতামত জমা দেওয়া বাকি ১৩টি দল হলো—লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), খেলাফত মজলিস, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, জাকের পার্টি, ভাসানী অনুসারী পরিষদ, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম), আমজনতার দল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন, বাংলাদেশ জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (বাংলাদেশ জাসদ), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, আমার বাংলাদেশ পার্টি (এবি পার্টি) এবং নাগরিক ঐক্য।
গত বছর রাষ্ট্র সংস্কারে ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করে সরকার। সংবিধান, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন, দুর্নীতি, পুলিশ এবং নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশন তাদের পূর্ণাঙ্গ মতামত গত ফেব্রুয়ারি মাসে জমা দেয়। এরপর সংস্কারের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করতে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়।
এরপর পুলিশ সংস্কার বাদে বাকি পাঁচটি সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনের গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর ওপর রাজনৈতিক দলগুলোর সুনির্দিষ্ট মতামত ১৩ মার্চের মধ্যে জানাতে অনুরোধ করে সুপারিশগুলোর ১৬৬টি প্রশ্ন স্প্রেডশিট আকারে ৩৮টি রাজনৈতিক দলের কাছে পাঠানো হয়।
ঢাকা/হাসান/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রোজার আগেই নির্বাচন, এরপর আগের কাজে ফিরে যাবেন
অন্তর্বর্তী সরকার সময়মতো ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের জন্য অঙ্গীকারবদ্ধ বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে পবিত্র রমজানের আগেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের পর তিনি তাঁর আগের কাজে ফিরে যাবেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভাকে এসব কথা বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ওয়াশিংটন থেকে ভিডিও ফোনকলে অধ্যাপক ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেন জর্জিয়েভা।
এ সময় তাঁরা বাংলাদেশের চলমান অর্থনৈতিক সংস্কার, আঞ্চলিক পরিস্থিতি এবং আগামী ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পূর্ববর্তী চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোচনা করেন।
আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূস দায়িত্ব গ্রহণের পর বাংলাদেশের অর্থনীতি উল্লেখযোগ্যভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবং এই কৃতিত্ব তাঁর নিজের।
অর্থনীতির সংকটকালীন পরিস্থিতি স্মরণ করে আইএমএফ প্রধান বলেন, ‘আপনার অর্জন আমাকে মুগ্ধ করেছে। অল্প সময়ে আপনি অনেক কিছু করেছেন। যখন অবনতির ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি ছিল, তখন আপনি দেশের দায়িত্ব নিয়েছেন। আপনি সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তি।’
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বিশেষভাবে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা এবং রিজার্ভ পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের সাহসী পদক্ষেপ, বাজারভিত্তিক বিনিময় হার প্রবর্তনের প্রশংসা করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের এক সংকটময় সময়ে আইএমএফ প্রধানের অবিচল সহায়তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘চমৎকার সহায়তার জন্য ধন্যবাদ।’ তিনি স্মরণ করিয়ে দেন, গত বছর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তাঁদের প্রথম সাক্ষাৎ বাংলাদেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথ সুগম করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
কথোপকথনে আইএমএফ প্রধান অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আয় বৃদ্ধি এবং ব্যাংকিং খাতে গভীর সংস্কার বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, ‘শক্ত অবস্থানে থাকতে হলে সংস্কার অনিবার্য। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসের এক অমূল্য মুহূর্ত।’
অধ্যাপক ইউনূস জানান, তাঁর সরকার ইতিমধ্যে ব্যাংকিং খাত পুনর্গঠন এবং রাজস্ব সংগ্রহ জোরদারের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এক বিধ্বস্ত ও সম্পূর্ণ ভেঙে পড়া অর্থনীতি উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। কিছু ব্যক্তি আক্ষরিক অর্থে ব্যাগভর্তি টাকা ব্যাংক থেকে নিয়ে পালিয়ে গেছে।’
এ ছাড়া আঞ্চলিক পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়। এর মধ্যে ছিল নেপালে চলমান যুব আন্দোলন এবং আসিয়ানভুক্তির জন্য বাংলাদেশের আকাঙ্ক্ষা। অধ্যাপক ইউনূস আঞ্চলিক কানেক্টিভিটি জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকার বৃহৎ অবকাঠামো উদ্যোগ—যেমন নতুন বন্দর ও টার্মিনাল প্রকল্প—সম্পর্কেও অবহিত করেন।
আলোচনাকালে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং অর্থসচিব খায়রুজ্জামান মজুমদার উপস্থিত ছিলেন।