ঠিক এক বছর আগের কথা। এমনই সন্ধ্যা। সেদিন ১৮ মার্চ, সোমবার। চাইম ব্যান্ডের ভোকালিস্ট খালিদ না-ফেরার দেশে পাড়ি দিয়েছেন। তাঁর ভক্তদের অনেকেই এখনো প্রিয় গায়কের মৃত্যুশোক কাটিয়ে উঠতে পারেননি। তবে না থেকে যেন ফিরছেন খালিদ, তিনি ফিরছেন নতুন গান নিয়ে।
অনেক বছর খালিদের নতুন গান ছিল না। কিন্তু সেই আশি ও নব্বইয়ের দশকের ‘কালো মেয়ে’, ‘কীর্তনখোলা’, ‘নাতিখাতি বেলা গেল’, ‘মনে করো’, ‘আমায় যদি মনে পড়ে’, ‘কোনো কারণেই’, ‘আবার দেখা হবে’, ‘সরলতার প্রতিমা, ‘আকাশনীলা’, ‘যদি হিমালয় হয়ে’, ‘হয়নি যাবারও বেলা’সহ তাঁর গাওয়া অনেক শ্রোতৃপ্রিয় গানের আবেদন একটুও কি কমেছে?
অনেক দিন ধরেই পরিবারসহ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন খালিদ। মৃত্যুর বছর দেড়েক আগে একা দেশে ফিরেছিলেন। গান নিয়ে নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে চেয়েছিলেন। একক গানের পাশাপাশি চাইম ব্যান্ড পুনর্গঠনও করতে চেয়েছিলেন। মাস ছয়েক ধরে সেই চেষ্টা করছিলেন। খালিদের ঘনিষ্ঠ সূত্রে জানা যায়, বিষয়টি তাঁর জন্য সহজ হচ্ছিল না। সময়, শরীর তাঁকে সমর্থন দেয়নি।

আরও পড়ুন‘নওরীন নাতিখাতি’র স্মৃতিতে খালিদ মামা১৯ মার্চ ২০২৪

জীবনকালে নতুন গান তৈরির প্রস্তুতি হাতে নিয়ে দুঃখ করে তাঁর এক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিকে বলেছিলেন, ‘চাইমের অ্যালবাম তখন হিট। আমার পেছনে গানের জন্য লাইন দিতেন অনেকেই। আমি বিশ্ববিদ্যালয় হলে থাকতাম। মানুষ এসে ভরদুপুরে অনুরোধ করে করে ঘুম ভাঙিয়ে গান করতে নিয়ে যেতেন আমাকে। আর এখন আমার নতুন গান করার কোনো ডাক আসে না। নিজের পকেটের টাকা খরচ করে এখন গান তৈরি করতে হচ্ছে!’
জানা যায়, এরই মধ্যে খালিদ নিজ খরচেই ‘ব্ল্যাকহোল’ ও ‘আমার চোখে তো অনন্ত মেঘ’ নামে দুটি গান করেছেন। কণ্ঠ দেওয়ার পাশাপাশি গান দুটির লেখা, সুরও খালিদের। মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে গান দুটির মিক্স, মাস্টারিং করেছেন তিনি। এরপর গান দুটির মিউজিক ভিডিও করে কীভাবে মুক্তি দেওয়া যায়, তা নিয়ে পরিকল্পনা করছিলেন। মুক্তির জন্য দু-একটি অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথাবার্তাও চলছিল।

আরও পড়ুনকোনো কারণেই ফেরানো গেল না তাকে.

..খালিদকে হারানোর এক বছর৯ ঘণ্টা আগে

চাইম ব্যান্ড নতুন করে গঠন, স্টেজ শো শুরু করা, নতুন একক গান করা—এসব কাজ দেখাশোনা করার জন্য মৃত্যুর আগে প্রায় তিন মাস ধরে খালিদের ব্যবস্থাপকের কাজ করছিলেন সংগীতশিল্পী রোম্মান আবদুল্লাহ। সেদিন কথা হয় এই তরুণের সঙ্গে। মন খারাপ করা সে সন্ধ্যায় তিনি বলেছিলেন, ‘গান নিয়ে খালিদ ভাই ইদানীং দুঃখ করতেন। এ সময় এসে নতুন গান করতে কোনো অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান ডাকেনি তাঁকে। নব্বই, আশির দশকে তাঁকে নিয়ে অডিও প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের আগ্রহের কথা এ সময়ের সঙ্গে তুলনা করে খুব আফসোস করতেন তিনি।’

একের পর এক হিট গান উপহার দিয়ে অল্প সময়েই খ্যাতি পান খালিদ, তাঁর গান এখনো মানুষের মুখে মুখে ফেরে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন গ ন করছ ল ন র জন য গ ন কর

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ