ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির যাত্রা শুরু আগামী বছর
Published: 18th, March 2025 GMT
আগামী বছর যাত্রা শুরু করছে ঢাকার সাত কলেজ নিয়ে গঠিত ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি। এ জন্য চলতি বছরের শেষ দিকে নতুন আইন করা হবে। সেই পর্যন্ত সাত কলেজের কার্যক্রম চলবে একটি স্বতন্ত্র কাঠামোর অধীনে। আগামী সপ্তাহে একজন প্রশাসক নিয়োগ পেতে পারেন। তার অধীনে এ কাঠামোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক দপ্তর, ভর্তি দপ্তর, রেজিস্ট্রার দপ্তর ও হিসাব দপ্তরের প্রতিনিধিরা থাকবেন। বর্তমান শিক্ষার্থীরা এ কাঠামোর অধীনে একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ পাবেন। আসছে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষাও হবে কাঠামোর অধীনেই।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি নামে নতুন বিশ্ববিদ্যালয় না হওয়া পর্যন্ত সাত কলেজের মধ্য থেকে একটির অধ্যক্ষকে প্রশাসক নিয়োগ দিয়ে অন্তর্বর্তী ব্যবস্থা চালু করা হবে। ইতোমধ্যে প্রশাসক নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি।
কমিটির সদস্য সচিব ও ইউজিসির পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শাখার অতিরিক্ত পরিচালক জামাল উদ্দিন সমকালকে জানান, কমিটির অন্যতম সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি এলেই সাত কলেজের প্রশাসক নিয়োগ সম্পন্ন হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, নাম চূড়ান্তের পর নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ জোরেশোরে শুরু হচ্ছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটি আইন মন্ত্রণালয়ের সহায়তায় ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি আইন ২০২৬’-এর খসড়া করবে। এর পর সেটি অধ্যাদেশ আকারে জারি হতে পারে। অবশ্য ডিসেম্বরের মধ্যে সংসদ নির্বাচন হলে, সেখানেই আইনটি পাসের জন্য উত্থাপন করবে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ছাত্র প্রতিনিধিদের প্রস্তাব অনুযায়ী, গত রোববার সাত কলেজ নিয়ে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি’ চূড়ান্ত হয়। সূত্র জানায়, সাত কলেজ আপাতত কীভাবে পরিচালিত হবে, তার রূপরেখা তৈরি করেছে কমিটি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছে। রূপরেখায় অন্তর্বর্তী সময়ে একজন প্রশাসক থাকবেন এবং তিনি সাত কলেজের অধ্যক্ষদের থেকে। ইউজিসি ইতোমধ্যে সব অধ্যক্ষের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। যে কলেজের অধ্যক্ষ প্রশাসক মনোনীত হবেন, সেই কলেজটি হবে পরিচালনা কমিটির হেডকোয়ার্টার্স। সাতটি কলেজেই কোঅর্ডিনেশন ডেস্ক থাকবে অধ্যক্ষদের নেতৃত্বে।
সাত কলেজকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের অন্যতম নেতা ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী আবদুর রহমান বলেন, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি যাত্রা শুরু করছে– সরকারের সিদ্ধান্তে আমরা খুশি। এটি আমাদের স্বপ্ন। এখন আমাদের দাবি, আইন পাসের পর সাত কলেজের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদ দিতে হবে।
বর্তমানে ঢাবির অধীনে সাত কলেজের চারটি ব্যাচ চলছে। ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষে, ২০২১-২২ তৃতীয়, ২০২২-২৩ দ্বিতীয় ও ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা প্রথম বর্ষে পড়ছেন।
২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে যে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হবেন, তাদের একাডেমিক কার্যক্রম শেষ করতে ঢাবিতে ২০৩১ সাল পার হয়ে যাবে। অথচ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি যাত্রা শুরু করবে ২০৩১ সালের পর। তবে এ তথ্য সত্য নয় বলে জানিয়েছে বিশেষজ্ঞ কমিটি সূত্র। তাদের ভাষ্য, ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি দেশে প্রথম ভিন্ন ধারার বিশ্ববিদ্যালয় হবে। এ জন্য বিভিন্ন মডেল নিয়ে কাজ করছে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজের নেতৃত্বাধীন কমিটি। এই সাতটি কলেজের শিক্ষকরা বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তা। এ অবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক স্তর ও বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মর্কতাদের এসব কলেজে রেখে ‘হাইব্রিড’ মডেলে বিশ্ববিদ্যালয়টি পরিচালনার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। এখানে ৪০ শতাংশ ক্লাস হবে অনলাইনে; ৬০ শতাংশ সশরীর। নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনকার মতো একেকটি কলেজে সব বিষয় পড়াশোনা হবে না। এক বা একাধিক কলেজে অনুষদভিত্তিক ক্লাস হবে। যেমন: সরকারি তিতুমীর কলেজে ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস হতে পারে। বাকি কলেজগুলোতে হবে অন্যান্য অনুষদভুক্ত বিষয়ের ক্লাস।
ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, ‘নানা মডেল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে কিছুই চূড়ান্ত হয়নি।’ ইডেন মহিলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ ছাড়া অন্যান্য কলেজে স্নাতক, স্নাতকোত্তরের সঙ্গে উচ্চ মাধ্যমিক রয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ মাধ্যমিকের জন্য ঢাকা কলেজসহ একাধিক প্রতিষ্ঠানের সুনাম রয়েছে।
বিশেষজ্ঞ কমিটি সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে কলেজগুলোর অবকাঠামোগত উন্নয়নও করতে হবে। সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজের জমি আছে ১৮ একর, ইডেন মহিলা কলেজের ১৮ দশমিক ৩, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের এক একর, কবি নজরুল সরকারি কলেজের তিন, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের তিন, সরকারি বাঙলা কলেজের ২৫ ও সরকারি তিতুমীর কলেজের রয়েছে ১১ একর জমি। এসব কলেজে ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী; শিক্ষক ১ হাজার ২০০।
নতুন সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি করার সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীদের একাংশের প্ল্যাটফর্ম ‘তিতুমীর ঐক্য’। সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক বেল্লাল হোসেনের সই করা বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা যৌক্তিক দাবি, ঐতিহ্য, আত্মপরিচয় ও মর্যাদার প্রশ্নে আপসহীন। প্রাতিষ্ঠানিক স্বকীয়তা রক্ষায় সব সময় প্রস্তুত। যে কোনো অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে অঙ্গীকারবদ্ধ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স ন ট র ল ইউন ভ র স ট ত ত ম র কল জ শ ক ষ বর ষ র কল জ র শ ক ষ স ত কল জ র পর চ ল সরক র ইউজ স
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাবি থেকে ড. জাকির নায়েককে ডক্টরেট দেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের
তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বের ওপর বিশ্ববরেণ্য ইসলামী বক্তা ড. জাকির নায়েককে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পক্ষ থেকে সম্মানসূচক ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন একদল শিক্ষার্থী।
সোমবার (৩ নভেম্বর) এ দাবিতে ঢাবি উপ-উপাচার্যের (প্রশাসন) কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা। স্মারকলিপি প্রদান শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন এ তথা জানান তারা।
আরো পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ড. জাকির নায়েক একজন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইসলামী চিন্তাবিদ ও মানবতাবাদী সংগঠক। তিনি শুধু ইসলাম প্রচারই করেননি, বরং মানবকল্যাণে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। তার প্রতিষ্ঠিত ‘ইউনাইটেড এইড’ নামের সংগঠনের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের হাজারো শিক্ষার্থী বৃত্তি ও সহযোগিতা পাচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তিনি বিশ্বমঞ্চে মানবতার প্রতিনিধি হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন।
তারা বলেন, ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদী সরকারের ষড়যন্ত্রে তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করা হলেও মালয়েশিয়া তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এমন একজন মানবতাবাদী ও জ্ঞানচর্চার প্রতীক ব্যক্তিত্বকে যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সম্মানসূচক ডক্টরেট উপাধিতে ভূষিত করে, তাহলে তা দেশের মর্যাদাকে আরো উজ্জ্বল করবে।
এ সময় তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে বিশেষ সমাবর্তনের মাধ্যমে ড. জাকির নায়েককে ডিগ্রি প্রদান করে দাবি জানান।
এছাড়া তারা ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি ক্রমবর্ধমান বুলিং, হ্যারাসমেন্ট ও ধর্মীয় উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জ্ঞানচর্চার স্থানে নারী শিক্ষার্থীদের প্রতি অশোভন আচরণ ও অনলাইন বুলিং উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। আমরা উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনায় জেনেছি, ইতোমধ্যেই হ্যারাসমেন্ট ও সাইবার ট্যাগিং প্রতিরোধে কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে এসব কমিটি দ্রুত কার্যকর করতে হবে, যাতে অপরাধীরা শাস্তির আওতায় আসে।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী