খুলনা মহানগরীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত অর্ধশত দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। বুধবার ভোরের এই দুর্ঘটনায় একটি অস্থায়ী মার্কেট পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৫টার পর মার্কেটের একটি দোকানে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। এ সময় বিভিন্ন দোকানের ঘুমন্ত কর্মচারীরা ওঠে ছোটাছুটি করতে থাকেন। খুব অল্প সময়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্র লেলিহান শিখায় ওই মার্কেটের সব দোকানই পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর মোট ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের পুকুরের পানি ব্যবহার করে দমকল কর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী নিরলস প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। 

ব্যবসায়ীরা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস হলের জমিতে ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট’ নাম দিয়ে এক বছর ধরে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছিলেন তারা। অসম্পূর্ণ, অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত মার্কেটে সব ধরনের ঝুঁকি ছিল। ভোরে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে ব্যবসায়ীরা দ্রুত বের হয়ে আসেন। দেখতে দেখতে আগুন প্রতিটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।

প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের স্থানে কিছু দিন আগে ছোট আকারের ৪৪টি অস্থায়ী দোকান বসানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে কাপড়, কসমেটিকস ও ক্রোকারিজের দোকান। এই দোকানগুলোতে ভোর সোয়া ৫টার দিকে আগুন লাগে।

ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সব দোকানই মালামাল এবং পণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। ব্যাবসায়ীরা দারি করেছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীকে সব পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। তাদের কান্নাকাটি ও আহাজারি করতে দেখা গেছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। উপস্থিত অনেকে বলাবলি করছিলেন মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিস খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক আবু বকর জামান বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের ১০টি ইউনিট ভোর সাড়ে ৫টা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় ৬টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। তবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্টিফিকেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।

খুলনা সদর থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, ভোরে আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আগুনে বেশ কিছু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস খবর প

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ