খুলনায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত দোকান ভস্মীভূত
Published: 19th, March 2025 GMT
খুলনা মহানগরীর বাণিজ্যিক কেন্দ্র পিকচার প্যালেস মোড়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত অর্ধশত দোকান পুড়ে ভস্মীভূত হয়েছে। বুধবার ভোরের এই দুর্ঘটনায় একটি অস্থায়ী মার্কেট পুরোপুরি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট ঘণ্টাব্যাপী চেষ্টা চালিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ভুক্তভোগীরা দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ভোর ৫টার পর মার্কেটের একটি দোকানে হঠাৎ আগুন ধরে যায়। এ সময় বিভিন্ন দোকানের ঘুমন্ত কর্মচারীরা ওঠে ছোটাছুটি করতে থাকেন। খুব অল্প সময়ে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। আগুনের তীব্র লেলিহান শিখায় ওই মার্কেটের সব দোকানই পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়। খবর পেয়ে দমকল বাহিনীর মোট ১০টি ইউনিট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। নগরীর শহীদ হাদিস পার্কের পুকুরের পানি ব্যবহার করে দমকল কর্মীদের ঘণ্টাব্যাপী নিরলস প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।
ব্যবসায়ীরা জানান, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস হলের জমিতে ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট’ নাম দিয়ে এক বছর ধরে দোকান বসিয়ে ব্যবসা করছিলেন তারা। অসম্পূর্ণ, অপরিকল্পিতভাবে স্থাপিত মার্কেটে সব ধরনের ঝুঁকি ছিল। ভোরে আগুনের সূত্রপাত ঘটলে ব্যবসায়ীরা দ্রুত বের হয়ে আসেন। দেখতে দেখতে আগুন প্রতিটি দোকানে ছড়িয়ে পড়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভেঙে ফেলা পিকচার প্যালেস সিনেমা হলের স্থানে কিছু দিন আগে ছোট আকারের ৪৪টি অস্থায়ী দোকান বসানো হয়। এর মধ্যে রয়েছে কাপড়, কসমেটিকস ও ক্রোকারিজের দোকান। এই দোকানগুলোতে ভোর সোয়া ৫টার দিকে আগুন লাগে।
ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সব দোকানই মালামাল এবং পণ্যে পরিপূর্ণ ছিল। ব্যাবসায়ীরা দারি করেছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ব্যবসায়ীকে সব পুঁজি শেষ হয়ে গেছে। তাদের কান্নাকাটি ও আহাজারি করতে দেখা গেছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি। উপস্থিত অনেকে বলাবলি করছিলেন মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত ঘটতে পারে।
ফায়ার সার্ভিস খুলনার উপ-সহকারী পরিচালক আবু বকর জামান বলেন, আগুন লাগার খবর পেয়ে তাদের ১০টি ইউনিট ভোর সাড়ে ৫টা থেকে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। প্রায় ৪০ মিনিটের চেষ্টায় ৬টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। আগুনের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেননি তিনি। তবে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্টিফিকেট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন।
খুলনা সদর থানার ওসি সানোয়ার হোসেন মাসুম বলেন, ভোরে আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। আগুনে বেশ কিছু দোকান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবস খবর প
এছাড়াও পড়ুন:
একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
হবিগঞ্জে ছোট-বড় মিলেয়ে চা বাগানের সংখ্যা প্রায় ৪১টি। এসব বাগানের বাসিন্দা প্রায় দেড় লাখ। এর মধ্যে, স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলে ৩২ থেকে ৩৫ হাজার মানুষ চা পাতা উত্তোলনে জড়িত।
চা বাগানে একজন শ্রমিককে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়। এর বিনিময়ে মজুরি পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। অভিযোগ রয়েছে, কোনো কোনো বাগানে নিয়মিত এই মজুরিও দেওয়া হয় না।
শ্রমিকদের দাবি, দৈনিক মজুরি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা করতে হবে। বর্তমানে যে মজুরি পাওয়া যায় তা দিয়ে সংসার চলে না। প্রতিদিনই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ছে। সেই সঙ্গে চা শ্রমিকদের নৈমিত্তিক ছুটির ব্যবস্থা করতে হবে।
আরো পড়ুন:
বৈষম্য কেন? নারী শ্রমিকেরা পান না সমান মজুরি
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
সরেজমিনে কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা যায়, শ্রমিকরা ছোট্ট কুঠুরিতে গাদাগাদি করে পরিবারের সবাইকে নিয়ে বসবাস করেন। পুষ্টিকর খাবার তো দূরের কথা, দু-বেলা পেটভরে খেতে পারেন না।
শ্রমিকদের দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, ‘‘দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি ও সমস্যা নিয়ে চা বাগান মালিক পক্ষের সংগঠনের সঙ্গে চা শ্রমিক ইউনিয়ন প্রতিনিধির বৈঠক হয়। সর্বশেষ গত বছরের আগস্টে বৈঠক হয়েছে। সে সময় ৮ টাকা ৫০ পয়সা বৃদ্ধি পেয়ে মজুরি ১৭৮ টাকা ৫০ নির্ধারিত হয়েছে।’’
শ্রমিকদের কষ্টের কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘‘দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে এই টাকায় চলা যায় না। দেশের কোথাও এতো সস্তা শ্রমের দাম নেই। বর্তমানে একজন কৃষিশ্রমিক দিনে ৫০০-১০০০ টাকা আয় করেন, একজন রিকশাচালকের প্রতিদিনের আয় ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। সেখানে একজন চা শ্রমিক পান ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা। এজন্য তাকে প্রতিদিন ২৩ কেজি পাতা তুলতে হয়।’’
চা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে নাটক ও গানের মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসা জেলার চুনারুঘাট উপজেলার দেউন্দি প্রতীক থিয়েটারের সভাপতি সুনীল বিশ্বাস বলেন, ‘‘দৈনিক ১৭৮ টাকা ৫০ পয়সা মজুরিতে শ্রমিকদের চলা কঠিন হয়ে পড়েছে। অচিরেই মজুরি ৬০০ টাকা নির্ধারণ করা হোক। এছাড়া, শ্রমিকদের আরো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’
ঢাকা/রাজীব