যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে ইসরায়েল গাজায় ফের যুদ্ধ শুরু করেছে। ইসরায়েলের মঙ্গলবারের হামলায় চার শতাধিক ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছে। তাদের মধ্যে আছে শতাধিক শিশু। গত বছরের সংঘাতের সূচনা থেকে এখন পর্যন্ত মঙ্গলবারের আক্রমণ সম্ভবত সবচাইতে পরিকল্পিত রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ইসরায়েলি সামরিক পদক্ষেপ। এ হামলা আবারও হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে গাজাজুড়ে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করছে। এই হামলা ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সরকার রক্ষার যুদ্ধ বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। হামলার পেছনে ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক ঘটনাবলি বেশ ভালোভাবেই সম্পর্কিত। আমরা অন্তত তিনটি বিষয় লক্ষ্য করতে পারি: নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক বাঁচামরা, সামরিক ও নিরাপত্তা বাহিনী ও তার প্রভাব এবং মানুষকে উত্তেজিত না করে মিত্রদের শান্ত করতে চাওয়ার চেষ্টা।
সরকার বাঁচানোর চেষ্টায় নেতানিয়াহুর গাজা হামলা
নেতানিয়াহুকে এ মাসের মধ্যে বাজেট অনুমোদন করতে হবে, না হলে তাঁর সরকারের পতন ঘটবে। এরপর স্বাভাবিকভাবেই ইসরায়েল নির্বাচন আয়োজন করবে। বাজেট অনুমোদন হলেই কেবল তাঁর প্রশাসন ২০২৬ সাল পর্যন্ত টিকে থাকতে পারবে। তাই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদিও সংসদে বাজেট অনুমোদন না হওয়ার কোনো স্পষ্ট ইঙ্গিত ছিল না, তবুও কেউ কেউ নেতানিয়াহুর জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। নেতানিয়াহুর জোট দলের ওপর নির্ভরশীল এবং তাদের আটটি আসন আছে। তবুও তারা হুমকি দিয়েছিল যে, যদি গোঁড়া অর্থডক্স যুবকদের সেনাবাহিনীতে সেবা থেকে মুক্তির বিলের অগ্রগতি না হয়, তাহলে তারা বাজেট সমর্থন করবে না।
সে কারণেই প্রধানমন্ত্রীকে তার সরকারকে শক্তিশালী করতে হবে। গত দুই সপ্তাহে গুঞ্জন উঠেছিল যে, ইতামার বেন-গভিরের ফার-রাইট পার্টি ‘জুডিশিয়ান পাওয়ার’ সরকারে ফিরে আসবে। দলটি জানুয়ারিতে যুদ্ধবিরতি চুক্তি অনুমোদনের পর সরকার থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। ইসরায়েলি হামলার কিছুক্ষণ পর বেন-গভির ঘোষণা দেন যে, তাঁর দল সত্যিই ফিরে আসবে, কারণ তার যুদ্ধ ফের শুরু করার দাবি পূরণ হয়েছে। এর মানে, যদি গোঁড়া অর্থডক্স দল বাজেটের বিরুদ্ধে ভোট দিলেও তাও বাজেট অনুমোদন। নেতানিয়াহুর জন্য এটি বড় পাওনা।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ফ্যাক্টর
যুদ্ধবিরতি ভঙ্গ করে গাজায় হামলার পেছনে ট্রাম্প ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। ফেব্রুয়ারিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে একটি বৈঠক শেষে নেতানিয়াহু মনে হচ্ছে প্রেসিডেন্টের বিশ্বদৃষ্টিভঙ্গি শক্তভাবে গ্রহণ করেছেন, যেখানে নির্ধারিত নিয়ম বা আইন মানার কোনো প্রয়োজন নেই। তারপর থেকে, নেতানিয়াহু ইসরায়েলি সমাজের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে বিরোধীদের পরিষ্কার করার কাজ তীব্রভাবে শুরু করেছেন। ইসরায়েলের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দুটি স্তম্ভ, সেনাবাহিনী এবং শিন বেত (অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা)। সম্প্রতি নেতানিয়াহু শিন বেতের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
নেতানিয়াহু ঘোষণা করেন যে, তিনি শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করতে চান। এমন সময়ে তিনি এ ঘোষণা দেন যখন শিন বেত নেতানিয়াহুর কিছু স্টাফের বিরুদ্ধে কাতার থেকে অর্থ গ্রহণের সন্দেহে তদন্ত শুরু করে। শিন বেতের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারলে নেতানিয়াহু ব্যাপক ক্ষমতা অর্জন করবেন। সংস্থাটি নিয়ন্ত্রণে থাকলে তিনি তাঁর বিরোধীদের রাজনৈতিকভাবে নির্মূল করতে পারবেন। এমনকি যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়েও নেতানিয়াহু ডোনাল্ড ট্রাম্পের মনোভাব অনুসারে কাজ করছেন। জানুয়ারিতে ইসরায়েল যে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, তাতে দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা ১৬ দিন পর শুরু হওয়ার কথা ছিল এবং তাতে বলা হয়, যদি দ্বিতীয় পর্যায়ে কোনো চুক্তি নাও হয় তার পরও যুদ্ধবিরতি চলতে থাকবে। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থনের কারণেই নেতানিয়াহু লিখিত চুক্তি উপেক্ষা করে গাজার ওপর সবচেয়ে সহিংস আক্রমণ চালান।
ইসরায়েলি জনগণকে ভয়
আকাশ থেকে বোমা ফেলে হামলা অর্থাৎ স্থল অভিযান না চালানোর ক্ষেত্রে সম্ভবত ইসরায়েলি রাজনীতির প্রভাব ছিল। যদিও নেতানিয়াহু তার দ্বিতীয় ধাপের যুদ্ধ শুরু করার ইচ্ছা গোপন করেননি। তার মিত্র বেন-গভির ও অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোত্রিচের দাবি ছিল, ইসরায়েল যাতে গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল করে সেখানে বসবাসরত ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়া শুরু করে। তবে নেতানিয়াহু গাজায় বৃহত্তর পরিসরে স্থল অভিযান পরিচালনায় ভয় পান। কারণ তিনি জানেন, এতে ইসরায়েলি জনগণের বড় একটি অংশ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠবে। এমনকি তারা সেনাবাহিনীতে সেবা না দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে, যা এখন নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। যারা ইসরায়েলে রিজার্ভ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে যাচ্ছে, তাদের হার ইতোমধ্যে অর্ধেকে নেমে এসেছে।
গাজা উপত্যকার পুরোপুরি বা অন্তত উত্তরাংশ দখল করার জন্য অন্তত দশ হাজার সেনা সদস্য নামাতে হবে। নেতানিয়াহু ভয় পাচ্ছেন যে, এতে অনেকে অস্বীকৃতি জানাবে। এটি ইসরায়েল ‘গ্রে রিফিউজাল’ নামে পরিচিত। নেতানিয়াহু জানেন যে, ব্যাপকভাবে এমন অস্বীকৃতি সেনাবাহিনীর জন্য গুরুতর আঘাত হবে। অথচ সেনাবাহিনী এখনও ইসরায়েলি সমাজের একটি মৌলিক ভিত্তি। এতে এটি ইসরায়েলের বৈশ্বিক ভাবমূর্তিরও ক্ষতি করবে। সে কারণে এখন পর্যন্ত নেতানিয়াহু কেবল আকাশ থেকেই আক্রমণ করতে পছন্দ করেন। এই বোমা হামলা নেতানিয়াহুর জন্য রাজনৈতিকভাবে সুবিধাজনক, কারণ এতে রিজার্ভি সেনা বা অন্য সেনাদের ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে প্রয়োজন হয় না। কারণ নেতানিয়াহু এটাও জানেন যে, হাজার হাজার ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিককে হত্যার ফলে ইতোমধ্যে ইসরায়েলি সমাজে বিরোধিতা শুরু হয়েছে।
এটা জোর দিয়ে বলা প্রয়োজন যে, যুদ্ধবিরতির সময় হামাস কোনো ইসরায়েলে হামলা করেনি। সুতরাং ইসরায়েলের এ বোমা হামলা ফিলিস্তিনি কোনো সহিংসতার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্ণনা করা যায় না। বরং নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক স্বার্থেই এ হামলা। [ঈষৎ সংক্ষেপিত]
সূত্র: মিডলইস্ট আই
লেখক: সাংবাদিক
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র র জন ত ক ইসর য় ল র র সরক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাদ ধসের ঘটনায় ইউজিসির তদন্ত কমিটি
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন ১০ তলা আবাসিক হলের অতিরিক্ত অংশের ছাদ ধসের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি)।
শুক্রবার (১ আগস্ট) ইউজিসির জনসংযোগ ও তথ্য অধিকার বিভাগ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ইউজিসির পরিকল্পনা ও উন্নয়ন বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মাকসুদুর রহমান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের এই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির সদস্যদের রবিবার (৩ আগস্ট) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দ্রুততম সময়ে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
আরো পড়ুন:
রাবির কলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর শিক্ষক নিয়োগ স্থগিত
১০৯তম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্রোহী হলের পাশে নির্মাণাধীন ১০ তলা ছাত্রাবাসের দ্বিতীয় তলার সাথে যুক্ত অতিরিক্ত অংশের ছাদ ধসে পড়ে। এতে অন্তত ১২ জন শ্রমিক আহত হন। এদের মধ্যে গুরুতর আহত তিনজন শ্রমিককে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করা হয়।
আরো পড়ুন: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদ ধসে আহত ১২
এ ঘটনায় প্রক্টর ড. মো. মাহবুবুর রহমানকে আহ্বায়ক এবং প্রকৌশল দপ্তরের উপ-প্রধান প্রকৌশলী মো. মাহবুবুল ইসলামকে সদস্য সচিব করে ছয় সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে আগামী পাঁচদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।
ঢাকা/মুজিবুর/মেহেদী