Samakal:
2025-08-02@07:15:12 GMT

সুখ কমেছে বাংলাদেশের

Published: 21st, March 2025 GMT

সুখ কমেছে বাংলাদেশের

সুকুমার রায়ের ‘রাজার অসুখ’ গল্পে নিঃস্ব ফকিরের সুখের অন্ত ছিল না। ওদিকে ধনরত্নের ভান্ডার নিয়েও রাজামশাইয়ের অসুখ সারে না! গবেষকরা এই সুখের তত্ত্ব-তালাশ করে আসছেন বহু বছর ধরে। 

গতকালই ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ২০২৫’ প্রকাশিত হয়েছে; যেখানে ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৪ নম্বরে, গত বছর যা ছিল ১৪৩ দেশের ভিড়ে ১২৯তম। 

তা কীভাবে মাপা হয় এই দেশগত সুখকে? জিডিপিকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, তার সঙ্গে নেওয়া হয় সামাজিক সহায়তা, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার গড়সীমা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, উদারতা আর দুর্নীতির অনুপস্থিতির হিসাব-নিকাশকে। এই সবকিছু মন্থন করেই ‘সুখ’ নামক যৌগিক পদার্থটা আবিষ্কার করেছে গ্যালপ, দ্য অক্সফোর্ড ওয়েলবিইং রিসার্চ সেন্টার ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)।

তা এসবের কতটা ‘ভালো থাকা’ আর কতটা যথার্থ ‘সুখ’– তা নিয়ে কথাকাটাকাটি চলতেই পারে। সুখের সঙ্গে রোজগারের লম্বা ফর্দ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা হয়তো দড়ি টানাটানি করবেন; কিন্তু সবকিছুই তো পকেটের স্বাস্থ্যের সঙ্গে মেলানো যায় না। 

তা তাদের সেই পর্যবেক্ষণে বিশ্বকুলে সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। তার পিছে পিছে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, কোস্টারিকা, নরওয়ে, ইসরায়েল, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লিথুয়ানিয়া, অস্ট্রিয়ার মতো দেশ।

সবচেয়ে অসুখী দেশের তালিকায় প্রথমে আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের চেয়ে অসুখী আছে আরও ১৩টি দেশ। যার মধ্যে সিয়েরা লিয়ন, মালাউই, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, কঙ্গো, ইয়েমেনের মতো দেশ। এসব দেশে গ্যালপ বিশ্ব জরিপের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা অংশগ্রহণকারী মানুষের আগের তিন বছর (২০২২ থেকে ২০২৪) পর্যন্ত তাদের জীবন কেমন কেটেছে, তা মূল্যায়ন করেছে।
দেখে নেওয়া যাক এ তালিকায় আমাদের আশপাশের মানুষেরাই বা কেমন আছেন। ভারতের অবস্থান ১১৮, পাকিস্তানের ১০৯, মিয়ানমারের ১২৬, শ্রীলঙ্কার ১৩৩। সেই হিসাবে নেপালিরা কিন্তু যথেষ্ট সুখী; তারা আছেন ৯২তম অবস্থানে।

এটা ঠিক যে, ভরা পেটে দিন শেষে ভালোবাসায় ঘেরা ঘরে কোমল শয়নেই সুখ খুঁজে পান অনেকে। আবার এটাও ঠিক যে,
ভোগবাদের চোরাস্ত্রোত্রে প্রাচুর্যের স্পর্ধাতেই সেই সুখ খুঁজে নিই কেউ কেউ। ওই যে রুনা লায়লার গাওয়া সেই গানটি– সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে.

..। এর উত্তর বোধ হয় আজও খুঁজে চলেছেন অনেকে। মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসার বন্ধন, পাশে থাকার সহমর্মিতা– এসব সুসম্পর্কের মধ্যেই তো লুকিয়ে থাকে সুখী জীবনের মন্ত্র। তবে সুখের সঙ্গে অর্থের গাণিতিক সম্পর্ক নিয়ে একটা সাড়াজাগানো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল বছর পনেরো আগে। ড্যানিয়েল ক্যানেম্যান আর অ্যাঙ্গাস ডিটন আমেরিকার পরিপ্রেক্ষিতে দেখান, আয়ের সঙ্গে সুখ বাড়ে বটে; কিন্তু আয় যখন বছরে ৭৫ হাজার ডলারে পৌঁছায়, তখন আয় বাড়লেও সুখ বাড়ে না।

সুখের সংজ্ঞা অবশ্যই মানুষ তার মতো করেই ঠিক করে নেয়। চাওয়া তো খুব বেশি কিছু নয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা আর নিরাপত্তা– এ মৌলিক জিনিসগুলো পেলে অনেকেই সুখী। শ্রান্ত কৃষক তাই পড়ন্ত বিকেলে গান গাইতে গাইতে তাঁর ক্ষেত থেকে বাড়িতে ফেরার মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেন। অলস দুপুরে ফেরিওয়ালা তাঁর ডাকে হৃদয়ের সঞ্জীবনী চেয়ে নেন। মা তাঁর স্কুলফেরা সন্তানের ড্রেস খুলে দেওয়ার মধ্যে শান্তি খুঁজে নেন; এগুলো গ্যালপের ইনডেক্সে কখনোই থাকবে না। 

রবিঠাকুর যেমনটা বলেছিলেন– ‘জীবনের সব শূন্য আমি যাহা ভরিয়াছি তোমার তা কই...।’ এই বাজার অর্থনীতিতে যেখানে ভবিষ্যতের ভয় দেখানো কিছু সুখী মানুষের একধরনের বিলাস, সেখানে জোর গলায় সেই কৃষক বা রিকশাচালকের মতো বলা যায়– এ বিপুল বিশ্বভূমিতে, এ জনম-ই সই।

 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিকের লাশ উদ্ধার, হত্যার অভিযোগ পরিবারের

নড়াইলের লোহাগড়ায় প্রেমিকার বিয়ের দিনে প্রেমিক সৈয়দ মাসুম বিল্লাহর (২০) মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। মাসুমের বাম হাতের একটি আঙুলের নখ উপড়ে ফেলার আলামত থাকায় তার পরিবার অভিযোগ করছে, এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। 

শুক্রবার (১ আগস্ট) দুপুরে কালনা মধুমতি সেতুর পশ্চিম পাশে রাস্তার ওপর মাসুমকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ইজিবাইকের চালক সুজন শেখ তাকে উদ্ধার করে লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। বিকেলে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়।

মাসুম বিল্লাহ লোহাগড়া উপজেলার শালনগর ইউনিয়নের মাকড়াইল গ্রামের মৃত সৈয়দ রকিবুল ইসলামের ছেলে। 

আরো পড়ুন:

জুলাই হত্যাকাণ্ডের মামলায় চট্টগ্রামে প্রথম অভিযোগপত্র দাখিল

সিলেটে স্কুলছাত্র সুমেল হত্যা: ৮ জনের মৃত্যুদণ্ড, ৭ জনের যাবজ্জীবন

মাসুমের স্বজনরা জানিয়েছেন, শালনগর ইউনিয়নের এক কিশোরীর সঙ্গে মাসুমের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। মেয়েটির বিয়ের খবর পেয়ে শুক্রবার (১ আগস্ট) সকালে তিনি ঢাকা থেকে লোহাগড়ায় আসেন। সকালে পরিবারের সঙ্গে তার শেষবার কথা হয়, এরপর থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল।

মাসুম বিল্লাহর চাচা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, “আমরা শুনেছি, সকালে লোহাগড়া বাজারের একটি পার্লারে মেয়েটির সঙ্গে মাসুমের কথা হয়। এর পর মেয়েটির বাবার কাছ থেকে হুমকি পায় সে। পরে হাসপাতাল থেকে ফোন পেয়ে মাসুমের মৃত্যুর খবর জানি। তার বাম হাতের  নখ উপড়ানো ছিল। সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে, তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।”

মাসুমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া ইজিবাইক চালক সুজন বলেছেন, “ঘটনাস্থলে কোনো দুর্ঘটনার চিহ্ন ছিল না। তবে মনে হয়েছে, কেউ মাসুমকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়েছে।”

লোহাগড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শরিফুল ইসলাম শনিবার (২ আগস্ট) সকালে সাংবাদিকদের বলেছেন, “আমরা মাসুম বিল্লাহকে মৃত অবস্থায় লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে থানায় নিয়ে আসি। মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য নড়াইল আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।” 

ঢাকা/শরিফুল/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ