সুকুমার রায়ের ‘রাজার অসুখ’ গল্পে নিঃস্ব ফকিরের সুখের অন্ত ছিল না। ওদিকে ধনরত্নের ভান্ডার নিয়েও রাজামশাইয়ের অসুখ সারে না! গবেষকরা এই সুখের তত্ত্ব-তালাশ করে আসছেন বহু বছর ধরে।
গতকালই ‘ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ২০২৫’ প্রকাশিত হয়েছে; যেখানে ১৪৭ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১৩৪ নম্বরে, গত বছর যা ছিল ১৪৩ দেশের ভিড়ে ১২৯তম।
তা কীভাবে মাপা হয় এই দেশগত সুখকে? জিডিপিকে জনসংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয়, তার সঙ্গে নেওয়া হয় সামাজিক সহায়তা, সুস্থভাবে বেঁচে থাকার গড়সীমা, সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা, উদারতা আর দুর্নীতির অনুপস্থিতির হিসাব-নিকাশকে। এই সবকিছু মন্থন করেই ‘সুখ’ নামক যৌগিক পদার্থটা আবিষ্কার করেছে গ্যালপ, দ্য অক্সফোর্ড ওয়েলবিইং রিসার্চ সেন্টার ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন নেটওয়ার্ক (এসডিএসএন)।
তা এসবের কতটা ‘ভালো থাকা’ আর কতটা যথার্থ ‘সুখ’– তা নিয়ে কথাকাটাকাটি চলতেই পারে। সুখের সঙ্গে রোজগারের লম্বা ফর্দ দিয়ে অর্থনীতিবিদরা হয়তো দড়ি টানাটানি করবেন; কিন্তু সবকিছুই তো পকেটের স্বাস্থ্যের সঙ্গে মেলানো যায় না।
তা তাদের সেই পর্যবেক্ষণে বিশ্বকুলে সবচেয়ে সুখী দেশ ফিনল্যান্ড। তার পিছে পিছে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, সুইডেন, নেদারল্যান্ডস, কোস্টারিকা, নরওয়ে, ইসরায়েল, লুক্সেমবার্গ, মেক্সিকো, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, বেলজিয়াম, লিথুয়ানিয়া, অস্ট্রিয়ার মতো দেশ।
সবচেয়ে অসুখী দেশের তালিকায় প্রথমে আছে আফগানিস্তান। বাংলাদেশের চেয়ে অসুখী আছে আরও ১৩টি দেশ। যার মধ্যে সিয়েরা লিয়ন, মালাউই, জিম্বাবুয়ে, বতসোয়ানা, কঙ্গো, ইয়েমেনের মতো দেশ। এসব দেশে গ্যালপ বিশ্ব জরিপের মাধ্যমে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। যেখানে তারা অংশগ্রহণকারী মানুষের আগের তিন বছর (২০২২ থেকে ২০২৪) পর্যন্ত তাদের জীবন কেমন কেটেছে, তা মূল্যায়ন করেছে।
দেখে নেওয়া যাক এ তালিকায় আমাদের আশপাশের মানুষেরাই বা কেমন আছেন। ভারতের অবস্থান ১১৮, পাকিস্তানের ১০৯, মিয়ানমারের ১২৬, শ্রীলঙ্কার ১৩৩। সেই হিসাবে নেপালিরা কিন্তু যথেষ্ট সুখী; তারা আছেন ৯২তম অবস্থানে।
এটা ঠিক যে, ভরা পেটে দিন শেষে ভালোবাসায় ঘেরা ঘরে কোমল শয়নেই সুখ খুঁজে পান অনেকে। আবার এটাও ঠিক যে,
ভোগবাদের চোরাস্ত্রোত্রে প্রাচুর্যের স্পর্ধাতেই সেই সুখ খুঁজে নিই কেউ কেউ। ওই যে রুনা লায়লার গাওয়া সেই গানটি– সুখ তুমি কি বড় জানতে ইচ্ছে করে.
সুখের সংজ্ঞা অবশ্যই মানুষ তার মতো করেই ঠিক করে নেয়। চাওয়া তো খুব বেশি কিছু নয়। খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা আর নিরাপত্তা– এ মৌলিক জিনিসগুলো পেলে অনেকেই সুখী। শ্রান্ত কৃষক তাই পড়ন্ত বিকেলে গান গাইতে গাইতে তাঁর ক্ষেত থেকে বাড়িতে ফেরার মধ্যে আনন্দ খুঁজে নেন। অলস দুপুরে ফেরিওয়ালা তাঁর ডাকে হৃদয়ের সঞ্জীবনী চেয়ে নেন। মা তাঁর স্কুলফেরা সন্তানের ড্রেস খুলে দেওয়ার মধ্যে শান্তি খুঁজে নেন; এগুলো গ্যালপের ইনডেক্সে কখনোই থাকবে না।
রবিঠাকুর যেমনটা বলেছিলেন– ‘জীবনের সব শূন্য আমি যাহা ভরিয়াছি তোমার তা কই...।’ এই বাজার অর্থনীতিতে যেখানে ভবিষ্যতের ভয় দেখানো কিছু সুখী মানুষের একধরনের বিলাস, সেখানে জোর গলায় সেই কৃষক বা রিকশাচালকের মতো বলা যায়– এ বিপুল বিশ্বভূমিতে, এ জনম-ই সই।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রাক্তন স্ত্রী দেবশ্রীর সঙ্গে প্রেমের সিনেমা করতে চান প্রসেনজিৎ
ভারতীয় বাংলা সিনেমার তারকা জুটি প্রসেনজিৎ চ্যাটার্জি ও দেবশ্রী রায়। পর্দায় এ জুটির রোমান্স দেখে মুগ্ধ হয়েছেন অসংখ্য ভক্ত। রুপালি পর্দার রোমান্স ব্যক্তিগত জীবনেও গড়ায়। ভালোবেসে দেবশ্রী রায়কে বিয়ে করেন প্রসেনজিৎ। কিন্তু কয়েক বছর পরই এ বিয়ে ভেঙে যায়। তারপর দুজনের পথ আলাদা হয়ে যায়।
সংসার ভাঙার পাশাপাশি দর্শক হারান রুপালি পর্দার জনপ্রিয় এই জুটিকে। এরপর আর কোনো সিনেমায় একসঙ্গে দেখা যায়নি তাদের। অবশেষে দূরত্ব কমিয়ে দেবশ্রীর সঙ্গে সিনেমা করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করলেন প্রসেনজিৎ।
আরো পড়ুন:
নিজেকে তৈরি করে খোলামেলা দৃশ্যে অভিনয় করব: স্বস্তিকা
ছেলের বন্ধুরা ‘দিদি’ বলে ডাকে: শ্রাবন্তী
কিছুদিন আগে ‘আমি যখন হেমা মালিনী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিত চক্রবর্তী বলেছিলেন—“দেব-শুভশ্রী জুটির পর আমি চাই আবার প্রসেনজিৎ-দেবশ্রী জুটি ফিরুক, এই জুটিটা ফেরার অত্যন্ত প্রয়োজন।” ‘দেবী চৌধুরানী’ সিনেমার প্রচারে চিরঞ্জিতের এই বক্তব্য প্রসেনজিৎকে জানানো হয়।
এ বিষয়ে প্রসেনজিৎ বলেন, “আমি তো চাই দীপকদা একটা স্ক্রিপ্ট লিখুক আমাদের জন্য, আমার বহুদিনের ইচ্ছা ছিল এবং আমি অনেকবার দীপকদাকে বলেছি যে, আমি তোমার পরিচালনায় একটা কাজ করতে চাই। দীপকদা, আমাদের জন্য যদি পরিচালনা করেন তাহলে অবশ্যই আমি সিনেমা করতে চাই। আর আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে দেবশ্রীর সঙ্গে আবারো একটা পরিণত প্রেমের সিনেমা করতে চাই।”
তাহলে কী পুরোনো তিক্ততা ভুলে গেছেন প্রসেনজিৎ? জবাবে এই নায়ক বলেন, “আমার কারো সঙ্গে কোনো তিক্ততা নেই। যে আমার সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলবে, আমি সব সময় তাদের জন্য আছি। আর কোনো তিক্ততা নিয়ে বাঁচতে চাই না, যে কটা দিন আছি সবার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক নিয়েই থাকতে চাই।”
এক সময় দেবশ্রীকে নিয়ে কথা বলতে খুব একটা স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন না প্রসেনজিৎ। তবে অভিমান ভুলে কাজের ক্ষেত্রে আবার এক হওয়ার কথা বললেন তিনি। বর্তমানকে ভালোবেসে যেমন এগিয়ে যান, ঠিক তেমনই কি অতীতকেও আঁকড়ে বাঁচেন?
এ প্রশ্নের জবাবে প্রসেনজিৎ বলেন, “নিজের অতীতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না। মাঝেমাঝেই আমি আমার অতীতে ফিরে যাই; সেই সময়গুলোর জন্যই আজকের আমি। অতীত আমাকে অনেক ভালোবাসা, রাগ-দুঃখ-ক্ষোভ দিয়েছে। আমার ক্ষেত্রে যেটা অল্প কিন্তু তবু আছে সেটা হলো—ঘৃণা। সেটাও পেয়েছি, তবে অতীত যেমনই হোক না কেন, তাকে কখনো ফেলে দেওয়া যায় না। আমরা সবাই মাঝে মাঝে অতীতে ফিরে যাই।”
সময়ের সঙ্গে অনেক কিছু বদলে গেছে। বর্তমান প্রজন্মের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতেও দ্বিধাবোধ করেন না প্রসেনজিৎ।তার ভাষায়—“এই বদলগুলোকে মেনে না নিলে আমাকে পিছিয়ে পড়তে হবে। আমি প্রচুর বদল দেখেছি, তবে যেই সময় যেটা এসেছে, তার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিয়েছি, এটাই তো করা উচিত। না হলে বর্তমান প্রজন্ম থেকে দূরে সরে যেতে হবে।”
ঢাকা/শান্ত