যুদ্ধবিরতি ভেঙে গাজায় হামলার প্রতিবাদে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইসরায়েলের জনগণ। যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তির দাবি এবং অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতরপ্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে। নেতানিয়াহুবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে রাজপথ। টানা চতুর্থ দিনের মতো জেরুজালেমে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর বাসভবনের কাছে বিক্ষোভ হয়েছে। তেল আবিবসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে। নেতানিয়াহুর পতন না হওয়া পর্যন্ত তারা একত্রিত থেকে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ইসরায়েলের গণতান্ত্রিক ভিত্তিকে দুর্বল করছেন নেতানিয়াহু। খবর টাইমস অব ইসরায়েল ও রয়টার্সের। 

যুদ্ধবিরতি ভেস্তে দিয়ে গাজায় গত মঙ্গলবার ফের হামলা শুরুর পর থেকেই নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল।
 এতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে গাজার বাকি ৫৯ জন বন্দির ভাগ্য। এ ছাড়া বৃহস্পতিবার রোনেন বারকে বরখাস্ত ইস্যুতে ভোটাভুটির ঘোষণার পর রাত থেকেই দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করছিলেন ইসরায়েলিরা। বরখাস্তের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসার পর শুক্রবার বিক্ষোভ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিক্ষোভে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। 
আজ্জা স্ট্রিটের দিকে অগ্রসর হওয়া একদল বিক্ষোভকারীর ব্যানারে লেখা ছিল, ‘ইতিহাস তৈরি করে জনগণ’। দলটি ‘বাম, ডান, বাম, ডান, বাম’; ‘সবাই একসঙ্গে, যতক্ষণ না (নেতানিয়াহুর) পতন হয়’ ইত্যাদি স্লোগান দেয়। 

এর আগে বৃহস্পতিবার রাতেও তেল আবিব ও জেরুজালেমে নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বড় ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা নেতানিয়াহুর বাসভবনের সামনেও জড়ো হয়। তাদের কেউ কেউ উত্তেজিত হয়ে ভাঙচুর শুরু করলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়। 
শিন বেতের প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে হাইকোর্ট একটি অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আদালত তাঁর বরখাস্তের বিরুদ্ধে দাখিল করা আবেদনগুলোর শুনানি না করা পর্যন্ত এই আদেশ বহাল থাকবে। এতে বলা হয়েছে, তারা ৮ এপ্রিলের মধ্যে আবেদনগুলো শুনবে। এর আগে নেতানিয়াহু রোনেন বারকে বরখাস্ত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা সর্বসম্মতিক্রমে বারকে বরখাস্তের পক্ষে মত দেয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে আগামী ১০ এপ্রিল। 

এদিকে গাজায় নির্বিচারে বোমা বর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে দখলদার দেশটি। পবিত্র রমজানে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে নতুন করে হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে নেতানিয়াহুর সরকার। গাজায় ক্যান্সার চিকিৎসাসেবা দেওয়া একমাত্র হাসপাতালেও হামলা চালানো হয়েছে। মধ্য গাজার ক্যান্সার রোগীদের জন্য তুর্কি ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে বোমা হামলায় গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। 
গাজার অন্যতম বৃহত্তম খাদ্য সহায়তা প্রদানকারী সংস্থা সতর্ক করে দিয়েছে, তাদের কাছে আর ছয় দিনের জন্য পর্যাপ্ত আটা আছে। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর স্যাম রোজ জেনেভায় সাংবাদিকদের বলেন, মানুষকে কম দিয়ে আমরা মজুত থাকা আটা আরও কয়েকদিন বিতরণ করতে পারি। তবে তা সপ্তাহ নয়, মাত্র কয়েক দিনই চলবে। 

এই হামলার পেছনে ইসরায়েলের প্রকৃত লক্ষ্য হলো গাজাকে জনশূন্য করা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। নেতানিয়াহুর সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে শিন বেতের প্রধানের মন্তব্য থেকে বোঝা যায় নেতানিয়াহু সরকার কখনও যুদ্ধবিরতি চায়নি। শিন বেতের পরিচালক রোনেন বার অভিযোগ করেছেন, নেতানিয়াহু ‘প্রকৃত চুক্তিতে’ পৌঁছানোর ইচ্ছা না করেই গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা পরিচালনা করেছেন। 
দোহা ইনস্টিটিউট অব গ্র্যাজুয়েট স্টাডিজের মোহাম্মদ এলমাসরি বলেন, ইসরায়েল যুদ্ধ ফের শুরু করার আসল কারণ স্পষ্ট। যদি তারা বিপুল সংখ্যক মানুষ হত্যা এবং নারকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে, তবে তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে আশা রয়েছে যে, শেষ পর্যন্ত তারা যা চায় তা পাবে। সেটা হলো, উপত্যকাকে জনশূন্য করা। এটাই তাদের প্রকৃত লক্ষ্য। 

যুদ্ধবিরতি ভেঙে মঙ্গলবার থেকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত শিশুর সংখ্যা ২০০ ছাড়িয়ে গেছে। গাজায় ইউনিসেফের মুখপাত্র রোজালিয়া পলিন বলেছেন, এই সপ্তাহে ইসরায়েল ফের যুদ্ধ শুরু করার পর থেকে গাজায় দুই শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, মঙ্গলবার গাজায় যুদ্ধবিরতি ভঙ্গের পর থেকে ইসরায়েলের হামলায় ৫৯০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ইসরায়েলের আগ্রাসনে গাজায় অন্তত ৪৯ হাজার ৬১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতের সংখ্যা এক লাখেরও বেশি। নিহতের বেশির ভাগই নারী ও শিশু। 


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল ইসর য় ল র বরখ স ত র

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 

জাতীয় নির্বাচনে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির দাবিতে জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলন প্রস্তুতির প্রেক্ষাপটে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, “মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে।”

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের নিজ বাসায় সমসাময়িক ইস্যুতে কথা বলার সময় তিনি এই হুঁশিয়ারি দেন।

আরো পড়ুন:

বাগেরহাটে হরতাল প্রত্যাহার, নির্বাচন অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা

নড়াইলে বিএনপি নেতা বহিষ্কার

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, “রাজনৈতিক হীন উদ্দেশ্যে বা কিছু আসন বেশি পাওয়ার লোভে জাতীয় স্বার্থের বাইরে গিয়ে কেউ যদি পিআর চায় সেটা ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনবে।”

তিনি আরো বলেন, “উচ্চ-নিম্ন সবক্ষেত্রেই আমরা পিআর পদ্ধতির বিপক্ষে। তারা ইশতেহার নিয়ে জনগণের কাছে যাক, ম্যান্ডেট নিয়ে তারা তাদের ভাবনা বাস্তবায়ন করুক।”

জামায়াতসহ কয়েকটি দলের আন্দোলনের প্রস্তুতি সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন,“যারা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে, তাদের দাবি জুলাই সনদ বাস্তবায়ন। বাস্তবায়নের প্রক্রিয়াটি আলোচনাধীন। এমন সময় আন্দোলন করা কতটা উচিত, সেটা জনগণ দেখবে।”

স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার দাবি প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন বলেন, “নির্বাহী আদেশে নয়, বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি সমাধান হোক।”

নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার পরিণাম ভবিষ্যতে ভয়ঙ্কর চর্চায় রূপ নিবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নির্বাহী আদেশে রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করতে গেলে স্বৈরাচারের সঙ্গে যুক্ত ২৮টি দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নির্বাচন কাদের নিয়ে হবে? এটার উদ্দেশ্য এমন হতে পারে যে, নিজেদের অতিরিক্ত সুবিধা নিতে আন্দোলনকারীরা আরো দলের নিষিদ্ধের দাবি জানাতে পারে। এতে জাতীয় ঐক্য বিনষ্ট হবে। এ সূত্র ধরে পতিত শক্তি সুযোগ নেবে।”

স্থিতিশীল সরকার গঠন করতে না পারলে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে আঞ্চলিক নিরাপত্তাও হুমকিতে পড়বে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সালাহউদ্দিন আহমদ।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি এখন ১৮ কোটি মানুষের দাবি: জামায়াত
  • ‘ভোটারদের আস্থা নিশ্চিত করা বিএনপির দায়িত্ব’
  • পটুয়াখালীতে সালিস বৈঠকে অংশ নিলে নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বিএনপি
  • জুলাই সনদের বাস্তবায়নে দেরি হলে জনগণ আবারও রাস্তায় নামবে: জামায়াত নেতা রফিকুল
  • বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে ঐকমত্য না হলে গণভোট ছাড়া উপায় নেই: এবি পার্টি
  • রোহিঙ্গা সমস্যায় রাজনৈতিক সমাধান খুঁজে বের করতে হবে
  • মাঠের জবাব মাঠে দেওয়া হবে: সালাহউদ্দিন 
  • জামায়াত কীভাবে জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলে: আনিসুল ইসলাম মাহমুদ
  • ফরিদপুরে সীমানা নিয়ে ডিসির চিঠি, এলাকাবাসীর ৫ দাবি
  • যমুনা অভিমুখী বেসরকারি প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিল, পুলিশের বাধায় ছত্রভঙ্গ