চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দক্ষিণ চট্টগ্রাম অংশ সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চকরিয়া উপশহরে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা।  এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দক্ষিণ চট্টগ্রাম অংশে পুলিশের টোকেন নিয়ে প্রতিদিন ৮ হাজার অবৈধ  থ্রি-হুইলার, লেগুনা ও ডাম্পার গাড়ি চলে। এসব গাড়ির নেই ফিটনেস, চালকদের নেই লাইসেন্স। অবৈধ গাড়িগুলোর সামনে ও পেছনের গ্লাসে সাঁটানো থাকে বিশেষ সাংকেতিক স্টিকার। পুলিশের দেওয়া এই টোকেন থাকলে এসব গাড়ি ‘রাস্তার রাজা’, কেউ আটকায় না। প্রতিটি গাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট থানা, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় মাসিক টোকেন নিতে হয়। এসব টোকেনে ইংরেজিতে বিশেষ সাংকেতিক অক্ষর লেখা থাকে। 
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিন মাস বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আবার রমরমা টোকেন বাণিজ্য। মহাসড়কে চলা অবৈধ ৮ হাজার গাড়িকে গড়ে দেড় হাজার টাকার টোকেন দিয়ে পুলিশ মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মহাসড়কের ওপর প্রতিটি উপজেলা শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। ফলে লেগুনা, ম্যাজিক, থ্রি-হুইলার, টমটম, নছিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় মহাসড়কে। বিশেষ টোকেন দিয়ে মহাসড়কে চলে নিষিদ্ধ এসব গাড়ি। 
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি। মামলা হয়েছে ১৬টি। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আহত অর্ধশতাধিক। 
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনর্চাজ শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ থ্রি-হুইলার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিষিদ্ধ গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’ 
গত বৃহস্পতিবার সকালে দোহাজারী স্টেশনে পূরবী পরিবহন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। একই দিন বিকেলে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও ঈগল পরিবহন বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ১০-১২ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। দুই চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আব্দুল আউয়াল নামের বাসচালক জানান, অপ্রশস্ত মহাসড়কে ধীরগতির থ্রি-হুইলার ও লেগুনার অবাধ চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
গত বুধবার সকালে দেখা যায়, দোহাজারী স্টেশনের উভয় পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। যেনতেনভাবে যাত্রী ওঠানামা করছে। যানজটে আটকে আছে দূরপাল্লার বাস। সাতকানিয়ার কেরানীহাটে মহাসড়কের দুই পাশে ও বান্দরবান সড়কে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সের 

সামনে দিয়েই চলে এই অবৈধ গাড়ি।  ঠাকুর দিঘি এলাকায়ও দেখা গেছে যেনতেনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ৩০টি সিএনজি অটোরিকশা। পদুয়ার চিত্র ভয়াবহ। মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করে। দূরপাল্লার বাস চলাচল ব্যাহত হয়। মুহূতেই যানজট সৃষ্টি হয়। 
পদুয়ায় দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে স্ট্যান্ড বসিয়ে সিএনজি অটোরিকশার সিরিয়াল দিচ্ছেন দুই ব্যক্তি। সিএনজি অটোরিকশাগুলো চরম্বা এলাকায় যাত্রী আনানেওয়া করে। সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভার আবু কালাম ও মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমাদের মান্থলি টোকেন রয়েছে। তাই আমাদের কোন সমস্যা নেই। হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়।’ চালক মোহাম্মদ রেজাউল জানান, একজনের মাধ্যমে টোকেন নিয়েই মহাসড়কে অবৈধ গাড়ি চালান তিনি।
লোহাগাড়া সদরের বটতলী মোটর স্টেশনের আইস পার্ক ও এমদাদিয়া মার্কেটের সামনে মহাসড়কের উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনার স্টেশন। এসব গাড়ি আইস পার্ক থেকে চকরিয়া ও এমদাদিয়া মার্কেট থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। তাছাড়া, আধুনগর, পদুয়া ও চুনতি বাজারেও মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশার স্টেশন রয়েছে। আজিজনগর, হারবাং, বরইতলী, বানিয়ারছড়া, চিরিঙ্গা ষ্টেশনের চিত্রও একই।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর তিন মাস বন্ধ ছিল এই টোকেন বাণিজ্য। এখন দেদারছে চলছে। নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকরা ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু অবৈধ গাড়ি সমিতির নেতার মাধ্যমে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে বছরের পর বছর। 
অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ দালালের মাধ্যমে প্রতিটি অবৈধ গাড়ি থেকে মাসে এক হাজার টাকা নিয়ে চলাচল করার জন্য টোকেন দেয়। এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে টোকেন বিক্রেতা মহিউদ্দিনকে ফোন করে দুইটি সিএনজি অটোরিকশা চালাতে কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে বলনে, প্রতি গাড়ির জন্য মাসে এক হাজার টাকা দিতে বলে। কোন কারণে পুলিশ গাড়িটি আটক করলে তার নাম বলা বা তাকে ফোন দিতে বলেন মহিউদ্দিন।
অন্যদিকে, পুলিশের হয়ে লেগুনার টোকেন বিক্রি করেন ইয়াছিন। টোকেন কিনেত চেয়ে তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আমি শহরে এসেছি, ১ হাজার ৫০০ টাকা দিলে বিকালে স্টিকার পাবেন।’ দোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চকরিয়ার ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ স্টিকার দেখলে গাড়ি ছেড়ে দেবে বলে তিনি জানান। 
লেগুনা চালক মো.

আবছার বলেন, ‘লোহাগাড়া ও চকরিয়ার মহাসড়কে লেগুনা চালাতে হলে ১ হাজার ৮০০ টাকা দিয়ে টোকেন নিতে হয়। ট্রাফিক ও হাইওয়ে থানা পুলিশ টোকেন দেখলে গাড়ি আটকায় না, মামলাও দেয় না।’
জানা যায়, এসব এলাকায় কাগজপত্রবিহীন ডাম্পার গাড়ি রয়েছে প্রায় আট হাজার। এসব গাড়ির চালকদের লাইসেন্সও নেই। কাগজপত্রও নেই। এ গাড়িগুলো পাহাড়কাটা ও ফসলি জমির মাটি এবং অবৈধ বালু বহন করে। প্রতিটি গাড়িকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়। 
অভিযোগ প্রসঙ্গে লোহাগাড়া ট্রাফিক ইনচার্জ হাসানুজ্জামান হায়দার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চলে এসেছে। প্রত্যেক দিন মামলা দিয়ে গাড়ি আটক করে থানায় পাঠাচ্ছি। যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই, সেগুলো ঠিক করার জন্য মামলা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই।’
সাতকানিয়ার ট্রাফিক ইনচার্জ নূর এ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘নিয়মিত অবৈধ গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে, মামলাও দেওয়া হচ্ছে।’ চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল আমিনও একই কথা বলেন। টোকেন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যেকে আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অব ধ গ ড় অব ধ গ ড় দ র ঘটন এসব গ ড় ও হ ইওয় সব গ ড় এল ক য় র অব ধ য নজট চকর য়

এছাড়াও পড়ুন:

সিনিয়র স্টাফ নার্সের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি প্রকাশ

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অধীন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের ১০ম গ্রেডের ‘সিনিয়র স্টাফ নার্স’ পদের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সময়সূচি প্রকাশ করেছে সরকারি কর্ম কমিশন-পিএসসি। মৌখিক পরীক্ষা বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশন ভবনে (আগারগাঁও, শেরে বাংলা নগর, ঢাকা) অনুষ্ঠিত হবে। মৌখিক পরীক্ষা ২৭ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে। মৌখিক পরীক্ষা শেষ হবে ২২ মে’তে। বিভিন্ন কারণে যাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে, সেই তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে।  আজ সোমবার (২৭ এপ্রিল) পিএসসির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলা হয়েছে।

সিনিয়র স্টাফ নার্সের সংশোধিত সূচি.pdfডাউনলোডআরও পড়ুনবিসিএসে নতুন সিলেবাস, ভারত–শ্রীলঙ্কা–সিঙ্গাপুরের চাকরির পরীক্ষার সিলেবাস নিয়ে কাজ করছে পিএসসি১০ ঘণ্টা আগে

মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে প্রার্থীদের করণীয় সম্পর্কেও জানিয়েছে পিএসসি। এগুলোর মধ্য অন্যতম—

শিক্ষাগত যোগ্যতার সকল মূল/সাময়িক সনদ, প্রবেশপত্র, জাতীয় পরিচয়পত্র, নাগরিকত্ব সনদ এবং চাকরিরত প্রার্থীকে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সিল স্বাক্ষরিত ছাড়পত্রের মূল কপি দাখিল করতে হবে, উল্লিখিত সনদ/কাগজপত্রের মূল কপি ছাড়া মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণ করা হবে না।

মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের মূল আবেদনপত্র অর্থাৎ BPSC Form 5A ( Applicant's Copy) কমিশনের ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে নিম্নোক্ত কাগজপত্র/তথ্যাদির ০১ সেট মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে জমা দিতে হবে : ক. পরীক্ষার প্রবেশপত্র ২ (দুই) কপি; খ. BPSC Form 5A (Applicant's Copy) ০২ (দুই) কপি; গ. সকল শিক্ষাগত যোগ্যতার মূল/সাময়িক সনদের সত্যায়িত ফটোকপি প্রভৃতি।

মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি দেখুন এখানে।

আরও পড়ুনপ্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন এক ধাপ বাড়ানোর উদ্যোগ, ভিন্নমত শিক্ষকদের১ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আলিম পরীক্ষার্থীদের রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিতরণ ৫ দিন
  • জয়পুরহাটে পুকুর নিয়ে প্রভাবশালীদের সঙ্গে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের দ্বন্দ্ব
  • সিনিয়র স্টাফ নার্সের মৌখিক পরীক্ষার সংশোধিত সূচি প্রকাশ