৮ হাজার অবৈধ গাড়ি থেকে কোটি টাকা চাঁদা আদায়
Published: 22nd, March 2025 GMT
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দক্ষিণ চট্টগ্রাম অংশ সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ। এখানে প্রতিনিয়ত ঘটে দুর্ঘটনা। চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চকরিয়া উপশহরে যানজট নিত্যদিনের ঘটনা। এ মহাসড়কে দুর্ঘটনা ও যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ যানবাহনের অবাধ চলাচল। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দক্ষিণ চট্টগ্রাম অংশে পুলিশের টোকেন নিয়ে প্রতিদিন ৮ হাজার অবৈধ থ্রি-হুইলার, লেগুনা ও ডাম্পার গাড়ি চলে। এসব গাড়ির নেই ফিটনেস, চালকদের নেই লাইসেন্স। অবৈধ গাড়িগুলোর সামনে ও পেছনের গ্লাসে সাঁটানো থাকে বিশেষ সাংকেতিক স্টিকার। পুলিশের দেওয়া এই টোকেন থাকলে এসব গাড়ি ‘রাস্তার রাজা’, কেউ আটকায় না। প্রতিটি গাড়ি থেকে সংশ্লিষ্ট থানা, ট্রাফিক ও হাইওয়ে পুলিশকে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় মাসিক টোকেন নিতে হয়। এসব টোকেনে ইংরেজিতে বিশেষ সাংকেতিক অক্ষর লেখা থাকে।
জানা যায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর তিন মাস বন্ধ থাকলেও বর্তমানে আবার রমরমা টোকেন বাণিজ্য। মহাসড়কে চলা অবৈধ ৮ হাজার গাড়িকে গড়ে দেড় হাজার টাকার টোকেন দিয়ে পুলিশ মাসে এক কোটি ২০ লাখ টাকা চাঁদা আদায় করে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সরেজমিন দেখা যায়, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মহাসড়কের ওপর প্রতিটি উপজেলা শহরে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার স্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। ফলে লেগুনা, ম্যাজিক, থ্রি-হুইলার, টমটম, নছিমন, ব্যাটারিচালিত রিকশা-অটোরিকশাসহ তিন চাকার গাড়ি দাপিয়ে বেড়ায় মহাসড়কে। বিশেষ টোকেন দিয়ে মহাসড়কে চলে নিষিদ্ধ এসব গাড়ি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাসে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৬৩টি। মামলা হয়েছে ১৬টি। দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১৪ জন। আহত অর্ধশতাধিক।
দোহাজারী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনর্চাজ শুভরঞ্জন চাকমা বলেন, ‘মহাসড়কে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা, ভটভটি ও ইজিবাইকসহ থ্রি-হুইলার চলাচল সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে নিষিদ্ধ গাড়ির বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার সকালে দোহাজারী স্টেশনে পূরবী পরিবহন বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ব্যাটারিচালিত রিকশার চালক ও দুই শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলেই নিহত হন। একই দিন বিকেলে লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় কাভার্ডভ্যান ও ঈগল পরিবহন বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। এতে ১০-১২ জন যাত্রী গুরুতর আহত হন। দুই চালকের অবস্থা আশঙ্কাজনক। আব্দুল আউয়াল নামের বাসচালক জানান, অপ্রশস্ত মহাসড়কে ধীরগতির থ্রি-হুইলার ও লেগুনার অবাধ চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
গত বুধবার সকালে দেখা যায়, দোহাজারী স্টেশনের উভয় পাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা। যেনতেনভাবে যাত্রী ওঠানামা করছে। যানজটে আটকে আছে দূরপাল্লার বাস। সাতকানিয়ার কেরানীহাটে মহাসড়কের দুই পাশে ও বান্দরবান সড়কে পাঁচ শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকে। ট্রাফিক পুলিশ বক্সের
সামনে দিয়েই চলে এই অবৈধ গাড়ি। ঠাকুর দিঘি এলাকায়ও দেখা গেছে যেনতেনভাবে দাঁড়িয়ে থাকে ৩০টি সিএনজি অটোরিকশা। পদুয়ার চিত্র ভয়াবহ। মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় শতাধিক সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করে। দূরপাল্লার বাস চলাচল ব্যাহত হয়। মুহূতেই যানজট সৃষ্টি হয়।
পদুয়ায় দেখা গেছে, মহাসড়কের পাশে স্ট্যান্ড বসিয়ে সিএনজি অটোরিকশার সিরিয়াল দিচ্ছেন দুই ব্যক্তি। সিএনজি অটোরিকশাগুলো চরম্বা এলাকায় যাত্রী আনানেওয়া করে। সিএনজি অটোরিকশার ড্রাইভার আবু কালাম ও মোহাম্মদ আলম বলেন, ‘আমাদের মান্থলি টোকেন রয়েছে। তাই আমাদের কোন সমস্যা নেই। হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশকে প্রতি মাসে চাঁদা দিতে হয়।’ চালক মোহাম্মদ রেজাউল জানান, একজনের মাধ্যমে টোকেন নিয়েই মহাসড়কে অবৈধ গাড়ি চালান তিনি।
লোহাগাড়া সদরের বটতলী মোটর স্টেশনের আইস পার্ক ও এমদাদিয়া মার্কেটের সামনে মহাসড়কের উপর গড়ে উঠেছে অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনার স্টেশন। এসব গাড়ি আইস পার্ক থেকে চকরিয়া ও এমদাদিয়া মার্কেট থেকে কেরানীহাট পর্যন্ত যাত্রী পরিবহন করে। তাছাড়া, আধুনগর, পদুয়া ও চুনতি বাজারেও মহাসড়কে সিএনজি অটোরিকশার স্টেশন রয়েছে। আজিজনগর, হারবাং, বরইতলী, বানিয়ারছড়া, চিরিঙ্গা ষ্টেশনের চিত্রও একই।
জানা যায়, ৫ আগস্টের পর তিন মাস বন্ধ ছিল এই টোকেন বাণিজ্য। এখন দেদারছে চলছে। নামসর্বস্ব পত্রিকা ও অনিবন্ধিত অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকরা ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগসাজশে এ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু কিছু অবৈধ গাড়ি সমিতির নেতার মাধ্যমে পুলিশকে ম্যানেজ করে চলছে বছরের পর বছর।
অভিযোগ রয়েছে, হাইওয়ে পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ দালালের মাধ্যমে প্রতিটি অবৈধ গাড়ি থেকে মাসে এক হাজার টাকা নিয়ে চলাচল করার জন্য টোকেন দেয়। এই প্রতিবেদক পরিচয় গোপন রেখে টোকেন বিক্রেতা মহিউদ্দিনকে ফোন করে দুইটি সিএনজি অটোরিকশা চালাতে কত টাকা লাগবে জানতে চাইলে বলনে, প্রতি গাড়ির জন্য মাসে এক হাজার টাকা দিতে বলে। কোন কারণে পুলিশ গাড়িটি আটক করলে তার নাম বলা বা তাকে ফোন দিতে বলেন মহিউদ্দিন।
অন্যদিকে, পুলিশের হয়ে লেগুনার টোকেন বিক্রি করেন ইয়াছিন। টোকেন কিনেত চেয়ে তাকে ফোন করলে তিনি বলেন, ‘আমি শহরে এসেছি, ১ হাজার ৫০০ টাকা দিলে বিকালে স্টিকার পাবেন।’ দোহাজারি, সাতকানিয়া, লোহাগাড়া ও চকরিয়ার ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশ স্টিকার দেখলে গাড়ি ছেড়ে দেবে বলে তিনি জানান।
লেগুনা চালক মো.
জানা যায়, এসব এলাকায় কাগজপত্রবিহীন ডাম্পার গাড়ি রয়েছে প্রায় আট হাজার। এসব গাড়ির চালকদের লাইসেন্সও নেই। কাগজপত্রও নেই। এ গাড়িগুলো পাহাড়কাটা ও ফসলি জমির মাটি এবং অবৈধ বালু বহন করে। প্রতিটি গাড়িকে সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ, ট্রাফিক পুলিশ ও হাইওয়ে পুলিশকে মাসে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়।
অভিযোগ প্রসঙ্গে লোহাগাড়া ট্রাফিক ইনচার্জ হাসানুজ্জামান হায়দার বলেন, ‘৫ আগস্টের পর গ্রাম-গঞ্জের প্রায় সিএনজি অটোরিকশা মহাসড়কে চলে এসেছে। প্রত্যেক দিন মামলা দিয়ে গাড়ি আটক করে থানায় পাঠাচ্ছি। যেসব গাড়ির কাগজপত্র ঠিক নেই, সেগুলো ঠিক করার জন্য মামলা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দিই।’
সাতকানিয়ার ট্রাফিক ইনচার্জ নূর এ আলম ছিদ্দিক বলেন, ‘নিয়মিত অবৈধ গাড়ি জব্দ করা হচ্ছে, মামলাও দেওয়া হচ্ছে।’ চিরিঙ্গা হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ আরিফুল আমিনও একই কথা বলেন। টোকেন দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে প্রত্যেকে আর্থিক লেনদেনের কথা অস্বীকার করেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অব ধ গ ড় অব ধ গ ড় দ র ঘটন এসব গ ড় ও হ ইওয় সব গ ড় এল ক য় র অব ধ য নজট চকর য়
এছাড়াও পড়ুন:
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ৩ পুলিশ নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলায় তিন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন আরো দুই পুলিশ।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর ২টার কিছু পর এক পারিবারিক বিরোধের তদন্তে গিয়ে হামলার মুখে পড়ে পুলিশ। খবর বিবিসির।
আরো পড়ুন:
শেরপুরে পুলিশের উপর হামলা: থানায় মামলা, গ্রেপ্তার ৪
ভাঙ্গা উপজেলা পরিষদ ও থানায় হামলা, ভাঙচুর-আগুন
পেনসিলভানিয়া স্টেট পুলিশের কমিশনার কর্নেল ক্রিস্টোফার প্যারিস জানান, অভিযুক্ত বন্দুকধারী পুলিশের গুলিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছে।
গুলির ঘটনার পর ইয়র্ক কাউন্টির নর্থ কোডোরাস টাউনশিপের স্প্রিং গ্রোভ এলাকার একটি স্কুল জেলা সাময়িকভাবে ‘শেল্টার ইন প্লেস’ ঘোষণা করে। তবে পরে জানানো হয়, স্কুল কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জনসাধারণের জন্য বর্তমানে কোনো সক্রিয় হুমকি নেই। এ ঘটনা ঘটে ফিলাডেলফিয়া থেকে প্রায় ১০০ মাইল (১৬০ কিমি) পূর্বে অবস্থিত ইয়র্ক কাউন্টির এক গ্রামীণ এলাকায়।
তারা বলছে, আগের দিন শুরু হওয়া একটি তদন্তের অংশ হিসেবে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েছিলেন। তবে তদন্ত চলমান থাকায় বিস্তারিত কিছু প্রকাশ করা হয়নি।
পেনসিলভানিয়ার গভর্নর জোশ শাপিরো বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তিনি বলেন, “আমরা তিনজন মহামূল্যবান প্রাণ হারালাম, যারা এই দেশকে সেবা দিয়েছেন। এই ধরনের সহিংসতা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। সমাজ হিসেবে আমাদের আরো ভালো করতে হবে।”
নিহত তিন কর্মকর্তার সম্মানে গভর্নর শাপিরো রাজ্যের সব সরকারি ভবন ও স্থাপনায় পতাকা অর্ধনমিত রাখার নির্দেশ দেন।
ঢাকা/ইভা