তখন বাদশাহ ছিলেন মনসুর বিল্লাহ। সে সময়ের বিখ্যাত সাধক জাফর সাদেকের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে বাদশাহ নিজের জন্য তাকে অকল্যাণকর মনে করলেন। বাদশাহ আশঙ্কা করলেন হয়তো এই সাদেক একদিন তার রাজত্বের দাবিদার হয়ে বসবেন।
তাই একরাতে তিনি তার মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘যাও, জাফর সাদেককে ডেকে নিয়ে আসো, আমি তাকে হত্যা করব।’ বাদশাহর আদেশ শুনে মন্ত্রী চমকে উঠলেন। সবিনয়ে বললেন, ‘তিনি নিরীহ লোক, পৃথিবীর সব ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে নির্জনে বসে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন। তা ছাড়া তাঁকে দিয়ে তো আমি আপনার কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছি না। তাহলে তাকে হত্যা করে আপনার কী লাভ হবে, জাহাঁপনা?’
মন্ত্রীর কথায় বাদশাহের আদেশের বিন্দুমাত্র নড়চড় হলো না। অগত্যা মন্ত্রী বেড়িয়ে পড়েন সাদেককে ধরে আনার জন্য। এদিকে বাদশাহ তাঁর দাসদের উদ্দেশ্য করে বলে রাখলেন, ‘সাদেককে দরবারে হাজির করার পর তোমরা আমার দিকে খেয়াল করবে। আমি তখন আমার মাথার মুকুট নামিয়ে ফেলব, আর তোমরা ঠিক এই সময় তাকে হত্যা করবে।’
আরও পড়ুনজালালুদ্দিন রুমির ‘মসনভি’তে কোরআনের মর্মবাণী২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪জাফর সাদেক যখন দরবারে উপস্থিত হলেন, হঠাৎ মনসুর তাকে দেখেই সিংহাসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তার চেহারায় ভয়ার্ত ছাপ ফুটে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি সাদেকের হাত ধরে সসম্মানে নিজ সিংহাসনে এনে বসালেন। এরপর নিজে তার পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসলেন। দাসরা অবাক হয়ে পড়ল, বাদশাহ কী করতে চেয়েছিলেন আর এখন কী করছেন! এরপর মনসুর সাদেকের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কী প্রয়োজন, আমাকে বলুন, আমি তা পূরণ করব।’
সাদেক উত্তর দিলেন, ‘আমার কোনো প্রয়োজন নেই, শুধু আপনার কাছে অনুরোধ, এভাবে ডেকে এনে আমার সাধনায় বিঘ্ন ঘটাবেন না।’
বাদশাহ তাকে সসম্মানে বিদায় দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে প্রচণ্ড কাঁপন অনুভব করলেন। এমনকি তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তিন দিন কেটে গেল। জ্ঞান ফিরে আসার পর একসময় মন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জাহাঁপনা, হঠাৎ আপনার কি হয়েছিল? কেন কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারালেন?’
মনসুর বললেন, ‘জাফর সাদেক যখন আমার দরবারে প্রবেশ করলেন, দেখলাম তার পেছনে একটি বৃহদাকার অজগর সাপ হাঁ করে আছে, যার একটি চোয়াল সিংহাসনের নিচে ও আরেকটি সিংহাসনের ওপরে। আর সেটি আমাকে বলল, ‘সাবধান মনসুর, যদি জাফর সাদেকের কোনো ক্ষতি করতে চেষ্টা করো, তবে তোমার সিংহাসনসহ তোমাকে গিলে ফেলব।’ ওই ভয়ংকর সাপের ভয়ে আমার হুঁশ ছিল না। আমি তখন কী বলেছি কিছুই আমার মনে নেই। শুধু এতটুকু মনে আছে, আমি তাকে বিনয় ও সম্মান দেখিয়ে বিদায় জানিয়েই সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়েছি।’
স্রষ্টার সাধনায় নিমগ্ন ব্যক্তিকে স্রষ্টাই সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।
আরও পড়ুন বুদ্ধিমান এক বালকের ঘটনা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: জ ফর স দ ক আপন র ক মন ত র ব দশ হ করল ন মনস র
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’