Prothomalo:
2025-05-01@03:27:16 GMT

সাধকের প্রাপ্তি

Published: 24th, March 2025 GMT

তখন বাদশাহ ছিলেন মনসুর বিল্লাহ। সে সময়ের বিখ্যাত সাধক জাফর সাদেকের অসাধারণ ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয়তা ও প্রভাব-প্রতিপত্তি দেখে বাদশাহ নিজের জন্য তাকে অকল্যাণকর মনে করলেন। বাদশাহ আশঙ্কা করলেন হয়তো এই সাদেক একদিন তার রাজত্বের দাবিদার হয়ে বসবেন।

 তাই একরাতে তিনি তার মন্ত্রীকে ডেকে বললেন, ‘যাও, জাফর সাদেককে ডেকে নিয়ে আসো, আমি তাকে হত্যা করব।’ বাদশাহর আদেশ শুনে মন্ত্রী চমকে উঠলেন। সবিনয়ে বললেন, ‘তিনি নিরীহ লোক, পৃথিবীর সব ভোগ-বিলাস ত্যাগ করে নির্জনে বসে ইবাদত-বন্দেগিতে মগ্ন থাকেন। তা ছাড়া তাঁকে দিয়ে তো আমি আপনার কোনো ক্ষতির সম্ভাবনা দেখছি না। তাহলে তাকে হত্যা করে আপনার কী লাভ হবে, জাহাঁপনা?’

 মন্ত্রীর কথায় বাদশাহের আদেশের বিন্দুমাত্র নড়চড় হলো না। অগত্যা মন্ত্রী বেড়িয়ে পড়েন সাদেককে ধরে আনার জন্য। এদিকে বাদশাহ তাঁর দাসদের উদ্দেশ্য করে বলে রাখলেন, ‘সাদেককে দরবারে হাজির করার পর তোমরা আমার দিকে খেয়াল করবে। আমি তখন আমার মাথার মুকুট নামিয়ে ফেলব, আর তোমরা ঠিক এই সময় তাকে হত্যা করবে।’

আরও পড়ুনজালালুদ্দিন রুমির ‘মসনভি’তে কোরআনের মর্মবাণী২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪

জাফর সাদেক যখন দরবারে উপস্থিত হলেন, হঠাৎ মনসুর তাকে দেখেই সিংহাসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেলেন। তার চেহারায় ভয়ার্ত ছাপ ফুটে উঠল। কিছুক্ষণের জন্য তিনি স্তম্ভিত হয়ে গেলেন। তিনি সাদেকের হাত ধরে সসম্মানে নিজ সিংহাসনে এনে বসালেন। এরপর নিজে তার পায়ের কাছে নতজানু হয়ে বসলেন। দাসরা অবাক হয়ে পড়ল, বাদশাহ কী করতে চেয়েছিলেন আর এখন কী করছেন! এরপর মনসুর সাদেকের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার কী প্রয়োজন, আমাকে বলুন, আমি তা পূরণ করব।’

 সাদেক উত্তর দিলেন, ‘আমার কোনো প্রয়োজন নেই, শুধু আপনার কাছে অনুরোধ, এভাবে ডেকে এনে আমার সাধনায় বিঘ্ন ঘটাবেন না।’

 বাদশাহ তাকে সসম্মানে বিদায় দিলেন এবং সঙ্গে সঙ্গে তার শরীরে প্রচণ্ড কাঁপন অনুভব করলেন। এমনকি তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন। তিন দিন কেটে গেল। জ্ঞান ফিরে আসার পর একসময় মন্ত্রী তাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘জাহাঁপনা, হঠাৎ আপনার কি হয়েছিল? কেন কাঁপতে কাঁপতে জ্ঞান হারালেন?’

 মনসুর বললেন, ‘জাফর সাদেক যখন আমার দরবারে প্রবেশ করলেন, দেখলাম তার পেছনে একটি বৃহদাকার অজগর সাপ হাঁ করে আছে, যার একটি চোয়াল সিংহাসনের নিচে ও আরেকটি সিংহাসনের ওপরে। আর সেটি আমাকে বলল, ‘সাবধান মনসুর, যদি জাফর সাদেকের কোনো ক্ষতি করতে চেষ্টা করো, তবে তোমার সিংহাসনসহ তোমাকে গিলে ফেলব।’ ওই ভয়ংকর সাপের ভয়ে আমার হুঁশ ছিল না। আমি তখন কী বলেছি কিছুই আমার মনে নেই। শুধু এতটুকু মনে আছে, আমি তাকে বিনয় ও সম্মান দেখিয়ে বিদায় জানিয়েই সঙ্গে সঙ্গে জ্ঞান হারিয়েছি।’

 স্রষ্টার সাধনায় নিমগ্ন ব্যক্তিকে স্রষ্টাই সকল বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।

আরও পড়ুন বুদ্ধিমান এক বালকের ঘটনা ১৪ জানুয়ারি ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: জ ফর স দ ক আপন র ক মন ত র ব দশ হ করল ন মনস র

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ