বিপদেই পড়ে গেছেন বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক। রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর একের পর এক ঝামেলা লেগেই আছে তাঁর জীবনে। টেসলার শেয়ারের দাম কমছে, তাতে কমছে নিজের সম্পদমূল্য। আবার বিক্রয়কেন্দ্রের সামনে মানুষ বিক্ষোভও করছে। পাশাপাশি এবার মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্সের অন্তর্ভুক্ত স্যাটেলাইট ইন্টারনেট কোম্পানি স্টারলিংকের ব্যবসাও মার খেতে শুরু করেছে। ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস–এর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্পের জমানায় মাস্ক কেন্দ্রীয় সরকারের আরও কাজ পাবেন এমন আশা রয়েছে। এতে ইলন মাস্কের ব্যবসা আরও ফুলে–ফেঁপে উঠবে—এমনটাই ধারণা ছিল সবার। পাশাপাশি বিশ্বের নতুন বাজারেও যাওয়ার কথা স্টারলিংকের। বর্তমানে তুরস্ক, মরক্কো ও বাংলাদেশের সঙ্গে স্টারলিংকের ব্যবসায়িক আলোচনা হচ্ছে। ভারতে ইতিমধ্যে দুটি কোম্পানির সঙ্গে তাদের চুক্তি হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে আরও প্রায় ১০০ কোটি মানুষের দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়ার কথা ইলন মাস্কের। ইতিমধ্যে হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা চালু করা হয়েছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের আরও কিছু প্রোগ্রামও স্টারলিংকের পাওয়ার কথা। 

কিন্তু রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ায় ইলন মাস্কের কোম্পানির বৈশ্বিক সম্প্রসারণ ব্যাহত হচ্ছে। এখন যে দেশেই ইলন মাস্কের কোম্পানি চুক্তি করতে যাক না কেন, তারা এখন রাজনৈতিকভাবেও সেটি বিবেচনা করবে। ইতিমধ্যে যেসব জায়গায় স্টারলিংক ব্যবসা করছে, সেখানেও তারা প্রত্যাঘাতের সম্মুখীন হচ্ছে। 

সম্প্রতি কানাডার একটি প্রদেশ কানাডীয় পণ্যের মার্কিন শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে স্টারলিংকের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছে। ইউরোপের নেতারা এত দিন ইউক্রেনে স্টারলিংকের স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহারের ওকালতি করতেন। কিন্তু সেই ইউরোপের নেতাদের রীতিমতো তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছেন ইলন মাস্ক। ফলে তাঁরা এখন বিকল্প খুঁজছে। ডয়চে ব্যাংকের বিশ্লেষক এডিসন উ বলেছেন, ভূরাজনৈতিক কারণে স্যাটেলাইট যোগাযোগের জগতে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে গেছে। স্টারলিংক এই জগতের সেরা; কিন্তু তারাই একমাত্র সেবাদাতা নয়। 

ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, টেসলায় থাকা তাঁর শেয়ারের বাজারমূল্য ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি মার্কিন ডলারে নেমেছে। তবে চলতি বছর স্টারলিংকের রাজস্ব আয় অনেকটা বাড়বে বলে মনে করে মর্গ্যান স্ট্যানলি। চলতি বছর স্টারলিংক ১ হাজার ৬৩০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করবে, যা ২০২৪ সালের চেয়ে ৭৪ শতাংশ বেশি। একই সঙ্গে তাদের গ্রাহকসংখ্যাও  দ্বিগুণ হবে। অন্যদিকে স্পেস এক্স রকেটের ব্যবসা থেকে চলতি বছর ৫৮০ কোটি ডলার রাজস্ব আয় করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ বেশি। স্টারলিংক বর্তমানে বিশ্বের ১১৮টি দেশে ৭ হাজার ছোট আকৃতির স্যাটেলাইট স্থাপন করেছে।

স্টারলিংকের সুবিধা হলো, কোম্পানির রাজস্ব আয়ের বড় একটি অংশ আসে মার্কিন ফেডারেল সরকারের সঙ্গে বিভিন্ন চুক্তি থেকে। দেশটির ফেডারেল সরকারের সঙ্গে স্টারলিংকের বর্তমানে ৩৫০ কোটি ডলারের ৩৯টি চুক্তি রয়েছে। আবার দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে তাদের বেশ কিছু চুক্তি আছে। 

যেখানে যেখানে বিপদে স্টারলিংক

ইলন মাস্ক বিশ্বের শীর্ষ ধনী। শুধু যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে ব্যবসা করলেই তার চলবে না। বিশ্বের অন্যান্য দেশের সরকার ও কোম্পানির সঙ্গেও তাঁকে ব্যবসা করতে হবে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে তিনি ঠিক সেখানেই মার খাচ্ছেন। কানাডার অন্টারিও প্রদেশের সঙ্গে ইতিমধ্যে ১০ কোটি ডলারের একটি চুক্তি বাতিল হয়েছে।  দক্ষিণ আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আইনের বিরোধিতার জেরে সেখানেও স্টারলিংকের অনুমোদন ঝুলে আছে। 

ব্রাজিল সরকারের সঙ্গেও বিবাদে জড়িয়েছেন  ইলন মাস্ক। ইতালির সঙ্গে ১৫০ কোটি ডলারের চুক্তি হওয়ার কথা স্টারলিংকের। কিন্তু ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা বন্ধ ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় বন্ধের জেরে সেই চুক্তি নিয়েও ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। 

আরেকটি ক্ষেত্র হলো ইউক্রেন। দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা তথ্য ও অর্থ আর স্টারলিংকের ইন্টারনেট সেবা দিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। মাস্ক সম্প্রতি এক্সে বলেছেন, ইউক্রেনের টার্মিনাল বন্ধ করে দিলে ইউক্রেনের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। এই ঘটনায় পোল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী রাদোস্ল সিকর্স্কি বলেছেন, যদি সে রকম হয়, তাহলে তারা অন্যের কাছ থেকে ইন্টারনেট নেবে। যাদের ওপর নির্ভর করা যায় না, তাদের কাছ থেকে ইন্টারনেট নেওয়া হবে না। যদিও মাস্ক বলেছেন, বাস্তবে সেটা হবে না—ব্যবসাকে রাজনৈতিক দর-কষাকষির হাতিয়ার হতে দেবেন না তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইলন ম স ক র স য ট ল ইট ক র ব যবস র জন ত ক ইউক র ন বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ