সন্দ্বীপে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করে কলঙ্কমুক্ত হলাম: প্রধান উপদেষ্টা
Published: 24th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামের দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে এতোদিন নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকাকে লজ্জার বলে মন্তব্য করে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘একটি নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনের মাধ্যমে আজ সে কলঙ্ক থেকে মুক্ত হলাম।’
সোমবার দুপুরে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়ি ও সন্দ্বীপের গুপ্তছড়া নৌপথে ফেরি চলাচল উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
সন্দ্বীপ উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টা। অনুষ্ঠানে ৬ জন উপদেষ্টা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘অবশেষে চট্টগ্রামের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সন্দ্বীপের একটি নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন হলো। যেটি ছিল না। এটি আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। সন্দ্বীপের এতগুলো মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর অতিক্রম করতে হয় ডিঙ্গির মতো নৌকা দিয়ে। এটি খুবই লজ্জার বিষয়। একটি সুন্দর সুস্থ পরিবেশ কেন আমরা এতদিন করতে পারলাম না, এটা বুঝে আসে না। আজ সবার প্রচেষ্টায় এ লজ্জা থেকে বাঁচলাম। একটা নিরাপদ যোগাযোগ স্থাপিত হলো।’
ড.
তিনি বলেন, ‘সন্দ্বীপের এ অগ্রযাত্রা আজ শুরু হলো, আরও সুন্দর হবে। সন্দ্বীপ যাওয়ার কথা বললে যেন মানুষ ভয় না করে। বিপদের মধ্যে পড়তে যাচ্ছি এমন যেন ভয় না ধরে। শুধু নিজেরা যাবো না। এখন বন্ধু-বান্ধব দেশ-বিদেশ থেকে আসবে তাদের সবাইকে নিয়ে ওখানে যাবো। ফুর্তি করবো। এটি একটি রিসোর্ট দ্বীপ হবে। এখানে আনন্দ-উৎসব করার জন্য সবাই আসবে।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্দ্বীপের লোক আমেরিকাজুড়ে আছে। নিউইয়র্ক তো সন্দ্বীপের লোকে ভর্তি হয়ে আছে। তারা যখন দেশে আসে, তখন সবাই সাবধান করে দেয়। তারা এখন তাদের বাড়ি-ঘর ওখানকার বন্ধু-বান্ধবদের দেখাতে নিয়ে আসবে। গৌরব অনুভব করবে, চট্টগ্রামে যা পাওয়া যায়, তার চেয়ে সন্দ্বীপে বেশি পাওয়া যায়। আপনাদের সে সুযোগ আছে। আপনারা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠান, সে রেমিট্যান্সের একটা ক্ষুদ্র অংশ ব্যয় করে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা যেতো।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্বীপের মানুষের জীবনযাত্রা অনেক কঠিন। অনেক ঝড়ঝাপ্টা মোকাবিলা করে আপনাদের টিকে থাকতে হয়। আমি এই এলাকারই মানুষ। আপনাদের জীবন আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি। সরাসরি গাড়ি চলাচলের কোনও ব্যবস্থা ছিল না। অ্যাম্বুলেন্স না চলার কারণে অনেক রোগী সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে রাস্তায় মারা যায়। কী দুঃখের কথা! আমরা সভ্যজগতে আছি। যাতায়াতের অভাবে নিরাপদে একজন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারছি না।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘সন্দ্বীপকে নৌবন্দর ঘোষণা, কুমিরা-গুপ্ত ছড়া ঘাটকে উন্মুক্ত করা, ঢাকা-কুমিরা বাস চালু করা, ফেরিঘাট এলাকার সংযোগ সড়ক নির্মাণ ও নৌপথ নিয়মিত ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এই ছোট ছোট উদ্যোগগুলো সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি কমিয়ে আনবে। এটি আমরা আশা করবো। সন্দ্বীপের প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে বিশাল ভূমিকা রেখেছে। আমি আপনাদের নিজ নিজ উপজেলার উন্নয়নে কাজ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘সন্দ্বীপে যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকা অত্যন্ত অন্যায় কাজ হয়েছিল অতীতে। কিছু মানুষ এককভাবে মানুষগুলোকে জিম্মি করে রেখেছিল। এটা কোস্টাল এরিয়া, এটা টেম্পরারি। হয়ত দুমাস পরে এখানে সিট্রাক দিতে হবে। কোস্টাল ফেরি আসতে হবে। কোস্টাল ফেরি ছাড়া এখানে রেগুলার দিতে পারবো না, কারণ দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকবে।’
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘আমরা খুশি যে সন্দ্বীপে ফেরি চালু হয়েছে। মনে রাখতে হবে এটি একটি দুরূহ প্রকল্প। এটি যে এতোদিন হয়নি এটাই মূল কারণ। বাংলাদেশে সামুদ্রিক ফেরি চলাচলের অভিজ্ঞতা নেই। অসাধ্য সাধন হয়েছে। প্রকল্পটি আমার ব্যক্তিগত নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের সাফল্য এবং সন্দ্বীপের মানুষের অর্জন হিসেবে বিবেচিত হবে। সন্দ্বীপের জনগণ এই প্রকল্পের মালিকানা গ্রহণ করবেন এবং এই ঘাটের সুবিধাসমূহ যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য সজাগ দৃষ্টি রাখবেন।’
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘এখানে মানুষকে আয়োজন করে নিয়ে আসতে হয়নি, নিজেরাই চলে এসেছেন। এটাই অন্তর থেকে আসা, এটাই আসল উন্নয়ন। যে উন্নয়ন মানুষের মনের মধ্যে ছাপ ফেলে। সাত মাসের মধ্যে এ কাজটা করা অসম্ভবকে সম্ভব করা, নিজের নাড়ির টানে, মাটির টানে এটা করা সম্ভব হয়েছে।’
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিস ফরিদা আখতার বলেন, ‘আপনাদের অনেক দিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমাদের লজ্জা যে গত ৫০ বছরে হয়নি, যেটা ৭ মাসে করা সম্ভব হয়েছে। সন্দ্বীপকে কেন বিচ্ছিন্ন রাখা হয়েছে এটার উত্তর পেতে হবে।’
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায়, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যান কমডোর আরিফ আহমেদ মোস্তফা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র পদ য গ য গ ব যবস থ অন ষ ঠ ন ম হ ম মদ আপন দ র
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে টেক্সটাইল কারখানায় গ্যাসের মিটার বিস্ফোরণে চারজন দগ্ধ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে একটি টেক্সটাইল কারখানায় গ্যাসের মিটার বিস্ফোরণ থেকে অগ্নিকাণ্ডে চার নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে তিনজনের শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। আজ বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলার রূপসী কাজীপাড়া এলাকার জৈনপুরী আশরাফিয়া টেক্সটাইল কারখানায় (মঞ্জু টেক্সটাইল) এ ঘটনা ঘটে।
নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন এসব তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, মে দিবসের কারণে কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ। এ জন্য লাইনে গ্যাসের উচ্চ চাপ সৃষ্টি হয়ে মিটারে বিস্ফোরণ হয়। সেখান থেকে আগুন ধরে চারজন নিরাপত্তা প্রহরী দগ্ধ হয়েছেন। ফায়ার সার্ভিস পৌঁছানোর আগেই কারখানার লোকজন ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নিভিয়ে ফেলেন।
এ ঘটনায় দগ্ধ আবদুল হান্নান (৫০), কবির হোসেন (৪৫) ও সাইফুল ইসলামকে (২৫) রাজধানীর জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। দগ্ধ অন্যজনের নাম জানা যায়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
হাসপাতালের আবাসিক সার্জন শাওন বিন রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনায় দগ্ধ চারজনকে হাসপাতালে আনা হয়। আঘাত গুরুতর না হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে একজনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি তিনজনের শরীরের ৩৪ থেকে ৫৩ শতাংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের শ্বাসনালি পুড়ে যাওয়ায় অবস্থা আশঙ্কাজনক।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বলেন, রাতের ডিউটি (দায়িত্ব) শেষে সকাল আটটার দিকে শ্রমিকেরা কারখানা ছেড়ে চলে যান। এর কিছুক্ষণ পর তিতাস গ্যাস সংযোগের আরএমএস কক্ষে বিকট শব্দে একটি দেয়াল ধসে পড়ে এবং আগুন ধরে যায়। তখনই চারজন দগ্ধ হন। পরে কারখানার লোকজন ও স্থানীয় লোকজন মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন।
ঘটনাটি ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ দাবি করে কারখানার মালিক মঞ্জুরুল হক ভূঁইয়া বলেন, ঘটনার পর আপাতত কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। শ্রমিকদের সব চিকিৎসার ব্যয় কারখানা থেকে বহন করা হবে। তাঁদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।