শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার চর্চার জন্য আটক বেলুচ মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচ ও অন্যান্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে লন্ডনভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ দেওয়া এক পোস্টে সংস্থাটি জানায়, শনিবার থেকে মাহরাং বালুচকে বেআইনিভাবে আটক রাখা হয়েছে এবং তাকে তার আইনজীবী ও পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, বেলুচিস্তানে নির্বিচারে গ্রেফতার ও আটক বৃদ্ধির ঘটনা গভীর উদ্বেগের বিষয়।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষের উচিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার চর্চার জন্য আটক মাহরাং বালুচ এবং অন্যান্যদের অবিলম্বে মুক্তি দেওয়া। পাশাপাশি বেলুচ কর্মীদের বেআইনিভাবে আটক ও হয়রানি বন্ধ করা উচিত।

জাতিসংঘের মানবাধিকার রক্ষাকর্মীদের বিশেষ দূত ম্যারি ললরও মাহরাং বালুচের গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, মাহরাংসহ অনেক মানবাধিকার কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ মানবাধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুতর হুমকি সৃষ্টি করছে। 

শুক্রবার পাকিস্তানের কোয়েটায় বেলুচ বিক্ষোভকারীদের ওপর পুলিশ টিয়ার গ্যাস, জলকামান ও রাবার বুলেট ব্যবহার করে। সংঘর্ষের ঘটনায় এক বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে জানা গেছে।

এ বিক্ষোভ থেকেই বিশিষ্ট মানবাধিকার কর্মী মাহরাং বালুচকে আটক করা হয়। পরে তার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ।

পুলিশ অভিযোগ করেছে, মাহরাং বালুচসহ আরও ১৫০ জনকে সন্ত্রাসবিরোধী আইন (এটিএ) এবং পাকিস্তান দণ্ডবিধির (পিপিসি) বিভিন্ন ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে সহিংসতায় উসকানি, মর্গ থেকে জোরপূর্বক মৃতদেহ নেওয়া এবং রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শনিবার সকালে মাহরাং বালুচসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করে কোয়েটা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়

২০০৯ সালে করাচির একটি হাসপাতালের বাইরে থেকে তার বাবা গাফফার লঙ্গোভে নিখোঁজ হওয়ার পর মানবাধিকার লড়াইয়ে নামেন মাহরাং বালুচ। তখন তিনি ছিলেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রী। বাবার মুক্তির দাবিতে কোয়েটা প্রেস ক্লাবের সামনে স্কুলের বই পুড়িয়ে প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি।

২০১১ সালে তার বাবার ছিন্নভিন্ন মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে তার ভাইকেও ২০১৭ সালে অপহরণ করা হয়। এসব ঘটনার পর মানবাধিকার রক্ষায় সক্রিয়ভাবে কাজ শুরু করেন মাহরাং।

২০১৯ সালে তিনি বেলুচিস্তান ইয়েকজেঠি কমিটি (বিওয়াইসি) গঠন করেন এবং নিরুদ্দেশ, নির্বিচারে খুন হওয়া ব্যক্তিদের পরিবারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি বেলুচ রেজিস্ট্যান্স মুভমেন্টের (বিআরএম) সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন।

মানবাধিকার রক্ষায় অগ্রণী ভূমিকার জন্য ২০২৪ সালে টাইম ম্যাগাজিনের ‘টাইম-১০০’ তালিকায় মাহরাং বালুচের নাম স্থান পায়। বেলুচিস্তানে দমনপীড়নের বিরুদ্ধে সোচ্চার এই কর্মী আন্তর্জাতিক মহলে প্রশংসিত হয়েছেন।

মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দাবি, পাকিস্তানি কর্তৃপক্ষ যেন অবিলম্বে মাহরাং বালুচ এবং অন্যান্য বন্দিদের মুক্তি দেয় এবং শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার নিশ্চিত করে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার

রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।

গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।

সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।

ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।

অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ