‘কেউ ভিক্ষা দিবার চায় না গো বাবা। খালি শুকুরবারে কিছু টাহা পাই, তা চাউল কিনতে আটে না। আনাইজ (সবজি), গোস্ত, মাছ কিনবার পাই না। সারাটা মাস ওজা (রোজা) করলাম পান্তা খায়া। নুন-ভাত আর গলা দিয়া নামে না। ঈদ মোগো জন্য নোয়ায়।’ 

কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুর পৌরসভার মধুপুর গ্রামের মৃত বয়জুদ্দিনে স্ত্রী আরজিনা বেওয়া (৭৫)।

মৃত ইব্রাহিম আলীর স্ত্রী ছফুরা বেওয়া (৬৫) বলেন, ‘বাড়ি ভিটা নাই, ভাতাও নাই। ভিক্ষার ওপর চলি। এখন তাও দেয় না। শুকুরবার ভিক্ষা করি ৩০০-৪০০ টেহা পাই। তা দিয়া চাউল কিনলেও তরকারি কিনবার পাই না। গোস্ত, মাছ কত দিন খাই না তা মনে পড়ে না। কেমন করি বাঁচমো বাহে, তোমরায় কন।’ 

একই আক্ষেপ মাঝিপাড়া গ্রামের শামছুল হকের স্ত্রী ফরজিনা বেওয়া (৬০), ধামশ্রেনী গ্রামের মৃত মফিজ কসাইয়ের স্ত্রী হাসনা বেওয়া (৫৫), জোনাই ডাঙ্গা গ্রামের বয়জুদ্দিনের স্ত্রী কদভানু (৬৮), রহিমা বেগম (৫৭), আনোয়ারা বেগম (৬৩), ছরিয়া বেওয়াসহ (৫৯) অসংখ্য মানুষের। 

আক্ষেপ করে তারা বলেন, টাকা ছাড়া ভাতা হয় না। সরকার রিলিফ দেয়; কিন্তু তাদের ভাগ্যে জোটে না। তাই কীসের রোজা, কিসের ঈদ। সারা বছর এক সমান বলে জানালেন তারা।   

ভ্যানচালক মোকবুল হোসেন বলেন, আগে দিন হাজার টাকা কামাইতাম। তা দিয়ে কোনো রকমে দিন চলে যেত। এখন কামাই রোজগার কম। দিনে ৪০০ টাকায় কোনো মতে চাল সবজি কেনা যায়। মাছ-গোস্ত কেনার টাকা হয় না। 

বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে কাজ নেই। নিত্যপণ্যের দামও বেশি। ফলে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঈদের খুশি যেন তাদের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। বাজারেও ঈদের আমেজ নেই।  
 
এস এস স্যানিটারির মালিক যুবরাজ হাবিব বলেন, বেচাবিক্রির মৌসুম হলেও ক্রেতা নেই। কর্মচারীর বেতন দিতে পারছি না। 

পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ভিজিএফ বরাদ্দ এসেছে। তালিকার কাজ চলছে। হতদরিদ্ররা ওয়ার্ডে যোগাযোগ করলে সহায়তা পাবেন। 

সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাতে বছরে চার-পাঁচজনকে পুনর্বাসন করা যায়। অথচ তালিকাপ্রাপ্ত ভিক্ষুকের সংখ্যা দেড় হাজার। এ ছাড়া যাদের পুনর্বাসন করা হয়, তারাও পেশা ছাড়ে না। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, সহায়তা প্রয়োজন, এমন কেউ ভাতা না পেলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আর ত্রাণের বিষয়ে পৌর সচিবকে বলা আছে, প্রকৃত দুস্থরা কেউ যেন বাদ না পড়ে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ