‘পান্তা খায়া ওজা করি, ঈদ মোগো জন্য নোয়ায়’
Published: 25th, March 2025 GMT
‘কেউ ভিক্ষা দিবার চায় না গো বাবা। খালি শুকুরবারে কিছু টাহা পাই, তা চাউল কিনতে আটে না। আনাইজ (সবজি), গোস্ত, মাছ কিনবার পাই না। সারাটা মাস ওজা (রোজা) করলাম পান্তা খায়া। নুন-ভাত আর গলা দিয়া নামে না। ঈদ মোগো জন্য নোয়ায়।’
কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলছিলেন উলিপুর পৌরসভার মধুপুর গ্রামের মৃত বয়জুদ্দিনে স্ত্রী আরজিনা বেওয়া (৭৫)।
মৃত ইব্রাহিম আলীর স্ত্রী ছফুরা বেওয়া (৬৫) বলেন, ‘বাড়ি ভিটা নাই, ভাতাও নাই। ভিক্ষার ওপর চলি। এখন তাও দেয় না। শুকুরবার ভিক্ষা করি ৩০০-৪০০ টেহা পাই। তা দিয়া চাউল কিনলেও তরকারি কিনবার পাই না। গোস্ত, মাছ কত দিন খাই না তা মনে পড়ে না। কেমন করি বাঁচমো বাহে, তোমরায় কন।’
একই আক্ষেপ মাঝিপাড়া গ্রামের শামছুল হকের স্ত্রী ফরজিনা বেওয়া (৬০), ধামশ্রেনী গ্রামের মৃত মফিজ কসাইয়ের স্ত্রী হাসনা বেওয়া (৫৫), জোনাই ডাঙ্গা গ্রামের বয়জুদ্দিনের স্ত্রী কদভানু (৬৮), রহিমা বেগম (৫৭), আনোয়ারা বেগম (৬৩), ছরিয়া বেওয়াসহ (৫৯) অসংখ্য মানুষের।
আক্ষেপ করে তারা বলেন, টাকা ছাড়া ভাতা হয় না। সরকার রিলিফ দেয়; কিন্তু তাদের ভাগ্যে জোটে না। তাই কীসের রোজা, কিসের ঈদ। সারা বছর এক সমান বলে জানালেন তারা।
ভ্যানচালক মোকবুল হোসেন বলেন, আগে দিন হাজার টাকা কামাইতাম। তা দিয়ে কোনো রকমে দিন চলে যেত। এখন কামাই রোজগার কম। দিনে ৪০০ টাকায় কোনো মতে চাল সবজি কেনা যায়। মাছ-গোস্ত কেনার টাকা হয় না।
বিভিন্ন এলাকার নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠে কাজ নেই। নিত্যপণ্যের দামও বেশি। ফলে নিম্নবিত্ত ও খেটে খাওয়া মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে। ঈদের খুশি যেন তাদের কাছে ম্লান হয়ে গেছে। বাজারেও ঈদের আমেজ নেই।
এস এস স্যানিটারির মালিক যুবরাজ হাবিব বলেন, বেচাবিক্রির মৌসুম হলেও ক্রেতা নেই। কর্মচারীর বেতন দিতে পারছি না।
পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত সচিব ও নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুব আলম বলেন, ভিজিএফ বরাদ্দ এসেছে। তালিকার কাজ চলছে। হতদরিদ্ররা ওয়ার্ডে যোগাযোগ করলে সহায়তা পাবেন।
সমাজসেবা কর্মকর্তা লুৎফর রহমান বলেন, ভিক্ষুক পুনর্বাসনে যে বরাদ্দ পাওয়া যায়, তাতে বছরে চার-পাঁচজনকে পুনর্বাসন করা যায়। অথচ তালিকাপ্রাপ্ত ভিক্ষুকের সংখ্যা দেড় হাজার। এ ছাড়া যাদের পুনর্বাসন করা হয়, তারাও পেশা ছাড়ে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নয়ন কুমার সাহা বলেন, সহায়তা প্রয়োজন, এমন কেউ ভাতা না পেলে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। আর ত্রাণের বিষয়ে পৌর সচিবকে বলা আছে, প্রকৃত দুস্থরা কেউ যেন বাদ না পড়ে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: রমজ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন
চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।
লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।
চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।
লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।
প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।
লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।
লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’
তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?