অনন্য সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর কোয়ালিটি রিসার্চ (ইএসকিউআর)-এর ‘কোয়ালিটি চয়েস প্রাইজ’ পেয়েছে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। আগামী ২৯ মে সুইডেনের স্টকহোমে সংস্থাটির বার্ষিক কনভেনশনে এই পুরষ্কার প্রদান করা হবে। 

নৈতিকতা, উদ্ভাবন, নেতৃত্ব এবং ধারাবাহিক উন্নতির সংস্কৃতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অসাধারণ ভূমিকা পালন করছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ‘ইএসকিউআরের কোয়ালিটি চয়েস প্রাইজ’ দেওয়া হয়। 

বিসিপিসিএলের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ‘এই পুরষ্কার দেশের জন্য গর্বের, গৌরবের। এই প্রাপ্তি অন্তর্বর্তী সরকারের ভাবমূর্তি বিশ্ব দরবারে উজ্জ্বল করবে।’ 

ইউরোপিয়ান সোসাইটি ফর কোয়ালিটি রিসার্চের প্রধান কার্যালয় সুইজারল্যান্ডের লুসানে অবস্থিত। গুণগত মান সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণে অসাধারণ অবদান রাখার জন্য বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে স্বীকৃতি প্রদান করে আসছে আন্তর্জাতিক এই সংস্থা। 

সংস্থাটির ওয়েবসাইটে গিয়ে দেখা যায়, গত একযুগে জার্মানির বিএমডব্লিউ গ্রুপ, বলিভিয়ার সংস্কৃতি ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, ভারতের রাষ্ট্রীয় (স্টেট) ব্যাংক, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলটা এয়ারলাইনস, অস্ট্রেলিয়ারর মারশা গ্রুপ, নেদারল্যান্ডজের ফিলিপস কোম্পানি, ডেনমার্কের আরলা ফুডস, জাপানের মিতসুই ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিশ্বখ্যাত বেশকিছু প্রতিষ্ঠান ‘ইএসকিউআর কোয়ালিটি চয়েস প্রাইজ’ পেয়েছে।

বিসিপিসিএল এই পুরস্কার পেয়েছে মূলত পটুয়াখালীর পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য। পুরষ্কার প্রদানের ক্ষেত্রে কোম্পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা, নৈতিকতা ও যথাযথ নেতৃত্বের মধ্য দিয়ে ধারাবাহিক উন্নয়ন, প্রকল্পটিতে পরিবেশবান্ধব সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ সরবরাহের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে তথা দেশের বিদ্যুৎ খাতে বিশেষ অবদান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইতিবাচক ভুমিকা রাখার বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয়েছে। 

বিসিপিসিএলের পায়ারা বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় ১০ শতাংশ পূরণ করছে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশের বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি ২০২০ সাল থেকে জাতীয় গ্রিডে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্মত বিদ্যুৎ দিয়ে আসছে। দেশের অন্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর তুলনায় কম দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছে পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র। 

বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ উদ্যোগে ২০১৪ সালের ১ অক্টোবর গঠিত হয় বাংলাদেশ-চীন পাওয়ার কোম্পানি (পিভিটি) লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। মালিকানায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নর্থওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড (এনডব্লিউপিজিসিএল) ও চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট করপোরেশনের (সিএমসি) সমান (৫০:৫০) অংশীদারিত্ব রয়েছে।  বিসিপিসিএল কর্তৃক পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট (দ্বিতীয় ফেইজ) বিদ্যুৎ কেন্দ্র বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প রস ক র ব স প স এল এই প র

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ