শাকিব খানের সঙ্গে নুসরাতের 'চাঁদ মামা', টিজারে ছড়াল ঈদের আমেজ
Published: 26th, March 2025 GMT
ঈদে ‘বরবাদ’ নিয়ে হাজির হচ্ছেন শাকিব খান। শেষ সময়ে যুক্ত হয়েছে তার আরও একটি ছবি ‘অন্তরাত্মা’। দুই ছবিতেই তার নায়িকা হিসেবে আছেন ভারতীয় দুই তারকা। বরবাদে ঈধিকা পাল অন্তরাত্মায় দর্শনা বণিক।
তবে ঈদের সিনেমা হিসেবে সর্বাধিক আলোচনায় আছে বরবাদ। এই ছবির অন্যতম আকর্ষণ হিসেবে ওপার বাংলার জনপ্রিয় নায়িকা নুসরাত জাহানের নাম শোনা যাচ্ছিল শুরু থেকেই। সিনেমাটির বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে আইটেম গান 'চাঁদ মামা'-তে দেখা গেল নুসরাতকে। মঙ্গলবার রাতে গানটির কয়েক সেকেন্ডের একটি প্রমো প্রকাশ হয়েছে।
যেখানে শাকিব খান ও নুসরাতকে দেখে চমকে উঠেছে দুই বাংলার দর্শক। গানটি সোশ্যাল মিডিয়াতে রাইতে ভাইরাল হয়ে যায়।
নেটিজনরা অপেক্ষা করছেন পুরো গানের। এর প্রমো দেখে শাকিবের লুক, কস্টিউম, সেট ডিজাইনের সঙ্গে নুসরাতের আবেদনময় উপস্থিতি অনেকে চোখ কপালে উঠেছে। কেউ কেউ বলিডের গানের সঙ্গে তুলনা করছেন! বলছেন, এটি হতে পারে বছরের অন্যতম হাই ভোল্টেজ গান।
গানটি ছাড়ার ১০ ঘণ্টার মধ্যে ফেসবুক, ইউটিউব এবং ইনস্টাগ্রাম মিলিয়ে ৩ মিলিয়নের বেশি ভিউ হয়েছে।
এর আগে শাকিবের সঙ্গে নাকাব ছবিতে অভিনয় করেছিলেন নুসরাত। এবার দেখা যাবে আইটেম গানে। গানটির মাধ্যমে প্রায় ১০ বছর পর আবার আইটেম গানে দেখা গেল নুসরাতকে।
এক ভিডিওতে নুসরাত জানিয়েছেন, চাঁদ মামা শব্দটি শুনলেই ছোটবেলার নস্টালজিয়া ফিলিং হয়। কিন্তু এই চাঁদ মামা পুরোপুরি ডান্স নাম্বারের গান। সবাই খুব এনজয় করবে।
'চাঁদ মামা' গানটি লিখেছেন এবং সুর, সংগীত করেছেন প্রীতম হাসান, কণ্ঠ দিয়েছেন প্রীতম ও দোলা। সম্পূর্ণ গানটি ২৮ মার্চ শাকিবের জন্মদিন উপলক্ষে প্রকাশিত হবে রিয়েল এনার্জি প্রডাকশনের ইউটিউব চ্যানেলে।
শাহরিন আক্তার সুমির প্রযোজনায় ‘বরবাদ’-এ শাকিব ছাড়াও অভিনয় করেছেন ইধিকা পাল, যীশু সেনগুপ্ত, মিশা সওদাগর, শহীদুজ্জামান সেলিম ,ফজলুর রহমান বাবু প্রমুখ।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বরব দ
এছাড়াও পড়ুন:
কালিদাসের হাত ধরে যে জামুর্কীর সন্দেশের যাত্রা, তার জিআই স্বীকৃতিতে খুশি সবাই
দশম শ্রেণিতে পড়ার সময় বিয়ে করেছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার জামুর্কী গ্রামের প্রয়াত কালিদাস চন্দ্র সাহা। এ জন্য তাঁর বাবা মিষ্টি ব্যবসায়ী প্রয়াত মদনমোহন সাহা তাঁকে সংসার থেকে আলাদা করে দেন। এরপর মিষ্টির দোকানের আশপাশে বসে থাকতে থাকতে একসময় তিনি সন্দেশ বানাতে শুরু করেন। সেটা ১৯৪০ সালের কথা।
একসময় কালিদাসের বানানো এই সন্দেশ জামুর্কীর সন্দেশ হিসেবে লোকের মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে। সেই সন্দেশ এবার ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। গতকাল বুধবার টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক শরীফা হকের হাতে জামুর্কীর সন্দেশের জিআই নিবন্ধন সনদ তুলে দেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে জামুর্কীতে গিয়ে দেখা গেল, ‘কালিদাস মিষ্টান্ন ভান্ডার’ নামের চৌচালা টিনের ঘর। পুরোনো দোকান। বাড়তি কোনো চাকচিক্য নেই। সাদামাটা কাচঘেরা তাকে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সন্দেশ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেচাকেনা বাড়ছে।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, কালিদাস ১৯৮২ সালে মারা যান। তারপর তাঁর বড় ছেলে সমর চন্দ্র সাহা ব্যবসার হাল ধরেন। আরেক ছেলে গৌতম সাহা লন্ডনপ্রবাসী।
টাঙ্গাইলের ঘাটাইল সদরের একটি উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান আত্মীয় বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে বিরতি দিয়ে সন্দেশ কিনতে ওই দোকানে আসেন। তিনি বলেন, ‘আগেও এই দোকানের সন্দেশ খেয়েছি। আজও নিচ্ছি। এর গুণগত মান সব সময় ভালো।’
জিআই পণ্যের স্বীকৃতিতে স্থানীয় লোকজনও খুশি। জামুর্কী গ্রামের ফিরোজ আলম মোক্তার বলেন, এই সন্দেশের স্বীকৃতি আরও আগেই পাওয়া উচিত ছিল। এই সন্দেশের মান যাতে বজায় থাকে, এ জন্য মালিকদের ইচ্ছা থাকতে হবে।
বর্তমান মালিক সমর চন্দ্র সাহাকে পাওয়া গেল জামুর্কী কাঁচাবাজারে। এ সময় বাজারের ব্যবসায়ীরা তাঁকে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। বাজারের মাতৃভান্ডারের মালিক প্রকাশ বাকালী বলেন, ‘বাবার মুখে যেমন শুনেছি, সন্দেশ এখনো তেমনই আছে। এটা আমাদের গর্ব। আমার বুক ভরে গেছে।’
সমর চন্দ্র সাহা বলেন, বাবার মৃত্যুর পর ছাত্রাবস্থায় তিনি দোকানে বসতে শুরু করেন। সেই থেকে এখনো আছেন। সন্দেশ খেয়ে মানুষ প্রশংসা করেন। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জামুর্কী বাসস্ট্যান্ডে এক অনুষ্ঠানে এসে দোকানটিতে এসেছিলেন। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসেছেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসাইন মোহাম্মদ এরশাদ এসেছেন। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মাঝেমধ্যে আসেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এক মাস আগেও এসেছিলেন। ২০১৩ সালে ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতাল পরিদর্শনে এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে এই সন্দেশ দিয়ে আপ্যায়ন করে। তাঁর কথা, ‘ট্যাকাপয়সা কিছু না। এই স্বীকৃতি বিশাল ব্যাপার। আমরা মান ভালো করি। কাস্টমাররা আমাদের পছন্দ করেন। সন্দেশ কিনতে এসে দোকানে বসে গল্প করেন। আমার খুবই ভালো লাগে। খুশির এই সময় আমার বাবা-দাদাকে খুব মনে পড়ছে। আমি তাঁদের স্মরণ করি।’
দোকান দেখভালের দায়িত্বে থাকা প্রেমা সাহা বলেন, ‘আমি ৪০ বছর ধরে দোকানে আছি। কাস্টমারকে আমরা আপন মনে কইরা সেবাটা দেই। আমরা জিনিস ভালা বানাই। এ জন্য সরকারও স্বীকৃতি দিছে।’
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, সন্দেশের জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নানাভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। এ স্বীকৃতি মির্জাপুরবাসীর।
দোকানটিতে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সন্দেশ বিক্রি হয়। চিনি ও গুড়ের তৈরি দুই ধরনের সন্দেশের বর্তমান বাজারমূল্য প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। দুধ থেকে ছানা তৈরির পর এলাচি, চিনি অথবা গুড় দিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে সন্দেশ বানানো হয়। প্রায় প্রতি ঘণ্টায় চুলা থেকে একটি করে বড় কড়াই নামানো হয়। একটি কড়াই থেকে প্রায় ৩০ কেজি সন্দেশ বানানো যায়। দোকানটিতে সন্দেশ ছাড়াও চমচম, রসগোল্লা, রসমালাই, দই ও ঘি বিক্রি করা হয়।