যত দূর মনে পড়ে, ১৯৭১–এ রোজা শুরু হয় অক্টোবরে। তখনো প্রাণ হাতে নিয়ে দিগ্‌বিদিক দৌড়াচ্ছি। ঢাকার রায়েরবাজারের বাড়ি ছেড়েছি ২৬ মার্চ সূর্য ওঠার আগেই। আমার তিন সন্তানের সবাই তখন ছোট। বড় ছেলের বয়স ছয়, মেজ ছেলের বয়স চার আর মেয়ের বয়স এক বছর। একটা মাঝারি মাপের ঝুড়ি জোগাড় করে তাতে জমানো কিছু টাকা, স্বর্ণালংকার নিয়ে ওপরে বাচ্চাদের খাবার আর দুধের কৌটা নিলাম। এক কোলে শিশুকন্যা আরেক হাতে সেই ঝুড়ি। স্বামী আজিজুল হক সামলালেন বড় দুজনকে। নিমতলা থেকে নৌকা নিয়ে বুড়িগঙ্গা দিয়ে কেরানীগঞ্জের বরিশুর পৌঁছাই। ভয়ে সেখান থেকে হেঁটে চলে যাই আবদুল্লাহপুর। সেখানকার হাইস্কুলে আশ্রয় নিই। রাত হতেই দেখি, অনেক মানুষ আসতে শুরু করেছে। এত মানুষ দেখে কেউ কেউ বলল, যেখানে মানুষ বেশি দেখবে, সেখানেই বোমা ফেলবে। এই ভয়ে সেখান থেকে পরদিন সকালেই বেরিয়ে পড়লাম আমরা। পরে অবশ্য রেডিওতে শুনেছিলাম, ওই স্কুলে সত্যিই বোমা ফেলেছিল পাকিস্তানি মিলিটারিরা।

লৌহজং, রাজারহাট, শিরখাড়া ইত্যাদি বেশ কয়েকটি জায়গায় এক দিন–দুই দিন করে আশ্রয় নিলাম। কিছু পথ লঞ্চ ও নৌকায় চড়ে আর মাইলের পর মাইল হেঁটে সাতবাড়িয়ায় পৌঁছাই। সেখানে ছয় মাসের মতো ছিলাম। এরপর সেখানেও মিলিটারির উৎপাত শুরু হলে চলে যাই ঘোষগ্রাম, সেখান থেকে হেঁটে পৌঁছাই বাপের বাড়ি উতরাইলে। রোজা শুরুর সময়টায় সেখানেই ছিলাম।

আরও পড়ুনপাকিস্তানি এক সেনা ডেকে বলেছিল, ‘ঈদ মোবারক নেহি বোলগে?’ ৫ ঘণ্টা আগে

চাকরিসূত্রে আব্বা ফরিদপুরে বাড়ি করেছিলেন। উতরাইলেও যুদ্ধ শুরু হলে ফরিদপুর চলে যাই। সেখানেও বেশি দিন থাকতে পারিনি। চলে যাই গেরদায় নানার বাড়িতে। যুদ্ধ বন্ধের খবর পেয়ে আবার ফরিদপুরে ফিরে আসি। রোজা রোজার মতো চলছিল, বলা যায় না। হাটবাজারের খবর নেই। জিনিসপত্রের চড়া দাম। আশপাশের বাড়ির সবাই সুযোগ হলেই বেশি বেশি রান্না চড়াতেন। একে অপরকে খাবার দিতেন। পথিকদের খাওয়াতেন কেউ কেউ। সে সময় হঠাৎ হঠাৎ গোলাগুলি শুরু হলে ঘর, খাবার সব ফেলেই দৌড়ে পালাতে হতো। শেষ দিকে এতটাই কাহিল হয়ে গিয়েছিলাম যে মিলিটারি আসার খবরে দৌড়ে না পালিয়ে বাচ্চাদের বুকে নিয়ে ঘরের ভেতরেই থাকতাম। সে সময় ভাবতাম, ওরা এলে বলব, সবাইকে একসঙ্গে মেরে ফেলো।

দেশ স্বাধীন হওয়ার কিছুদিন আগেই ছিল ঈদের দিন। ঈদ বলতে বাড়ির ছেলেরা সবাই একসঙ্গে নামাজে গেল। আর আমরা মেয়েরা মিলে বাড়িতেই ঈদের নামাজ আদায় করলাম। নতুন কাপড়ের তো প্রশ্নই ওঠে না। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিনের খাবারের মতো ভাত-তরকারি খেয়েই বাকি দিনটা কাটল। সেমাই বা বিশেষ কোনো খাবার সেদিন রান্না হয়নি বাড়িতে। ঈদের আনন্দ বলে কিছুই ছিল না, চারদিকে ছিল শুধু আতঙ্ক।

ঈদের আনন্দ পুষিয়ে দিয়েছিল ১৬ ডিসেম্বর দিনটি। সেই আনন্দ কেন, তা আর কারও অজানা নয়।

অনুলিখন: আবৃতি আহমেদ

আরও পড়ুনকে ছিলেন মধুদা১২ ডিসেম্বর ২০২২.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক

‘এটি খুবই আনন্দায়ক খবর যে এই স্কুলে আদিবাসী ও বাঙালি শিক্ষার্থীরা একসঙ্গেই বসে শান্তিপূর্ণভাবে পাঠ গ্রহণ করে। যেখানে ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরাও একই আসনে বসে পাঠ নিচ্ছে। সম্প্রীতি-ভালোবাসার এ দৃশ্য আমাদের বিমোহিত করেছে।’

আজ সোমবার দুপুরে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় প্রথম আলো ট্রাস্ট পরিচালিত বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শনে এসে জার্মান নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত চিকিৎসক মাথিয়াস রিচার্ড এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সুইজারল্যান্ডের নাগরিক অবসরপ্রাপ্ত রসায়নবিদ সিলভিয়া মাউরিজিও। ‘দেশ ঘুরি’ নামের একটি ট্যুরিস্ট সংস্থার মাধ্যমে তাঁরা এ বিদ্যালয় পরিদর্শনে আসেন।

বেলা সাড়ে ১১টায় তাঁরা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে উপস্থিত হলে ফুলের তোড়া ও মালা দিয়ে শুভেচ্ছা জানায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের বিভিন্ন শ্রেণিকক্ষ ঘুরিয়ে দেখান প্রধান শিক্ষক আলী উজ্জামান নূর। তাঁরা শ্রেণিকক্ষগুলোতে গিয়ে পাঠ উপস্থাপন দেখেন। কথা বলেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে। শিক্ষার্থীরাও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাঁদের সঙ্গে ভাববিনিময় করে।

এ সময় দুই পর্যটক জানতে পারেন, এ বিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র জাতিসত্তা ও বাঙালি শিশুরা একসঙ্গে পড়াশোনা করে। ইসলাম-হিন্দু-খ্রিষ্টধর্মের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না করে একবেঞ্চে বসে পাঠ গ্রহণ করে। বিষয়টি জানতে পেরে তাঁরা খুবই খুশি হন।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মাসুমা খাতুন দুজনকে একটি গান গেয়ে শোনায়। বিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক দলের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সামনে ঐতিহ্যবাহী নাচ-গান প্রদর্শন করে। সিলভিয়াও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নাচে অংশ নেন। সৃষ্টি হয় একটি আনন্দদায়ক পরিবেশের। এ সময় বাঙালি ও কোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি-ভালোবাসা ও বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ দেখে খুশি হন।

বিদেশি দুই পর্যটকের সামনে আলোর স্কুলের শিক্ষার্থীদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাবুডাইং আলোর পাঠশালা পরিদর্শন করলেন দুই বিদেশি পর্যটক
  • সব সিম লক রেখে কিস্তিতে স্মার্টফোন বিক্রির সুযোগ পাচ্ছে অপারেটররা
  • আগামী বছর নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা: ধর্ম উপদেষ্টা
  • শাহরুখের ব্যাপারে সাবধান করলেন জুহি চাওলা
  • শাহরুখের অজানা এই সাত তথ্য জানেন?