বিশ্বকাপ খেলার জন্য মেসিকে চাপ না দেওয়ার অনুরোধ
Published: 28th, March 2025 GMT
মেসি ছাড়াও জিততে পারে আর্জেন্টিনা; উরুগুয়ের পর ব্রাজিলকে উড়িয়ে দিয়ে এমন বার্তাই দিয়েছে আর্জেন্টিনার তরুণ দলটি। তাদের এ বার্তার সঙ্গে আরও একটি প্রশ্ন নতুন করে উঠতে শুরু করেছে, লিওনেল মেসি কি ২০২৬ বিশ্বকাপ খেলবেন? ব্রাজিলকে ৪-১ গোলে বিধ্বস্ত করে বাছাই পর্বের ঝামেলা শেষ করার পর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন ৩৭ বছর বয়সী মেসির টানা ষষ্ঠ বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে। তবে আর্জেন্টিনার কোচ লিওনেল স্কালোনি এ বিষয়ে মেসিকে চাপ না দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। মেসির সিদ্ধান্ত মেসিকে নিতে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
ব্রাজিল ম্যাচের পরই স্কালোনিকে প্রশ্নটি করা হয়েছিল। আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী কোচ অবশ্য সরাসরি এর কোনো উত্তর দেননি, ‘দেখা যাক কী হয়। এখনও তো অনেক সময় আছে।’
এর পর মেসিকে এই প্রশ্ন করে বিব্রত না করার অনুরোধ জানিয়েছেন স্কালোনি, ‘আমাদের ম্যাচ ধরে ধরে এগোতে হবে। নইলে তো এই এক বিষয় নিয়েই সারা বছর কথা বলতে হবে। তার সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে হবে। দেখি না কী হয়। সে যখন চাইবে, তখনই সিদ্ধান্ত নেবে। এ নিয়ে তাকে পাগল করে দেওয়া উচিত হবে না।’
আর্জেন্টিনার গত দুটি বিজয় এসেছে মেসিকে ছাড়া। আটটি ব্যালন ডি’অর জয়ী এ তারকা মাংসপেশির চোটের কারণে ছিটকে যান ম্যাচ দুটি থেকে। তবে শুধু এ দুটি ম্যাচেই নয়, ৩৬ বছর পর আর্জেন্টিনাকে বিশ্বকাপ এনে দেওয়া এ তারকার চোটের সখ্যতা ইদানীং বেশ বেড়েছে। ইন্টার মায়ামির হয়ে চলতি মৌসুমে বেশ কয়েকবার চোটে পড়েছেন তিনি।
তবে মেসির জাতীয় দলের সতীর্থদের কিন্তু তাঁর প্রত্যাবর্তন নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। ব্রাজিলের বিপক্ষে গোল করা জুলিয়ান আলভারেজ তো মেসি থাকলে সে দিন কী হতো সেটাও বলেছেন, ‘মেসি থাকলে আমরা আরও দু-তিনটি গোল বেশি দিতাম।’
রদ্রিগো ডি পল সমর্থন জানান তাঁকে, ‘আমাদের সেরাটা বেরিয়ে আসে যখন ১০ নম্বর খেলে। কারণ সে হলো সর্বকালের সেরা।’
আগামী বছর জুন-জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকো; এ তিন দেশ যৌথভাবে বিশ্বকাপ আয়োজন করবে। প্রথমবারের মতো ৪৮ দল নিয়ে হতে যাওয়া এ আসর বিশ্বের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্রীড়া আসর হতে যাচ্ছে বলে প্রত্যাশা ফুটবলপ্রেমীদের।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আর জ ন ট ন র ব শ বক প
এছাড়াও পড়ুন:
ধান কাটায় আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার, পেশা বদলাচ্ছেন কৃষি শ্রমিকেরা
বছর পাঁচেক আগেও ধান কাটার শ্রমিকেরা বৈশাখ মাসের অপেক্ষায় থাকতেন। বৈশাখে হাওরের বুকজুড়ে সবুজ ধান যখন সোনালি রঙ ছড়াতে শুরু করে, তখন থেকেই দূরদূরান্ত থেকে হাওরে আসতে থাকেন ধান কাটার শ্রমিকেরা। কিন্তু, এই চিত্র দ্রুত বদলাচ্ছে। হাওরের কৃষক এখন ধান কাটার জন্য বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করেন। ফলে কৃষকের শ্রম এবং অর্থ দুটোরই সাশ্রয় হচ্ছে। তবে, কর্মহীন হয়ে পড়ছেন কৃষি শ্রমিকেরা। বাধ্য হয়ে তারা পূর্বপুরুষের পেশা ছেড়ে ঝুঁকছেন অন্য পেশায়।
তিন বছর হলো ধান কাটার পেশা ছেড়েছেন মিঠামইন উপজেলার ঘাগড়া গ্রামের মো. মকবুল মিয়া। এখন তিনি সারাবছর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালান।
আরো পড়ুন:
খুলনার বরফশ্রমিক
নেই নিয়োগপত্র, আইডি কার্ড ও ছুটি
ফুড ডেলিভারিম্যান: খাবারের রাজ্যে অতৃপ্ত দিনরাত
মকবুল মিয়া বলেন, ‘‘আগে বছরের ছয় মাস বর্ষায় নৌকা বাইতাম, আর হুগনা সিজন আইলে নিজের জমি চাষ করতাম, আবার মাইনষের জমিতেও কামলা দিতাম। যা আয় অইতো তাই দিয়া আমরার ছয়জনের সংসার চইল্যা যাইতো। কিন্তু, যহন থেইক্যা নতুন নতুন মেশিন হাওরে আইতাছে, তহন থেইক্যা আমরার আর বেইল নাই।’’
‘‘কেউ আর আমরারে আগের মতন দাম দেয় না। কাম করলেও ঠিকমতো টেহা পাই না, তাই পুষায় না,’’ বলেন এই কৃষিশ্রমিক।
মকবুলের মতো ধান কাটা, মাড়াই, রোদে শুকানো, ঝাড়া, কাঁধে বহন করার মতো স্বাধীন পেশা ছেড়েছেন অষ্টগ্রামের ফয়জুল, ইটনার শামছুল মিয়া, নিকলীর ফরিদ উদ্দিনসহ অসংখ্য শ্রমিক। এক সময় যারা এ পেশায় দলবেঁধে কাজ করতেন, এখন দৃশ্যপট পুরোটাই ভিন্ন। ধান কাটার পেশা বদলে তারা এখন কেউ রিকশাচালক, কেউ চায়ের দোকানদার, কেউ চটপটি-ফুচকার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারা বলছেন, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির গতির সঙ্গে তারা কখনো তাল মেলাতে পারবেন না। কৃষকরাও তাদের শ্রমের সঠিক মূল্যায়ন করতে পারছেন না। বেশি জমি যাদের আছে তারাও আধুনিক পদ্ধতির প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন। যে কৃষক অল্প জমিতে চাষাবাদ করেছেন, তারাও আর পয়সা খরচ করে কৃষিশ্রমিকের ওপর নির্ভর করছেন না। তারা পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা নিচ্ছেন। ফলে খেটে খাওয়া শ্রমিকেরা পড়েছেন বিপাকে।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সনাতন পদ্ধতিতে এক বিঘা জমির ধান কাটতে প্রচুর সময় লাগে। ফসল কাটার পরে বহন ও মারাই করা, তারপর বস্তায় সংরক্ষণ করার জন্যও অনেক শ্রমিকের দরকার। এটুকু ৬ থেকে ৭ জন শ্রমিকের সারা দিনের কাজ। তার জন্য মজুরি গুনতে হয় ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কিন্তু, এ কাজে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করলে সময় এবং অর্থ দুটোই কম লাগে।
বৈশাখে বর্ষার পানি ও বৈরী আবহাওয়া না থাকায় কৃষকেরা হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটছেন। বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে ঝড়-তুফান শুরু হলে পাকা ধান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে তারা যে পদ্ধতিতে ধান কাটা সহজ এবং দ্রুত হয় সেই পদ্ধতি বেছে নিচ্ছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এবার পুরো জেলায় এক লাখ ৬৮ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। এর মধ্যে শুধু হাওর এলাকাতেই আবাদ হয়েছে ১ লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে। ফলন ভালো হওয়ায় এই ধান থেকে এবার প্রায় ৮ লাখ মেট্রিক টন চাল পাওয়া যাবে। ধান কাটতে এ বছর হাওর অঞ্চলে ৩৫ হাজার শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় কম। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধান কাটতে কৃষক কম্বাইন্ড হারভেস্টারসহ ৪১৩টি ধান কাটার যন্ত্র ব্যবহার করছেন।
জেলা শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. খোরশেদ উদ্দিন বলেন, ‘‘মানুষের পেশা পরিবর্তনশীল। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের বিভিন্ন পেশা বেছে নিতে হয়। কিন্তু, কৃষি এমন একটা পেশা, যারা এ পেশা রপ্ত করেছেন তাদের জন্য নতুন পেশায় আসা খুব কঠিন। বর্তমানে কৃষিকাজে যেভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে, তাতে কৃষিশ্রমিকেরা ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত।’’
‘‘শুধু কৃষিতেই নয়, বিভিন্ন কর্মক্ষেত্রেই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার লক্ষ্য করা যাচ্ছে,’’ উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, ‘‘সরকারকেই সুদৃষ্টি দিতে হবে। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশ কৃষিপ্রধান, মাঠে যদি কৃষক ও শ্রমিক ন্যায্য শ্রমমূল্য না পান, তাহলে কৃষিও একদিন হুমকির মুখে পড়বে।’’
ঢাকা/তারা