বাবা মারা যান ২৫ রমজান। ২০১৩ সালে তাঁর দাফনের জন্য শেষবার বাড়ি গিয়েছিলাম। এর পর এক যুগ আওয়ামী লীগের কারণে যেতে পারিনি। ফ্যাসিবাদ বিদায়ে অবসান হয়েছে ফেরারি জীবনের। প্রথমবার আতঙ্কমুক্ত পরিবেশে পরিবার-পরিজন ও নেতাকর্মীর সঙ্গে এলাকায় ঈদ করব। অন্যরকম ভালো লাগা ও মনে প্রশান্তি কাজ করছে।

কথাগুলো বলছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ছেলের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর ঈদ নিয়ে উচ্ছ্বসিত তাঁর মা ফরিদা বেগমও। সমকালকে ফরিদা বলেন, ‘দুই মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে ২০১৩ সাল থেকে অনিশ্চিত জীবন পার করেছি। স্বামীর বিদায়ে আমার পরিবার ধ্বংস হয়ে গেছে। বিএনপি করার কারণে একমাত্র ছেলে জেল-জুলুমে বড় সময় পার করেছে। বিয়ে পর্যন্ত করতে পারেনি। এ রকম ফেরারি জীবন যেন কারও না আসে।’

রাজীবের মতো বিএনপি, এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের হাজারো নেতাকর্মী প্রায় দেড় যুগ প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে পারেননি। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতন এবার এনে দিয়েছে মুক্ত পরিবেশে ঈদ উদযাপনের সুযোগ। সেটিকে কাজে লাগাতে বেশির ভাগ নেতা এলাকায় গেছেন। প্রিয়জন ছাড়াও দলীয় কর্মী-সমর্থকদের সময় দিচ্ছেন। কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত ভিন্ন আমেজ সৃষ্টি হয়েছে। ঈদ আনন্দে সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৎপরতা চালাচ্ছেন। পথসভা, গণসংযোগসহ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে পাশে টানছেন নেতাকর্মীকে।

জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সমকালকে বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন। বিএনপি নেতাকর্মীর কোনো অধিকারই ছিল না। তারা বছরের পর বছর ফেরারি ছিলেন। তবে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান শুধু দলের নেতাকর্মী নয়, সারাদেশে সবার জন্য স্বস্তি এনে দিয়েছে।’
বিএনপি নেতাকর্মীরা জানান, ওয়ান-ইলেভেনে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে তাদের ফেরারি জীবন শুরু। এর পর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হলে আরও দুর্বিষহ হয়ে ওঠে রাজনৈতিক জীবন। নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার হিড়িক পড়ে। মামলা ও গ্রেপ্তার আতঙ্কে নেতাকর্মীরা ঘরবাড়ি ছেড়ে ভুলে যান ঈদসহ বিভিন্ন উৎসব। অভ্যুত্থানের পর ফেরারি জীবন থেকে বাড়ি ফিরেছেন; এবার মুক্ত বাতাসে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করবেন নেতাকর্মীরা।

বাবার আদর-ভালোবাসা ছাড়াই বেড়ে উঠেছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর দুই মেয়ে ও এক ছেলে। কারণ, চার শতাধিক মামলা মাথায় নিয়ে বিগত সাড়ে ১৫ বছরের বেশির ভাগ সময় তাঁকে কারাগার কিংবা ফেরারি জীবনে থাকতে হয়েছে। এখন আর সেই আতঙ্ক নেই। দিনের নির্দিষ্ট একটি সময় পরিবারকে দিচ্ছেন; বাকিটা দলকে। নিয়মিত নির্বাচনী এলাকায় যাচ্ছেন। টুকু জানান, রাজনীতিবিদ হিসেবে সব সময় নেতাকর্মী ও জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে তাদের প্রাধান্য দিতে হয়। স্বৈরাচারের সময় চাইলেও পরিবার ও মানুষকে সময় দেওয়া যায়নি। এবার সুযোগ এসেছে, সে ঘাটতি পুষিয়ে নিতে দিনরাত কাজ করছেন।

দীর্ঘ কারাজীবনের ফাঁড়া কাটিয়ে এবার মুক্ত পরিবেশে পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাচ্ছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। আত্মীয়স্বজন ও দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে ঈদ করবেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম পিন্টু। দীর্ঘ ১৭ বছর পর তিনি কারামুক্ত হয়েছেন। সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা লায়ন আসলাম চৌধুরী, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মনির হোসেনও মুক্ত জীবনে ফিরেছেন। তারেক রহমানের ব্যক্তিগত সহকারী মিয়া নুরুদ্দিন অপুও দীর্ঘ ছয় বছর পর ঈদ করবেন প্রিয়জনের সঙ্গে। তবে এবারও কারাগারে ঈদ করতে হচ্ছে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও কুমারখালী পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হুমায়ুন কবীরকে।
স্থানীয় নেতাকর্মীরা জানান, মুক্ত বাতাসে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নানা পরিকল্পনা করেছেন তারা। আগামী নির্বাচনের মনোনয়নপ্রত্যাশীরা তৃণমূলকে আস্থায় নিতে এলাকায় অবস্থান করছেন। বিগত দিনে নির্যাতিত নেতাকর্মী ছাড়াও গুম-খুনের শিকার নেতাকর্মীর পরিবারের কাছে যাচ্ছেন। ঈদসামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছেন। জনসংযোগ, সামাজিক ও ধর্মীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। ঐক্য ও শান্তির বার্তা দিচ্ছেন।

বিএনপি নেতারা জানান, প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন হবে ধরে নিয়েই তারা মাঠে নেমেছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ছাড়াও জ্যেষ্ঠ নেতারা এখন ঘন ঘন নির্বাচনী আসনে যাচ্ছেন। সভা-সমাবেশ ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। ফলে ঈদের সঙ্গে ঢেউ লেগেছে নির্বাচনের।
জানা যায়, এবার তরুণ, অভিজ্ঞ ও প্রবীণদের সমন্বয়ে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা করবে বিএনপি। এ জন্য মাঠ পর্যায়ে কয়েকটি টিম কাজ করছে। ১৯৯১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নেওয়া জনপ্রিয় প্রার্থীদের মূল্যায়নের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে জনপ্রিয়, বিগত আন্দোলনে ছিলেন, দলের প্রতি আনুগত্য ও দুঃসময়ে নেতাকর্মীকে আগলে রেখেছেন– এমন নেতাদের প্রার্থী করতে চাচ্ছেন হাইকমান্ড।

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম র ব এনপ র প র য়জন এল ক য় পর ব র বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ